রুমির ১০ কবিতা

জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (১২০৭ – ১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩) ছিলেন ১৩ শতকের একজন ফার্সি মুসলিম কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিয়বাদী এবং সুফি। রুমির প্রভাব দেশের সীমানা এবং জাতিগত পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে বিশ্বদরবারে ছড়িয়ে পড়েছে; ফার্সি, তাজাকিস্তানি, তুর্কি, গ্রিক, পাস্তুন, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলামানরা গত সাত দশক ধরে বেশ ভালোভাবেই তার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে যথাযথভাবে সমাদৃত করে আসছে।

১.

ভোরের হাওয়া 
ছড়িয়ে যায় সতেজ
সুভাস। 
আমাদের ওঠে যাওয়া উচিত 
এবং সেই সুভাস গ্রহণ করা,
সেই বাতাস যেটা
আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।

নিঃশ্বাস নাও
এটা চলে যাবার আগে।

২.

এটা ভালো 
প্রতিটা দিন ফেলে আসা
পেছনে,
বয়ে যাওয়া 
নদীর মতো, 
দুঃখহীন। 
গতকাল চলে গেল
এবং এটার গল্প
বলা হয়ে গেল।
আজ নতুন বীজ
জন্ম দিচ্ছে চারার।

৩.
পিঠব্যথা

মুহাম্মদ গিয়েছিলেন অসুস্থ এক বন্ধুকে দেখতে।
এ ধরনের ভালো কাজ আরো ভালো কাজের জন্ম দেয়,
এবং এ থেকে শেখার কোনো বিস্তার নেই।

লোকটি প্রায় মারা যাচ্ছিল। 
মুহাম্মদ লোকটার মুখের কাছে তাঁর মুখ রাখলেন এবং চুমু খেলেন।

তাঁর বন্ধু সুস্থ হতে লাগলেন। 
মুহাম্মদের সাক্ষাৎ তাঁকে নবজন্ম দিল।

লোকটা অসুখের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন 
যা এই ধরনের আলো নিয়ে এসেছিল।

এবং পিঠব্যথার প্রতি
যা তাঁকে রাতে জাগিয়ে দেয়।

মহিষের মতো নাক ডাকা লাগে না
যখন পৃথিবীর এই বিস্ময় হেঁটে বেড়ান।

দুরারোগ্য রোগের ও কিছু গুণ আছে যা 
দেখা কঠিন অতিথির অনুপস্থিতিতে।

শরৎ নিয়ে অভিযোগ করো না।

দুঃখ নিয়ে হাঁটো পুরনো বন্ধুর ন্যায়।
সে কি বলে শোন।
মাঝে মাঝে সবচেয়ে অন্ধকার থেকে 
আলো আসে আমাদের চাওয়া মতো।

৪.

মাতালের ভয় পুলিশ-এ,
কিন্তু পুলিশেরাও মাতাল।
এই শহরের মানুষ উভয়কেই পছন্দ করে
দাবার ভিন্ন ভিন্ন ঘুটির মতো।

৫.

আমাকে এই আত্মা কে দিয়েছেন?

তিনিই, যিনি আমার চোখে পর্দা দিয়েছেন 
বাজপাখির চোখের ন্যায়, যিনি শীঘ্রই 
আমাকে ছেড়ে দিবেন শিকারে। 

৬.

ঘুরেছি, ভেতর আর বাহির, 
চাঁদে নয়, কোনো মাঠে বা আকাশে নয়।

আমাকে আর মদের গ্লাস বাড়িয়ে দিও না।
আমার মুখে ঢেলে দাও এটা।
মুখের পথ হারিয়ে ফেলেছি আমি।

৭.
নিস্তব্ধতা 

নতুন প্রেমে, মরো।
অন্যদিকে তোমার পথ খুলে যায়।
আকাশের মতো হও।
একটা কুড়াল নিয়ে জেলখানার দেয়ালের কাছে যাও।
পালাও।
বেরিয়ে পড়ো নবজন্মের ন্যায়।
এখনই করো এটা।
তোমাকে ছেয়ে আছে ঘন মেঘ।
পাশ কেটে যাও। মারা পড়ো,
এবং শান্ত থেকো। নিস্তব্ধতাই 
আপনার মৃত্যুর বড় নির্দেশক। 
তোমরা আগের জীবন ছিল পাগলা দৌড় 
নীরবতা থেকে। 

নিস্তব্ধ পূর্ণিমা 
বেরিয়ে আসে এখন।

৮.

তুমি কি মনে করো আমি কি করছি আমি জানি?
এক নিঃশ্বাসের বা তার আধেক সময়ের জন্য আমি আমার?
যেমনটা একটা  কলম জানে কি লিখছে,
বা একটা বল ভাবতে পারে পরেরবার কোথায় যাবে। 

৯.

বন্ধুত্ব আমাকে হানা দেয়
দৃঢ়তার প্রচেষ্টা চালায়, না 
পেরে, একটা ব্লেড আঁকে,
জায়গামতো বসিয়ে দেয়।

১০. 

তোমাকে ভালোবাসব নীরবতায়...
কারণ নীরবতায় কোনো প্রত্যাখ্যান নেই,
তোমাকে ভালোবাসব একাকিত্বে...
কারণ একাকিত্বে
আমি ছাড়া আর কেউ থাকে না তোমার মাঝে,
তোমাকে আদর করব দূর হতে...
কারণ দুরত্ব ব্যথা উপশম করে,
তোমাকে চুমু খাবো বাতাসে...
কারণ বাতাস আমার ঠোঁটের চেয়েও কোমল,
তোমাকে জড়িয়ে রাখব স্বপ্নে...
কারণ স্বপ্নে তোমার প্রস্থান নেই।


• চট্টগ্রাম।

menu
menu