অপারগতা
লং কামিজটা পরেই শায়লার মন ফুরফুরে হয়ে গেল। আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মুখকে ডানে বাঁয়ে ঘুরিয়ে, কপালে দু গাছি চুল ফেলে, ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিজেকে দেখল। বর্ণিল প্রজাপতির মতো উড়তে ইচ্ছে করল তার। চেন্নাই প্রিন্টের সঙ্গে রং ম্যাচ করে ইয়ক লাগিয়েছিল কামিজের গলায় আর বাহুতে। নিচের অংশে ম্যাচ করে লাগিয়েছিল নেটের ঝালর। রংটা হালকা আকাশিও না গাঢ় নীলও না, দুয়ের মাঝামাঝি। শায়লা এ কাজটি তার প্রতিটি ড্রেসের ব্যাপারে সচেতনভাবে করার চেষ্টা করে। একক রং ব্যবহার না করে দু তিনটি রঙের মিশ্রণ; তবে সেটা হতে হবে হালকা। সব সময় তার পছন্দ হালকা রং। হালকা রঙের ড্রেস পরলে মনটা হালকা বোধ করে সে।
আবিদ সন্ধ্যায় বাচ্চাদের নিয়ে রেস্তোরাঁয় যাবে। সূচনা টার্ম পরীক্ষা ভালো করায় তাকে আবিদ কথা দিয়েছিল বাইরে খাওয়াবে আজ। অফিসে যাবার জন্য রেডি হতে হতে সে শায়লাকে বলল, সূচনা ও শুভকে রেডি করে রাখিস। আর তুইও রেডি হয়ে থাকিস। আমি অফিস থেকে এসেই বাইরে যাব।
আবিদ সাধারণত দুপুরে ফিরে না। নিজেদের ব্যবসা। এক হাতে সামলাতে হয়। কাজ আর কাজ। এই ক’ বছরে আবিদকে কেউ কখনো অফিস কামাই করতে দেখেনি। তার ওপর আছে রাজনীতি। রাজনীতিতে নেমে অবস্থা আরও বেহাল। এলাকার লোকজনকে সামলাতে সামলাতে দিনের পুরোটা সময় ব্যয় হয়ে যায়।
আবিদের কথাটা শুনেই বুকটা ধক করে উঠল শায়লার। এটা যে আবিদের সঙ্গে প্রথম বের হওয়া, তা নয়। এর আগেও বহুবার সে আবিদের সঙ্গে, বলা ভালো আবিদের ফ্যামিলির সঙ্গে বাইরে গেছে। কিন্তু এবারেরটা ভিন্ন। প্রতিবার ভাবি বাচ্চারা সঙ্গে ছিল। এবার ভাবি নেই। সে যাবে বাচ্চাদের সঙ্গে। সেখানে তাকে প্রায় ভাবির ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। বাচ্চাদের খাওয়ানো, টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে দেয়া, চিকেনে সস লাগিয়ে দেয়া—সব করতে হবে তাকে। তাছাড়া এরূপ একটা পরিস্থিতিতে তার যা বয়স ও শারীরিক গঠন তাকে যে কেউ আবিদের বউ বলে ভাববে। এতসব চিন্তা মাথায় আসতেই বুকটা ধক করে কেঁপে উঠল। একটা ভালো লাগা বোধ কাজ করল মনের মধ্যে।
রিনা ভাবির অসুখটা ছিল জটিল। ধরা পড়ার পর ডাক্তাররা বলেছে ব্রেনের সেরিব্রাল অংশে অসনাক্ত ভাইরাসের আক্রমণ এটা। ব্যাংককের চিকিৎসকেরা বোর্ড বসিয়েও কুলকিনারা করতে পারেনি। ভাইরাসটাকে সনাক্ত করা যায়নি কোনোভাবে। মাসখানিক সেখানে থাকার পর অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটলে নিয়ে আসা হয় দেশে। ভাবির আত্মীয়স্বজনদের কথা ছিল, মরতে হলে দেশের মাটিতেই মরবে।
