গুচ্ছ কবিতা ।। সমর্পণ বিশ্বাস

সেই মেঘ

তুমি বললে—
‘আমাদের ফের প্রেম হবে।
আমরা একসাথে দাঁড়িয়ে হাওয়াই মিঠাই বানানো দেখব।
আমরা একসাথে ইটের টুকরোকে লাথি মেরে পাঠিয়ে দেব অনেক দূরে, 
আমাদের দৃষ্টিসীমানার বাইরে।
একটা সিনেমা দেখার জন্য হাতে হাত ধরে 
হেঁটে পেরিয়ে যাবো প্রচুরটা পথ, 
গিয়ে পৌঁছাব সিনেমা শেষ হওয়ার পর।’

আমাকে নিশ্চুপ দেখে তুমি বলে চললে—
‘তুমি আর আমি মিলে একটা দারুণ খেলা খেলব— 
সব বৃষ্টির ফোঁটাগুলো মাটিতে পড়ার আগেই 
আমরা তাদেরকে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করব। 
পারব না, এরপর নিজেদের বোকামোর কথা ভাবতে ভাবতে 
ভিজে একাকার হয়ে যাব।’

আমি তবু চুপ। তুমি একটু থেমে 
আবার বলতে আরম্ভ করলে,
‘তাহলে চলো আমরা ভেজা মাঠে দুজন 
পাশাপাশি শুয়ে মেঘ গুনবো, ভেসে যাওয়া মেঘ।
একটা, দুটো, তিনটে, অনেকগুলো।
একসময় আমাদের হিসেব হারিয়ে যাবে, 
আমরা নির্দ্বিধায় মেঘ দেখতে থাকব, 
যেমন আমরা দেখতাম বিচ্ছেদের আগে। 
আবার সেরকম...’

বলতে বলতে তুমি হাঁপিয়ে গেলে। তোমার কণ্ঠ কেঁপে উঠল। 
আকুলভাবে আমার দিকে চেয়ে রইলে প্রত্যুত্তরের জন্য।

আমি সময়কে আরও খানিকটা এগিয়ে দিলাম। 
এরপর তোমার দিক চাইলাম সকরুণ দৃষ্টিতে, 
যেভাবে চাইনি আগে কখনো। এরপর মৃদুহেসে বললাম— 
‘সেই মেঘ কি চাইলেও ফিরিয়ে আনতে পারবে?’

নির্জনে

এই নিরালায়
শুধু প্রিয় আসি আসি বলে চলে যায়।
আমার দীর্ঘ নিঃশ্বাসটুকু অপেক্ষায় 
ধমনীর সব বিরহ বেদন,
আক্ষেপ যত ছিল অচেতন
এক ঝটকায় 
মেলায় সুদূরে শূন্য পরিসীমায়।

হায় দীর্ঘশ্বাস,
তুষারপাতের দৃষ্টি লুকিয়ে
উষ্ণ অশ্রুবাষ্প শুকিয়ে
আসে আশ্বিন মাস,
আমার প্রিয়র কর্ণকুহরে
কখনো গিয়ে পৌঁছোবে কি সেই
ধূসর দুখী দীর্ঘশ্বাস?

রে ক্লান্ত সংলাপ— 
মিছেমিছি শত স্তবকের স্তূপ থেকে
অর্থহীনের মতো নির্বোধ পঙক্তি রেখে
বাড়িয়েছি পাপ,
কুড়িয়েছি তার মিষ্টি বচন-সুধার গেলাসে
অনেক অনেক অভিশাপ।
আজ একা মিছে মরুভূমে বসে
করে যাই অনুতাপ!

হয়তো কখনো 

এই যে ফের আমাদের দেখা হয়ে গেল!
তুমি দৃঢ়বিশ্বাসে বলেছিলে—
আমাদের পৃথিবী দ্বিবিভক্ত,
আর আমাদের দেখা হবে না।

তুমি ভুল ছিলে।
পৃথিবী গোলাকার,
দুজন দুদিকে মুখ ফিরিয়ে
হাঁটতে আরম্ভ করলেও মুখোমুখি হয়ে যাবে একদিন।

যেমন আজ হলাম— তুমি আর আমি। 
যেভাবে আমি দৈনিক মুখোমুখি হই
অন্য যে কারও সাথে।
হাজার হাজার—অন্য যে কেউ! 

তবু তো...
এই যে ফের আমাদের দেখা হয়ে গেল!

নিশ্চলতা

আজ কোথায় সে প্রহর কেঁদে বুক ভাসানোর?
নাগরিক চিন্তার ফোকরে সেই স্মৃতিগুলো ম্লান,
নেই দিন জোর করে আমাকে ভালোবাসানোর,
বেসুরো শোনায় একসাথে গাওয়া দুজনের সব গান।

বিধাতা তোমার তারিফ তুমিই, সেভাবে সাজালে ঘর
আমার হারানো প্রেয়সীই শুধু দিয়ে গেলো স্মৃতি-শর।
আজ কেন যেন বোধ হয় শুধু একা স্নানাগারে বসে—
বিরহের পর ব্যথার সুবাস মনোমুগ্ধকর!

তুমি চলে গেলে, তুমিই এসেছিলে কাছে,
রেখে গেলে ব্যথা, সে তোমায় কাঁদায় পাছে!
সে ব্যথার বোঝা বিষ পানীয়ের ধাঁচে
এখনো আমার নীলকণ্ঠে লেগে আছে।


সমর্পণ বিশ্বাস কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি শিল্পের নানা মাধ্যমে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে কাজ করছেন। চলচ্চিত্র নির্মাণে তার আগ্রহ বেশি। তিনি ঢাকায় বসবাস করেন।

menu
menu