ডায়েরি লেখা, লেখার ডায়েরি


দূরে কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে এখন। আকাশে ঘনিয়ে এসেছে মেঘ। ‘এখানে মেঘ গাভির মতো চরে’ সূর্যের  আলো পড়েছে তার ওপর। অপূর্ব সে আলো। মনে হচ্ছে মাঠের ওপর, গাছের ওপর যেন একটা ওড়না টানা। ওড়নার কথায় মনে পড়ল। তোমার সেই হালকা বেগুনি ওড়নাটা কি আজও আছে?

       রমলা পাতা উলটাতে গিয়েও থমকাল। চেনা টেবিল। চেনা হাতের লেখা। নিস্তব্ধ বাড়িতে ঘড়ির বড় বেশি চেনা টিকটিক। জানালার blinds নামানো। তাও জানালার বাইরে আবিরগোলা আকাশ স্পষ্ট। ওড়নার ঘেরাটোপ নেই। কার ওড়না? যে মানুষটার সঙ্গে এত বছরের চেনা একটা জীবন সে কাটিয়ে দিল চিনতে পারল কি তাকে? চিনতই যদি তাহলে নিশ্চয়ই টের পেত বেগুনি ওড়নার ফিসফাস। আর বিকাশ, তার কেজো, ছকে বাঁধা দিন কাটান বিকাশ, সে যে মেঘ বৃষ্টির নকশা দেখত কখনো এ কথাও তো সে জানতে পারেনি গত চল্লিশ বছরে। পাশাপাশি এতটা পথ হেঁটেও না। বিকাশ ছিল দায়িত্বশীল স্বামী। কর্তব্যপরায়ণ বাবা।

 খুব হইহই করে আসর জমাতে না পারলেও মোটামুটি মিশুকে প্রকৃতির মানুষই ছিল সে। কিন্তু তার মনের এই দিকটি তো কোনোদিন সে জানতে পারেনি। বেগুনি ওড়নার আড়ালে যে থেকে গেল তার মতোই আড়ালে ছিল বিকাশের কবিমন।  ডায়েরিটা বন্ধ করে রমলা। পাঁচ মাস আগে চলে গেছে বিকাশ। একা হয়ে গিয়েছিল রমলা। ফাঁকা বাড়িতে পুরনো বইয়ের স্তূপে এলোমেলো আঙুল চালাচ্ছিল। সবুজ ডায়েরিটা কিছু না ভেবেই হাতে তুলে নেয় সে। নিঃসঙ্গতার অনুভূতি বড় তীব্রভাবে বাজে তার বুকে। মনে হয় এতে চোখ না পড়লেই ভালো হতো। তাই কী? খারাপ লাগাও যেমন আছে, তেমন অন্য এক বিকাশকে আবিষ্কার করার উত্তেজনাও তো কম কিছু নয়। 

‘কী আশ্চর্য। 
তোমার বাড়ির সামনে বকুল ছিল না,
আমার ডায়েরিতে দ্যাখো,
এই তো বকুলগাছ, এই কমাটার পাশে শালিকের বাসা।’

ডায়েরিতে কী লিখি? মেঘ লিখি। বৃষ্টি লিখি। লিখে রাখি সোনা রোদ। বকুলগাছ আর শালিকের বাসা। 

মনের জানালা খুলে ডায়েরির পাতার সামনে বসা। সাদা পাতা। কত সম্ভাবনা! শব্দে শব্দে ভরিয়ে তোলার। ভাবনার ছবি ফুটিয়ে তোলার। একলা মনের গোপন অনুভূতিটি অনেক সময়ই ধরা থাকে ডায়েরির পাতায় পাতায়। ধরা যাক হঠাৎ করে আমাদের হাতে এসে গেল তলস্তয় বা আইনস্টাইনের ডায়েরি। যেমন হঠাৎ করে রমলার হাতে এসে পড়েছিল বিকাশের ডায়েরি। ‘সাত, ছয় ও চার বছরের অন্তু, সন্তু আর অধিকন্তু যেন এক সিঁড়ির তিনটি ধাপ। একই রঙের এক ডিজাইনের জামা পরে, মাঝে মাঝে পরে কেবলমাত্র ঘুনসি।’ 