রিনা ভাবি মারা যাবার পর প্রায় ছমাস গত হতে চলেছে। এখন শায়লার মধ্যে একটা পাপবোধও কাজ করছে। ব্যাংকক থেকে আসার পর ভাবি যতদিন এখানকার লোকাল হাসপাতালে ছিল সে বাহ্যত চেষ্টা করেছে তার বেঁচে থাকার জন্য প্রার্থনা করতে; কিন্তু মনের গহীন থেকে কেউ যেন বলে উঠত ও মরে গেলে তো তোর লাভ। এ ভাবনাটা শায়লার মধ্যে কাজ করা শুরু করেছিল রিনা ভাবির অসুখটা ধরা পড়ার পরপরই। ঢাকা থেকে রিপোর্ট আসার পরই তার মনের মধ্যে ভাবনাটা এলো। এর আগে সে কখনো এমন করে ভাবেনি।
শুভ ও সূচনা রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে বসে সিআইডি দেখছিল। আর মাঝে মাঝে শায়লাকে এসে বলছিল, বাপ্পি আসছে না কেন এখনো। একটা ফোন করো না আন্টি। সম্পর্কে ফুফি হলেও ওরা শায়লাকে আন্টি বলেই ডাকে। শায়লারও একটা ফোন করতে ইচ্ছে করছিল ঠিকই। আবার তার সংকোচও হচ্ছিল। ভাবির অসুখের আগে ঘরের প্রয়োজনে সে বহুবার ফোন করেছে আবিদকে। তখন তার কোন সংকোচ হতো না। ফোন করে প্রয়োজনীয় কথাগুলো বলেই সারা। যেমন, ভাইয়া বাসার জন্য দুধ লাগবে। শুভ লেইস খাওয়ার জন্য কান্না করছে। ভাবি বলছে ওর জন্য চসেজ আনতে—এসব। তা ফোনগুলো রিনা ভাবিও করতে পারত। কিন্তু সে ছিল সিরিয়াল পাগল। হয়তো একা একা থাকতে থাকতে টিভিটাকেই ধ্যানজ্ঞান করে ফেলেছিল। সিরিয়াল চলাকালে সে কোনো কথা বলত না। প্রয়োজনে শুধু বলত, শায়লা তোর ভাইয়াকে ফোন করে বলে দে তো। আবিদও এটা জানত। এখন ভাবির অবর্তমানে বলা যায়, নিজেকে তার স্থলাভিষিক্ত কল্পনা করার পর থেকে আর সেভাবে ফোন করতে পারছে না শায়লা।
আবিদকে নিয়ে তার এ কল্পনাটা একেবারে অমূলক নয়। রিনা ভাবি মারা যাবার পর কথাটা উঠেছিল আবিদের পরিবার থেকে। বিশেষ করে আবিদের মা জানু ফুফু একদিন শায়লার বাবাকে কথাটি বলেছিল। আড়াল থেকে শায়লার কানে আসে কথাটা। আবিদের পক্ষ থেকেও সে কিছুটা সায় পেয়েছে। রিনার মৃত্যুর আগে পরের কিছু ঘটনা এরূপ কল্পনা করতে উৎসাহিত করেছে শায়লাকে। সে তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে বিষয়গুলো পুনরায় দেখার চেষ্টা করল। তার প্রতি আবিদের টানটা কোথায় তার উৎসমূল সন্ধানে রত হলো সে। রেগুলার শুভ ও সূচনার পড়ালেখার খবর নেয়া, বাড়ি যেতে বললে আবিদের না করা, বাসায় থাকলে ছুতানাতায় শায়লাকে কাছে কাছে রাখা, আড়ালে আবডালে শায়লার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে তাকান। তাছাড়া দেশে দেশের বাইরে যখন যেখানে গেছে আবিদ অন্যদের পাশাপাশি শায়লার জন্যও কিছু না কিছু নিয়ে এসেছে। চেন্নাই প্রিন্টের এ থ্রি পিছটা আবিদই এনেছিল শায়লার জন্য।
এতসব ভাবনার মধ্যেই ডোরবেল বেজে উঠল। শায়লার মনের মধ্যে একটা ভয় ও ভালোলাগার মিশ্রিত বীণারসুরও বেজে উঠল সঙ্গে সঙ্গে। সে নিজেকে আরও একবার দেখে নিল ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়। নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে কিছুটা লজ্জা বোধ হলো। লংটা সে বানিয়েছিল হাই নেক ও ভি গলা দিয়ে। এখন তার মনে হচ্ছে ভি-টা একটু মাপে বড় হয়ে গেছে। তা হোক এটা সে পড়বে শুধু আবিদের সামনে। আর লঙের সঙ্গে ভি-টা একটু বড় না হলে মানায় না।
