আদিবাসী মানুষজনের সান্নিধ্যে
'কিরে ফুলমনি, কাল কী হয়েছিল?' প্রশ্নটা আমাদের গৃহসহায়িকা, সারাদিনের কাজের মেয়ে ফুলমনিকে করে আশা করেছিলাম নির্ঘাত বলবে, 'পেট্যে বিথা করছিল' কিম্বা সমগোত্রীয় আর একটা কিছু অজুহাত দেবে। সে কোনো পথেই না গিয়ে সেই নির্ভীক, আদিবাসী তরুণী এঁটো বাসনগুলো সিঙ্ক থেকে নিতে নিতে বলল, 'এলম না।' স্পষ্টতই আমি এমন একটা উত্তরের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। যা শুনলাম তা নিশ্চিত ভুল শুনেছি ভেবে কুঁয়োতলায় বাসনগুলো নিয়ে যেতে উদ্যত ফুলমনিকে আবার শুধোলাম, 'এলি না কেন রে কাল?' ওর যে মেজাজের বা আত্মবিশ্বাসের একটুও তারতম্য হলনা সেটার ওর শরীরী ভাষায় স্পষ্ট বুঝতে পারলাম। একই স্বরস্থানে ও আবার বলল, 'এলম না।' বলে চলে গেল বাসনগুলো নিয়ে। মুখে রোজকার মতো একটা স্মিত হাসির আভাস। এই সাত সকালে মনিবের বাড়ি কাজ করতে এসে ওর খুব খুশি হবার কোনো কারণ নেই। ফলে তেমন দেখাচ্ছিল না। কিন্তু মুখে কোনো নালিশের ছাপ নেই এটা পরিষ্কার। আর ভয় বা অপরাধবোধ তো নেইই। আমার মধ্যবিত্ত শ্রেণি কবলিত মনের যা সামাজিক বোঝাপড়া, তাতে বস্তুতঃ এটা হজম হচ্ছিল না। অদম্য কৌতুহল ও ততক্ষণে খানিকটা জেদের বশে ওর পিছন পিছন কুঁয়োতলায় গেলাম।
'ফুলমনি, কাল কি জ্বর হয়েছিল, নাকি রে? নাকি বাড়িতে কারুর কিছু হয়েছিল? না, মানে তুই ঠিক এলিনা কেন?'
'না, জ্বর হয় নাই। কারুর কিছু হয় নাই। মা কাজে গেল। আমি এলম না।'
এরপর সত্যিই আর কী করে কথা চালিয়ে যাব মাথায় আসছিল না। কথা চালিয়ে যাবার খুব প্রয়োজন ছিল কি আর? কারণ কথা তো শেষ। গতকাল ওর কাজে আসতে ইচ্ছে করেনি ব্যাস। কাজে আসতে যে ইচ্ছে করবে না সেটা গতদিন নিশ্চই জানা ছিল না। সুতরাং বলে যাবার প্রশ্ন আসছে না। অতএব মিটে গেল। কিন্তু আমার মধ্যে যে মধ্যবিত্ত শ্রেণি সচেতন মানুষটি বসে আছে, সে তো কিছুতেই এটা স্বীকার করতে পারছে না যে ওই ঠিকের কাজের মেয়েটি, যাকে গৃহসহায়িকা বলাটা তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের সাম্প্রতিক দস্তুর, সে একদিন কামাই করেছে বলে বিন্দুমাত্র বিচলিত বা ভীত, নিদেন পক্ষে লজ্জিত বা কুণ্ঠিন্ত নয়। এমনকি সেটা জানাতে ও কোনো মিথ্যা অজুহাতের আড়াল নেবার চেষ্টাও করছে না এতটাই স্বাভাবিক ওর বোঝাপড়া। অযথা, অকারণ মিথ্যাচার করার ওদের কোনো প্রয়োজনই হয় না। আর এখানেই ওদের সঙ্গে আমাদের বিস্তর, প্রায় আকাশ-পাতাল তফাত। আমাদের বানিয়ে তোলা সম্ভ্রম, সৌজন্য, দয়া- মায়া, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বার্থবুদ্ধির ইঞ্চিফিতেয় মেপে আমরা তার অনুপান স্থির করি। আগুপিছু, হিত-বিপরীত এই এতরকম হিসেবনিকেশ বা manipulation চলতে থাকে আমাদের মাথায়। আমরা এভাবেই conditioned হয়ে গেছি। আর তাই এমনটা ঘটলে, ফুলমনির দেওয়া সপাট সত্যি উত্তরে আমাদের অতর্কিতে একটা ধাক্কা লাগে। আমরা নিজেদের কাছেও স্বীকার করি না যে—আমরা, নিজেদের স্বরূপটা ভেতরের আয়নায় দেখতে পেয়ে প্রভুত লজ্জা পাই।
