গল্পের সিনেমা বা সিনেমার গল্প

বই, ছবি, ছায়াছবি, চলচ্চিত্র বা সিনেমা। এই কথাগুলির মধ্যে দিয়েই বোঝা যায় চলচ্চিত্র প্রায়শই তার উপজীব্য সাহিত্য থেকে গ্রহণ করেছে, শুরুতে এবং আজও।
স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্নটি আসে চলচ্চিত্র কী?
গল্পের চিত্রায়ন, নাকি আরও কিছু। গল্প উপন্যাসের চিত্রায়ন ছাড়িয়েও চলচ্চিত্র আজ একটি ভিন্ন মাত্রার ভিন্ন ভাষায় পরিগণিত। যা শুধু গল্প বা ভাবনা নয়, নয় শুধু ছবি, কথা বা শব্দ। বরং গল্প-উপন্যাসের ভাবনা, কথা, শব্দ, ছবি মিলিয়ে অন্য এক সামষ্টিক সৃষ্টি—‘ইমেজ’। যা শুধু বিনোদন নয়, বরং তা ছড়িয়ে দিতে পারে প্রশ্ন, ভাবনা আক্রান্ত করতে পারে দর্শককে, পরিবর্তন করতে পারে তার চিন্তা চেতনা।
তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন চলে আসে আধুনিক চলচ্চিত্র কেমন হবে, হচ্ছে বা হওয়া উচিত। এক দশকের বাংলাদেশের ছবির যদি তালিকা করা হয়, সেখানে পাঁচটি ভালো ছবির নাম পাওয়া কঠিন। কেন এই দৈন্য দশা? কেন ভালো ছবির এতো অভাব? কেন নির্মাতা তার বিষয়বস্তু খুঁজে পাচ্ছেন না বা পেলেও নির্মাণে চলচ্চিত্রের ভাষা রপ্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন?
একটি চলচ্চিত্র কী ধরনের হবে সেটা নির্ভর করে তার নির্মাণের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যের ওপর। যখন বাণিজ্যই প্রধান লক্ষ্য, তখন সেই চলচ্চিত্রের মধ্যে তা সুস্পষ্ট ভাবে ফুটে ওঠে।
চলচ্চিত্র কেন বানাবো আমরা? এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি মাধ্যম। সেই ব্যয়ের বেশির ভাগটাই আবার বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধিত। ক্যামেরা থেকে যন্ত্রপাতি—সবই আনা হয় বিদেশ থেকে, পোস্ট-প্রডাকশনও  অনেক ক্ষেত্রে হয় বিদেশে।
খুব স্বল্প-বাজেটের ছবিতেও বাংলাদেশে ৬০/৭০ লাখ থেকে কোটি টাকা ব্যয় হয়। এতো টাকা ব্যয় করে নির্মাতা ছবি কেন বানাবেন?
যারা শুধু মাত্র বাণিজ্যের লক্ষ্যে লগ্নিকৃত টাকার কয়েকগুণ প্রবৃদ্ধির জন্য চলচ্চিত্র নামের যে পণ্যটি নির্মাণ করবেন বা করেন, তা প্রায়শই চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে না। অপর দিকে একজন স্বাধীন নির্মাতা যার আর্থিক সংগতি আরও কম, তিনিই বা দ্বারে দ্বারে ঘুরে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চান কেন? নিশ্চয়ই তার কিছু বলার আছে বা প্রকাশের আকাঙ্ক্ষা আছে। সমাজ, রাষ্ট্র, দর্শন, ব্যক্তি-সর্ম্পক বা কোনো ঘটনার বিশেষ দিক তিনি তুলে ধরতে চান। পরিচালকের যদি কিছু বলার না থাকে, যদি তার ভাবনাটি যথেষ্ট ঋদ্ধ না হয়, তবে সে ছবি বানানো অর্থহীন।
