ইন্সিফেরাম
অজয়ের ধারে এই জায়গাটা কেমন জনহীন। পুরোনো কিছু মন্দির ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এদিক থেকে ওদিক। তিতলি এখানে এসেছে গতকাল বিকেলে। লোকজনের ভিড় থেকে দূরে একটু অফবিট জায়গাতেই সে যেতে চেয়েছিল তাঁর দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকীর উপহার হিসেবে। কলকাতা থেকে হুশ করে যতটুকু দূরত্বে চলে যাওয়া যাবে, আবার ফিরেও আসা যাবে ঠিকঠাকভাবে। মেপে চলা সময়ের হুড়োহুড়ি থাকবে না সেখানে। অরবিন্দও এতে আপত্তি জানায়নি খুব একটা। জানানোর মতো কোনো ঘটনা এটা নয় যদিও!
অরবিন্দের এই নামটা নিয়ে বিয়ের আগে বেশ আপত্তি ছিল তিতলির! আজকাল এমন বুড়োটে নাম আবার কারোর হয় না কি! শুনলেই কেমন যেন একটা মধ্যবয়স্ক, গুরুগম্ভীর চেহারা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কে বলবে, এই অরবিন্দ নামধারী ব্যক্তিটি আসলে একটি ঝাঁ চকচকে আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কের কলকাতা শাখার একজন উচ্চ পদাধিকারী! শুধু কি তাই? সেইসঙ্গে নিয়মিত জিমে যাওয়া সুগঠিত পেশিবহুল আকর্ষণীয় গড়নের ক্রিস্টোফার নোলানের ছবি দেখা একজন সুদর্শন আধুনিক পুরুষও বটে! তাই বিয়ের বিজ্ঞাপনের উত্তরে আসা একগাদা প্রস্তাবের মধ্যে থেকে বাছাই করা কিছু নামের তালিকায় প্রথম সারিতে থাকা অরবিন্দকে একনজরেই বাতিল করে দেওয়া নিয়ে মা-বাবা-দাদা-দিদি থেকে শুরু করে বন্ধুদের কাছেও তাঁকে কম হেনস্থা হতে হয়নি। তাঁর অমন আধুনিকা, ক্যামাক স্ট্রিটের ২৫০০ স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাটে থাকা, হরদম সিগারেট ফোঁকা বন্ধু অয়ন্তিকা পর্যন্ত কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলেছিল—‘দিস ইজ ভেরি সিলি তিতি। হোয়াট ইজ রং উইথ হিজ নেম? আফটারঅল হি ইজ আ চার্মিং, এডুকেটেড এন্ড ওয়েল এস্টাব্লিশড বয়!’ এর পরেও শেষ নয়! মায়ের রাতদিনের হাল ছেড়ে দেওয়া ফোঁপানিতে তাঁর প্রবাসী দাদা ক্যালিফোর্নিয়া থেকে উড়ে এসে আরেক হাস্যকর ঘ্যানঘ্যানানি শুরু করেছিল।এই কারণ দেখিয়ে পাত্রকে বাতিল করে দেওয়াটা নাকি এথিক্যাল নয় মোটেই! অবাক হয়েছিল তিতলি। এখানে এথিক্সের প্রসঙ্গ আবার এলো কোথা থেকে, কে জানে! একজন পাত্র যে কত অপমানজনক অজুহাতে কোনো মেয়েকে এক মুহূর্তে বাতিল করে দিতে পারে, পাড়ার শুভানুধ্যায়ী আর মিডিয়ার দৌলতে সেসব উদাহরণ তো কারোর কাছে অজানা নয়! তাছাড়া নিজের জীবনসঙ্গীর নামের ব্যাপারে যদি তাঁর নিজস্ব কোনো পছন্দ থাকেই, তবে এতে এত আপত্তির কী আছে? শেষপর্যন্ত পাত্রের নামটা তো তাঁর নিজের নামের সঙ্গে প্রায় সবসময়ই বয়ে বেড়াতে হবে। তাই এই ব্যাপারটা বাকিরা নস্যাৎ করে দিলেও তাঁর কাছে এটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যু। সেইসব দিনে তিতলির মনে হতো, বিয়ের বাজারে তাঁর গুরুত্ব বুঝি বাড়ির সবসময়ের কাজের মেয়ে শম্পার চাইতেও কম! শম্পা তাঁর নিজের বিয়ের পাত্রটিকে প্রায় একাই পছন্দ করেছে। কতই