ফুলমনির পদবিটা ভুলে গেছি। দুপুরবেলা তদানীন্তন একটা বাংলা সিরিয়াল (অন্তরালে) দেখতাম মাঝেমাঝে টিভিতে। ছোট মেয়েকে নিয়ে সকাল থেকে সংসারের অন্য কাজ শেষ করে বিশ্বভারতীর বিজ্ঞান বিভাগ—শিক্ষাভবনে প্রোজেক্টে ফেলো হিসেবে যেতাম বলে প্রায়ই দুপুরে বাড়িতে থাকতাম না। যেদিন থাকতাম, সেদিন কোনোভাবে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লে বেলা তিনটের সময় ফুলমনি মাথার কাছে এসে জাগিয়ে দিয়ে বলত, 'ওন্তরালে, শুরু হয়ে গেছে।'
ও যখন আমাদের বাড়ির কাজটা ছেড়ে দিল, ওর সঙ্গে negotiate করতে গিয়েও একই অভিজ্ঞতা। টানা দু থেকে আড়াই ঘণ্টা ওর সঙ্গে সোজাসুজি, ঘুরিয়ে, পেঁচিয়ে যত রকমভাবে সম্ভব কথা বলেও ওর কাছ থেকে ওর কাজে ইস্তফা দেবার কারণ জানতে পারিনি। ওকে পুনরায় কাজে যোগদান করাতেও পারিনি বলাই বাহুল্য।
সুমতিকে আর একটু ছোট বয়সে পেয়েছি। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার কালে এখানকার ছাত্রছাত্রীদের সমাজ-বিচ্ছিন্নভাবে বেড়ে উঠতে দিতে নারাজ ছিলেন। তাই বিশেষ উদ্যোগে এল্মহারস্ট ও লেওনার্ড কে সঙ্গে নিয়ে এই এলাকায় চারটি সাঁওতাল গ্রামের পত্তন করে সেখানে বেশ কিছু সাঁওতাল পরিবারকে নিয়ে এলেন। সেই থেকে এই সব আদিবাসী মানুষেরা একেবারেই তাদের নিজস্ব ধরনে, নিজস্ব মেজাজে জীবনযাপন করে চলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিশ্বভারতীর অঙ্গ হিসেবেই। তবে ইদানীং সামাজের মূলস্রোত এদের ওপর অনভিপ্রেত প্রভাব বিস্তার করছে।
ফুলমনি ছেড়ে যাবার পর আমাদের বাড়ির কাছাকাছি যে দুটি সাঁওতাল পাড়া, তার একটি- বালিপাড়ায় কাজের লোকের সন্ধানে সুমতির মায়ের কাছে গিয়ে পড়তে সুন্দরীদি বলেছিল, 'আমি তো ফরেসে (ফরেস্ট, বল্লভপুর অভয়ারণ্য) কাজ করি। সকালেই বেরিয়ে যাই। ঘরে কেউ থাকে না। ও ইস্কুল ছুটি হলে তোদের বাড়ি যাবে। ওখানেই থাকুক। কাজকর্ম করবে, খাবে। ওর মাইনেটা আমি গিয়ে নিয়ে আসব।' সেই কথাই রইল। কিন্তু যেটা সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের, কয়েকমাস পর সুমতি ইস্কুল যেতে বেঁকে বসল। আমি ওকে নিয়ে স্কুলের দিদিদের সঙ্গে দেখা করে এসেও লাভ হয়নি। কিছুতেই ওকে আর ইস্কুলে পাঠানো যায়নি। অতঃপর আমাদের বাড়িতে ওর ইমফর্মাল শিক্ষা চলেছে। ওর থেকে বছর ছয়েকের ছোট আমার মেয়ে যখন ইংরেজি ভাষার কিছুই শেখেনি তখন ওরা দুজনে মিলে The Lion King, The Little Murmaid, Baby's day out, Stuart Little, Home Alone (1-4) ইত্যাদি ছোটদের মন মাতানো বিশ্ববিখ্যাত হলিউড ছবিগুলি দেখত এবং দুজনেই দারুণ উপভোগ করত। ইংরেজি না জানাটা দুজনের কারুর ক্ষেত্রেই অন্তরায় হয়নি। তখনই প্রথম একটা অস্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়, তাহলে কি সিনেমার একটা নিজস্ব ভাষা আছে যা দিয়ে সে সরাসরি যেকোনো ভাষার দর্শককে কানেক্ট করে ফেলছে?
এ বাড়িকে সুমতি নিজের বাড়ি বলেই জানতো। বাগানে যে মরশুমে যা দুচারটে ফুল ফুটতো, যত্ন করে তুলে এনে সাজাতো। নতুন চাদর বা পর্দা কিনে আনলে উৎফুল্ল হয়ে বলে উঠতো,' ইশ্ মামি, আমাদের বাড়িটা আজকে কি সুন্দর লাগছে!'