আজ দেখি তিনজনে, ধুলোমাখা মুখ, উশকোখুশকো চুল, মারামারি করছে। হাতে ধরে পায়ে ধরে পিঠে চড়ে আর চ্যাঁচায়, ‘মার মার রাক্ষসকে মার।' আমার বাড়ির সামনেই এই লঙ্কাকাণ্ড। যুদ্ধটি থামিয়ে পঞ্চশীল এবং সহাবস্থানের কথা পাড়তে যাচ্ছিলাম, অন্তু তখন চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে, সহানুভূতির সঙ্গে বলে উঠল, ‘ঠাট্টাও বোঝেন না?' ‘দৃশ্যটি ফাদার দ্যতিয়েনের ডায়েরির ছেঁড়াপাতা থেকে নেয়া। এরকম আরও অসংখ্য দৃশ্যের ছবি তাঁর ডায়েরির ছেঁড়াপাতায় আর রোজনামচায়। পাঠক প্রশ্ন করতেই পারেন, ‘ফাদার দ্যতিয়েনের ডায়েরিতে কী লিখেছেন সে কথা তুমি জানলে কেমন করে হে? আর কেই বা এই ফাদার?’ প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলি, এখানে একটু গোল আছে। ডায়েরি জিনিসটি মানুষের গভীর গোপন ভাবনা ও অনুভূতি প্রকাশের জায়গা। কিন্তু কারও কারও ডায়েরি সাধারণের সম্পত্তি হয়ে যায়। তখন তা ডায়েরিসাহিত্য। পত্র-সাহিত্যের মতো। সেসব ডায়েরি বহুজনের সৃষ্টিশীলতার অনুপ্রেরণা, চিন্তার খোরাক, আনন্দের রসদ।

ফাদার দ্যতিয়েনের গদ্যসংগ্রহের ভূমিকায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন যে দেশ পত্রিকায় যখন ধারাবাহিকভাবে ওনার এই লেখাটি বের হতো সুনীলদা প্রতিটি সংখ্যার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতেন এবং ফাদার দ্যতিয়েনের লেখাটিই প্রথম পড়তেন। এবারে দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তরে আসি। তিনি বিদেশি হয়েও বাংলা ভাষা শিখে বাংলা সাহিত্যে তাঁর স্বাক্ষর রেখে গেছেন। বাংলাভাষাকে ভালোবেসে নিঃস্বার্থভাবে সেবা করেছেন ভাষাটির। ‘শ্রোতাকে অথবা পাঠককে প্রথমেই যা আকর্ষণ জোগায়, তা তাঁর ঋদ্ধিমান, সুস্বাদু আর প্রাণবন্ত শব্দভাণ্ডার, যা সম্পূর্ণভাবে জীবনানুগ আর জীবনধর্মী।’ তাঁর ডায়েরি থেকে সংগৃহীত। তিনি নিজে ছিলেন এইরকম সুস্বাদু শব্দভাণ্ডারের সার্থক উপাসক। 

   ‘You want to write, you need to keep an honest, unpublishable journal that nobody reads, nobody but you.’—Madeleine L' Englle.
   ডায়েরি কেন লেখা? নিজের সঙ্গে নিজে বলে চলা কথার ধারাবিবরণী হলো ডায়েরি। ভবিষ্যতের পাঠক তোমরা যদি হাতেও পাও সেসব মনে থাকে যেন এ হলো অন্যের গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ। রমলা ভাবে সে কি নিজের অজান্তে কোনো অন্যায় করে ফেলল? বিকাশ চাইলে তার ডায়েরি কি দেখাত না রমলাকে? ভাবীকালের পাঠকদের চিন্তা মাথায় নিয়ে তো আর কেউ ডায়েরি লেখে না। লেখক-লেখিকারা হয়তো একাত্মবোধ করবেন Madeleine-এর ভাবনাটির সঙ্গে। যাঁদের সৃষ্টি আমাদের মুগ্ধ করে চলেছে সময়ের পাহারা এড়িয়ে তাঁদের অনেকেরই অভ্যেস ডায়েরি লেখার। সেসব লেখায় ফুটে ওঠে তাঁদের স্বপ্ন আর সংগ্রামের ছবি, আশা আর আশাভঙ্গের কাহিনি।