শায়লা বসেছিল আবিদের মুখোমুখি। কম্বো-৪ অর্ডার দিয়ে আবিদ বলল, তোরা বস আমি একটু আসছি। আসছি মানে সে যাচ্ছে স্মোকিং জোনে। স্মোকিংটা মাত্রাতিরিক্ত করে আবিদ। শায়লা ভাবল, সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে সে আবিদকে যেভাবে পারুক ধূমপানের বদঅভ্যাসটা ছাড়িয়ে নিবে। স্মোকিং জোন থেকে আবিদ আসার আগে আগে শায়লা কায়দা করে শুভ সূচনাকে টেবিলের এক পাশটায় বসতে দিল। এখন শায়লা যে পাশটায় বসে আছে সে পাশেই আছে একটি খালি চেয়ার। চেয়ারের সঙ্গে চেয়ার লাগোয়া। আবিদ এসে কিছু না বলেই শায়লার পাশে বসল। সিগারেট আর দামি পারফিউমের মিশেলে এক অন্যরকম গন্ধ ঠেকল নাকে। একটা সূক্ষ্ম অনুভূতি শায়লার দেহমনে ছাড়িয়ে গেল মুহূর্তে। আর তাতেই সে তার ভবিষ্যতের একটা রূপকল্প তৈরি করে নিল মনে মনে।
শায়লা আবিদের দূর সম্পর্কীয় মামাতো বোন। তার মায়ের চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে। শায়লার বাবার উড়নচণ্ডী স্বভাবের কারণে পরিবারটি আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। পুত্রের আশায় পরপর ছয় কন্যার জনম দিয়ে পরিবারটি পড়ে যায় বিপাকে। বড় দু মেয়ের বিয়ে দিতে আলতাফের গলদঘর্ম অবস্থা। তারওপর তিন মেয়ের পড়ালেখার খরচ যোগাতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয় তাকে। আবিদের ওপর নির্ভর করে চলছে শায়লার পড়ালেখা। এরপরেও আবিদের মা জাহানারা বেগম আলতাফকে যখন বলল, শায়লাকে আমি শুভ-সূচনাকে দেখাশুনা করার জন্য একেবারে রেখে দিতে চাই। আলতাফ এক কথায় হাঁ বলতে পারেনি। বলেছিল, মেয়ের মায়ের সঙ্গে কথা বলে দেখি বুবু। তাছাড়া মেয়েরও তো একটা মতামত আছে।
শায়লা আড়াল থেকে সব শুনে মনস্থির করে ফেলল। নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে কিছু যুক্তিও দাঁড় করাতে সক্ষম হলো সে। প্রথম কথা হচ্ছে, আবিদ দোজবর। এটা এসময়ের জন্য কোন যুক্তি নয়, কারিনা যদি সাইফ আলী খানকে পারে, তো শায়লা কেন পারবে না আবিদকে? দ্বিতীয়ত শুভ সূচনার প্রতি তার একটা দায়বদ্ধতা আছে। কাদের হাতে ছেড়ে দিবে এদের? তাছাড়া আবিদের বয়সইবা আর কত হয়েছে? এ কয়দিনে সে কি আবিদকে ভালোবেসে ফেলেনি? একটা সম্পন্ন ঘরের স্বপ্ন তো দেখতেই পারে যেকোনো মেয়ে। সিদ্ধান্তটি নিল সে এসব ভাবাভাবির পর।
ঘুমোতে যাবার আগে জানালা দিয়ে সে আকাশটা পরিষ্কার দেখতে পেল। আবিদের আজ আসতে দেরি হবে। কী সব মিটিং-ফিটিং আছে। শায়লা শুভ আর সূচনাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে গিয়ে নিজেও কিছুটা অর্ধতন্দ্রায় ডুবে গেল। দেখতে পেল রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে আবিদ প্রাডোটাকে সোজা বাসার উল্টো দিকে চালাতে থাকল।
কোথায় যাচ্ছি আমরা?
