দুঃসময়
একরাম গতকাল রাতে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে ধরা পড়ে যায়।
হেমন্ত কাল। গভীর রাত। শীত আসি আসি করছে। সুবিশাল একটি মাঠের সবুজ ঘাসের কচি ডগাগুলো শিশিরে সিক্ত হয়ে আছে। মাঠের দক্ষিণে সীমানা প্রাচীর। সেটা চলে গেছে পুব থেকে পশ্চিমে অনেক দূর পর্যন্ত। এর সমান্তরালে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে সেগুন, চাম্বুল, বট, মেহগনি, দেবদারু, ইউক্যালিপটাস প্রভৃতি নানা ধরনের বৃক্ষ যা সুপরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়েছে। চাঁদের আবছা আলোয় গাছগুলো ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তমাল গাছের উঁচু এক ডালে একটা প্যাঁচা সেই কখন থেকে বসে আছে। রাতের নিরবচ্ছিন্ন নীরবতা খান খান হয়ে ভেঙে পড়ল দূরবর্তী কোনো ভয়ার্ত পাখির সুতীক্ষ্ণ আর্তনাদে। প্যাঁচাটা নিঃশব্দে উড়ে এসে মাঠের বুনো ঘাসের মধ্যে খাদ্য অন্বেষণরত একটা মেঠো ইঁদুর পা দিয়ে ধরে ধারাল ঠোঁট দিয়ে প্রথমেই মাথাটা এফোঁড়-ওফোঁড় করে ফেলল। কোত্থেকে যেন একটা শেয়াল ডাক দিল। আরও দুটো শেয়াল সাথে সাথে জবাব দিল। আকাশে কোনো মেঘ নেই। শত সহস্র কোটি নক্ষত্রের মাঝে এক ফালি নির্বিকার চাঁদ ছাই রঙা আকাশের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে থেকে আলোকিত করছিল এই মাঠ আর এই মাঠের চারপাশে যে বিশাল শহর আছে সেটাকে। হয়তো স্পার্টাকাসের বিদ্রোহের সময় অথবা ফরাসি বিপ্লব চলাকালীন সময় অথবা তিতুমীরের মরণপণ লড়াইয়ের সময়েও ওই চাঁদ একই রকম নির্লিপ্ত, ভাবলেশহীন, উদাসীন ছিল।
এই মাঠের ঠিক মাঝখানে চারতলা একটি ভবন রয়েছে। এটা কোনো এক গোয়েন্দা সংস্থার দপ্তর। এই ভবন থেকে একটি রাস্তা এসে মিশেছে পূর্ব থেকে পশ্চিমে চলে যাওয়া একটি চওড়া রাস্তার সাথে। ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি জিপ গাড়ি। এই গভীর রাতেও এর প্রতিটি তলায় মানুষের আনাগোনা টের পাওয়া যায়। প্রতিটি তলার জানালা দিয়ে আলো এসে বাইরের মাঠে পড়ে তার কিছু কিছু অংশ আলোকিত করছে। এই ভবনেরই তিন তলার একটি কক্ষে একটি ছোট টেবিলের অপর প্রান্তে চেয়ারে বসে আছে একরাম। তার হাত পিছনের দিকে হাতকড়া দিতে বাধা। কক্ষটিতে দরজা আছে মাত্র একটি। জানালা থাকলেও তা বায়ুরোধী। এই কক্ষ থেকে কোনো শব্দ বাইরে যেতে পারে না। দুটি দেয়ালে দুটি উচ্চ ক্ষমতার এলইওডি বাতি জ্বলছে। ছাদে লাগান ফ্যানটি খুব জোরে ঘুরছে। একটি দেয়ালের ভেতরে গেঁথে দেয়া দুটি মোটা লৌহদণ্ড থেকে ঝুলছে দুটি হাতকড়া।
একরামকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন দুজন কর্মকর্তা সাথে একজন সেপাই। একজন কর্মকর্তা জিজ্ঞেস করলেন বল তোমার ভাই কোথায় আছে। একরাম জবাবে বলল যে, সে জানে না। এবার সেই অফিসার সেপাইকে কিছু ইঙ্গিত করলেন। সেপাই একরামকে পরপর খুব জোরে দুগালে দুটো থাপ্পড় দিল। তার কান ঝাঁঝাঁ করতে লাগল। ১ম কর্মকর্তা আবার বলল, বলবে না? একরাম জবাব দিল সেই একই রকম। তিনি আবার সেপাইয়ের দিকে তাকালেন। সেপাই এবার একরামের গালে পূর্বেরমতোই খুব জোরে জোরে থাপ্পড় দিতে লাগল। টাস টাস শব্দ ক্রমাগত হতে থাকল। দুটি বা তিনটি থাপ্পড় পড়ল তার কানের ওপর। এখন আর তার কান ঝাঁঝাঁ করছে না। কিছুই শুনতে পারছে না এখন সে। কর্মকর্তার কথা মনে হচ্ছে অনেক দূর থেকে অতি ধীর গতিতে ভেসে আসছে। হঠাৎ তার চোখের সামনে ভেসে উঠল