আচ্ছা, আমি কোনদিন এই অনুভূতি বা ভালোবাসাটা ফিরিয়ে দিতে পেরেছি ওর প্রতি? কখনো সত্যিই ভেবেছি যে এটা ওরও বাড়ি?
ওরা অনায়াসে পারে কিন্তু আমরা এভাবে ভাবতে পারি না। এই প্রতিবন্ধকতা আমাদের শ্রেণি-বৈশিষ্ট্য। আমাদের তুলনাহীন সংকীর্ণতার লজ্জাজনক প্রমাণ।
ও, আর একটা মজার কথা বলি। পারিবারিক মিলন-উৎসবে একবার বাড়িতে আত্মীয়স্বজন অনেকেই এসেছেন রাজ্যের বাইরে থেকে এমনকি দেশের বাইরে থেকেও দুজন। বিকেলের দিকে সুমতিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খুঁজতে খুঁজতে শেষে দেখা গেল সে মেয়ে ছাদে উঠে বসে আছে গোমড়া মুখে।
'কিরে, এখানে কেন? কখন থেকে ডাকাডাকি করছি, চা বসাবি না?'
'না। আমি কি করে নিচে যাব? সব ঘরগুলোতেই তো কুটুম ভর্তি। আমি কোথায় থাকবো? তুই চা করে নে মামি।'
আর কটা বছর পর আমাদের সুমতিরানী বয়সের ধর্মে প্রেমে পড়লেন এবং সে প্রেম বিপদসীমা অতিক্রম করল। অগত্যা ডাক্তারের কাছে যাওয়া হল। কিন্তু সে মেয়ে কেঁদে ভাসিয়ে জানালো সে অস্ত্রোপচারে রাজি নয়। অতএব ছেলেটিকে ডেকে, তাদের বাড়িতে তার বাবাকে নিয়মমতো একটি মোরগ, কয়েক হাঁড়ি মদ বা পচুই, আর নগদ কিছু টাকা দিয়ে আমরা কন্যাপক্ষ এ বিয়ের আর্জি জানালাম। আর্জি মঞ্জুর হলো। বিয়ে হয়ে গেল সুমতির। আমাদের বাড়ির কাজটাও ছাড়তে হল। হিসেবমতো মাস দশেক পরে ওর কোলে আমাদের নাতনিও এসে পড়ল। এসব এক যুগ আগের কথা। সুমতি এখন বিশ্বভারতীর উদ্যানবিভাগে গ্রুপের কাজ পেয়েছে। ওদের মেয়েকে সেন্ট টেরিজায় ভর্তি করেছিলাম ওদেরই আব্দারে। সমর্থন ছিল না আমার। লকডাউনের পর রাজি হয়েছে বাংলা মিডিয়াম সরকারি স্কুলে ভর্তি করতে।
সেই ভীষণ লাজুক আদিবাসী কন্যাটি এখন জীবনের ঘা খাওয়া, পোড় খাওয়া, তিরিশের কোঠার যুবতী। এক মেয়ের মা। ওর সেই সেদিনের প্রেমিক যথারীতি সাঁওতাল পাড়াগুলোকে আপাদমস্তক গ্রাস করে ফেলা মহামারির মতো অসুখটির কাছে পরাস্ত হয়েছে। বেশিরভাগ সময়ে মদ খেয়ে পড়ে থাকে। মেয়ের জন্য আমাদের সেই ছোট্ট সুমতি আজ কী লড়াইটাই না করছে! লাজুক থেকে গেলে ওর চলবে?