চলচ্চিত্র নির্মাতা অবশ্যই দশ জনের চেয়ে ভিন্ন একজন মানুষ। সবাই ছবি বানান না, কেউ কেউ বানান। যিনি বানান তিনি প্রথমেই ভাবেন, তিনি কী ছবি বানাবেন। তার বিষয়বস্তু কি হবে বা গল্পটি কি এবং কেন, কি তিনি বলতে চান।
চলচ্চিত্র নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ধাপ।
প্রথম ধাপ হচ্ছে—পারসেপশন বা ধারণা। তিনি কোনো বিষয়বস্তুকে আত্মস্থ করছেন বা ধারণ করছেন। কোনো গল্প বা ভাবনার ওপর তিনি চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে চাইছেন। 
দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে—এক্সিকিউশন বা সেই ভাবনা বা গল্পটি তিনি কীভাবে প্রকাশ করবেন। পরিচালকের  ক্ষেত্রে এই দুটি ধাপই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ভালোভাবে বানিয়েও একটি দুর্বল বিষয়বস্তুকে আকর্ষণীয় ভাবে প্রকাশ করা যাবে না। আবার একটি আকর্ষণীয় বিষয়বস্তুকেও দুর্বলভাবে বানালে চলবে না। সেক্ষেত্রে দুটির একটি যূথবদ্ধতা বা সমন্বয় দরকার।
সত্যজিতের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করি তিনি রবীন্দ্রনাথের গল্প-উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র বানিয়েছেন, বিভূতিভূষণ, শংকর বা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর উপন্যাস ও নিয়েছেন। ঋত্বিক ঘটকের তিতাস একটি নদীর নাম, অযান্ত্রিক, মেঘে ঢাকা তারা, মসিহ্উদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলীর সূর্য দীঘল বাড়ি, গৌতম ঘোষের পদ্মা নদীর মাঝি, কালজয়ী এসব ছবির বিষয়বস্তু সাহিত্য থেকেই নিয়েছেন পরিচালকেরা। 
বাংলাদেশেও প্রথম থেকে মুখ ও মুখোশ, আনোয়ারার ধারাবাহিকতায় জহির রায়হান বা আমজাদ হোসেন, আলমগীর কবিরসহ অনেকেই সুন্দর বিষয়বস্তুর সুস্থ্ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন সাফল্যের সঙ্গে। সাহিত্যকেও উপজীব্য হয়েছে—আবু ইসহাক, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, মাহমুদুল হক, হুমায়ূন আহমেদ-এর উপন্যাসও এসেছে চলচ্চিত্রে। 
আবার পশ্চিমের দিকে তাকালেও দেখা যায় আলবার্তো মোরাভিয়া, মার্কোয়েজ, মিলান কুন্ডেরা, গুন্টার গ্রাস এর সাহিত্য উঠে এসেছে সিনেমায়। কুরোসাওয়াও শেক্সপীয়ার, দস্তয়েভস্কি বা রিউনকো আকুতোগাওয়ার লেখা বেছে নিয়েছেন অবলীলায়। আলব্যেয়ার কামু, অপটেন সিনক্লেয়ার, জন স্টেইনবেক, স্টিফেন কিং, কাজুয়ো ইশিগুরো, জে কে রোলিং, কিংবা হার্পাল লি বা চালর্স ডিকেন্স—এরকম  অসংখ্য লেখকের সাহিত্যের ওপর নির্ভর করেছেন পরিচালকেরা।
