বেশ্যাবেশ্মে প্রথমদিনে মাধবীর বেদনাস্নান
[ভূমিকা :
মাধবী শ্রীদাম আর আরতির চৌদ্দ বছরের কিশোরী কন্যা। পরিবারটি চলছিল চমৎকার গতি মেখে। কিন্তু শ্রীদাম হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে যায়। তার ভালো চিকিৎসা করার সামর্থ্য ছিল না। ফলে একজন লোকাল ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে হয়। লোকাল ডাক্তারের প্রেমে পড়ে যায় আরতি। একদিন সেই লোকাল ডাক্তার যার নাম রমজান তার সাথে বেরিয়ে যায় আরতি। তার কিছুদিন পরই শ্রীদামের পা কাটা পড়ে। এটা করে আরো এক লোকাল ডাক্তার। মুরগিবেশে ঐ পা শ্রীদাম আর মাধবীর কাছে ফিরে এক দুপুরের খাবারে। পরে পায়ের বিষ বেদনায় মারা যায় শ্রীদাম। মাধবী একেবারে একা হয়ে যায়। তার বেঁচে থাকার ইচ্ছে উবে যায়। সে এক সন্ধ্যায় আত্মহত্যা করার জন্য ঘরের চালার সাথে দড়ি বাঁধে। যে সময় সে দড়ির ফাঁসে গলা ঢুকাতে যাবে ঠিক সে সময় কয়েকজন যুবক ঢুকে পড়ে তাকে ধরে নেয়। তারা তাকে অজ্ঞান করে অনেক দূরের এক বেশ্যাখানাতে বিক্রি করে দেয়। বেশ্যালয়ে তার জীবনের প্রথম দিনে তার মন ও শরীরের অবস্থা এবং অবস্থান নিয়ে এই আখ্যান।]
মাধবীর জ্ঞান যখন ফিরল তখনও সে বুঝতে পারেনি সে মরেনি। সে বুঝতে পারেনি তার ফাঁসিতে ঝুলে যাওয়া হয়নি। জ্ঞান ফিরেও জ্ঞান না ফিরার ঘোরের ভেতর আছে। মরে গেছে মনে করে ঘুমিয়ে আছে।
আরো বহুক্ষণ পর মাধবীর ঘুম আর ঘোর কাটলে মনে পড়ল, সে যখন ঝুলে পড়তে যাচ্ছিল ঠিক সে সময়ে কয়েকজন তার ঘরে ঢুকে পড়েছিল হুড়মুড় করে। তার মুখে রুমাল চেপে ধরে। রুমালটা এতো দারুণ গন্ধ ধরেছিল যে তার মনে হচ্ছিল এমন আনন্দ জগতে আর নাই। এর মধ্যে সে একটা মুখকে চিনতে পেরেছিল, সে হচ্ছে রমজান ডাক্তারের মেজ ছেলে। অন্য লোকগুলোকে চেনে না। তাদের কোনোদিন দেখেছে বলেও মনে হয় না।
ঘুম থেকে জেগে যাওয়ার বহুক্ষণ পর সে বুঝতে পারল সে বেঁচে আছে। এতক্ষণ সে মরে ছিল বলেই তার ধারণা হয়েছিল।
ঠাহর করার চেষ্টা করে, সে এখন কোথায় শুয়ে আছে। এটা তো তাদের ঘর নয়। এটা কি জগন্নাথের ঘর? জগন্নাথ তার বন্ধুদের সহায়তায় তাকে তুলে এনেছে। সে মনে মনে একটু আরাম পায়। জগন্নাথের রুমাল ছাড়া কার রুমালে এমন সুগন্ধ থাকবে। রুমালটা যেন আস্ত এক ফুলের বাগান। মাধবী শুয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবে। চোখ বন্ধ করে ভাবতে সহজ হয়, চোখ বন্ধ করে ভাবলে ভাবনার গভীরে যাওয়া যায়। ভাবনাবিশ্ব বিশাল এক বিশ্ব। এখানে জায়গার কোনো অভাব নেই। ভাবনাবনে ঘুরতে ভালো লাগে। চোখ খুলে ভাবনাতে খুব একটা সুবিধা হয় না। দরজার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছে, দরজা বাহির থেকে বন্ধ করা। মাধবী জগন্নাথের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। জগন্নাথের সাহস দেখে তার হৃদয় মৃদু তালে নাচছে। তার প্রেম কি আবার শ্বাস প্রশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে? প্রেমের জ্ঞান ফিরেছে? আগের সবকিছুকে চিনতে পারছে তাদের প্রেম?
আবার হঠাৎ করেই বুকটা ধক করেও ওঠে, যদি জগন্নাথ না হয়, যদি খুব খারাপ কিছু হয়। সে তার অবস্থা কিছুই বুঝতে পারছে না। বন্ধ চোখ খুলে। শুধু রাত মানেই যে অন্ধকার এমন নয়, প্রকৃত অন্ধকার তো এটায় যেটাতে নিজের অবস্থা ও অবস্থান নিজেই জানে না। সে হাসি হাসি মুখে জগন্নাথের জন্য অপেক্ষা করে। সে দুরু দুরু বুকে দারুণ খারাপ কিছুর মুখোমুখি নিজেকে দেখার জন্য অপেক্ষা করে। সে উজ্জ্বল মুখে দারুণ ভালো কিছুর বুকোবুকি হবার জন্য অপেক্ষা করে।
কিছুক্ষণ পর একটা প্রৌঢ়া এলো। তার হাতে খাবারের প্লেট। সে বলল, ‘তুই কী ভাবছিস জানি। তুই ভাবছিস, আমি এখন কোথায়? জেনে নে, তুই এখন একটা বেশ্যাখানায়। জেনে নে, তুই এখন একটা বেশ্যা। জেনে নে, তোকে আমার কাছে বিক্রি করা হয়েছে। তোকে এখন আমি কিনে নিয়েছি। বাইরে বেরুনোর চেষ্টাও করবি না। লাভ হবে না। আমার লোকেরা চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে আর তোকে ধরে ফেলতে সময়ও লাগবে না। তবে চারপাঁচ বছর পর তোর ওপর আর এত কড়াকড়ি থাকবে না। ইচ্ছে করলে তখন চলে যেতে পারিস কিন্তু গিয়ে লাভ হবে না। কোথাও তোর ঠাঁই হবে না।’ মাধবী হতবিহ্বল হয়ে তার কথা শুনছে। সে শ্বাসপ্রশ্বাস ফেলতে ভুলে গেছে। চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে। সে তার নিজের মধ্যে আর পাথরের মধ্যে কোনো ফারাক খুঁজে পেল না।
প্রৌঢ়া চলে গেল। কিন্তু তার কথার বাজ, কথার ঝাঁজ এখনো ঘরের ভেতর ঝনঝন করছে। এখনো মাধবীর কান ঝাঁ ঝাঁ করছে। সবকিছুকে দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। তার সামনে খাবারের প্লেট। খাবার জন্য একবার বলেওনি ঐ মহিলা। শুধু রেখে গেছে। তার ক্ষুধা পেয়েছে। কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে না। খেতে হবে এটা ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে। ভেতর থেকে সকলকিছুর প্রতি, এ জীবনের প্রতি, জনমের প্রতি ধিক্কার জন্মে গেছে। তার থুথু ফেলতে ইচ্ছে করল। থুথু কোথায় ফেলবে বুঝতে না পেরে গিলে ফেলল। কোনো শব্দ করতেই তার ভয় হচ্ছে। কোনো শব্দ না করলেই যেন বেঁচে যাবে। সে এতটুকু নড়ে না, একবিন্দু শব্দ করে না। নড়ে না, শব্দ করে না বলেই পাথর হাজার হাজার বছর বেঁচে থাকে। সে পাথর হতে চায়। পাথর জীবিত নয়। সে জীবিত থাকার হাত থেকে বাঁচতে চায়।