ফি-শীতে সুমতি একদিন সকাল সকাল ওর অপিস বেরোনোর আগে এসে গোছা গোছা মরসুমি ফুলের চারা দিয়ে যায় আমাদের বাড়ি। ওরা যারা সেল্ফ-হেল্প গ্রুপে উদ্যানবিভাগে কাজ করে তাদের সকলকে কর্তৃপক্ষ কিছু চারা দেয়। সুমতি তার থেকেই কিছুটা ভাগ দিয়ে যায় আমাদের বাড়ি। বাকিটা ওদের নিজের বাড়িতে লাগায়। ফুল, গান, শিশু আর পশু এসবই ওর বিশেষ প্রিয় আমি জানি। আর অসম্ভব সৃজনশীল কেননা ওর নান্দনিক বোধ খুব সুন্দর। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের যে বুনিয়াদি গুণ—তা ওর ভেতর বহুল পরিমানে বিদ্যমান। সে ছবি আঁকা, ছুঁচের ফোঁড় তুলে কাপড়ে নক্সা তোলা, বা নানান কিসিমের গাছের ফলের বীজ দিয়ে গয়না বানানো, কতরকম ভাবে যে ওর সৃষ্টিশীলতা আত্মপ্রকাশের পথ খোঁজে! মনের আনন্দেই এসব করে। আরও অনেক না পাওয়ার ব্যথা বঞ্ছনা প্রশমিত হয়।
সুমতি যখন সন্তানসম্ভবা, তখন বাধ্য হয়ে আমাদের বাড়িতে ঠিকের কাজ করার জন্য সুরুলের এক বয়স্কা মহিলাকে রাখতে হল। উনিও থেকে গেলেন প্রায় এক দশক কাল। উনি ছিলেন জাতিতে বাগদী। বাড়িতে কারণে অকারণে এই সব সাঁওতাল মানুষজনের আসা যাওয়া দেখে ভারী বিরক্ত হতেন। মানে আমাকে আলাদা করে আপত্তি না জানালেও ওনার চোখে মুখে এই বিরক্তি এবং ওদের খানিকটা অনুকম্পা সমেত হেয় করে দেখবার প্রবণতাটা স্পষ্ট পড়া যেত। এমনকি এর মাঝখানে বাড়িতে রান্নার কাজ আর বলা যায় ঘরসংসারটা খানিকটা গুছিয়ে সামলাতে যখন আমাদের জীবনভুক্ত হলো করবী, করবী মুর্মু, ঠিকের মাসির কেন জানি না মেজাজটা থমথম করতো। যদিও মাসির আর করবীর দেখা হবার কোনো সুযোগ ছিল না কেননা দুজনেই একবেলা আসার খদ্দের। ঠিকে মাসি সকালে আর করবী বিকেলে। কিন্তু তবুও সকালে এসে বিগত সন্ধ্যার করবীর কাল্পনিক উপস্থিতি, ওর কাজকর্মের পড়ে থাকা চিহ্ন, এ সবই মাসিকে যে বিরক্ত করত তার কারণ এক. করবী সাঁওতাল মেয়ে। দুই. ওর সর্বক্ষণ মনে হত ওকে করবীর চেয়ে বেশি কাজ করতে হয়। অথচ দুজনের জব প্রোফাইল এত পরিষ্কার করে বিভাজিত যে ওরকম মনে হবার কোনো যুক্তি ছিল না। নিরুপায় আমি পক্ষপাত দুষ্টু না হয়েই বলতে পারি—করবী একটা দিনের জন্যেও এর উল্টো অভিযোগটা করেনি। উল্টে মাসি বয়স্ক মানুষ বলে মাসির ভাগের অনেক বাসন করবী মেজে রেখে যেত। এখনো ও তাই করে। এখন তো মাসি নেই। শবরীদির কথা ভেবেই কিছুটা ভার লাঘব করে যায় করবী কেননা এটা ওর স্বভাবোচিত।
মাসি কোনোদিন কিছু (প্রাপ্য বা অপ্রাপ্য) হাতে পেয়ে খুশি হয়ে মন থেকে ধন্যবাদ দেয়নি। এটা ঘটনা। দোষগুণের কথাটা এখানে আলোচ্য নয়। মাসিদের শ্রেণির সঙ্গে আমাদের শ্রেণির বেশ ভালোরকম মিল আছে। ধন্যবাদটা দেবার আগেই মাসির বা আমাদের মতো প্রাপকদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া—এ তো আমার প্রাপ্য। প্রাপ্যটুকু তো দেবারই কথা। তাতে আবার বাড়তি ধন্যবাদ জানানোর কী হলো? আর যদি বাড়তি কিছু দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে মনের মানচিত্রে যুক্তিক্রম হবে—ও ওদের অনেক আছে। তাই দিল। উড়ো খই গোবিন্দায় নমঃ। প্রয়োজন নেই বলেই না! তাতে খামখা কৃতার্থ হয়ে গেছি বোঝালে মাথায় চেপে বসবে। সেটি করতে দেওয়া যাবে না। বরং গৃহস্থকে আজকালকার দিনে চাপে রাখতে হবে যে—আমি যেকোনো মুহূর্তে কাজটা ছেড়ে দিতে পারি একটা বেশি ভালো সুযোগে জন্য। তাহলেই পাওনাগণ্ডায় কোনো কার্পণ্য করবার সাহস পাবে না। বিপরীতে এও ততখানি সত্য—ওদের কাজের প্রশংসা কিন্তু মনিবের তরফ থেকেও বড় একটা জোটে না আর জুটলেও ঠারেঠোরে, কৃপণের মতো, না বলতে পারলেই ভালো হত। কিম্বা এরকমটাই তো করার কথা। তার জন্যেই তো... সেই মোক্ষম তিনটি আলটিমেট শব্দ। ফলে এর নিষ্পত্তি হওয়ার নয় বললেই চলে।
এখন এতখানি জটিল সমীকরণ ছকার আগ্রহ বা ক্ষমতা, সচরাচর কোনোটাই নেই আদিবাসী মানুষজনের। প্রয়োজনও নেই। ওরা এসবের তোয়াক্কা করে না। ওদের মুখে বুকে এক কথা। ভীষণ স্বচ্ছ, একেবারে স্ফটিকের মতো। ভালো লাগলেও বলবে, না লাগলেও বলবে, মতামত চাইলে। ওরা বিশ্বাস করতে ভয় পায় না। সময় নেয় কিন্তু তারপর নিশ্চিত বিশ্বাসযোগ্য মনে হলে সবটাই বিশ্বাস করে। কিন্তু কোনো কারণে বিশ্বাস ভঙ্গ হলে সেই যে মুখ ফিরিয়ে নিল, সে মুখ আবার যথাস্থানে ফিরিয়ে আনাটা প্রায় অসম্ভব।
একেবারে নিজেদের শর্তে বাঁচে ওরা। সেই বাঁচাটা কিরকম? ওরা কোনো সময় কোনো প্রলোভনেও প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন হয় না, হয়নি। কিছু কিছু ব্যতিক্রম যে ঘটছেনা তা নয়।
এত বছর ধরে ওদের সঙ্গে এমন পাশাপাশি, ঘেঁসাঘেঁসি করে থেকে এই আমার উপলব্ধি।
করবীর বাল্যকালের স্কুলের স্মৃতি বেশ খাটো। ছোট থেকেই অভাবের সংসারে মাথার ওপর দুই দিদি থাকলেও গৃহস্থ বাড়ির কাজে লেগে পড়তে হয়েছে। তেমনই একটি বাড়ি ছিল আমাদের স্কুলের বাংলা শিক্ষিকা প্রয়াতা কৃষ্ণা হাজরা ও প্রয়াত কমরেড সরোজ হাজরার যেখানে ওর অনেক বছর কেটেছে গৃহসহায়িকার কাজের সুত্রে। কৃষ্ণাদি ওকে দিয়েছিলেন অক্ষরের অধিকার ও বাংলা ভাষাজ্ঞান। ফলে ও বই ও কাগজ পড়ে অবসরে। আর নিয়মিত খবর শোনে টিভিতে। ওর স্মৃতি রয়েছে—ওর বাবা মা দিদিদের বিয়ে থা দিয়েছেন প্রথা মেনে ঝুড়িতে চাপিয়ে ধুমধাম করে। আজ থেকে চোদ্দ বছর আগে যখন ওর মা-মারা যান তখন ও ছোট ছিল। কিন্তু মাতৃশোকে ওর বড়দি পাগল হয়ে যায়। ততদিনে ওদের বাবা শয্যাশায়ী। ফলে সব দায়িত্বটা এসে পড়ে অবিবাহিত, কাজ করে খেটে খাওয়া করবীর ওপর। আমাদের বাড়িতে কাজে যোগ দেবার এক বছরের মধ্যেই ওর বাবা মারা গেলেন। সেই পাগল দিদির সমস্ত দায়িত্ব করবী নিজেই নিজের ঘাড়ে নিয়েছে। পাগল দিদি করবীর অনেক কষ্ট করে জোগাড় করে আনা কিছু বিশ্বাসের তাগা-তাবিজ বা শেকড় বাকড় ওষুধ না খেয়ে যখন ছুঁড়ে ফেলে দেয়—করবীর অসহায়তাটা বুঝতে পারি। অবাক হই ওর ধৈর্য। ওর পাগল দিদির প্রতি মমত্ব আর ওর দায়িত্ববোধ দেখে। আশ্চর্য মেয়ে! এই মায়া মমতা, যত্ন ওর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আমরা যারা ওর সংস্পর্শে থাকি সবাই এই প্রসাদ পাই।