এক দৃশ্যপট। দৃশ্যটা প্রথমে ঝাপসা ছিল। তারপর ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হলো। ও-ইতো তার মা পিঠা বানাচ্ছে। তারা চার ভাই-বোন মাকে ঘিরে বসে পিঠা খাচ্ছে। সেটা শীত কালই ছিল। পরনে সবারই গরম কাপড়। মা ধোয়া উঠা পিঠা একরামের থালায় দিয়ে বললেন, আর দিব? সবাই তখন ছোট। হয়তো স্কুলে যায়। একরাম মাকে বলল, মা, পিঠা খুব মজা হয়েছে। মা বললেন, তাহলে আরেকটা দেই? এই কথাটা স্পষ্ট থেকে অস্পষ্ট হতে হতে অনেক দূরে মিলিয়ে যাতে থাকল। শেষে শ্রবণের সীমার মধ্যে আর রইল না। সে অনুভব করল ডান কানে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে। টের পেল ডান কানে একটা তরল আঠাল পদার্থ ধীরে ধীরে বাইরের দিকে বেরিয়ে যাচ্ছে। সে উপলব্ধি করল কেউ একজন জোরে তার চুল ধরে ঝাঁকুনি দিচ্ছে আর বলছে, বলবি না? তার সম্বিত ফিরে আসল।
এবার দ্বিতীয় কর্মকর্তা জিজ্ঞেস করল, তোমার পিস্তলটা কোথায়? তার কানে ও মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল। সে কোনমতে শুধু বলতে পারল, আমার কোন পিস্তল নেই। সে ঘামে ভিজে যাচ্ছিল যদিও ফ্যান পূর্ণ গতিতে ঘুরছিল। গালে, কপালে বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছিল আর কপালের দুপাশ দিয়ে এই নোনতা জলের একটা রেখা নিচের দিকে নামছিল। তার আকাশি রঙের টি-শার্ট গায়ের সাথে লেপটে গেছে।জিনস প্যান্টটাও ঊরুর ত্বকের সাথে লেগে গেছে। সে টের পেল তার স্যান্ডেল-সুজোড়াও ভিজে গেছে পায়ের পাতা ভিজে যাওয়ার কারণে। তার খুব পানির পিপাসা পাচ্ছিল। গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। অসুবিধা হচ্ছিল কথা বলতে। সে বলল, পানি খাব। ২য় কর্মকর্তা বলল, আগে বল পিস্তলটা কোথায় রেখেছ। আমার কোনো পিস্তল নেই, সে আবার জবাব দিল। সেপাইয়ের দিকে ইঙ্গিত করতেই সে একটা চিকন বেত বের করে একরামের গলার ডানে একবার বামে একবার জোরে জোরে সপাং সপাং শব্দে আঘাত করতে লাগল। গলায় বসে যেতে লাগল বেতের দাগ। সে নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এভাবে কিছুক্ষণ বেত দিয়ে আঘাত করার পর সেপাই চেয়ারসহ তাকে পিছনের দিকে ধাক্কা দিল। চেয়ারের পিছনের দিকটা আগে মেঝেতে শব্দ করে পড়ল। তার মাথা আঘাত করল টাইলস করা মেঝেকে। সে মাথায় অনুভব করল অবর্ণনীয় ব্যথা। ব্যথাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে হতে ভোঁতা হয়ে গেল। এখন কোন যন্ত্রণাই সে আর বোধ করছে না। তার জ্ঞান আছে না লোপ পেয়ে গেছে তা ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। যদি তার চোখের মনি দুটো স্থির দৃষ্টিতে এক দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখের মনির ভেতরে অনেক ভেতরে সুগভীর তলদেশে যেখানে পৌঁছুলে মনকে ছোঁয়া যায় সেখানে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে আরেক দৃশ্য। সেখানে ভেসে উঠছে অন্য রকম দৃশ্যপট। সেখানে দেখা যাচ্ছে ছাব্বিশ বছরের একরাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার একটি টেবিলের দুপাশে বসে কথা বলছে তেইশোর্ধ্ব মীরার সাথে। গাঢ় কফি রঙের টি-শার্ট আর জিনস পরিহিত একরাম মীরার বা হাতের আঙ্গুলগুলো তার মুঠোর মধ্যে ধরে রেখেছে। দুজনের সামনেই ধোয়া উদগীরণরত চায়ের কাপ। মীরার পরনে গাঢ় হলুদ বর্ণের সুতীর কামিজ, ওড়না আর সালোয়ার সাদা। গোলগাল চেহারার ফর্সা, প্রশস্ত কপালে রয়েছে