পাহাড়ের বুক চিরে রাস্তা যেখানে এঁকেবেঁকে গেছে সেখানটায় একটা মার্সিডিজকে ক্রস করতে গিয়ে আবিদ খানিকটা ঝুঁকে পড়ল শায়লার দিকে। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, আমরা যাচ্ছি বিচে।
মুখটা কানের কাছে আসতেই হিমশীতল কিছু একটা খেলে গেল শরীরে নাকি মনের মধ্যে বুঝে উঠতে পারে না শায়লা। উদাসভাবেই বলল, ও পতেঙ্গা?
হ্যাঁ, সি বিচেই যাচ্ছি, বলল আবিদ। সেখানে চাঁদসমুদ্রের গলাগলি দেখাতে নিয়ে যাব তোমাকে।
তাইতো! আজ তো পূর্ণিমা। তার ওপর শরতের স্বচ্ছ আকাশ। বাম পাশের গ্লাস নামানো। এক ঝলক আকাশ দেখে নিল শায়লা। টাইগারপাসের বড় বড় রেইনট্রিগুলোর পাতার ফাঁক দিয়ে দুর্দান্ত লাগছিল আকাশকে। আবিদ গ্লাস তুলে দিল। বাঁ হাতটা এখন শায়লার কাঁধে। বলল, পরিষ্কার আকাশে জোছনা দেখার স্বাদই আলাদা।
তখন সেটে বাজছিল হাবিবের গান। ভালবাসবো ও বাসবোরে...। পাগল হবার দশা।
বিচটা আর কতদূর আবিদ?
এই প্রথম সে আবিদকে আবিদ বলে ডাকল। এরূপ আবহে আর কিই বা ডাকা যায়? আবিদের ভাবান্তর হলো না। সম্বোধনটায় সায় দিয়েছে মনে হল। গাড়ি ছুটছে পাগলের মতো।
দশ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাব মনে হচ্ছে।
শায়লার অনুরোধে গাড়ির গ্লাস নামান হলো। গ্লাস তার ভাল লাগে না। দম বন্ধ হতে চায়, ছটফটানি শুরু হয়। হুঁ হুঁ বাতাসের মধ্য দিয়ে ছুটছে গাড়ি।
ঝনঝন শব্দে শায়লার ঘুম ভাঙল। সুফিয়াটা আবার কাপ বা গ্লাস ভেঙেছে মনে হয়। সপ্তাহে একটা কিছু না ভাঙলে এ মেয়ের ঘুম হয় না । শায়লা চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল, কী ভাঙলিরে সুফিয়া?
আমি আবার কী ভাঙব! বালতি পড়ে পুরোনো ভাঙা গ্লাসটাই আবার ভেঙেছে।
ও তাই বল।
বাথরুমে ঢুকে চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিতেই শাওয়ার নিতে ইচ্ছে করল তার। শায়লা দীর্ঘক্ষণ ধরে শাওয়ার নিল। এভাবে আর পারা যায় না। ভাবল, এ সপ্তাহে সে তার সম্মতির কথা জানিয়ে দিবে জানু ফুফুকে।
সেদিন হঠাৎ করে ব্যবসায়িক কাজের কথা বলে আবিদ গেল কক্সবাজার। ব্যাগটা এগিয়ে দিতে গিয়ে শায়লার মন ছুটন্ত গাড়ির মতো হু হু করে উঠল। তারপর আবিদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল অনেকক্ষণ। পরদিন সন্ধ্যার সময় কাজের মেয়েটা আরেকটি গ্লাস ভাঙল। শায়লার মনের ভেতর ধক করে উঠল। তার একদিন পর বাসায় ফিরল আবিদ। সঙ্গে এক ভদ্র মহিলা। বয়স রিনা ভাবির চেয়ে কম হবে না। সোফায় আবিদের পাশেই বসল। তার হাতে রিনা ভাবির ডায়মন্ডের রিংটা দেখতে পেল শায়লা। জানু ফুফুকে সালাম করতে বলল আবিদ। বলল, মা তোমাকে চমক দেখালাম। জানু ফুফুকে কাঁদতে দেখল শায়লা। তারও কিছুদিন পর পূর্বের স্বামীর থেকে পাওয়া পঁচিশ ভরি আর পৈতৃকসূত্রে পাওয়া বিশ ভরি সোনার গহনা নিয়ে বসল নতুন ভাবি শায়লাকে দেখানোর জন্য।