ওর ঈশ্বর বিশ্বাস একটা আছে। তবে খুব উচ্চকিত নয়। গ্রামে থেকে একবার বাস ছেড়েছিল ওদের উপাস্য দেবতা মারাংবুরু যাবার জন্য। আমাদের কাছে ছুটি নিয়ে সমস্ত নিয়ম ও উপাচার মেনে করবী ঘুরে এল সেই পাহাড়ের দেবতার কাছে।
তবে আরও একটা কথা আছে। এত বছর ধরে আদিবাসী মানুষের সঙ্গত করছি—করবী প্রথম মেয়ে যাকে মাঝেমাঝে গুনগুন করলেও, একটা দিনের জন্যেও, অন্যমনস্ক ভাবেও গান গাইতে শুনিনি। প্রায় দশ বছর ধরে ওর সঙ্গে ঘর করি বলে জানি—ওর পরিচ্ছন্ন বোধের অভাব না থাকলেও কোনটা দৃষ্টিনন্দন কোনটা নয়, মোদ্দা কথা সৌন্দর্য্যবোধের খানিক অভাব আছে যেটা এই কমিউনিটিতে একেবারেই ভাবা যায় না। ও কিন্তু সাঁওতাল সমাজ বিচ্ছিন্ন ভাবে কখনো জীবন কাটায়নি। ওদের উৎসব অনুষ্ঠানগুলিতে ও যোগদান করে তবে আমোদ আহ্লাদগুলিতে নয়। পুরুষদের সঙ্গে আলাপ করায় ও একেবারে স্বচ্ছন্দ নয়। উৎসাহীও নয়। আমাদের বাড়িতে যেই আসুক, ওর স্নিগ্ধ উপস্থিতি ও নীরব যত্ন তাদের সবাইকে ছুঁয়ে যায়। ওর চরিত্রের এই দিকগুলি আমাকে আশ্চর্য ও মুগ্ধ করে। আমি ওকে আরও খুঁজি। কোথায় আছে ওর টিপিক্যাল সাঁওতাল চরিত্রটা। তারপর মুখোমুখি হই ওদের জমিজমা ঠকিয়ে আত্মসাৎ করে নেওয়া ওদের এক অবস্থাপন্ন আত্মীয়ের বিরুদ্ধে ওর একরোখা, সৎ, একবল্গা জেদ, প্রতিবাদ ও সাহসের। চিনতে পারি আদিবাসী করবী মুর্মুকে।
এর আগে যাদেরকেই বাড়িতে কাজের সহায়িকা সুত্রে কাছে পেয়েছি—মুগ্ধ বিস্ময়ে তাদের শিল্পবোধ দেখেছি। যেকোনো উপকরণে আঙুলের সাবলীল রেখা, গলার সুর আর শরীরের ছন্দ- এ তো আদিবাসী মানুষের সহজাত। আর একটা মিল এদের সকলের মধ্যে পেয়েছি এত বছর যাবৎ। এরা সবাই গাছপালা, ফুল, পাখি, পশু প্রেমী। আমাদের বাড়ির যে মনুষ্যেতর সারমেয়ে, সেই সদস্যটি ছিল এদের সকলের চোখের মণি। ওরও এরা ছিল একই মাপে প্রিয় ও নির্ভরযোগ্য। বিগত ৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় সে যেদিন চলে গেল—বাড়ির শিউলিগাছের তলায় মাটি খুঁড়ে তাকে শেষ ঘুম পাড়াল ছুতোরদা, আমাদের মালি। তার আগে পরম মমতায় বাগানের কিছু ঘাস-ফুল-পাতা তুলে ওদের আদিবাসী লোকাচার-বিশ্বাসে মৃতের শরীর ছুঁয়ে কিছু উচ্চারণ। বেদনাতুর মন যেন ঠান্ডা মাটির প্রলেপ পেয়েছিল সেদিন।
তবে জীবজন্তুদের প্রতি মায়া মমতা সেই সাঁওতাল-বিদ্বেষী মাসিরও ছিল। মাসিদের বাড়িতে নানান পশুপাখি পোষা হত ব্যবসার কারণে। তবে এও ঠিক, সকলের ধরন ও প্রকাশ সমান নয়। সব প্রেক্ষিতেও সবাই স্বচ্ছন্দ নয়।
সুমতির অসম্ভব সুন্দর গানের গলা আর তেমনি রেঞ্জ ছিল। আমার গানের প্র্যাক্টিস শুনে ও যে কি অনায়াসে 'ও চাঁদ তোমায় দোলা দেবে কে' গাইত, আজ এতদিন পর লিখতে বসে সেই স্মৃতিটা রোমন্থনেও যেন মুহূর্তগুলো ফিরে পেলাম—কী যে সুখ!