ছোট্ট একটি হলুদ টিপ। পাতলা ঠোঁটে লাগান আছে রক্তবর্ণ চকচকে লিপস্টিক যেন সেখান থেকে একটি ফোঁটা এখনই ঝরে পড়বে। শ্যাম্পু করা ঝরঝরে সিল্ক মসৃণ লম্বা চুল ঝকঝক করছিল। সে চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী আর একরাম পাশ করে বেরিয়ে গেছে বছর তিনেক হলো। মাথার উপর ঘুরছিল ময়লা ফ্যান। চারিদিকের জানালা দিয়ে আলো আসা সত্ত্বেও ক্যাফেটেরিয়ার সবখানেই বাতি জ্বলছিল। বিভিন্ন টেবিলে বসে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের কথোপকথন গুনগুন আওয়াজ বিরাজ করছিল সর্বত্রই। মীরা ডান হাতে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিতে দিতে বলল, মা-তো রাজি আছেন, বাবাকে রাজি করাবার দায়িত্বও আমার। তুমি শুধু প্রস্তাব পাঠাও। শ্মশ্রুমণ্ডিত একরামকে একটু চিন্তিত দেখাল। সে মীরার হাত ছাড়ে দিয়ে বলল, আর ছটা মাস অপেক্ষা করলে হয় না? জবাবে মীরা গম্ভীরভাবে বলল, না। বাবা অস্থির হয়ে গেছেন। উপায়ান্তর না দেখে একরাম প্রস্তাব পাঠাতে রাজি হয়ে গেল। মীরা খুশির হাসি হাসল আর তার মুখমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ল আনন্দের ঝিলিক। একরাম মুগ্ধ হয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিল তাকে। কিন্তু একি! মীরাসহ সমস্ত ক্যাফেটেরিয়া জলের মতো তরল হয়ে স্রোতের সাথে কোথায় যেন ভেসে যাচ্ছে। একরাম অনুভব করল সে জলে ডুবে যাচ্ছে। সে ভেসে থাকার চেষ্টা করল। কিন্তু একটি হাত যেন তার মাথাকে জলের মধ্যে চেপে ধরে আছে। বন্ধ হয়ে আসছিল তার দম। সে নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না। তার ফুসফুসে জল ঢুকে যাচ্ছিল। সে জোরে জোরে কাশি দিল। কাশির সাথে সাথে তার মুখ দিয়ে জল বেরিয়ে এলো। সম্বিত ফিরে পেল সে। দেখতে পেল সেপাইটি বালতি থেকে তার মুখ লক্ষ্য করে জল নিক্ষেপ করছে।
সেপাইটি একরামকে চেয়ার সমেত তুলে বসিয়ে তার হাতকড়া খুলে দিল। তার মাথা ভন ভন করছিল। কষ্ট হচ্ছিল দম নিতে। এখনও সে কয়েকবার কেশে উঠল। চেয়ারে বসে থাকতেও তার ক্লান্তি লাগছিল। কোনোমতে শরীর ছেড়ে দিয়ে সে চেয়ারে বসেছিল। তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। সেপাইটি তাকে এক গ্লাস পানি এনে দিল। অতি কষ্টে দুহাত দিয়ে গ্লাস ধরে সে পানি খেল। অনেকটা পানি তার ঠোঁটের দুপাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে গেল। এবার ১ম কর্মকর্তা তাকে আবার জিজ্ঞেস করল, তোমার ভাই কোথায় আছে? সে ক্ষীণ কণ্ঠে জবাব দিল, জানি না। সেপাইটি এখন ১ম কর্মকর্তাকে বলল, স্যার এ জবর শক্ত মাল। কারেন্ট অথবা প্লাইয়ার্স ছাড়া কাজ হবে না। কর্মকর্তা বললেন নিয়ে এসো। সেপাইটি কক্ষ থেকে বেরিয়ে গিয়ে একটি প্লাইয়ার্সসহ পুনরায় কক্ষে প্রবেশ করল।
একরাম আর তার বড় ভাই ইমরান ফেরারি হয়েছে প্রায় আট মাস হলো। একরাম আশ্রয় নিয়েছে কমলাপুরের মেথর পট্টিতে। তার ভাই ইমরান লুকিয়েছে গ্রামে ওর শ্বশুর বাড়ির কোনো এক আত্মীয়ের বাসায়। তার ভাইয়ের সঠিক অবস্থানের কথা সে জানে না। দুভাইয়ের পরিবার খিলগাঁয়ে ওদের নিজস্ব বাড়িতে থাকে। একরাম দোতলায় ওর মা, স্ত্রী আর ছোট বোনকে নিয়ে থাকে। বড় ভাই থাকে তিন তলায়। দুভাই দু জায়গায় পালিয়ে থাকলেও তাদের মধ্যে যোগাযোগ আছে। একরাম প্রায়ই আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা মীরাকে দেখতে গভীর রাতে মাঝে