ভাইরাস বল

রাজু নিউইয়র্কের একটি পাবলিক সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। এই লক ডাউনের মধ্যে বাধ্যতামূলক কাজে যেতে  হচ্ছে । সকাল ৭ টা বাজার আগেই চলে গেলেন নিকটস্থ সাবওয়ে স্টেশনে।  পাতাল রেলে চড়তে এখন আর টিকেট কাটতে হয় না। সবার জন্য রাইড ফ্রি। নিচে নামতে নামতে দেখলেন ম্যানহাটানগামী একটি ট্রেন এসে থেমেছে। অভ্যাসবশত সিঁড়ির পাশের বগিতে ডুকতে যাবে তখনই চোখে পড়ল, কামরার এক কোণে একজন হোমলেস বসে আছে । চট করে বাইরে গিয়ে পিছনের কামরাতে উঠতে যাবে হঠাৎ চোখে পড়ল একজন স্বাস্থ্যকর্মী বেঞ্চের মধ্যে বসা। মনে পড়ে গেল, করোনার কথা। আবার বেরিয়ে পড়ল। পরের বগিতে ঢুকল। নিমেষেই বের হয়ে আসতে হলো। কামরার পুরো মেঝে জুড়ে বাসি খাবারের খালি প্যাকেট আর কন্টেইনার। বের হয়ে ক্ষাণিক দাঁড়াল রাজু। ভাবছে আজ বারবার এমন হচ্ছে কেন? কাজে যাবে কিনা ভাবছে। 

পরক্ষণেই মনে হলো, কত কষ্ট আর পরিশ্রম করে নিজেকে তৈরি করে দু দুটো পরীক্ষা দিয়ে , ভালো বেতনের এমন একটি চাকরি পেয়েছে। সেই কাজটি চলে গেলে চলবে কীভাবে? দেশে অসুস্থ মা আর বোনের বিয়ে। নাহ এসব ভাবাই যায় না। ডানদিকে পা বাড়ালেন। দরজা দিয়ে ঢুকতে গিয়ে বিশ্রী একটি পঁচা গন্ধের ধাক্কা খেলো। তবে চোখে কিছুই পড়ছে না। অন্য এক যাত্রী দরজা থেকে চোখের পলকে ফেরত এলো। নাহ, কী আছে বগিতে তা দেখার মোটেই ইচ্ছে নেই রাজুর। তাকে কাজে যেতেই হবে। লক ডাউনের শহরে সবাই বাসায় বসে থাকলেও সে পারছে না। ইতোমধ্যে ৮ মিনিটের মতো সময় কেটে গেছে । প্লাটফরমের কোথাও টন করে শব্দ হলো। রেল কন্ডাক্টর পিছনের বগির দরজাগুলো সাঁটিয়ে দিয়ে এনাউন্সমেন্ট বাটনে টিপ দিতেই পুরুষ কণ্ঠে বলছে, ক্লোজড দি ডোর’।

রাজু ফিরে এলো বাস্তবে। সামনের খালি বগির দরজায় পা দেবার পূর্বেই দরজা দুটো সাইড এক হয়ে গেল। ট্রেন চলতে শুরু করছে। সে পিছনে হাত তুলে কন্ডাক্টরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইল। না বরাবরের মতো জানালার বাইরে কোনো মুখ নেই। ট্রেন ছুটছে। প্লাটফর্ম ছেড়ে যাচ্ছে। সব বগিগুলো একেবারে শূন্য। একজন যাত্রীও নেই। রেল কন্ডাক্টরের ছোট্ট কামরায় চোখ পড়তেই দেখে, একটি মাস্ক পরিহিত কঙ্কাল তার দিকে তাকিয়ে হাসছে আর তার হাতে করোনা ভাইরাসের নমুনার একটি লাল বল। 

menu
menu