বা বয়েস মেয়ের? মেরেকেটে তেইশ হবে! অথচ বাড়ির পছন্দের দেশঘরের পাত্রটিকে এককথায় নাকচ করে দিয়ে সে জানিয়েছে, শহরের ছেলেই তাঁর পছন্দ! দেশের ছেলেদের নাকি হাজারো বায়নাক্কা! প্রথম প্রথম শম্পার দুই চোয়াড়ে মার্কা দাদা এখানেও এসেছিল তাঁকে বোঝাতে। কিন্তু হাল ছেড়ে দিয়ে শেষমেশ শহুরে পাত্রের সন্ধান করে বোনের বিয়ে দিয়ে এখন তাঁরা নিশ্চিন্ত! বিয়ের পর থেকে শম্পা দিব্যি সুখী সুখী মুখ করে কাজে আসে, বরের আর সংসারের গল্পে আহ্লাদের সাগরে গা ভাসায়। এত ভাবাভাবির পরেও কিন্তু তিতলি শম্পা হতে পারেনি শেষপর্যন্ত! তাই এত কিছু সত্ত্বেও বিয়ের কার্ডে তাঁর নামের পাশে পাত্র হিসেবে অরবিন্দের নামটাই ছেপে আসে। ধুমধাম করে বিয়ের পর্বটিও সারা হয়ে যায় যথাসময়ে! এখন তাঁর গড়িয়াহাটের নতুন সংসারের সদস্য বলতে এক অবিবাহিত ভাসুর, শাশুড়ি মা, অরবিন্দ এবং সে নিজে। সঙ্গে উপরি পাওনা হিসেবে তাঁর শাশুড়ির একগুচ্ছ পাখির ছানা! এক-একসময় বিরক্ত লাগে তিতলির। এইসব ছানাদের অবিরত চিৎকারে তাঁর ছুটির দিনের ভোরবেলার বিছানার উষ্ম আরামটুকুও হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে প্রায়! চিৎকার-চ্যাঁচামেচির মতো ব্যাপারগুলো বরাবরই তিতলির অপছন্দের। বিয়ের আগেও এই নিয়ে মায়ের সঙ্গে তাঁর প্রায়ই রাগারাগি হওয়ার উপক্রম হতো। মায়ের অভ্যেসই ছিল, সক্কাল থেকে সংসারের বিভিন্ন ছোটোখাটো কাজের জন্যে অনাবশ্যক উৎকণ্ঠা তৈরি করে শম্পার পেছনে চিৎকার করে চলা। সেইসব মুহূর্তগুলো অসহ্য হয়ে উঠত তিতলির কাছে। একএক সময় রেগে উঠে কিছু বলতে গেলে মা তাঁর এই আচরণের পক্ষে সাফ যুক্তি দেখাত—’আগে নিজের সংসার হোক, তখন বুঝবি!’ সেটা যে অন্যভাবে হলেও এমন হাড়েমাংসে সত্যি হবে সেটা সে ভাবতেও পারেনি তখন! এইসময়গুলোতে কানে বালিশ চাপা দিয়ে জোর করে শুয়ে থাকার চেষ্টা করে তিতলি। হয়তো সেই মুহূর্তে তাঁর ঘুমের মধ্যে ঘনিয়ে আসা কোনো একটা সুন্দর স্বপ্নের বেশ কিছুটা অংশ বাকি। আধো ঘুমের মধ্যেই সেই বাকিটুকু শেষ করতে চাইছে সে প্রাণপনে। কিন্তু উপায় কী? ছানাগুলোরও সময়জ্ঞান অসাধারণ! এই ভোরের নিজস্ব সময়টুকু ছাড়া অন্যসময় অবশ্য এগুলোকে অতটা খারাপ লাগে না তাঁর! বরং অদ্ভুত এক কষ্ট হয় তাঁর মনের ভেতর। বাবা-মা ছাড়া এরা এইভাবে দিনের পর দিন একই জায়গায় একই অবস্থায় কীভাবে রয়ে গেছে, কে জানে! নিজেকে ওদের জায়গায় রেখে সে অবস্থাটা ভাবার চেষ্টা করে প্রায়ই। কখনো কখনো তার খুব ইচ্ছে করে খাঁচা খুলে এদের উড়িয়ে দিতে। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও উপায় কই? এই বাড়িতে তাঁর নিজের অবস্থানটাই যে এখনো নড়বড়ে। একএক সময় এইসব ছানাদের প্রতি শাশুড়ি মায়ের স্নেহের আদিখ্যেতা দেখলে তিতলির শরীরের ভেতরের যাবতীয় যন্ত্রপাতিতে ঝটকা লাগে। মনের মধ্যেটাও কেমন গুলিয়ে ওঠে! ভালোবাসার এই অত্যাচার থেকে এইসব অসহায় পোষ্যদের মুক্তি দেওয়া কি একেবারেই অসম্ভব? এইসব আকাশ-পাতাল ভাবনার মধ্যেই কখনো বা অরবিন্দ ফেরে অফিস থেকে। তাঁকে গ্রিন টি বানিয়ে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে।
বিয়ের পর বেশ কাছ থেকে যখন অরবিন্দকে চিনতে শুরু করেছে তিতলি, তখন থেকেই সে বুঝেছে, জীবনসঙ্গী হিসেবে আসলে অরবিন্দ খুব একটা খারাপ নয়! বরং অন্য অনেকের থেকে অনেক ভালো। যা সব রকমারি, চটকদার গল্প সে শোনে বা শুনে এসেছে এক-একজনের কাছে! সেই তুলনায় অরবিন্দের ধারে-কাছেও আসে না কেউ। সে মোটামুটি দায়িত্বপরায়ণ, তিতলির যেকোনো আবদার মেটাতে সে দ্বিধা করে না মোটেই। অবশ্য তিতলির নিজেরও চাহিদা প্রায় নেই বললেই চলে! মাঝে মাঝে অরবিন্দের কাজের চাপে দেরি করে বাড়ি ফেরার কারণে অন্যান্য অনেক বউদের মতো একরাশ অভিযোগ নিয়ে বসে যায় না সে। এসব ব্যাপারগুলো তাঁর কাছে অসম্ভব ন্যাকামি বলেই মনে হয়! তবে অরবিন্দের একটি বদভ্যাস তৈরি হয়েছে ইতোমধ্যে। অফিস থেকে ফিরে তাঁর বরাদ্দ গ্রিন টিয়ের কাপটি তিতলির হাতের তৈরি ও পরিবেশিত হওয়া চাই! এটাকে অবশ্য একরকম আবদার বলেই ধরে নিয়েছে তিতলি। স্বামীর এসব ছোটোখাটো বায়না মেটাতে তাঁরও খারাপ লাগে না! বরং সময়ে সময়ে একটা কথা মনে পড়ে যায় তাঁর—‘ইউ আর নেভার চাইল্ডলেস, হোয়েন ইউ হ্যাভ আ হাজব্যান্ড’। কোন্ মহান ব্যক্তি যে এই মূল্যবান কথাটি বলে গিয়েছিলেন, সেটা জানে না তিতলি। তবে বিয়ের পর থেকে অরবিন্দের ছেলেমানুষি আবদার মেটাতে গিয়ে এর সত্যতা নিয়ে তাঁর মনে অন্তত কোনো সন্দেহ নেই!
তাঁদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে ধুমধাম হয়েছিল বেশ। অরবিন্দের কলেজ-অফিসের বন্ধুবান্ধবেরা ভিড় জমিয়েছিল। তিতলির তরফ থেকে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছাড়া তাঁর চার-পাঁচজন বন্ধুবান্ধব এসেছিল শুধু। এত ভিড়ভাট্টা তিতলির কোনোদিনই ভালো লাগে না। তাই তখন থেকেই সে মনে মনে ভেবে নিয়েছিল যে পরের বিবাহবার্ষিকী তাঁরা দুজনেই একটু নিরিবিলিতে কাটাবে। সেই ভাবনা থেকেই এই দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকীতে এখানে ঘুরতে আসা! কিন্তু এখানে এসে অবধি অরবিন্দের পাত্তা নেই। মোটামুটি তিন-চারদিনের প্ল্যান রয়েছে তাঁদের। কিন্তু এই জায়গাটা বোধহয় অরবিন্দের কাছে আশাতীতভাবে ভালো লেগেছে। গত পরশু তাঁরা এসেছে এখানে। কিন্তু তিতলি ফেরার কথা বললেই—‘ভাবছি’, ‘দেখছি’—এইসব বলে এড়িয়ে যাচ্ছে মনে হয়। কাজপাগল অরবিন্দের এহেন ব্যবহারে অনভ্যস্ত তিতলি একটু অবাক হচ্ছে বৈকি! গতকাল সকালে আবার এক ব্যাপার হয়েছে! রাতে রিসর্টের ডাইনিং প্লেসে খেতে গিয়ে দেখা হয়ে গেল অরবিন্দের এক পুরোনো প্রতিবেশীর সঙ্গে। মেয়েটি খুব অল্পবয়সি না হলেও তিরিশ পেরিয়ে যায়নি কোনোমতেই! তাই তিতলির পক্ষে তাঁকে মহিলা বলাটা কষ্টকর। মেয়েটি দিল্লিনিবাসী, নাম জিয়ানা। সেখানকার একটি নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছে এবং সেই কাজের সূত্রেই কিছু সার্ভের জন্য তাঁর এখানে আসা। অরবিন্দের আগের অফিস ছিল দিল্লিতে। সেখানে বাঙালি অধ্যুষিত