মাঝে তার বাসায় উপস্থিত হয় যদিও অবস্থান করে খুব অল্প সময়। ইমরান বাসায় আসে খুবই কম। তবে সে তার স্ত্রী ও ভাই-বোনের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছে। পত্রবাহক মারফত অথবা মোবাইলে খোঁজখবর দেয়া-নেয়া করে। তারা দুভাই একই মামলার দুই ও তিন নম্বর আসামি। এই মামলার এক ও চার নম্বর আসামিদেরকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তারা আর বাড়ি ফেরেনি। তাদের কোনো খোঁজখবর আজ পর্যন্ত কেউ জানে না। সুতরাং তারা দুভাই যদি ধরা পড়ে যায় তাহলে তাদের কপালে কি ঘটবে সেটা সহজেই অনুমেয়। মীরা একরামকে এতো ঘন ঘন বাসায় আসতে নিষেধ করে কিন্তু তার প্রিয় মানুষটি তার কথায় কোন কর্ণপাত করে না। সে গতকাল এসেছিল। তার কী যেন হয়েছে। মীরাকে এক নজর দেখার জন্য সে আজও রাত দুটোর সময় ঘরে এসে হাজির। মীরা অনেক বকাঝকা করল এবং বলল শিগগির বেরিয়ে যাও। আর তখনই কলিং বেল বেজে উঠল। পালাবার কোনো পথই ছিল না। বাড়িটা গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা পুরোপুরি ঘেরাও করে ফেলেছিল। একরামকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মীরার প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। সে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দিল।
কয়েক দিন পর মেঘনা নদীর তীরে মেঘনা ব্রিজের নিচে একটি লাশকে ভাসতে দেখা গেল দুপুরের প্রখর সূর্যালোকে। ঢেউয়ের তোরে লাশটি বারবার বাড়ি খাচ্ছিল পাড়ের সাথে। ফুলে ঢোল হয়ে যাওয়া লাশটির পেটের ওপর একটি বিশ্রী শকুন বসে ঠোকরে ঠোকেরে খাচ্ছিল গলা থেকে পচে যাওয়া গলিত মাংস। বিকট দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল চারিদিকে। লাশের ডান হাতের চারটি আঙুলে কোনো নখ নেই। বিকৃত শ্মশ্রুমণ্ডিত চেহারা দেখে পরিচয় বের করা অসম্ভব। শবের পরনে জিনস প্যান্ট আর টি-শার্ট। তবে টি-শার্টের রং ঠিক বুঝা যাচ্ছে না কাদা পানিতে ভিজে থাকার কারণে। লাশটি ওখানে পড়ে থাকার জন্য নদী পথে চলাচলরত নৌ-যানগুলোর যাতায়াতে কোনো বিঘ্ন ঘটছিল না।
কিছুদিন পরের ঘটনা।
সারা ঢাকা মহানগরী পরিণত হয়েছে মিছিলের নগরীতে। দেশ আবার নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। শহরের প্রতিটি প্রশস্ত ব্যস্ত রাস্তার দখল নিয়ে নিয়েছে মিছিলকারীরা। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত সব সড়ক, মহাসড়ক, অলি-গলি, লেন, উপ-লেন। জনতার উল্লাস, হর্ষধ্বনিতে প্রকম্পিত হচ্ছে আকাশ-বাতাস, বহুতল ভবন, অট্টালিকা। জনস্রোত শহরের বিভিন্ন দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিজয়োল্লাস করতে করতে। ঝাঁঝালো রোদের তীক্ষ্ণতাকে অবজ্ঞা করে মানুষের ঢল এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। কারো হাতে পতাকা আবার কারও হাতে প্ল্যাকার্ড। এরকমই একটি মিছিলের অগ্রভাগে একরামের মতো এক যুবককে পতাকা হাতে দেখা গেল এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। আরে না, এই যুবক কে বলেছে একরামের মতো। সেতো একরামই।
কায়সার আহমদ কবি এবং কথাসাহিত্যিক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : নিদ্রাহীন রাত্রির কবিতা, প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : শোধ ও অন্যান্য গল্প। পেশাগত জীবনে তিনি সরকারি কলেজে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত।