মঙ্গোলিয়ান কবি হাদা সেন্দো’র গুচ্ছ কবিতা
হাদা সেন্দো মঙ্গোলিয়ান কবি এবং অনুবাদক। তিনি ১৯৬১ সালের ২৪ অক্টোবর মঙ্গোলিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে এই অঞ্চলটি ইনার মঙ্গোলিয়া নামে পরিচিত। সেন্দো শিশুকাল কাটিয়েছেন ইনার মঙ্গোলিয়া অঞ্চলের সিলিগোল শহরে। হাদা সেন্দোর বাবা ছিলেন স্থানীয় নাট্যদলের প্রধান আর মা ছিলেন এই নাট্যদলের অভিনেত্রী। হাদা সেন্দো যখন অনেক ছোট ছিলেন তখন তার বাবা পরিবারের সবাইকে নিয়ে দক্ষিণ মঙ্গোলিয়ার দালানহার পর্বতমালার কাছাকাছি চলে আসেন। এখানেই সেন্দোর বাল্যকাল অতিবাহিত হয়েছে। দালানহার পর্বতমালার নিকটে স্থানীয় বিদ্যালয়ে পুরাতন মঙ্গোলিয়ান ও চাইনিজ ভাষায় লেখাপড়া করেন তিনি। স্কুলের লেখাপড়া সেন্দোকে বেশি দিন মুগ্ধ করে রাখতে পারেনি বরং স্কুল অল্পদিনেই তাকে ক্লান্ত করে তুলেছিল। এজন্য কিছুদিন পরে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে হাদা সেন্দো স্কুল ছেড়ে স্তেপ তৃণভূমি অঞ্চলে চলে আসেন। সেন্দো ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে যাযাবর জীবনযাপন করেন। ১৯৮৪ সালের শেষের দিকে সেন্দোর বাবা তাকে আর্ট ইনস্টিটিউটে চাকরি নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বাবার পরামর্শে আর্ট ইনস্টিটিউটের চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরিতে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পরেই সেন্দো আর্ট ইনস্টিটিউটের সম্পাদকীয় সহকারী পদে কাজ করার সুযোগ পান।
মঙ্গোলিয়ায় হাদা সেন্দোকে একবিংশ শতাব্দির অন্যতম প্রভাবশালী কবি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। হাদা সেন্দোর প্রথম জীবনের কবিতাগুলো মঙ্গোলিয়ান মহাকাব্য দ্বারা প্রভাবিত ছিল। সেই কবিতাগুলো অনেকটা প্রভাবিত ছিল রাশিয়ার চিত্রকল্পবাদ কবিতা এবং একবিংশ শতাব্দীর ইটালিয়ান হারমেটিক কবিতা দ্বারা।
তরুণ বয়সে হাদা সেন্দো প্রচুর পরিমাণে মঙ্গোলিয়ান সাহিত্য পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। অবশ্যই এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মঙ্গোলিয়ান ধ্রুপদী সাহিত্য, মহাকাব্য এবং জাঙ্গারের মতো কাব্যিক মহাকাব্য। এই বয়সে তিনি নিবিড়ভাবে পাঠ করেন মঙ্গোলিয়ান লোকগান এবং আধুনিকতাবাদী কবিতা (Shuleg)। ১৯৮৯ সালে হাদা সেন্দো প্রকাশ করেন তার প্রথম কাব্য সংকলন The Nomadic Songs and Moonlight.