কখনো বা নিছকই এলোমেলো, টুকরো টুকরো চিন্তা। সেসব লেখা ঘুরে দেখলে যাঁর ডায়েরি তাঁর নিজেরই হয়তো অর্থহীন মনে হয়। যেন এলোপাথাড়ি চিন্তার ঘোড়া! ছুটছে, হোঁচট খাচ্ছে নুড়ি পাথরের টুকরোয়, থেমেও যাচ্ছে হয়তো! মনে হতে পারে আদৌ কি দরকার ছিল এসব লেখার? অর্থহীন ভাবনার জঞ্জাল যত। একটু দ্বিধা থাকলেই এ লেখার থেকে বাদ দিয়ে দেয়া যেত কত কথা। কিন্তু এই জঞ্জালের গাদাতেই সারকথাটির বীজও আছে কি না! জঞ্জাল সরিয়ে সব সাফসুতরো করে ফেললে সে বীজ থেকে ফুল ফল পাতায় ভরা গাছের শোভা উপভোগ করার সম্ভাবনাও হারিয়ে যাবে চিরকালের মতো। টুকরো টুকরো অবান্তর চিন্তার ঝাপিটি আসলে ‘the diamonds of the dustheap.’ কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী বা বৈজ্ঞানিকদের ডায়েরি সরাসরি তাঁদের মনোজগতে প্রবেশের ছাড়পত্র। 

অন্যদের সামনে নিজেদের মনের গোপন ছবিটি তুলে ধরার জন্য যে তাঁরা কাগজের গায়ে কালির আঁচড় ফুটিয়ে তুলেছেন নিজেদের ডায়েরিতে—একথা কোনমতেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। যতই কেন আকর্ষণীয় হোক না তাঁদের ডায়েরির বিষয়বস্তু। তাহলে কী জন্য লেখা? বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকমের কারণ। দু-একটা উদাহরণ দিই। Anais Nin ফরাসি কিউবান মার্কিন প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পকার। তবে তিনি একজন ডায়েরি লেখকও বটে। এগারো বছর বয়সে ডায়েরি লিখতে শুরু করেন তিনি। ৭৪ বছর বয়সে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি নিয়মিত ডায়েরি লিখে গেছেন। সাকুল্যে ষোলোটি খণ্ড তাঁর ডায়েরির।

বিবিধ বিষয় নিয়ে ভাবনা ধরা আছে এই ষোলোটি খণ্ডে। তার কিছু সময়োপযোগী, কিছু বা কালোত্তীর্ণ। তাঁর জীবনে ডায়েরির ভূমিকা অমূল্য। শিল্পীর মনের জমাট আবেগ ও অনুভূতি যেকোনো সৃষ্টিশীল কাজের প্রধান উৎস। ডায়েরি লেখা তাঁকে যেমন লেখার আর্টটি আয়ত্ত করতে সাহায্য করেছে, তেমনি দিয়েছে দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতা। নিভৃতে করে চলা এই কাজটি কখন যেন একটা শিল্প হয়ে উঠেছে। নিছক দিনলিপি নয়—হয়ে উঠেছে ডায়েরিসাহিত্য। 

   ‘It was while writing a diary that I discovered how to capture the living moments. Keeping a Diary all my life helped me to discover some basic elements essential to the vitality of writing .’—Anais Nin always 