সাহিত্য, চলচ্চিত্রের গল্প বা ভাবনার একটি বড় সংস্থান হতে পারে, যা ইতোমধ্যে প্রমাণিত। সারা বিশ্বেই কালজয়ী সাহিত্য চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সাহিত্যের চলচ্চিত্রায়ন নিয়ে পাঠক ও দর্শকের দ্বন্দ্ব বা বিতর্ক একটি পুরাতন বিষয়। পাঠক প্রেক্ষাগৃহে তার প্রিয় সাহিত্যের চিত্রায়ন দেখে অসন্তোষ্ট হন প্রায়শই। তারা উপন্যাস ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমগত ভিন্নতা বুঝতে ব্যর্থ হন এবং অনুধাবন করতে পারেন না যে বিভূতিভূষণ এর পথের পাঁচালী ও সত্যজিতের পথের পাঁচালী একই প্রেক্ষাপটে দুটি ভিন্ন শিল্পকর্ম।
অনেক সময় অভিযোগের তীর ছোঁড়েন স্বয়ং গল্পকার বা ঔপন্যাসিক নিজেই। জন স্টেইনবেকের লাইফ-বোট নিয়ে হিচকক যখন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, তখন ভীষণ অসন্তুষ্ট হন স্টেইনবেক। আবার সদা-রসিক হিচকক তার হিচকক অন হিচকক গ্রন্থে বলেন, তিনি এমন অনেক গল্প থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, যার সামান্যই তিনি ব্যবহার করেছেন।
অপটেন সিনক্লেয়ার এর অয়েল-এর একটি দূরবর্তী ছায়া অবলম্বনে নির্মিত, অ্যান্ড দেয়ার উইল বি ব্লাড-এর পরিচালক থমসন এ্যান্ডারসন সে ভাবেই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে চেয়েছেন এবং ছবিটি প্রশংসিত হয়েছে।
মিলান কুন্ডেরার আনবেয়ারেবল লাইটনেস অফ বিয়িং-এর পাঠক চলচ্চিত্রটি দেখে সন্তুষ্ট নাও হতে পারেন। স্টিফেন স্পিলবার্গ এর শিন্ডলার্স লিস্ট, থমাস কিনেলীর উপন্যাস থেকে ভিন্ন। স্পিলবার্গ গল্পের ধারাবাহিকতা পরিবর্তন করেছেন, বিয়োজন করেছেন নির্মমভাবে, কিন্তু আরও জোরালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন হলোকাস্টের রোমহর্ষক বাস্তবতা।
রবার্ট জেমেকিস এর ফরেস্টগাম উইনস্টোন গ্রুম এর বই থেকে অনেক ভিন্ন, মূল্যবোধ বা উপস্থাপনায়। ওয়ান ফ্লিউ ওভার দি কাকু’স নেস্ট এ পরিচালক মাইলোস ফোরম্যান এর দিকেও অভিযোগের তীর ছোটে উপন্যাসের প্রতি অবিশ্বস্ততার জন্য। কিন্তু চলচ্চিত্রটি একটি ভিন্ন মহত্বে পৌঁছে যায় সব কিছুর পরও।
হলিউডের বিরাট সংখ্যক সুনির্মিত ছবি সাহিত্য থেকে নেয়া। শত শত উদাহরণ রয়েছে, রয়েছে প্রশ্ন, অভিযোগ এবং স্তুতি। কিন্তু ভাব প্রকাশের এই সর্বাধুনিক ও সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম চলচ্চিত্র তাতে বিব্রত নয়, বরং তা দর্শকের জন্য আরও আগ্রহের, আরও নতুন অভিজ্ঞতার। বিরূপ সমালোচনার মূলেও রয়ে যায় দশর্কের সীমাবদ্ধতা বা পরিচালকের ব্যর্থতা।
এবার আসা যাক গল্প উপন্যাসের গণ্ডি ছাড়িয়ে স্বাধীনধারার সিনেমার কথায়, যেখানে নির্মাতা তার নিজস্ব উপলব্ধি, অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তার সিনেমায়। তার চারপাশের ঘটমান বাস্তবতা, রাজনীতি, জনপদ উঠে আসে তার চলচ্চিত্রের পর্দায়। তিনি নিজেই রচনা করেন তার গল্প, চিত্রনাট্য। দর্শকও তার ব্যক্তিগত ভাবনার ওপর নির্মিত চলচ্চিত্র দেখেন গভীর আগ্রহ নিয়ে। বিশ্বজুড়ে চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে এই ধরনের সিনেমা বিশেষভাবে মূল্যায়িত হয়। কারণ সিনেমা তো নিত্য প্রতীক্ষায় থাকে নতুন ভাবনার জন্য, নতুন নিরীক্ষার জন্য। ইরান, তুরস্ক, ইউরোপ, লাতিন অ্যামেরিকা, এশিয়া থেকে নতুন প্রজন্মের তরুণরা হাজির হন তাদের নতুন ভাবনা নিয়ে। 