নতুন ভাবির নাম তানিয়া তাজরিন। গায়ে গতরে বড়। দেখতে পৃথুলা। নাকটা খাড়া। গায়ের রঙ শ্যামলা। প্রথম দেখায় ভালো না লাগারই কথা। তবে কিছুক্ষণ কথা বললে, খানিক্ষণ পাশাপাশি থাকলে ভালো না লেগে উপায়ও থাকবে না। আশ্চর্য যাদু আছে তার কথাবার্তায়। অল্পদিনের মধ্যেই খাতির হয়ে গেল শায়লার সঙ্গে। শুধু শায়লা নয় বাড়ির প্রত্যেক সদস্যের মন কেড়ে নিতে পেরেছিল তানি ভাবি। পরে পরে জানু ফুফুও বউমা নামে অজ্ঞান ছিল। ছেলেমেয়ে দুটির সঙ্গেও মিশে গেল অল্প সময়ের ব্যবধানে। ওরাও মা মা করে বাসা মাথায় তুলছিল সারাক্ষণ।
আবিদের বিয়ের খবর জেনে প্রথমে মন খারাপই হয়েছিল শায়লার। খড়কুটুর মতো নিজেকে বড় তুচ্ছ লেগেছিল। এ বাসা ছেড়ে চলে যাবে কি না সেটা নিয়েও ভেবেছিল। কিন্তু এ ভাবনাটা তার বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। আবিদের অপরাগতাটা যেন বুঝতে পেরেছিল সে। নিজের অক্ষমতা কোথায় তাও হাঁড়ে হাঁড়ে টের পেয়েছিল।
আবিদের বিয়ের কয়েকদিনের মধ্যে তার বাবা একবার এসেছিল এ বাসায়। তখন আলতাফের ভেতরের রক্তক্ষরণটা শায়লা দেখতে পেয়েছিল অনায়াসে। মুখ ফুটে কিছু বলেনি। কিন্তু ভেতরটা যে ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছিল সেটাও আড়াল করতে পারেনি। জানু ফুফুকে শুধু বলেছিল, আবিদ বিয়ে করে ভালোই করেছে বুবু। নিজেদের মধ্যে ভাব-পিরিতির সম্পর্ক থাকলে দাম্পত্যজীবন সুখেরই হয়। জানু ফুফু কোনো উত্তর দিতে পারেনি। কীই বা উত্তর দিবেন তিনি। হুঁ হাঁ করেছিলেন শুধু। পরে জানাল, আমি শায়লাকে নিতে এসেছি বুবু। করোনার মধ্যে ক্লাস তো হচ্ছে না। তার মা বলেছিল, না হয় বাড়িতেই থাকবে কিছুদিন।
শায়লার সামনেই বলেছিল কথাটা। জানু ফুফু তখন শায়লাকে তার বাপের জন্য চা আনতে ভেতরে পাঠিয়ে আলতাফকে বললেন, আমি জানি তোরা খুব কষ্ট পাইছিস। কষ্ট পাবারই কথা। কিন্তু বিশ্বাস কর আলতাফ, ছেলেটা আমারে না জানিয়েই বিয়ে করে ফেলেছিল। আরেকটা কথা, শায়লাকে নিয়ে তুই মোটেও ভাববি না, জোহরাকেও ভাবতে না করে দিস। ওর সব দায়দায়িত্ব আমার। তারপরও আলতাফ ক্ষীণ গলায় বলেছিল, মেয়েকে এবার না হয় একবারের জন্য নিয়ে যাই। এমন সময় ড্রয়িং রুমে চা নিয়ে এল শায়লা। তখন শায়লা-ই জোর গলায় না করে দিয়েছিল, বলেছিল, না বাবা, আমার যাওয়ার কোন সুযোগই নাই। ক্লাস নাই ঠিক আছে কিন্তু পরীক্ষা তো সামনে।