ঠুংরি, আমার মেয়েকে ছোটবেলায় যে দেখতো, সেই সাবির কি কম ভালো গানের গলা ছিল? আর তেমন সুন্দর নাচতো। ওদের আদিবাসী গান আর মাদলের তালে তালে। অসম্ভব ভালো কান ছিল। একদম হুবহু যা শুনতো তুলে নিত। সে টিভি সিরিয়ালের টাইটেল সং, অ্যাডভার্টাইজিং এর গান, যা শুনতো। আর খুব চটপট।
এরা সব জীবনের মতো এমন করে আমাদের অস্তিত্বে জড়িয়ে গেছে যে লিখতে বসেছি বলে হুড়হুড় করে কত কথা যে মনে আসছে! আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছি বারবার।
'সিম মাকুরা কে কুহুই কুহুই কে/ দে গো বিটি দু লোরিয়া দে গো বিরিমে/ দারিসাকম সাগে নাকম নিউরু লাগেন গি/ মন মাহুকু জানেমকম গুজু লাগেনগি' এই সাঁওতাল ভাষার গানটা গেয়ে ও প্রতিদিন ঠুংরিকে ঘুম পাড়াতো। তাতে লাভের লাভ হল এই—ও বিয়ে হয়ে চলে যাবার পর ঠুংরিকে কেউ ঘুম না পাড়ালে ঠুংরি নিজেই বিছানায় গিয়ে এই গানটা গাইতে গাইতে ঘুমিয়ে পড়ত।
বছর তিনেক আগে জীবনে এসেছে শবরীদি আর সেই ছুতোরদা। ছুতোরদা হল সুমতির শ্বশুর। ইনিই তিনি যাকে মুরগি, মদ ও টাকা দিয়ে খুশি করে তবে আমরা সুমতির সঙ্গে ওর ছেলে দিলীপের বিয়েতে মঞ্জুর পত্রটি স্বীকার করিয়েছিলাম সেই সংকটকালে আজ থেকে ১২/১৩ বছর আগে! স্বাভাবিক নিয়মে এটাই জানতাম যে শবরীদি হলো সুমতির শাশুড়ি, দিলীপের মা। কিন্তু না, গল্পটা তা নয়। এই এক-দুমাস হলো জানতে পারলাম সুমতির আসল শাশুড়ি অর্থাৎ দিলীপের মা মারা গেছেন যখন দিলীপরা ছোট। শবরীদিরও নিজের পরিবারে স্বামী গত হয়েছে আর ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেছে। এরপর জীবনের কোনো এক বাঁকে শবরীদি ছুতোরদার সম্পর্ক তৈরি হয়। ভালো কথা। সেসময়ে ওরা একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ওদের সমাজের নিয়ম অনুযায়ী যখন থাকতে শুরু করে, ছুতোরদার ছেলেরা ক্ষেপে ওঠে। এই ক্ষেপে ওঠাটা কিন্তু ওদের সমাজের বৈশিষ্ট্য নয়। এটা আমাদের মধ্যবিত্ত তথাকথিত নাগরিক ভদ্রলোক শ্রেণি- সমাজের প্রভাব যা নানান আর্থ-সামাজিক, সমাজ-সাংস্কৃতিক parameter এ এই কমিউনিটির মানুষের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করছে বর্তমানে।
যা বলছিলাম, তারা শবরীদি এবং ছুতোরদা, দুজনকেই মারধোর করে। অতঃপর এই বয়সে রোজ অশান্তি করতে চায়নি ওরা। দুজনের এই কাছাকাছি দুটি আলাদা সাঁওতাল গ্রামে বাড়ি। কেউই নিজের বাড়ি বা সেই একার সংসার ফেলে রেখে অন্যের সংসারে গিয়ে হাজির হয়নি। কারুর কাছে কোনো নালিশ জানায়নি। তার বদলে ওরা ওদের জীবিকার সঙ্গে নিজেদের যাপনকে সংপৃক্ত করেছে অনায়াসে। সকালে ওরা দুজনে আমাদের বাড়িতে কাজে আসে। ছুতোরদা আমাদেরটা নিয়ে মোট তিনটে বাগানে কাজ করে এখানে ওদের সকালে দেখা হয়। প্রথম প্রথম অবাক হয়ে দেখতাম বারে! এই তো বাড়ি থেকে এল দুজনে , কাজ করতে করতেও দুজনের এত কথা হয়! কাজের শেষে দুজনে খুব আয়েস করে কুঁয়োতলায় বসে গল্প করতে করতে চা খায়।
এখানে কাজকর্ম সেরে শবরীদি এ পাড়াতেই একটা N.G.O অফিসে যায় ঝাড়ুমোছা, জল ভরার কাজ করতে। আর ছুতোরদা যায় অন্য বাড়ি বা কখনো বাজার। দুপুর দেড়টা নাগাদ শবরীদির অফিস ছুটি হলে ছুতোরদার সাইকেলের পিছনে চেপে বাড়ি ফিরতে দেখেছি প্রায়ই। বর্ষায় আমাদের সামনের গাবাটা জলে ভরে উঠলে তাতে আশেপাশের কিশোর কিশোরী ও নানা বয়সী নারীপুরুষ মাছ ধরে। কখনো কখনো দেখেছি ছুতোরদা শবরীদি পুকুরটার পাড়ে যেখানে কাঁচা নালাতে জল জমে ছোট ছোট শালুক ফুটে আছে, সেখানে দুজনে হাত ডুবিয়ে মাছ ধরছে। আমার সঙ্গে দেখা হওয়ায় খানিক লজ্জা মেশানো হাসি,' এই মাছ ধরে নিয়ে চললাম। এবার রান্না করে ভাত খাব।' আমাকেও মাছ ভাত খাবার নেমন্তন্ন দিয়ে গেছে যাবার সময়।
গেল বর্ষায় ওরা করল কী, যে মালিকের জমিতে ছুতোরদা মুনিষ খাটে, সেই মালিকের অনুমতি সাপেক্ষে সে জমিতে ধান চাষ করল ছুতোরদা শবরীদি দুজনে মিলে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে। অফিসের পর শবরীদি সোজা জমিতে যেত। ছুতোরদা ওখানেই ভাত নিয়ে আসতো। দুজনে সারা দুপুর গরু পাহারা দিত কেননা বেড়া দিয়েও বাগালদের চরতে ছেড়ে দেওয়া গরুরা বাগ মানতো না। সন্ধের মুখে ক্লান্ত হয়ে দুজনে যখন বাড়ি ফিরত, দেখেছি ওদের মুখে কি পরিতৃপ্তির হাসি, চোখে কি নিবিড় সুখ!