হাদা ১৯৯১ সালে সিলিগোল শহর ছেড়ে চলে আসেন মঙ্গোলিয়ার উত্তরাঞ্চলে রাজধানী উলানবাটোর শহরে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটোর শহরে বাস করছেন। উলানবাটোর শহরে সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান এবং মঙ্গোলিয়ান লোকসাহিত্য নিয়ে গবেষণা করেন। এই গবেষণার মধ্যে অর্ন্তভুক্ত রয়েছে মঙ্গোলিয়ার লোকগান এবং মঙ্গোলিয়ান ঐতিহ্য।
হাদা সেন্দো ১৯৯৬ সালে Cyrillic new Mongolian ভাষায় লেখা তার প্রথম কাব্য সংকলন প্রকাশ করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মঙ্গোলিয়ান রাইটারস্ ইউনিয়নে যোগ দেন। হাদা সেন্দো তার বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে The World's Mongolians (a Mongolian-English bilingual edition) নামে একটি কালচারাল ম্যাগাজিন মঙ্গোলিয়া থেকে নিয়মিত প্রকাশ করেন। এই বছরের গ্রীষ্মকালে, সেন্দো এবং তার ঘনিষ্ট বন্ধু মঙ্গোলিয়ান কবি S. T Serendorj মিলে উলানবাটোর শহরে প্রথম বারের মতো এশিয়ান কবিতা উৎসব আয়োজন করেন। ১৯৯৯ সালে হাদা সেন্দো এথেন্সের সিটি হল প্রাইজ এবং সেকেন্ড অলিম্পিক কালচারাল প্রাইজ অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি মঙ্গোলিয়ান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
কবিতার পথে
অল্প বয়স থেকে কবিতা লেখা শুরু হলেও মূলত মাঝ বয়সে এসে হাদা সেন্দো কবিতা লিখেছেন পরিমাণে অনেক বেশি। এই বয়সে লেখা কবিতাগুলোর সঙ্গে বিগত সময়ের বিশেষ করে তরুণ বয়সের লেখা কবিতাগুলোর মধ্যে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
২০১১ সালে ২৪ সেপ্টেম্বর হাদা সন্দো World Poetry Movement -এ যোগ দেন। তিনি World Poetry Movement -এর প্রথম দিকের অন্যতম সদস্য হিসেবে পরিচিত। ২০১২ সালে হাদা সেন্দো যুক্তরাজ্যের সর্বকালের সব থেকে বড় কবিতা উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রিত হন। সেখানে তিনি সাউথব্যাঙ্ক সেন্ট্রাল কবিতা প্রাঙ্গণে কবিতা পাঠ করেন। উৎসবের অংশ হিসেবে কবিতা পাঠের পর সেন্দোর কবিতা নিয়ে আলোচনা হয়। এই উৎসবে হাদা সেন্দোর কবিতা সমগ্র বইটি প্রদর্শিত হয় রয়েল ফেস্টিভ্যাল হল ও কুইন এলিজাবেথ হলে। কবিতাবৃষ্টির জন্য হাদা সেন্দোর একটি কবিতা বুকমার্কে ছাপা হয় এবং কবিতা ছাপা বুকমার্কর্টি হেলিকপ্টার থেকে লন্ডন শহরের উপরে ফেলা হয়। তার কবিতা ব্লোডেক্সের বিশ্ব কবিতা সংগ্রহ সমগ্রে ছাপা হয়েছে। বিশ্বের ৬০ জন স্বনামধন্য কবির শ্রেষ্ঠ কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে এই সমগ্রটি। হাদা সেন্দোর কবিতা ইতোমধ্যে পৃথিবীর ৪০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি বর্তমানে মঙ্গোলিয়ার সব থেকে জনপ্রিয় কবি। হাদা সেন্দো বিগত কয়েক বছর ধরে আর্ন্তজাতিক সাহিত্যের ত্রৈমাসিক পত্রিকার পরামর্শক সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কবি রির্চাড বেরেনগ্রারটেন হাদা সেন্দোর কবিতা সম্পর্কে লিখেছেন, “আমি তার কবিতা মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কবিতা। আমি তার কবিতার শ্বাস-প্রশ্বাসের দর্শন