জোনাস মেকাস-এর কবিতা

জোনাস মেকাসকে আমেরিকান সিনেমায় কাউন্টার-সংস্কৃতির নায়ক বলা হয়ে থাকে। ১৯২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর লিথুয়ানিয়ার সেমেনিস্কিয়াইয়ে জন্মেছিলেন আঁভো-গার্দ ধারার এই পরিচালক, বেড়ে উঠেছেন আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটিতে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাজিরা তাঁকে এলমশরন এলাকার একটি ক্যাম্পে জোর করে শ্রমিক হিসেবে রেখেছিলেন। ১৯৪৯-এর দিকে জাতিসংঘের শরণার্থী শাখা তাঁকে আমেরিকায় নিয়ে আসে। যুদ্ধশেষে পড়াশোনা করেছেন মেইঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা, চলচ্চিত্র সমালোচক, শিল্পী, কবি, আলোকচিত্রী। তবে তাঁর এ সব পরিচয়কে ছাপিয়ে গেছে আমেরিকান আঁভো-গার্দ চলচ্চিত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান রক্ষক এবং প্রচারক হিসাবে তাঁর উজ্জ্বল পরিচয়। সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি গড়ে তোলেন একটি চলচ্চিত্র সাময়িকী ফিল্ম কালচার,  যেটি পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্রের পঠন-পাঠনে আমেরিকায় তরুণদের বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। প্রতিষ্ঠা করেন একটি যাদুঘর এবং ‘অ্যান্থলজি অব ফিল্ম আর্কাইভজ’ নামে একটি থিয়েটার। ১৯৬৪ সালে তাঁর গড়ে তোলা ‘ফিল্ম মেকারস’ সিনেমাথিক’ই মূলত অমানিবাস সিনেমার এই ফিল্ম আর্কাইভে রূপান্তরিত হয়, যা পরে হয়ে ওঠে বিশ্বের স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহশালা এবং প্রদর্শনীকেন্দ্র।
জোনাস মেকাস অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৬৩ সালে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর সিনেমা দ্য ব্রিগ  স্বর্ণসিংহ পুরস্কার পায়। জার্মান চলচ্চিত্রকার পিটার সেম্পেল তাঁর জীবন ও কাজ নিয়ে তিনটি সিনেমা তৈরি করেন। ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি মারা যান লিথুনিয় বংশোদ্ভুত এই পরিচালক।
তাঁর সমস্ত কাজ, লেখা এবং আন্দোলনে সিনেমাকে শিল্পমাধ্যম হিসেবে রক্ষা, পরিচিত এবং জনপ্রিয় করার স্পষ্ট ছাপ রেখে গেছেন মেকাস। আমরণ বিশ্বাস করে গেছেন ভবিষ্যতের সিনেমা হবে কবিতা লেখার মতোই ‘সহজ’।

ফুলের কথন থেকে

আমি জানি না সূর্য তা পেরেছিল কিনা
নাকি বৃষ্টি, অথবা বাতাস—
কিন্তু বরফ আর তার ওই ধবধবে শাদাটে আভার অভাবে
আমার ভেতরটা খাঁ খাঁ করছিল।

আমি শুনেছি সেই মর্মর
বসন্ত-বরষার
ধুয়ে দিয়ে যাওয়া লালচে কুঁড়ি—
কাঠবাদামের
যেন এক টুকরো বসন্ত ঝরঝর করে ঝরলো
পাহাড় থেকে উপত্যকায়
কিন্তু বরফ আর তার শাদা আভার অভাবে
আমার ভেতরটা কেবলই খাঁ খাঁ করছিল।

উঠোনের ঢালে
রাঙা চিবুকের গ্রামীণ কুমারীর
মেলে দেয়া শাড়ি
উড়িয়ে দেয় কী ভিষণ হাওয়া
সে ঝুঁকে, অপলক তাকিয়ে থাকে 
হলদে পরিযায়ী-পুচ্ছের দিকে : 

কারণ ভালোবাসা হাওয়ার মতন,
এবং ভালোবাসা জলের মতন—
বসন্তে সে উষ্ণতা পায়
আর জমে যায় শরতে।

কিন্তু কেন জানি না আমার কেবলই মনে হতে থাকে 
সূর্য তা পেরেছিল কিনা
নাকি বৃষ্টি কিংবা বাতাস
কিন্তু বরফ আর তার শাদাটে আভার অভাবে
আমার ভেতরটা শুধুই খাঁ খাঁ করছিল।

আমি জানি—এই হাওয়া
উড়িয়ে নিয়ে যাবে ধোয়া কাপড়চোপর সব,
আর এই বৃষ্টি
ধুয়ে দিতে থাকবে সব কাঠবাদামের গাছ
কিন্তু যে প্রেম, গলে গেল
বরফের সাথে 
তা আর ফিরবে না। 

বরফের গভীরে লেপ্টে থাকা
শব্দ আর অনুভূতি :
আজ শুধু মুগ্ধ নয়নে দেখছে
দরজার ভাঁজে বৃষ্টির নাচ—
বসন্তের বৃষ্টি!
দেখলাম আরেকবার :

বৃষ্টির মাঝে সে হেটে গেলো চলে,
এবং সে ছিল কেবলই সুন্দর,
মৃদু হেসে গেলো :
কারণ ভালোবাসা হাওয়ার মতন
এবং ভালোবাসা জলের মতন
বসন্তে সে উষ্ণতা পায়
জমে যায় শরতে।
যদিও এদিকে জানিনা আমার ঠিক কেনো মনে হতেই থাকে
সূর্য পেরেছিল কিনা
বৃষ্টি অথবা বাতাস
কিন্তু বরফ আর তার ওই শাদা আভাটার অভাবে
ভেতরটা কেবলই খাঁ খাঁ খাঁ খাঁ করে চলছিল।


• অনুবাদক ও টিভি সাংবাদিক, বাংলাদেশ।

menu
menu