আমার চলচ্চিত্রগুলিতেও আমি সাহিত্য এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমার প্রথম ছবি জয়যাত্রা, আমজাদ হোসেনের উপন্যাস অবেলা অসময়-এর ওপর রচিত, দারুচিনি দ্বীপ হুমায়ূন আহমেদ এর জনপ্রিয় উপন্যাস। ফাগুন হাওয়ায়  হাফিজুর রহমানের ছোট গল্প ’বউ কথা কও’ দ্বারা অনুপ্রাণিত।
হালদা আজাদ বুলবুলের-গল্পে চিত্রনাট্য আমার। কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হালদা যখন বিপন্ন হয়, তা নিয়ে কথা বলার প্রয়োজনেই হালদা ছবির নির্মাণ। মনুষ্য নানা অত্যাচারে জর্জরিত হালদায় যখন বাধাগ্রস্থ হয় মাছের প্রজনন, তখন নদীই নারীর জীবনের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে, মাছের প্রজনন ও নারীর মাতৃত্ব তখন একই সমান্তরালে দর্শকের সামনে উপস্থিত হয়। 
রূপকথার গল্প আমার মৌলিক রচনা। মানুষের জীবনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এ বিশ্বের সব আয়োজনের কেন্দ্র সে। তার ক্ষুধা ও বেঁচে থাকা নিয়েই—রূপকথার গল্প। 
অজ্ঞাতনামার ক্ষেত্রে, আমি একটি মৌখিক সংবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত হই। ময়মনসিংহের এক গ্রামে মধ্যপ্রাচ্য থেকে একটি কফিন আসে, কিন্তু তার ভিতরে এসেছে অন্য কারো শব।
সংবাদটি আমাকে ভীষণভাবে ভাবায় মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত শ্রমিকদের বিষয়ে। আমি তথ্য সংগ্রহ শুরু করি। দীর্ঘ পাঁচ ছয় বছরের গবেষণার মধ্য দিয়ে রচিত হয় একটি মঞ্চনাটক—অজ্ঞাতনামা। পরবর্তীসময়ে সেটাকেই আমি রূপান্তর করি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যে।
সংবাদ বা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেও রচিত হতে পারে চলচ্চিত্র। আমাদের চারপাশের সমাজ বা ইতিহাস এর গৌরবোজ্জ্বল ঘটনাও উঠে আসতে পারে চলচ্চিত্রে, (জয়যাত্রা মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, ফাগুন হাওয়ায় ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত)।
একইভাবে হালদা পাড়ের জনপদের গল্পও হয়ে উঠতে পারে বিশ্বজনীন। ছবিগুলি তখন পৌঁছে যেতে পারে জার্মানি, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স, কসোভো, তিউনিশিয়া বা শ্রীলঙ্কায়।
প্রযুক্তির এই বিপ্লবের যুগে সহজলভ্য হয়েছে নির্মাণ-প্রযুক্তি, কেউ চাইলে স্বল্প ব্যয়ে জিরো বাজেটেও বানাতে পারেন ছবি। তাহলে আমাদের চলচ্চিত্রের এই দুরবস্থার কারণ কী?
আমরা কী বুঝতে পারছি না, কী বানাবো, কেন বানাবো, কীভাবে বানাবো?