আবিস্কার করতে পেরে খুবই আনন্দিত।” তিনি আরও বলেন, “বিষয় হিসাবে বাতাস (বায়ু, নিশ্বাস, আত্মা) খুবই গভীর একটা বিষয়। Come Back to Earth Ges The Wind কবিতাটি মঙ্গোলিয়ার বিশাল অঞ্চল সর্ম্পকে আমার ধারণা পরিস্কার করেছে। এই কবিতাগুলোকে আমি “সার্বজনীন কবিতা” হিসেবে বিবেচনা করি। পাশাপাশি কবি হাদা সেন্দো একজন “সার্বজনীন কবি” এটা আমার বিশ্বাস। কবিতাগুলো পড়ে আমি দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়েছি মঙ্গোলিয়ানদের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির জন্য। তার কবিতা আমাকে কিছু সিনেমার কথা মনে করিয়ে দেয়। তারমধ্যে The Cave of The Yellow Dog and Story of the Weeping Camel. এই সিনেমা দুটিতে রয়েছে মঙ্গোলিয়ান যাযাবর জীবনের বিশাল সংস্কৃতির বর্ণ্যাঢ্য চিত্র ও তথ্য।
জার্মান লেখক রাইনার ওয়েডলার বলেছেন, “মঙ্গোলিয়ান কবি হাদা সেন্দো কবিতা সাহিত্যে অল্প পরিচিত ভূগোলকে গভীর অন্তরর্দৃষ্টি দিয়ে উপস্থাপন করেছেন।”
জার্মানের একজন শিল্প সমালোচক আনড্রেস ইউল্যান্ড বলেছেন, “হাদা সেন্দোর কবিতা, প্রতিনিধিত্ব করে তার জীবন, প্রকৃতি, বিশাল মরু-পাহাড়ী অঞ্চল, সবুজ তৃণভূমি অঞ্চল ও মঙ্গোলিয়ার মনোরম বাতাস। আমি সেই প্রকৃতি এবং বাতাসের ছন্দ শোনার চেষ্টা করি হাদা সেন্দোর কবিতার মধ্যে। আমি প্রতিটি লাইনের কাব্যিক গুরুত্ব বিবেচনা করে পাঠ করি। কবিতার লাইনগুলো পাঠ করতে করতে আমার মনে হয় এই কবিতাগুলো ‘কোনো মৃত্যু থেকে পালিয়ে আসা কবিতা’ অথবা ‘অনেক বেশি আনন্দিত হয়ে মৃত্যুর জন্য উন্মুখ কবিতা’। যে ভাবেই বলি না কেন, এগুলোর সবই হাদা সেন্দোর কবিতায় বার বার জন্মকেই ইঙ্গিত করে।” তিনি আরো বলেন, সেন্দোর কবিতা আমার হৃদয়কে স্পর্শ করে এবং জাগ্রত করে শক্তিশালী চিন্তুা, গভীর আবেগ ও ভাবাবেগপূর্ণ চিত্রকল্প। আমি হাদা সেন্দোকে সংবেদনশীল এবং বাস্তবাদী কবি হিসেবে বিশেষভাবে বিবেচনা করি।”
হাদা সেন্দো অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে ২০১১ সালে আর্ন্তজাতিক পোয়েট্রি ফেস্টিভ্যাল ইন মেডেলিনে এবং টোকিও পোয়েট্রি ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ করেন। ২০১২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সব থেকে বড় poetry festival Poetry Parnassus-এ অংশগ্রহণ করেন।
২০১৬ সালে “ঘাসেদের মিস্টি হাসি” নামের হাদা সেন্দোর একটি কবিতা সংগ্রহ প্রকাশিত হয় ইরান থেকে। এই কবিতা সংগ্রহটি ইরানের পাঠক সমালোচকদের মনযোগ আকর্ষণ করে। তেহরান আর্ন্তজাতিক বই মেলায় এই সংকলনটি বিশেষভাবে আলোচিত হয়। হাদা সেন্দোর কবিতা সংকলন, “Wenn ich sterbe, werde ich träumen” (Bilingual Mongolian-German), প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের ফ্রাঙ্কফুট বই মেলা উপলক্ষে।
আমার পথ
S. Tserendorjর প্রতি
একদিন সকালে
চলার পথে, ডান পাশে বসেছিলো একটি ম্যাগপাই পাখি
বাম পাশে বসেছিলো একটি কাক
আমি তাদের দিকে তাকালাম এবং
আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল একটি তুষার ঢাকা পর্বত
তার পেছনে একটি রাস্তা
ছিল তুষারে ঢাকা এবং ঠান্ডা
আমার কম্পিত শরীর