  আর বেঁচে থাকার মুহূর্তগুলোতে ধরে রাখতে গিয়ে লেখা হয়ে গেছে মনে দাগ কাটার মতো কিছু উজ্জ্বল ভাবনা। যেমন, ‘Something is always born of excess : great art was born of great terrors, great loneliness, great loneliness, great inhibitions, instabbilities, and it always balances them.’ যেন একখণ্ড হীরে। যেদিক থেকেই দেখি সেদিক থেকেই আলো ঠিকরোয়। 
     

       প্রফেসর হুঁসিয়ারের ডায়েরির সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় আছে কি? তিনি হলেন সুকুমার রায়ের অনেকগুলো অমর চরিত্রগুলোর মধ্যে একটি। হেশোরাম হুঁসিয়ার। তাঁর ডায়েরিটি আবার ভারি তথ্যবহুল। চিন্তা, ভাবনা, দর্শন সেখানে কতটা কী আছে তা আপনারা বিচার করুন। 

    ‘২৬ জুন ১৯২২—কারাকোরাম, বন্দাকুশ পাহাড়ের দশ মাইল উত্তর। আমরা এখন সবসুদ্ধ দশজন—আমি, আমার ভাগ্নে চন্দ্রখাই, দুজন শিকারি (ছক্কড় সিং আর লক্কড় সিং) আর ছয়জন কুলি। আমার কুকুরটাও সঙ্গে সঙ্গেই চলেছে।

    ২৪ জুলাই, ১৯২২-বন্দাকুশ পাহাড়ের একশো মাইল উত্তর। এখানে এত দেখবার জিনিস আছে, নতুন নতুন এত সব গাছপালা জীবজন্তু যে তারই সন্ধান করতে আর নমুনা সংগ্রহ করতে আমাদের সময় কেটে যাচ্ছে। দুশো রকম পোকা আর প্রজাপতি, আর পাঁচশো রকম গাছপালা, ফুলফল সংগ্রহ করেছি, আর ছবি যে কত তুলেছি তার সংখ্যাই হয় না।’

     ২৬ জুনের পর ২৪ জুলাই—এ কী রকম দিনলিপি? সে প্রশ্ন আমাকে করে লাভ নেই। তবে আমি জানি ভাগ্যিস প্রফেসর হুঁসিয়ার  যত্ন করে লিখেছিলেন তাঁর ডায়েরিটি। তা না-হলে হ্যাংলাথেরিয়াম, ল্যাগব্যাগর্নিস আর গোমড়াথেরিয়ামের মতো জীবের কথা আমরা জানতে পারতাম কী করে? তাদের কথা না জানলে অন্য কার কী ক্ষতি হতো বলতে পারি না তবে বাঙালির শৈশবের রং যে ফিকে হয়ে যেত এ বিষয়ে কোনো  সন্দেহ নেই। 

   বন্দাকুশ পাহাড়ের একশো মাইল উত্তর থেকে চলে যাই এবারে হল্যান্ডের এক শহরে।  Prinsengracht 263-এর অফিসবাড়ির উপরতলা সাধারণত নিস্তব্ধই থাকে। ১৯৪৪ সালের ৪ আগস্ট। চমকে দেয়া ব্যতিক্রম ঘটে গেল সেখানে। নিস্তব্ধতা খানখান। Miep Gies ভুলতে পারেনি সেই শব্দ। তার বন্ধুরা হুড়মুড় করে নিচে নামছে। তাদের পায়ের আওয়াজ যেন  অনেকগুলো  মার  খাওয়া কুকুরের  মতো। বেশ কিছু সময় পরে খানিকটা সাহস সঞ্চয় করে উপরে ওঠে সে। বন্ধু  ফ্রাঙ্ক পরিবারকে আমস্টার্ডামের বুকের ওপর দুটি বছর ধরে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করেছিল সে।  Jewদের প্রতি নাৎসি জার্মানির অকথ্য অত্যাচার ও হত্যালীলা থেকে  সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছিল বন্ধু পরিবারটির। উপরে ওঠে Miep দেখল যে জার্মান পুলিশ তছনছ করে গেছে সব। ছড়ানো-ছিটানো জিনিসের মধ্যে তার চোখ পড়ল লাল চেককাটা একটি ডায়েরির ওপর। তার লেখা পাতা ছেঁড়াখোঁড়া ছড়িয়ে আছে মেঝেতে। Miep হাঁটু গেড়ে বসে চটপট কুড়িয়ে নিল হাতে লেখা ডায়েরির সেইসব পাতা।  চাবি দিয়ে ড্রয়ারে রেখে দিল, যার জিনিস তার ফেরার আশায়। না—ডায়েরির লেখিকা ফিরে আসেনি। ধরা পড়ার কয়েক মাস পরে পনেরো বছরের Anne Frank অনাহারে আর অসুখে মারা যায় Bergen-Belsen concentration camp-এ। কিন্তু থেকে যায় তার ডায়েরি। থেকে যায় Holocaust-এর সময়ের এক প্রামাণ্য দলিল হয়ে। The Diary of a Young Girl—Anne Frank অনূদিত হয়েছে সত্তরটি ভাষায়।