কী বা কেন বোঝা গেলেও, কীভাবে বানাবো প্রশ্নটিও কিন্তু গোড়ার সেই এক্সিকিউশনের বিষয়। দেশে সেভাবে গড়ে উঠেনি ফিল্ম ইনস্টিটিউট বা অভিনয় স্কুল। অভাব রয়েছে প্রক্ষেপণ ব্যবস্থারও, মিলনায়তন স্বল্পতা প্রকট, সিনেপ্লেক্সগুলি সাধারণের কথা ভাবছে না। ওগুলি ব্যয়বহুল এবং জন-বিচ্ছিন্ন। সর্বোপরি, রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারণী মহলেও গুরুত্ব পাচ্ছে না শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি তথা চলচ্চিত্র। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনিয়ম স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক বিবেচনা। সুতরাং অনুদান ও পুরস্কারের ক্ষেত্রেও অনুৎসাহিত হচ্ছেন সৎ নির্মাতা। জনগণের অর্থের অপব্যয় হচ্ছে সমানে।
কিন্তু যুগটা তো তথ্য প্রযুক্তির, নির্মাতাকে নিজের দায়িত্ব নিজেকে নিতে হবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন ঘরে বসেই চলচ্চিত্র শিক্ষাগ্রহণ সম্ভব, অনলাইনে দেখে ফেলতে পারেন বিশ্বের ভালো ভালো ছবি। নিজেকে নিজেই প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারেন আপনি, যদি আসলেই চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসাটা থাকে। একটি ভালো ছবি অতিক্রম করে যেতে পারে সকল ভৌগোলিক সীমানা।
একটি ভালো ছবি যেমন ছড়িয়ে পড়তে পারে অনলাইন স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে, একই সঙ্গে একটি খারাপ ছবিও রয়ে যাবে অনলাইনে যা ঘুরে ঘুরে লজ্জা দিতে পারে নির্মাতাকে।
ভলতেয়ারের একটি উক্তি লেখকদের উদ্দেশ্যে—‘যতক্ষণ তুমি না লিখে থাকতে পারো’, দ্বিতীয় লাইনটি হচ্ছে, ‘কারণ সাহিত্যে আবর্জনার কোন স্থান নেই’।
আমার মনে হয় ভলতেয়ারের এই কথাটি শিল্পের সব শাখায় প্রযোজ্য। চলচ্চিত্রেও আবর্জনার কোনো স্থান নেই।
প্রতি বছর নির্মিত হচ্ছে হাজার হাজার চলচ্চিত্র, কিন্তু ভালো ছবির স্বল্পতা রয়েই যাচ্ছে। প্রচার এবং মার্কেটিং এর যুগে অনলাইন প্লাটফর্ম গুলি ক্রাইম, থ্রিল আর যৌনতাকে ভর করে বাণিজ্য করছে। রুচির আকালে, দর্শকও মোহিত হচ্ছেন চোখ বাঁধানো উপস্থাপনায় আর প্রচারে। কিন্তু প্রকৃত চলচ্চিত্রের অভাব তাতে পূরণ হচ্ছে না। তাই  নির্মাতাকে আবার ভাবতেই হবে—কী বানাবো, কেন বানাবো, কীভাবে বানাবো। এ প্রসঙ্গে সালমান রুশদীর হারুন এন্ড দি সি অফ স্টোরিজ গল্পে হারুনের রূপকথার যাত্রার কথা স্মরণ করতে চাই। তার বাবার গল্পের ভাণ্ডার হারিয়ে যাবার পর হারুন যেভাবে আবিষ্কার করে—তার চারপাশে  ছড়িয়ে থাকা একেকজন মানুষই একেকটি গল্পের আধার। সেরকম নির্মাতাকেও হতে হবে সৎ, সংবেদনশীল এক র্পযবেক্ষক। আর তখনই তিনি আবিষ্কার করবেন তার গল্পের ঝুলি। চারপাশে ঘটমান র্বতমান, বিস্মৃত-অতীত কিংবা কল্পনার ভবিষ্যৎ, আমাদের খুব চেনা লোকালয় অথবা জনপদ হয়ে উঠতে পারে চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট, আমাদের অতি কাছের মানুষগুলোই হয়ে উঠতে পারে গল্পের প্রোটাগনিস্ট বা অ্যান্টাগনিস্ট। পরিচালকের অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধি যখন হবে গল্পের বিষয়বস্তু, সেই গল্পই খুলে দিতে পারে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের দর্শকের মনের দুয়ার। চলচ্চিত্রের শক্তিকে যদি মানুষের কাজে লাগানো যায়, তা হবে চলচ্চিত্রের সর্বোৎকৃষ্ট প্রয়োগ।


• অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক, বাংলাদেশ।

menu
menu