চিত্তরঞ্জন পার্কে একই হাউসিংয়ে তারা থেকেছিল টানা প্রায় দু’বছর। তারপর অরবিন্দের চাকরিজীবনে নানারকমের ওঠাপড়াশেষে কলকাতায় থিতু হওয়া! এতদিন পরে পুরোনো পড়শির সঙ্গে দেখা হওয়াতে তিতলিরও ভালো লেগেছিল বেশ! মেয়েটিকে দেখতে অসামান্য সুন্দরী না হলেও বেশ একটা আলগা লাবণ্য আছে চেহারায়, যে কারণে চট্ করে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া মুশকিল! তিতলির মনে হয়, বাঙালি মেয়েদের এই ব্যাপারটাই তাঁদের যেন অন্যদের থেকে আলাদা করে দিয়েছে। মেয়েটি কথাবার্তাতেও ভারি আন্তরিক। তাই মুখচোরা তিতলির সঙ্গে ভাব জমতে তাঁর দেরি হল না একটুও। একথা-সেকথার মাঝেই ঘুরে-ফিরে আসছিল নানা পুরোনো প্রসঙ্গ, কখনো বা দিল্লির জলহাওয়া আর জীবনযাত্রার সঙ্গে কলকাতার পার্থক্যও উঠে আসছিল আলোচনায়। অরবিন্দের কাজপাগল মানসিকতা নিয়ে বারদুয়েক আক্ষেপ শোনা গেল তিতলির গলায়। যদিও সে এইসব ব্যাপারে কোনোদিনই গড়পড়তা মেয়েদের মতো নয়। নিজের স্বামীকে নিয়ে অন্যের কাছে অহেতুক ঘ্যানঘ্যান করা তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ! কিন্তু এই মেয়েটির কাছে তাঁর মনের বাঁধন খুলে গেল কি করে, কে জান! তবে একটা কথা শুনে একটু অবাক হল সে। অরবিন্দ নাকি আগে এরকমটি ছিল না মোটেই! আসলে কিছু পুরোনো ফটোগ্রাফ রয়েছে জিয়ানার ক্যামেরায়। খুঁজে খুঁজে সেগুলো সে দেখাচ্ছিল তিতলিকে। কোনো একটা ঘরোয়া অনুষ্ঠানের ছবি কিছু। কিন্তু তাতেই মুখভর্তি চওড়া হাসিতে উচ্ছল, প্রাণবন্ত অরবিন্দকে চেনা মুশকিল। চেহারাটা যদিও এতটা সুগঠিত ছিল না মনে হচ্ছে, একটু যেন রোগা-পাতলাই! কিন্তু তাতে কী? এই অকৃত্রিম হাসিটুকু তো ভাড়া করতে হত না তখন। জিয়ানাও অরবিন্দের এই পরিবর্তনটুকু যে লক্ষ্য করেছে, সেটা তাঁর হাবভাবে বেশ স্পষ্ট। সত্যিই, মানবচরিত্র বড়ই বিচিত্র! যাকগে, এত ভেবে কাজ নেই। ক্ষতিহীন কাজে ক্ষতি নেই। বিশেষ করে তিতলির এখন এসব ব্যাপারগুলো আস্তে আস্তে সহ্য হয়ে এসেছে। অগত্যা সে এখন প্রসঙ্গান্তরে এলো। জিয়ানার প্রোজেক্ট কী বিষয়ে, কতটা কাজ এগোচ্ছে, এগুলি সে এখন শুনছে মন দিয়ে। উচ্ছল জিয়ানা সেসব বলে যাচ্ছে একের পর এক। তিতলির মন্দ লাগছে না। গোমড়ামুখো অরবিন্দের সঙ্গে সময় কাটানোর চাইতে এটাই বরং অনেক ভালো।
বেলা গড়াচ্ছে ক্রমশ। শীতের দুপুরগুলো বড্ড তাড়াতাড়ি উবে যায় যেন! অরবিন্দ ব্রেকফাস্ট সেরে কোথায় বেরিয়েছে, কে জানে? জিয়ানার কথা ভাবতে ভাবতে এতটা সময় যে পেরিয়ে গেছে, খেয়ালই ছিল না তিতলির। ঘড়ির দিকে চোখ পড়তে দেখল সাড়ে এগারোটার কাছে কাঁটা স্থির হয়ে আছে। যদিও এখানে কোনো তাড়া নেই, তবু উঠে পড়ল সে। একটা শাওয়ার নেওয়া দরকার। মাথাটা কেমন যেন ভারি হয়ে আছে। বাথরুমে ঢুকে ঠান্ডা-গরম জলের কল খুলে দিয়ে শাওয়ারের নিচে শরীর মেলে ধরে আবার নানা চিন্তায় ডুবে গেল সে। প্রায় আধঘণ্টা ধরে স্নান সেরে বেরোল যখন, তখন শরীরটা অনেকটা হালকা লাগছে। অরবিন্দ ফেরেনি এখনো। মোবাইলে ইতিমধ্যে বার দুয়েক যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে সে। একবার ফোনটা বেজে বেজে থেমে গেল, আর-একবার যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর উত্তর দিল—‘পরিসেবা সীমার বাইরে।’ আরও একবার ফোনটা হাতে তুলে নিল তিতলি। ডায়াল করছে অরবিন্দের নাম্বার—আবার সেই যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর। কিন্তু এবারের বার্তাটি জানাচ্ছে যে, অরবিন্দের ফোন আপাতত বন্ধ রয়েছে! এবার মনের মধ্যে একটা চাপা উৎকণ্ঠা টের পাচ্ছে সে। প্রায় তিনঘণ্টার ওপর হয়ে গেল—কোথায় গেল অরবিন্দ? একে তো অজানা জায়গা—তার ওপর সুনসান চারপাশ। রিসর্টের পেছন দিকে যতদূর চোখ যায়, কেবল ঘন শাল-সেগুনের জঙ্গল! কোনো হিংস্র জন্তু-জানোয়ার নেই যদিও, তবু বিষাক্ত সাপ ইত্যাদি তো থাকতেই পারে! বিপদ হতে কতক্ষণ? ঘড়ির কাঁটা ক্রমেই এগোচ্ছে। আর-একটু পরেই লাঞ্চের ডাক পড়বে। ঘর বন্ধ করে বেরিয়ে এল তিতলি। আর বসে থাকা সম্ভব নয়। রিসর্টের এরিয়াটা বিরাট। একপাশে পুকুরও রয়েছে খান দুয়েক। কয়েকজন লোক সেখানে জাল ফেলে মাছ ধরছে। লাঞ্চ বা ডিনারের জন্যই বোধহয়। সেদিকে কিছুটা খুঁজে এসে পার্কের দিকে গেল তিতলি। কিছু বাচ্চাদের রাইড রয়েছে। এখন প্রায় কেউ-ই নেই সেখানে। দু-একটি বাচ্চা শুধু একধারে দোলনায় দোল খাচ্ছে দিব্যি। নাঃ। এখানেও নেই অরবিন্দ। একপাশে বেশ অনেকটা জায়গা জাল দিয়ে ঘেরা। তার মধ্যে রয়েছে নানা প্রজাতির কিছু হাঁস-মুরগি, পাখি, গিনিপিগ, খরগোশ ইত্যাদি। সেখানেও খুঁজে এলো সে। প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে এদিক-সেদিক করার পর বেশ ক্লান্ত লাগছিল তিতলির। শীতের রোদ এখন আরামের থেকে অসহনীয় উত্তাপ ছড়াচ্ছে বেশি। তবু সে গেটের বাইরে এল। পাশে একটা মজা ঝিলের একাংশ, কিছু বোট বাঁধা রয়েছে একধারে। মনে হয় এখানেও কিছু শখের নৌকাভ্রমণ হতো এককালে। কিন্তু এখন সেসব ইতিহাস! জলে নামবার চওড়া সিঁড়িগুলোও ভাঙাচোরা আর শ্যাওলা পড়ে এখন সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে। এই ঘাট থেকে কিছুদূর গেলেই একটা গ্রাম রয়েছে। সে দিকে যেতে পারে কি? আর পারছে না তিতলি। ঘাটের সিঁড়িতেই এবার বসে পড়ল সে। একটা ফোন করে যে দেখবে, তারও উপায় নেই। তাড়াহুড়োতে ভুল করে আবার মোবাইলটা ঘরেই ফেলে এসেছে। এখন ঘরে ফিরতে হলে আবার প্রায় পনেরো মিনিটের হাঁটাপথ। এই দূরত্বটাই তিতলির কাছে এখন কম নয়! অনেকদিন এত হাঁটাহাঁটির অভ্যেস নেই তার। তাছাড়া চাপমুক্ত হলে এই হাঁটাটুকু হয়তো তাঁর কাছে এত কঠিন মনে হতো না। কিন্তু এখন স্নানপরবর্তী ফুরফুরে ভাবটুকু উধাও হয়ে মাথাটা ভারি হয়ে আসছে আবার। শরীরের ওজনও যেন বেড়ে গেছে অনেক। এতটা সে আশা করেনি। ভেবেছিল কাছে-পিঠেই কোথাও হয়তো রয়েছে অরবিন্দ। আগে বুঝলে ডাইনিং হলে ঢুকে একটু খোঁজখবর নিত সে কিংবা জিয়ানাকেও সঙ্গে নিত হয়তো। সেক্ষেত্রে গ্রামটা থেকে একবার ঘুরেও আসা যেত। কিন্তু এই দিনের বেলাতেও জায়গাটা কেমন জনশূন্য। দু-একজন গামছা