যাচ্ছে অন্য এক বাকানো পথের দিকে
তারপর আমি দ্রুত হেঁটে গেলাম
প্রিয় জুতো আমার-ধন্যবাদ তোমাকে ।
তোমরা যুদ্ধ করেছো তুষার ঝড়ের সাথে।
*S. Tserendorjএকজন বহুল পরিচিত মঙ্গোলিয়ান লেখক ও সাংবাদিক। মৃত্যুর পূর্ব পযর্র্ন্ত তিনি হাদা সেন্দোর সুহৃদয় বন্ধু ছিলেন।
আমাদের সময়
আমি আমার চোখ বন্ধ করেছি
এখনো আমি ঘুমাতে পারছি না।
আমি আমার চোখ খুলেছি
আমি শান্তি চাই, কিন্তু আমি একজন পরাজিত মানুষ।
পৃথিবী মা
কোট পরে আছে ভোরের আলো, রক্ত রঙে রঞ্জিত
শরীর, ছিন্ন ভিন্ন করেছে জন্তু-জানোয়ারে
তোমার নদীর অন্য কিনারে
আমি সাদা হাড়ের গন্ধ পাই
যখন দিনের আলো বিবর্ণ
কাছাকাছি বৃক্ষের সাথে মৃত্যু ও ক্ষত
আর অনেক দূরে
সমুদ্র্র, কোথাও শান্তি নেই।
বনের মধ্যে
শেষ পর্যন্ত
আমার সম্পদ আর ক্ষমতা
প্রয়োজন নেই। যদি সম্ভব হয়
আমাকে ছেড়ে যাও ঘাসের বনে
একটি রাতের জন্য, আমার ঘোড়াকে খাওয়ানোর জন্যে।
সেও আমারই মতো অনেক ক্লান্ত
নীরবে, আমাকে একটি
সোনালি সূর্যমুখী ফুল দাও
আমি ঘুগরো পোকাদের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাবো
যেখানে কোকিল গান গাইছে
আমি আক্ষেপ করছি না বরং অনেক বেশি পছন্দ করছি
আমি দুঃখিত
আমি অনেক আগে এসেছি অথবা অনেক পরে এসেছি।
ঘুমানোর জন্য বিছানা
যখন আমরা জন্মগ্রহণ করেছিলাম
তখন আমরা এখানে ঘুমিয়ে ছিলাম
যখন আমরা ক্লান্ত ছিলাম
তখন আমরা এখানে ঘুমিয়ে ছিলাম
যখন আমরা বিবাহ করেছিলাম
তখন আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম
বইপড়ার পরে
আমরা এখানে ঘুমিয়ে ছিলাম
যৌন মিলনের পরে
আমরা এখানে ঘুমিয়ে ছিলাম
যখন আমরা অসুস্থ ছিলাম
তখন আমরা এখানে ঘুমিয়ে ছিলাম
যখন আমি বদ্ধ মাতাল ছিলাম, দুঃখ-কষ্টে, আমি একা ছিলাম
তখনো আমি এখানে ঘুমিয়ে ছিলাম
যখন আমি মরে যাবো, সম্ভবত
তখনো আমি এখানে ঘুমিয়ে থাকবো।
আগুন
তুমি উঁচু ভূমির প্রাচীন গান
ঈগল পাখির নৃত্য, ওঝার ডুগডুগি—
তুমি ভাবছ, আত্মা
তার যন্ত্রণা—
তুমি জলন্ত কাঠের মতো অর্থময়
যাযাবর—
ঘোড়ার দল, রাত্রি পেরিয়ে যাচ্ছে
নীল বৃষ্টিধারা ঝরছে
লাল চাঁদ ও আমার পিতা
এক রাতে
আমার পিতার মুখ
অন্ধকারে ঝাপসাভাবে জ্বলছিল
তার হাতে
সিগারেটের শেষাংশ জ্বলছিল লাল আগুনে
যেন লাল রঙের চাঁদ, ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে
হ্যাঙ্গাই
অন্তহীন নীল আকাশের নিচে
মঙ্গোলিয়ান বন্য ঘোড়ার পাল, যেন উঁচু ভূমির নানান রঙ—
আর এই সবুজ রঙ হ্যাঙ্গাইয়ের ।
এখন, নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রের
ঠিক উপরে খনিজ সম্পদ হিসাবে
এখন এটি অতি ক্ষুদ্রে পরিণত হয়েছে, লাল রক্তবিন্দুর মতো
*হ্যাঙ্গাই প্রাচীন মঙ্গোলিয়ান শব্দ, এই শব্দটি দিয়ে বোঝানো হয় নীল আকাশ, সাদা মেঘ, ঘন ঘাসে ভরা তৃণভূমি, নদী, পাহাড় এবং পৃথিবীর বনভূমি।
শিকড়
আমি বেঁচে আছি
আমি নদীর উৎসমুখ দেখতে পাচ্ছি
ঘাসের মূল
আকাশের শুরু
পাহাড়ের গোড়া
কবিতার উৎস।
আমি যখন মরে যাবো
স্বপ্নে সম্ভবত কবিতার শুরুটাই দেখবো
পাহাড়ের গোড়া
আকাশের শুরু
ঘাসের মূল
নদীর উৎসমুখ।
সম্ভবত আমার মৃত্যু আনন্দের হবে অন্যের মৃত্যুতে
উত্তর দিকে দমকা বাতাস বইছে
নিস্প্রভ বিবর্ণ গাছগুলো...