সে শব্দ করছে না। সে বেঁচে আছে। সে শব্দ করছে না কিন্তু তার ভেতরে শব্দের ঝড়, তুফান, ভূমিকম্প। সে শব্দ করছে না কিন্তু দরজাতে শব্দ হলো। সে শব্দ করছে না। কিন্তু সমস্ত জগৎ শব্দ করছে। সে শব্দ করছে না, নড়ছে না কিন্তু তার কোনো বাঁচান নাই। অপরিচিত একটা লোক ঢুকল। তার সাথে সাথে সেই প্রৌঢ়া, ‘কী রে এখনো খাসনি!’ প্রৌঢ়া বলে। ‘দেখ এসব করে কোনো লাভ হবে না। এই যে লোকটা এসেছে ভালোই ভালোই পায়জামার গিঁট খুলে দিবি। কোনো জোর যেন করতে না হয়। কোনো কান্নাকাটি চলবে না।’ লোকটা বলল—‘সমস্যা নাই, যত জোরাজুরি করবে তত বেশি মজা পাব আমি। নতুন মাল। কান্নাকাটি করলেও কোনো সমস্যা নাই। সে যত কান্নাকাটি করবে ততবেশি আমার ভালো লাগবে।’ প্রৌঢ়া মুচকি হেসে লোকটার দিকে তাকিয়ে চলে গেল।
লোকটা তার দিকে এগিয়ে এলো। ভয়ে মাধবী চিৎকার দিয়ে উঠল। স্কুলে পড়েছিল পৃথিবী কমলালেবুর মতো। তার চিৎকারে অজস্র কমলালেবু ফেটে চৌচির হয়ে গেল। তার কান্নাতে ভেসে গেল জগতের সব পাহাড় পর্বত, সমতল, নিম্নতল। লোকটার লোমশ জিহ্বা, ঠোঁট তাকে চুষে নিচ্ছে। তার শরীরের কেন্দ্রে যেন লোহার খোন্তা ঢুকে গেছে। অজস্র তরমুজ ফেটে গেছে, তরমুজ খেতে মত্ত হাতির পায়ের চাপে ফাটছে তরমুজ। তরমুজের লাল লাল রক্তে ভেসে যাচ্ছে সমগ্র খেত।
রক্ত। লোকটা বুনো ষাঁড়ের মতো। মাধবীর পেটে ক্ষুধা। লোকটা বুনো ষাঁড়। মাধবীর চোখে জল। লোকটা বুনো ষাঁড়। মাধবী দেখছে তার বাবার কাটা পা এগিয়ে আসছে। লোকটা বুনো ষাঁড়। মাধবী দেখছে প্রৌঢ়ার রেখে যাওয়া থালাতে সাদা সাদা ভাত সাদা সাদা পোকার মতো কিলবিল করছে। লোকটা বুনো ষাঁড়। মাধবী। বুনো ষাঁড়। মাধবী। ষাঁড়। ষাঁড়, ষাঁড়, ষাঁড়। মাধবী নিসাড়। তার কোনো অস্তিত্ব নাই, শুধু ষাঁড়ের অস্তিত্ব, ষাঁড়ের গুতোগুতি, ষাঁড়ময় জগৎ। দূর কোথা থেকে ভেসে আসছে তার মায়ের হাতের চুড়ির ঝন ঝন, শুনতে পাচ্ছে রমজান ডাক্তারের হো হো হাসি। এত হাসি হাসে কেন মানুষ। লোকটা হাসে। হাসি শুনতে তার ভালো লাগে না, হাসি দেখতে ভালো লাগে না। মানুষ যদি গভীরভাবে একটু ভেবে দেখে তবে কোনো হাসি হাসায় তার পক্ষে সম্ভব না। মাধবী জ্ঞান অজ্ঞানের ঘূর্ণিজলে তলাতে থাকে। শিশুকালের সেই কুকুর তার সামনে আসে। কুকুর জিভ বের করে হাঁপায়। কুকুরের জিভ দিয়ে জল ঝরে। সে বলেছিল, বাবা দেখ, কুকুর কেমন জিহ্বা দিয়ে কাঁদছে। কুকুর কি জিহ্বা দিয়ে কাঁদে গো বাবা। কুকুর বিস্ময় নিয়ে তাকায় শিশু মাধবীর দিকে। শ্রীদাম হাসতে হাসতে বলে, কুকুরের ঘর্মগ্রন্থি নেই গো মা তাই তাপে জিহ্বা দিয়ে জল ঝরায়। কুকুরের ঘর্মগ্রন্থি নাই? মানুষের আছে। মানুষের ধর্মগ্রন্থি নেই, মর্মগ্রন্থি নেই। লোকটার গা থেকে ঘাম ঝরছে, ঘামের সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে মাধবী।