নতুন ভাবির জন্য তার একরাশ হিংসে উগড়ে পড়ার কথা ছিল। পড়েছিলও। প্রথমদিন তানি ভাবিকে যখন আবিদের পাশে দেখল আর আবিদ জানু ফুফুকে উদ্দেশ্য করে বলল যে, মা তোমাকে চমকে দিলাম। সেদিন এই মহিলাকে দেখে যথেষ্ট হিংসে হয়েছিল তার। কী এমন রূপের টানে আবিদ ছুটে গিয়েছিল কক্সবাজার! কীই বা আছে এই মহিলার মধ্যে! শায়লা অবাকই হয়েছিল প্রথম প্রথম। কিন্তু তার ভুলটা ভাঙল কিছুদিনের মধ্যে। তানি ভাবি যখন তার বাপের বাড়ির গহনা নিয়ে দেখাতে বসল তাকে। কী সরলভাবেই না কথা বলছিল এই মহিলা। দেখো শায়লা, এই হারটা আব্বা কিনে দিয়েছিলেন মেট্রিক পাশ করার পর। হারটা খুব সুন্দর না? শোনো, এইটা আমি তোমার জন্যই রেখে দিলাম। তোমার এম এ পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর পর দিবো কিন্তু। শোনো, আমি তোমার ব্যাপারে কিন্তু সব জানি। আবিদ সব বলেছে আমাকে।
তারপর সে তার স্বামী কথা তুলল। বলল, রিফাত মারা গেল রিয়াদে এক মর্মান্তিক রোড অ্যক্সিডেন্টে। নিজেই ড্রাইভ করে যাচ্ছিল রিয়াদ থেকে দাম্মাম। সেখানে তার এক বন্ধুর সঙ্গে সাগরপাড়ে সময় কাটানোর জন্য। আমার সঙ্গে প্রায় টুটকে কথা হতো। সেদিনও হয়েছিল। বলেছিল, দাম্মাম যাচ্ছি হাসানের ওখানে। সে বলতো, সাগরের পাশে গেলে আমাকে আর দেশকে দেখতে পায় সে। কী বলব তোমাকে, আল্লাহ কাউকে এমন মৃত্যু না দিক। সাতদিন পর লাশ আনা হলো দেশে। রিফাতকে দেখে চেনার কোন জো ছিল না। শুধু মুখেই পড়েছিল ত্রিশটা সেলাই। তানিভাবি স্বাভাবিকভাবেই বলল এসব কথা। তারপর বলল, আমার শ্বশুর খুব ধনী লোক ছিল। বিশাল ব্যবসাপাতি ছিল ওখানে তাদের।
এসব বলতে বলতে সে শায়লাকে বাক্স খুলে খুলে গয়নাপাতি দেখাচ্ছিল। একটা ছোট্ট বাক্স খুলে মাছের চোখের মতো একটা নাক ফুল বের করে দেখাল, এটা রিফাত কিনে দিয়েছিল ব্যাংকক থেকে, ডায়মন্ডের। দেখি তোমাকে মানায় কি না। বলেই সে জোর করে পরিয়ে দিল শায়লাকে। আর বলল, বেশ মানিয়েছে তোমাকে। এমন সময় সূচনা এসে দাঁড়াল পাশে। সে বলল, দেখি তো আন্টি কী? তখন শায়লাকে অবাক করে দিয়ে তানিভাবি সূচনাকে কোলে তুলে নিল আদর করে। আর বলল, আমার বুড়ির কী লাগবে? এ সবগুলিই তোমার।
তো এমন মহিলাকে হিংসে করে কীভাবে শায়লা! বড় কথা হলো আবিদ আর তানি ভাবির সম্পর্ক। শায়লা শুনে হতবাক না হয়ে পারেনি। শুনে বলেছিল, মনে হচ্ছে গল্প উপন্যাসের মতো।
করোনার প্রথম ঢেউ তখন কিছুটা স্তিমিত হয়েছে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিকের দিকে আসতে শুরু করেছে মাত্র। ওদের বিয়েরও মাস চারেক পেরিয়েছে তখন। এমন সময় একদিন তানি ভাবি বলল, আজ বেরোব আমরা। দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে বাসায় থাকতে থাকতে। শুনে শায়লা বলল, ভাইয়াকে বলো বেড়িয়ে নিয়ে আসুক তোমাকে। তানিভাবি বলল, আরে না, ওকে নিয়ে না। ওকে নিয়ে বহু গেছি আমি। এখন বেড়াব তোমাকে নিয়ে। কথাটি বলেই যেন জালে আটকে পড়া মাছের মতো কট খেয়ে গেল। শায়লা জিজ্ঞেস করল,ওকে নিয়ে বহু বেড়িয়েছি কথার মানে কী? তানি ভাবি বলল, মানে আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলছি পরে।
