দুটি কবিতা ।। মাহমুদ দারবিস

(১৯৪১ সালের ১৩ই মার্চ জন্ম নেয়া মাহমুদ দারবিস ক্রমশই প্যালেস্টাইনের জাতীয় কবিতে পরিণত হন। তার কবিতায় প্যালেস্টাইন এসেছে ভিন্ন ভিন্ন রূপে কখনো স্বর্গোদ্যান থেকে বিচ্যুত, পুনরুত্থান কিংবা বাস্তচ্যুত অবস্থা থেকে ভূমিতে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন হিসেবে। ২০০৮ সালের ৯ই আগস্ট প্যালেস্টাইনের এ কণ্ঠস্বর ইহধাম ত্যাগ করেন। A river dies on thirst কাব্যগ্রন্থের প্রথম  কবিতাটি 'আমি যদি পাথর হতাম' এক ধরনের প্রকৃতিপ্রবণ নিঃস্বতা ও দ্বিতীয় কবিতাটি যন্ত্রণাক্লিষ্ট প্যালেস্টাইনিদের মর্মব্যথাকে তুলে ধরেছে—যাদের কথা এখন দুনিয়ায় কেউ আর শুনে না।) 

যদি আমি পাথর হতাম

আমার কোন বোধ নেই
কোন গতকাল নেই, আগামীকালও আসবে না;
আমার বর্তমানের কোন অগ্র কিংবা পশ্চৎ নেই, আমার কোন কিছুই নেই।

যদি আমি একটি পাথর হতাম
ওহ! যদি আমি এমন কতগুলো টুকরো পাথর হতাম
যাকে ঝর্নার প্রশ্রবণ 
ঘষে ঘষে উজ্জ্বল করে তুলছে, 
তুলে আনছে ভেতরের সবুজ, হলুদ রং।

হয়তো আমাকে কেউ তার ড্রইংরুমে 
ভাস্বর্য হিসেবে সাজিয়ে রাখতে পারত
কিংবা আমাকে কেঁটে কেঁটে চলতে পারত
কোন ভাস্বরের অনুশীলন;
এই অপ্রয়োজনীয় থেকে প্রয়োজনীয় কোন দ্রব্যেও
রূপান্তরিত হতে পারতাম;
হায় যদি আমি একখণ্ড পাথর হতাম
তাহলেও হয়তো কিছু অর্জন করতে পারতাম।

মেয়েটি ও চিৎকার

সমুদ্রতীর একটি বালিকা
এর একটি পরিবার আছে,
এদের আছে একটি ঘর
যার দুটো জানালা ও একটি দরজা, খোলা;

সমুদ্রে একটি ডিঙি নৌকা খেলা করে
ঢেউয়ের উদ্দামতা গণিতের নামতার মতো আছড়ে পরে চার, পাঁচ, সাত;
ঢেউগুলো বালুতট ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়।

বড় একটি  ঢেউ উড়ে এসে
ভাসিয়ে নিয়ে গেলে হঠাৎ করে ভেসে আসা অলৌকিক হাত মেয়েটিকে রক্ষা করে, বাঁচায়।
মেয়েটি তার বাবাকে বলে, 
'চল বাবা আমরা ঘরে ফিরে যাই,
সমুদ্র আমাদের মতো নয়';
নিরুত্তর তার বাবা সূর্যের ছায়ায় 
মাথা পেতে শুয়ে থাকে, 
পাম গাছগুলো থেকে রক্ত ঝরে,
মেঘ থেকেও রক্ত ঝরে ঝরে পরে,
মেয়েটির কণ্ঠস্বর সমুদ্রের চিৎকারকেও ছাপিয়ে উঠতে চায়;
গহীন রাতে তার চিৎকার বেলাভূমে ছড়িয়ে পরলেও আশ্চর্য তার কোন প্রতিধ্বনি তৈরি হয় না;
এই অনিঃশেষ চিৎকারের খবর 
কোন খবর হিসেবেও আর থাকে না
যখন বিমানগুলো দুটো জানালা আর দরজা দেয়া ঘরটিতে বোমা ফেলতে ফের ফিরে আসে।


• কুমিল্লা

menu
menu