Anne Frank বেঁচে থাকে সে সময়ের লক্ষাধিক Jewish শিশু-কিশোরের প্রতিনিধি হয়ে। তাঁর ডায়েরি তাকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছে। যে কাজ তাকে মানুষের স্মৃতিতে অমর করে রেখেছে, ছুঁয়েছে পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন, সেই ডায়েরি লেখা নিয়ে তার নিজের মনে প্রশ্ন ছিল। 

‘For someone like me, it is a very strange habit to write in a diary. Not only that I have never written before, but it strikes me that later neither I, nor anyone else, will care for the outpouring of a thirteen year old school girl .’

‘রোদ ঝলমলে দিন তোমার বেশি পছন্দ ছিল বরাবর। আমার কী মনে হয় জানো? রোদের তাপে ঝুঁকি নেয়ার ইচ্ছে আর চিন্তাশক্তি দুই-ই কেমন ভোঁতা হয়ে যায়। মেঘলা দিনে মন নিজের ভিতর ডুব দিতে চায়। জীবনে সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী। এ ভাবনাটা মেঘের মতো গড়িয়ে গড়িয়ে চলে।’

কার সঙ্গে মনে মনে এই আলাপন চালিয়ে যেত বিকাশ? রমলার জানার কোনো পথ নেই। জানতে চায় কি সে? একটা কথা সে বেশ বুঝতে পারছে। চল্লিশ বছরের বিবাহিত জীবনে সে বিকাশকে যতটা চিনেছে তার থেকে ঢের বেশি চিনল তাকে সবুজ ডায়েরির এই কয়টি পাতা পড়ে। ডায়েরি লিখতে বসা মানে তো নিজের মুখোমুখি দাঁড়ানো। মুখোশ ছাড়া। নিজেকে খোঁজা। চারপাশটার সঙ্গে নিজের সম্পর্কটা নিবিড়ভাবে জানা। সেই জানা থেকে অন্যদের জানা। ডায়েরি যখন সাহিত্য তখন তা পাঠকের সম্পত্তি। আর ডায়েরি সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য হলো এই সততা। বড় বড় মানুষদের ডায়েরি পড়লে নিজের মনের কোনো না কোনো তারে টান পড়ে। লেখকের আয়নায় পাঠক আবিষ্কার করে নিজেকে। রমলা উঠে পড়ে চেয়ার ছেড়ে। হাতের কাজগুলো তাড়াতাড়ি সেরে নিতে হবে। অন্য এক ভ্রমণের অমোঘ আকর্ষণ তাকে অস্থির করে তোলে। 
 


রঞ্জিতা চট্টোপাধ্যায় লেখক এবং শিক্ষক। গত দুদশক ধরে আমেরিকা প্রবাসী। Bugging Cancer এবং Three Daughters Three Journeys-এই দুটি বইয়ের রঞ্জিতা একজন সহলেখিকা।

menu
menu