মাধবী অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। প্রৌঢ়া ঘরে ঢুকে তাকে নগ্ন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। মাধবীর শরীরে অজস্র ক্ষত। প্রৌঢ়া লোকটাকে ডেকে পাঠায়, ‘এ কী হাল করেছ তুমি এর, একে তো আরো কয়েকদিন কারো সাথে কাজ করাতে পারব না। শরীরখানকে তো দেখছি ছিঁড়ে দিয়েছ। শরীর পাহাড়কে দেখছি কামড়ে ক্ষত করে দিয়েছ।’ লোকটা বীরের মতো বুক ফুলিয়ে নিঃশব্দে মিট মিট করে হাসে। মহিলা বলে, ‘হাসলে হবে না, আরো বেশি টাকা তোমাকে দিতে হবে।’ লোকটা বলে, ‘এমনিতেই তোমাকে কম টাকা দিইনি। আমি টাটকা মাল চেয়েছিলাম বলেই তো এত টাকা দিয়েছি। আর কেন টাকা চাও?’ মহিলা নাছোড়, ‘দেখ, বেশি বকিও না নইলে আর কোনোদিন এখানে তোমাকে ঢুকতেও দেব না।’ লোকটা আরো কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বেরিয়ে যায়।
মহিলা মাধবীর চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরায়। মাধবীর জ্ঞান ফিরলে বলে, ‘নে আর নাটক করিসনে। কোনো নাটক করেই ফায়দা হবে না। তোকে কিনতে একগাছা টাকা চলে গেছে।’ মহিলার খাবারের থালার দিকে চোখ যায়, ‘কই খাসনি এখনো? কোনো লাভ নেই। নে খেয়ে ফেল।’ বলে সে খেলো কী খেলো না তার ভ্রক্ষেপ না করেই বেরিয়ে গেল। মহিলা জানে, মানুষ স্বাধীন নয়। সে ক্ষুধার হাতে বন্দী। ক্ষুধা মানুষকে খেতে বাধ্য করে।
যদিও মহিলা বলেছিল, মাধবীকে আর কারো কাছে দুতিনদিন তুলে দেবে না তবু বিকেল হতেই আরো একজন লোক এসে ঢুকল মাধবীর ঘরে। সম্ভাব্য অত্যাচারের ভয়ে সে চোখ বন্ধ করে সংকুচিত হয়ে বিছানার এককোনে চলে গেল। বিছানার উপর কেউ লুকাতে পারে না। কেউ আসলে কোথাও-ই লুকাতে পারে না। এই লোকটিও এসে তার ক্ষতবিক্ষত শরীরের উপর চড়াও হলো।
এ লোকটা চলে গেলে আরো একজন। তারপর আরো একজন। মাধবীর শরীর আর তার শরীর হয়ে নাই। তার শরীর এখন অন্য কারো। তার শরীরের মালিক এখন সে নয়। তার শরীরের মালিক এখন অন্য কেউ। তার শরীর এখন মাংস বাজারের মাংস। মাংস রান্না হচ্ছে, মাংস রান্নার সুগন্ধি ছুটছে দূরে দূরে।
মাধবীর দেহের অনুভূতি যেন চলে গেছে। তার শরীর যেন নাই। তার ওঠার ক্ষমতা নাই। হে ভগবান, তুমি কি পৃথিবী এ কারণে সৃজন করেছ? হে ভগবান, তুমি আমাকে তাহলে এই কারণে সৃষ্টি করেছ? নাকি ভগবান টগবান সব ভুয়া কথা। এতদিন যে ঠাকুরঘরে পুজা দিয়ে এসেছি তা কি এসকল ঘটার জন্য? ঠাকুরের পায়ে কুকুরের মতো পড়ে ধুলো মেখেছি কি এ বেশ্যাজীবন পাবার জন্য? সব দেবতা ভুয়া। সব অপদেবতা সত্য। সব দেবতা দাঁড়িয়ে থাকে মন্দিরের মৃৎপিণ্ডের পাথরখণ্ড হয়ে, সব অপদেবতা দাঁড়িয়ে থাকে মানুষের হৃৎপিণ্ডের ওপর জীবন্ত হয়ে। তো ঠিক আছে ভগবান, এই যে আমার যোনি উন্মুক্ত করে রেখে দিলাম পুরো জগতের জন্য, সকল মানুষ আসুক, দেবতা আসুক, তুমিও এসো।