পরা লোক সাইকেল নিয়ে গেল গ্রামের দিকে। একটা ধানভর্তি গরুর গাড়িও চলে গেল পাশ দিয়ে। তাছাড়া আর কারোর দেখা নেই। গেটের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকটি একপাশে বসে দিব্যি ঘুমোচ্ছে। এর কাছে সদুত্তর পাওয়ার আশা কম। তবুও একবার এগিয়ে গেল তিতলি। ডেকে তুলল তাঁকে। অরবিন্দের চেহারার বর্ণনা দিয়ে জিজ্ঞেস করল, সে এরকম কাউকে বেরোতে বা ঢুকতে দেখেছে কি না! উত্তরে লোকটি একটা অপ্রস্তুতের হাসি হেসে একটা হতাশাজনক প্রতিক্রিয়া দিল যথারীতি! হতাশ তিতলি এবার পা বাড়াল রিসর্টের দিকে। এবারেও খোঁজ করে অরবিন্দকে না পেলে অন্যরকম কিছু ব্যবস্থার কথা তাঁকে ভাবতে হবে! রিসেপশন আপাতত জনহীন। ডাইনিং স্পেসের দিকে পা বাড়াতেই চোখে পড়ল এক অদ্ভুত দৃশ্য! অরবিন্দ আর জিয়ানা এক টেবিলে বসে রয়েছে। কিছু হালকা আলোচনা চলছে দুজনের মধ্যেই, সেটা ওদের হাবভাবেই স্পষ্ট! খুশি হওয়ার কথা এখন তিতলির! বদলে তাঁর শরীরের ভেতর অন্য একটা অনুভূতির কম্পন অনুভব করল সে। সেটাকেই বোধহয় রাগ বলে। সরাসরি দুজনের সামনে গিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল সে অরবিন্দের দিকে—‘কোথায় ছিলে তুমি? খুঁজতে খুঁজতে হয়রান!’ অরবিন্দের হাসিমুখটা এখন কিছুটা নিষ্প্রভ। একটা নিরুত্তাপ ভঙ্গীতে সে উত্তর দিল—‘আমি কি বাচ্চা ছেলে? এভাবে খোঁজার দরকারটা কী?’ এবার তিতলির স্বরে স্বভাববিরুদ্ধ ঝাঁঝ—‘একটা অচেনা, নির্জন জায়গাতে তোমার মোবাইল সুইচড্ অফ বলছে, সকাল থেকে এতক্ষণ ধরে তুমি উধাও। একজন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে খোঁজ করাটা কি খুব অন্যায়?’ ‘স্বাভাবিক’ শব্দটার ওপর তিতলি একটু জোর দিল। অরবিন্দ বোধহয় জুতসই উত্তর দিতে যাচ্ছিল, কিন্তু বাধ সাধল জিয়ানা। সে এবার দুজনকে থামিয়ে বলে উঠল—‘আরে, তোমরা থামো তো এবার! যথেষ্ট হয়েছে। এবার একটু জমিয়ে লাঞ্চ করা যাক!’ ব্যাপারটার সেখানেই ইতি ঘটল অগত্যা। কিন্তু সেদিন থেকে পরদিন সকালে কলকাতা ফেরা পর্যন্ত দু’জনের মধ্যে স্বাভাবিক কথা প্রায় বন্ধই রইল। আসলে সেই দুপুরে ডাইনিং প্লেসে বেশ কিছু বাইরের লোকজনও উপস্থিত ছিল। তাঁদের সামনে এই বাদানুবাদের নাটকটা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না তিতলির। এতেই অরবিন্দের পুরুষসত্তা আরও আহত হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। কাল ফেরার সময় জিয়ানার কাছেও কেমন অপ্রস্তুত লাগছিল তিতলির! মেয়েটার সঙ্গে এই অল্পদিনেই বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। সে কী ভাবল কে জানে? তাঁকে দেখে অবশ্য কিছু বোঝা যায়নি! নিজে থেকেই ফোন নাম্বর দিয়ে বলেছে, ‘সময় করে একবার দিল্লি ঘুরে যেও কিন্তু। আই উইল ওয়েট ফর ইওর কল।’ এই শেষ বাক্যটা বলার সময় একটা অদ্ভুত হাসি ছড়িয়ে গিয়েছিল জিয়ানার ঠোঁটে। তিতলিও প্রত্যুত্তরে একটুকরো হাসি ফিরিয়ে দিয়েছিল তাঁকে।