এই প্রৌঢ়ত্বে এসে একজন অসুস্থ হলে অন্যজন তার প্রাণপণ সেবা যত্ন করে। সময়ের স্রোতে দু বাড়ির ছেলেমেয়ে ও তাদের বৌ স্বামীরা এ ব্যবস্থাটার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। সন্তানরা বয়সকালে বাবামায়ের প্রতি যথেষ্ট কর্তব্য করছে না এ অভিযোগ দুজনেরই রয়েছে। তবুও ওরা ওদের মতো করে, নিজেদের terms এ নিজেদের জীবনটা বাঁচছে। এর চেয়ে স্মার্ট, আধুনিক, ফেমিনিস্ট জীবনদর্শন সত্যিই আমি দেখিনি। প্র্যাক্টিস করা তো দূরস্ত!
ফেব্রুয়ারি ২০২১ এ লকডাউন খানিক শিথিল হতে আমি আর ঠুংরি ধোত্রে, টুংলিং, টংলু, সান্দাকফু বেড়াতে গেছিলাম। শবরীদি যাবার কথা শুনে ওর সাবলীল ভঙ্গীতে বলে কি, 'শোন্, তুরা আমাদের জন্য ওখানকার হাঁড়িয়া এনে দিস তো। দেখব খেয়ে ওই দেশের লোক কেমন নেশা করে!' ওদের এ সব নিয়ে কোনো পাপবোধ, অপরাধবোধ তো নেইই, লুকোনোর মতো কিছুই মনে হয় না। কেননা এটা ওদের সমাজ স্বীকৃত একটি সংস্কৃতি।
বলা বাহুল্য ছুতোরদার মিটিমিটি হাসিই প্রমাণ করছিল উৎসাহ ওরও কিছু কম নয়। আমরা ওদের জন্য এক বোতল রডোডেনড্রন ফুল ও চাল থেকে তৈরি হওয়া হালকা গোলাপি রঙের গুরস (একরকমের পচুই) মদ এনে দিতে কি খুশি! পরের দিন এসে শবরীদি জানালো পাহাড়ী এই গুরসের নেশা নাকি খুব কড়া। ওর মাথা ঝিম ঝিম করছিল।
প্রায় তিন দশক সময়কাল ধরে আমাদের বাড়িতে কাজ করতে আসা আদিবাসী মানুষদের সান্নিধ্যে আছি। তবে এও ঠিক যে ওদের গ্রামে মাঝে মাঝে কোনো কাজে বা এমনি বেড়াতে গেলেও ওদের কাছে, ওদের পরিবেশে, প্রতিবেশে গিয়ে কখনো থাকিনি। ফলে ওদের জীবনকে জানাটা নিশ্চিতভাবে আংশিক ধারণা। তার ওপর ভর করেই ওদের জন্য একটা বিশেষ দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। যে সমাজ বীরসা মুণ্ডার জন্ম দেয়, যাদের নেতৃত্বে কুড়ি হাজার আদিবাসী ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে দেশের স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে এবং তারপর নিশ্চিত মৃত্যু বরণ করে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর রাষ্ট্র অন্ততপক্ষে তপশীলী জাতি ও উপজাতির জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নাগরিকত্ব দান সুনিশ্চিত করুক। এই শ্রেণির সার্বিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিক যাতে ফুলমনি, সাবি, সুমতি, করবী বা শবরীদিদের জীবনে গৃহসহায়িকার কাজ ছাড়া অন্য সুযোগ থাকে। ছুতোরদারা যেন সারা জীবন শুধুমাত্র মালী আর মুনিষ হয়ে নয়, মানুষের মতো জীবন কাটানোর সুযোগ পায়।
বিদিশা ঘোষ কবি, কথাসাহিত্যিক এবং শিক্ষক। তিনি ভারতের শান্তিনিকেতনের বসবাস করেন।