দুটি কবিতা ।।। আতাউর রহমান মিলাদ

ক্ষরণ
এক চোখ রেখেছি খোলা অন্য চোখ বন্ধ
দুর থেকে ভেসে আসে ছারপোকার দ্বন্দ্ব
দিকে দিকে উত্থিত হাত, প্রার্থনার ফুল
দূরের হাওয়ায় দুলছে মাটি, অর্জনের ভুল।
বিজ্ঞাপিত যাপনের কাল, সময় স্বপ্নহারা
তপ্তরোদে পুড়ছে বুকের ওম, মৃত স্রোতধারা
চারপাশে সন্দেহ এত, থেমে গেছে গান
ছেঁড়াখোঁড়া খামে, মেঘজমা অভিমান
বেড়ালের পায়ে ঘুরে এক মুণ্ডুহীন সাপ
ধারহীন পেন্সিলে কাটে, গৃহের পাপ
আত্মদান
আঁচলের গিটে বেঁধে চাবির কৌশল, ঘরময় বেড়ায় ঘুরে আপন খেয়ালে।
গোছালো জীবন, থরে থরে সাজানো নিপুণ শো-কেস।
অন্যের আয়নায় মুখ দেখে যাত্রা করে শুরু।
আলগোছে তুলে রাখে বেদনার গূঢ় রহস্য ও বাদামি কফির দাগ।
সাদা চশমার আড়ালে লুকানো গোপন বাসনা।
সমবেত ঢেউয়ের আনন্দ স্নান।
ঐতিহ্যের এ্যাকুরিয়ামে মাও কি স্বেচ্ছায় নিয়েছে বেছে, সোনালি মাছের জীবন?
হায় মাছ! তোমাদের উজ্জলতা বাড়ে, মায়ের জীবন বাড়ে না।
ত্রিভুজ সংসারে মা মৃত স্বপ্ন বিলায়!
বাবা, কঠিন যাদুকর! তাঁর লোমশ হাত নিভিয়ে দিলে বাতির খোয়াব, মায়ের শিথানে জমে
বৃত্তাবদ্ধ অন্ধকার। আঁধার ছলনা ভেঙে মায়ের কৃপণ স্বভাব,
আগলে রাখে মায়ার তোশক। পরস্পর জীবনের কোমল স্পর্শ।
সে ধারণ করে এক সমুদ্র জল, মুছে দেয় যত যন্ত্রণাভার।
মা, ডাকহরকরা এক, ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয় আগুনের আঁচ,
বুকে বুকে উষ্ণ গভীর প্রেম।
মায়ের বনসাই পৃথিবীতে বাবা তার ছায়া ফেলে রাখে।
মা, নিজের ছায়া দেখে না।
বিশ্বাস রাঙানো দিনে, পুষে রাখে অনবদ্য অহংকার।
বদলে যাচ্ছে পৃথিবী, অবিরত ভাঙনের স্বাক্ষর।
চারপাশে বিভাজিত পথরেখা, আঁচলের গিঁট খুলে মা,
ভালো করে নিজের মুখ দেখে না!
আতাউর রহমান মিলাদ কবি এবং কথাসাহিত্যিক। এ পর্যন্ত তাঁর ৭টি কাব্যগ্রন্থ, ২টি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাস করেন।