কলকাতায় ফিরে আবার সেই ব্যস্ত জীবন। সপ্তাহখানেকের মধ্যে অরবিন্দও সব ভুলে আবার স্বাভাবিক। টুকটাক কথা, অফিসের ব্যস্ততা। গ্রিন টি হাতে ল্যাপটপে ডুবে যাওয়া। জীবন আবার পুরোনো ছন্দে। তবু মাঝে মাঝে অজয়ের ধারের কয়েকটা দিন তিতলিকে ভাবায়! অরবিন্দের সেই স্বভাববিরুদ্ধ উচ্ছলতা কি আজকের মানুষটার মধ্যে কখনো আর ফিরিয়ে আনা যায় না? আবার পাখিদের চিৎকারে ঘুম ভাঙে। অরবিন্দের অফিস থেকে ফেরার সময় হয়। দিন থেকে রাত, আবার রাত থেকে দিন হয়। মাস দেড়েক গড়িয়ে এখন গতানুগতিক অপেক্ষায় দিন কাটে তাঁর। শীত আসছে শহরে। কয়েকদিন ধরেই তিতলির শরীর ভালো যাচ্ছে না। সর্দি-কাশির ধাত ওর কোনো কালেই ছিল না। কিন্তু বেশ কিছুদিন হল সন্ধ্যে হলেই কেমন একটা জ্বর জ্বর ভাব দেখা যাচ্ছে। সারাদিন একরকম কাটে। বিকেল গড়াতেই মাথা ভার হতে শুরু করে। সেইসঙ্গে মুখে কেমন একটা বিস্বাদ ভাব, সকালে বিছানা ছেড়ে উঠতেও এক-একসময় দেরি হয়ে যায় আজকাল। কাউকেই যদিও জানায়নি তিতলি। প্যারাসিটামল গিলে গিলেই আজকাল দিন কাটছে তাঁর। কিন্তু এরই মধ্যে এক দুপুরে খাওয়ার সময় দু-এক গ্রাস মুখে তুলতেই বেসিনে ছুটতে হল তাঁকে। হড়হড়িয়ে ঢালার পর আর কিছু মুখে দিতে ইচ্ছে হল না। নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল কোনোমতে। একটু পরেই কার পায়ের আওয়াজ। অতি কষ্টে চোখ খুলল তিতলি। শাশুড়ি এসেছেন ঘরে। মুখে হাসির রেখা স্পষ্ট। তিতলির পাশে বসে বললেন—‘কালকেই একবার ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়া শুরু করে দাও। এবার থেকে আর অত তাড়াহুড়ো কোরো না। একটু সাবধানে থেকো। আর কিছু খেতে ইচ্ছে হলে বোলো আমায়!’ স্পষ্ট ইঙ্গিত! তিতলি নিজেও এই ব্যাপারটাই ভাবছিল কিছুদিন ধরে। নেট ঘেঁটে সব উপসর্গ মিলিয়ে দেখে তাঁরও যে এটা মনে হয়নি এমনটা নয়! শুধু জ্বরের ব্যাপারটাই একটু রহস্যময়! কিন্তু সেটা অবশ্য সিজন চেঞ্জের ফলও হতে পারে! তাই সে দ্বিরুক্তি না করে মাথা নাড়ল। সে তো ভীষণভাবেই চাইছে একটা নতুন জীবনকে। কতদিন কতভাবে মনে হয়েছে তাঁর! রাস্তাঘাটে ছোট্টো ছোট্টো হাত-পা গুলোকে নড়তে চড়তে দেখলে তাঁর বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠত বারবার! কিন্তু অরবিন্দ পাত্তা দেয়নি তেমন। তবু চেষ্টা চালিয়ে গেছে তিতলি। আজ তারই ফল আসতে চলেছে বোধহয়! একটা স্ট্রিপ কিনে আনা যায় তো? কিন্তু এখন দুপুর! সবই তো বন্ধ। কোনো মতে সময়টা কাটছে যেন। সন্ধ্যে নামছে। এবার হয়তো দোকানগুলো খুলেছে সব। কিন্তু বেরোতে গিয়েও থমকে গেল সে। এই অঞ্চলের দুটো দোকানের লোকজন তাঁদের ভালো করেই চেনে। কিনতে গেলে একটা জানাজানির ব্যাপার আছে। তারপর যদি সবটাই নেগেটিভ হয়, তখন? সাহস পেল না তিতলি। একটু পরেই অরবিন্দ ফিরে এল অফিস থেকে। চায়ের কাপ হাতে ড্রয়িং রুমে আসতে আসতে তিতলি দেখল শাশুড়ির সঙ্গে ছেলের কথোপকথন চলছে। সে সামনে যেতেই অরবিন্দ তাকাল তার দিকে। সেই দৃষ্টিতে খুব একটা অখুশির ভাব নেই যদিও।