নদীর স্রোতের নয়—
মেঘ, কাঠের ব্রিজ
রাত, তৃণভূমি
পনির রঙের চন্দ্রালো
আরো শান্ত, যদিও
এই ভূমি
সহিষ্ণু আর্তনাদী খননকারীর
চোখ ভরা জলের মতো
তাকে গড়িয়ে পড়তে দিয়ো না
আমার এই জীবনে
আমি খুব বেশি কিছু আশা করি না
বাতাসের পেছনে বন্য ঘোড়ার* ছুটে চলা ছাড়া
সম্ভবত আমার মৃত্যু আনন্দের হবে অন্যের মৃত্যুতে
*মঙ্গোলিয়ান বন্য ঘোড়া, এই ঘোড়াগুলো মঙ্গোলিয়ানদের কাছে তাকহি নামে পরিচিত
মঙ্গোলিয়ান ঘর
রুপালি রাতে
আকাশের আলো মিশে গেছে তারার সাথে
বাতাস বইছে বনের মধ্যে
তরঙ্গিত সবুজ ঢেউয়ের মতো
অবিনাশী খোলা এক দরজা
যেন নীল আকাশ আর সাদা মেঘের আয়না
এখানে যাযাবরেরা কখনোই হারায় না
তারা কখনোই কাঁদে না শহরের মানুষের মতো।
*মঙ্গোলিয়ান ঘর/মঙ্গোলিয়ান তাবু মঙ্গোলিয়ান যাযাবরদের ঐতিহাসিক বাসস্থান। এই তাবু ঘরটির কাঠামো তৈরি হয় কাঠ দিয়ে এবং ঘরের উপর দিকটা ঢেকে দেওয়া হয় পশমি জাতীয় বস্ত্র দিয়ে। ঐতিহাসিক এই ঘরগুলো সহজে তৈরি করা যায় এবং খুলে ফেলা যায়। এগুলো ঘোড়া, উঠ এবং ইয়াক-এর পিঠে সহজে বহন করা যায়। এই ঘরের বিশেষ বৈশিষ্ট, এগুলোর ভেতরটা শীতের সময় গরম এবং গরমের সময় ঠান্ডা ও আরামদায়ক হয়। এই তাবুঘর এখনো মঙ্গোলিয়ান স্তেপ অঞ্চলের যাযাবরেরা ব্যবহার করে।
ঘোড়া ও কবিতা
আমি গর্বিত যে আমার ভালো একটি কবিতা আছে
এটা ঠিক ভালো একটি ঘোড়ার মতো, তার চোখের মধ্যে
সমস্ত উষ্ণতা আর গভীর আবেগ।
সম্ভবত এটাই আমার শেষ গান,
সমস্ত পৃথিবীতে
আমি ভ্রমণের জন্য চলছি।
সূর্যমুখী ফুল আর আমি
তুষার পড়ছে
উলানবাটরের রাস্তায়
আজ, আমি একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ। আমার বয়স চল্লিশ।
সম্ভবত আমি কোনো কিছুতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।
এখনো, আমি সেই আমি।
ভ্যান গগের তুলির ছোঁয়াই
সমস্ত বিশ্ব
তার সূর্যমুখীর সাথে।
সম্ভবত কোনো একদিন
আমিও পারবো কবিতা দিয়ে!
• ঢাকা