আবিদ বলেছিল, অফিসে গিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু তানি ভাবে দুহাতে না করে দিল। বলল, গাড়ি লাগবে না। রিকশাতেই ঘুরব আমরা।
সেদিন তারা শহরময় মুক্ত বিহঙ্গের মতো অনেক্ষণ ঘুরে বেড়াল। খুলশি থেকে বের হয়ে তারা প্রথমে গেল ওয়ার সিমেট্রি। সেখানকার ছায়াঘেরা প্রকৃতির মাঝে সিমেট্রির খোলা মাঠে দূর্বা ঘাসের ওপর বসে দুজন খোশ গল্প করল কিছুক্ষণ। তানি ভাবি বলল, জানো শায়লা, এটা আমার প্রিয় একটা জায়গা। আবিদ আমাকে বহুবার নিয়ে এসেছিল এখানে।
শায়লা বলল, তোমাদের দেখা হয়েছিল কোথায়?
তানি ভাবি বলল, দেখা হয়েছিল আমাদের বাসায়। আবিদ প্রাইভেট পড়াত আমাকে।
তোমাদের বাসা মানে?
হ্যাঁ, আমরা তখন চট্টগ্রামেই থাকতাম, দেওয়ান বাজারে। আব্বার ব্যবসা ছিল এখানে।
তো দেখেই প্রেমে পড়ে গেলা, না কি? শায়লা জিজ্ঞেস করল।
আরে না, দেখে প্রেমে পড়ে যায়নি। সময় লেগেছিল। ধরো বছরখানিক তো লেগেছিল। উত্তর করল তানি ভাবি।
আচ্ছা তারপর? শায়লা জানতে চাইল।
তারপর হলো কি, আমার এসএসসি পরীক্ষার আগে আগে আবিদ আমাকে পড়াতে এলো না পরপর দুদিন। শুনে তৃতীয়দিন আব্বা রেগেমেগে অস্থির। আম্মাকে বলল, ব্যবসার কাজে আমার তো দুদণ্ড সময় থাকে না। তুমি ছেলেটার কোনো খোঁজ খবর নিতে পারলা না? শুনেছি আমাদের বাসার আশেপাশে কোনো একটা মেসে থাকে।
আম্মা বলল, তুমি চিন্তা করো না। আমি আজই খবর নিব।
আবিদ ভালোই পড়াত ম্যাথ। আব্বা আম্মারও তার ওপর ভীষণ আস্থা ছিল। তো সেদিনই খবর পাওয়া গেল আবিদের ভীষণ জ্বর। বাসার দারোয়ান জন্টু খবর এনে দিল। সে আরও জানাল মেসে আবিদ একাই আছে। তার এক ছোট ভাই থাকে সঙ্গে। সে এখন নাই, গ্রামের বাড়ি গেছে।
দুপুরের আগে আগে রান্না শেষ করে আম্মা বলল, চল তো তানি ছেলেটাকে দেখে আসি একবার। যাবার সময় আম্মা টেফিনক্যারিয়ারে করে কিছু ভাত-তরকারি সঙ্গে নিয়ে নিল।
আমাদের দেখে তো আবিদের ভূত দেখার অবস্থা। পরে সে বলেছিল কস্মিনকালে সে চিন্তা করতে পারেনি মেসে তাকে আমরা দেখতে যাব।
তো তাকে দেখে আমাদেরও চক্ষু ছানাবড়া। একটা টিনশেড ঘরের মেস। স্যাঁতস্যাঁতে একটা কক্ষে নড়েবড়ে একটি কাঠের চৌকিতে জবুথবু হয়ে শুয়েছিল আবিদ। গায়ে ছিল একটা হালকা ময়লা কাঁথা। চৌকির পাশে ছোট টেবিলটার উপর বাসি আধখানা পাউরুটি। পাউরুটির ওপর ছোট উলানি পোকা উড়ে বেড়াচ্ছিল তখনো। পাউরুটির পাশে একটা কলা আর একটা কলার খোসা। হয়তো সকালে আধখানা পাউরুটি আর কলা