মাধবীর পেটে দারুণ ক্ষুধা। তার শরীরে দারুণ ব্যথা। তার মন আছে না তাকে ছেড়ে চলে গেছে বুঝতে পারছে না। সে ভাত খাবার জন্য ধীরে ধীরে প্লেটের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। এক হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আরেক হাত সেই হাতকে ভাতের থালা না ধরার জন্য টেনে ধরেছে। সে বুঝতে পারল তার ভেতর তাকে এখনো ছেড়ে যায়নি। এক হাতে তার দেহ সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে হাতকে ভাতের থালার দিকে নিয়ে যাচ্ছে আর একহাতে তার মন সমস্ত শক্তি দিয়ে ঐ হাতকে টেনে ধরে আছে। মনের হাত আর দেহের হাতের পাঞ্জা চলছে। পাঞ্জার কোনো হাতই কোনো দিকে টলাতে পারছে না কোনো হাত। স্থির হয়ে আছে মধ্যবিন্দুতে। সে ভাবে, আত্মহত্যা ভালো, আত্মসম্মানহত্যা খারাপ। আত্মহত্যাতে মানুষ পুরো মরে। আত্মসম্মানহত্যাতে মানুষ অর্ধেক মরে। প্যারালাইজড মানুষের চেয়েও ভয়ঙ্কর তার বেঁচে থাকা। এসব ভেবে ভেবে, ভাত চাওয়া হাতের বিপক্ষে আঁত বাঁচাতে চাওয়া হাতের দিকের শক্তির বাড়াতে চায়। দুহাতের দাবির শক্তি বহুক্ষণ মধ্যবিন্দুতে স্থির থাকে।
আস্তে আস্তে মনের হাত নিস্তেজ হয়ে এলো। ভাত চাওয়া হাত জিতে গেল আঁত চাওয়া হাতের উপর। জয়ী ভাত চাওয়া হাতের উপর উঠে এলো ভাত-শিরোপা। সাদা সাদা ভাত। পোকার মতো ভাত। এসব পোকা কী পেটের ভিতর গিয়ে কিলবিল করবে না? ভাত মাখতে গিয়ে তার মনে পড়ে সেদিন ঝোঁপে বুনো মুরগি ধরার কথা। আচ্ছা, বুনো মুরগিটা অত স্থির ছিল কেন? ওটা কি আসল মুরগি ছিল না? কত সহজেই ধরা দিয়েছিল, কোনো শব্দ করেনি, ঝটরপটর করেনি। আচ্ছা তার বাবার কেটে ফেলা পা টার কী হয়েছিল? ঐ ডাক্তার পা টা কোথায় নিয়ে গিয়ে ফেলেছিল? না কি কোনো মাংসের দোকানে বিক্রি করে দিয়েছিল? মানুষের মাংসের স্বাদ কেমন? জীব তো জীব খেয়েই বেঁচে থাকে। তাহলে মানুষ মানুষকে খেলে ক্ষতি কোথায়?
[ শেষিকা :
বেশ্যাবেশ্মতে তার নারকীয় জীবন শুরু হয়। সে এখান থেকেও বের হবার চিন্তা করতে থাকে। কিন্তু বেশ্যাবেশ্মের চালিকা মহিলার নজর খুব কড়া আর চারদিকে তার লোক গিজগিজ করছে। দালাল, দোকানাদার, পুলিশ, রিকশাচালক, বিচারক, অন্যান্য পতিতা, খদ্দের প্রভৃতি জগতের সকলকেই মাধবীর ঐ মহিলার লোক মনে হয়। তবু তার আশা তাকে বলে, তুমি তক্কে তক্কে থাকো মাধবী, একদিন এখান থেকে বের হতে পারবে।]
• আনিফ রুবেদ, কবি ও কথাসাহিত্যিক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