পরের কয়েকটা দিন অসম্ভব উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়ে কাটল তিতলির। ডাক্তার দেখিয়ে, যাবতীয় টেস্ট করেও রিপোর্ট সবটাই হতাশাজনক এলো শেষমেশ। বাড়িতে শাশুড়ির মুখ ভার। ডাক্তার বাকি সব উপসর্গ দেখে আরও কিছু ব্লাড টেস্ট করতে দিলেন এবং তারপর—বজ্রাঘাত বুঝি এইভাবেই আসে! কিন্তু কীভাবে? কেন? স্বপ্ন দেখছে নাকি তিতলি? ‘এইচ আই ভি‘ শব্দটা তো এতদিন সে টিভির পর্দায় বা নিউজপেপারে পড়ে এসেছে। তবে? কী করে এটা সত্যি হয়? এর কারণগুলোর একটাও তো তাঁর হওয়ার কথা নয়। তবে? তিতলির দুই বাড়িতেই আকাশ ভেঙে পড়েছে। মা-বাবা থেকে সব আত্মীয়স্বজনই আসা-যাওয়া, খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন দলে দলে। তিতলিকে সন্দেহের চোখেও দেখতে শুরু করেছেন কেউ কেউ। এরই মধ্যে একদিন একটা ছোট্ট মেসেজ এলো তাঁর —‘চেক ইওর মেল ইনবক্স। ইটস্ আরজেন্ট।’ নাম্বারটা জিয়ানার। তড়িঘড়ি মেল চেক করতে বসল তিতলি। অনেক মেল এসে জমা হয়ে আছে ইনবক্সে। তারই মধ্যে একটা জিয়ানার —
ডিয়ার তিতিদি,
তোমার সঙ্গে কোনো শত্রুতা আমার ছিল না। কিন্তু সখ্যতাও নয়! বহুদিন আগে অরবিন্দ যখন অকারণেই আমায় ছেড়ে উধাও হয়ে যায়, তখন থেকেই ভেবেছি অনেক। তারপর তোমাদের নতুন সংসারের সন্ধান পেয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু আর বিশেষ কিছু ইচ্ছা হয়নি। অজয়ের ধারে সেই দেখাটা এমন অপ্রত্যাশিতভাবে হবে, তার জন্য আমি বা অরবিন্দ কেউই প্রস্তুত ছিলাম না! পৃথিবীটা যে গোল, তার প্রমাণ পেলাম আরও একবার। আর তারপরই আমার মনের সেই পুরোনো ভাবনারা আবার জেগে উঠল। অরবিন্দের ছেড়ে যাওয়ার পর বহু পুরুষই এসেছিল আমার জীবনে। এক মাত্রাছাড়া বোহেমিয়ান জীবনে ভাসছি তখন। চূড়ান্ত এক জীবনের শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছিলাম বোধহয়। তাই যখন ব্লাড রিপোর্টে ‘এইচ আই ভি’-র বিষয়টা জানতে পারলাম, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। কারণটা জানতে অসুবিধে ছিল না। কিন্তু উৎসটা জানার ইচ্ছে হয়নি আর। চূড়ান্ত হতাশায় ভুগছি তখন। সেইসব কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লেগেছিল আমার। সেইসঙ্গে সামাজিক চাপ তো ছিলই। তাই এতদিন পর যখন অরবিন্দ আর তোমার সুখের ছবি দেখলাম, সামলাতে পারিনি নিজেকে। আমার এই অবস্থার জন্য কিছুটা হলেও তো সে-ই দায়ী! তবে আমার প্ল্যান যে এত সহজে সাকসেসফুল হবে আমি নিজেও ভাবিনি। অরবিন্দও সম্ভবত একঘেয়ে জীবন থেকে অন্যরকম কয়েকটা দিন চেয়েছিল। তাই প্রথমে আমায় দেখে অপ্রস্তুত হলেও পরে সেটা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগেনি ওর। সেই সকালটা মনে আছে নিশ্চয়ই! অরবিন্দের নিরুদ্দেশ হওয়ার কারণটা আশা করি এখন বুঝতে পারছো! আমরা দু’জন সে’দিন অনেকটা সময় একসঙ্গে কাটিয়েছিলাম। তার ফল এতদিনে তোমাদের দু’জনেরই পেয়ে যাওয়া উচিত! ভালো থেকো!
—জিয়ানা ইনবক্স খোলাই পড়ে রইল তিতলির। শীততাপনিয়ন্ত্রিত জানালার বাইরের শহরে তখন দুপুর গড়িয়ে এক রক্তাক্ত বিকেল নামছে!
দেবলীনা চৌধুরী, চিকিৎসক এবং কথাসাহিত্যিক, ভারত