খেয়ে বাকি আধখানা রেখে দিয়েছিল দুপুরের জন্য। ছোট্ট টেবিলটার উপর এক তাক বইয়ের পাশে একটা প্লাস্টিকের কলমদানি, একটা জগ আর একটা ধোঁয়াচ্ছন্ন গ্লাস। একটা মশারি টাঙানো ছিল বেড়ার সঙ্গে লাগোয়া চৌকির পাশে। খাটের অদূরে একটা ইলেক্ট্রিকের চুলা। নিচে পাটের বস্তার ওপর দুখানি প্লেট, একটা ভাতের পাতিল দুটো ডেকচি, একটা কড়াই। তারপাশে রসুন পেয়াজের খোসাভর্তি একটা ঝুড়ি। হলুদ মরিচ রাখার ছোট ছোট দু তিনটা কৌটা। দরজার পাশে পুরোনো একজোড়া চটি আর একজোড়া জুতা। জামাকাপড়গুলো একটা রশিতে এলোমেলা ঝুলানো। কী বলব তোমাকে বিভূতিভূষণের নায়কদের মতো একেবারে হতচ্ছিরি অবস্থা। দেখে মায়া জমে গেল। আসার সময় আম্মাও বলল, ছেলেটা বড় কষ্ট করে থাকে।
তানি ভাবি একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামল।
শায়লা বলল, দেখছি একেবারে পুরোনো দিনের রোমান্টিক প্রেম। তো বিয়ে করলা না কেন?
তানি ভাবি বলল, বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু চালচুলোহীন ছেলের কাছে আব্বা বিয়ে দিতে রাজি হয়নি। আমি গোঁ ধরার কারণে এমনকি আমাদের প্রেমকে কেন্দ্র করে আব্বা চট্টগ্রামের ব্যবসাপাতি পর্যন্ত বন্ধ করে দিল।
তারপর ওয়ার সিমেট্রি থেকে তারা গেল সিআরবি সাতরাস্তার মোড়। তার আগে স্টেডিয়াম সংলগ্ন আইসক্রিম শপ থেকে স্কুপস মিক্সড আইসক্রিম খেল দুজনে। সিআরবি সাতরাস্তার মোড়ে রেইনট্রির নিচে বসে আরও কিছুক্ষণ খোশগল্প করল তারা।
সেদিন তানি ভাবি কোনো কথাই আর অব্যক্ত রাখেনি। আবিদের সঙ্গে পাঁচ বছরের প্রেম। রিফাতের সঙ্গে সাত বছরের নিঃসন্তান বিবাহিত জীবন। প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে না পারার যন্ত্রণা। পরে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা। একসময় ধাতস্থ হওয়া, রিফাতের মারা যাওয়ার পরের দিনগুলি, আবিদের সঙ্গে ফেসবুকের সুবাদে যোগাযোগ স্থাপন, রিনা ভাবি মারা যাবার ফলে পারষ্পরিক নৈকট্যে আসা—কোনো কিছু বাদ যায়নি। এরমধ্যে যে কথাটা মনে দাগ কেটেছিল শায়লার, তানি ভাবি সেটা বলেছিল রিফাতের সঙ্গে তার বিয়ে প্রসঙ্গে। বলেছিল, বিয়ে মানে সমন্ধ। আর এ সম্বন্ধকে মধুর করার জন্য একটা ভালো সম্পর্ক থাকা দরকার হয়।
হয়তো দু দুটো বিয়ের অভিজ্ঞতা থেকে কথাটি বলেছিল তানি ভাবি। খুব মনে ধরেছিল শায়লার।
সিআরবি থেকে তারপর তারা গেল একটা শপিং মলে। সেখান থেকে কিছু কেনাকাটা করে যখন বাসায় ফিরল তখন বেলা গড়িয়ে গেল অনেকটা। শায়লা হাত ঘড়িতে দেখল পৌনে চারটা বাজে।
শুভ সূচনা তাদের দাদির সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েছিল তখন। সুফিয়া বলল, আম্মা বলে দিয়েছে দুজনকে গরম পানিতে গোসল করতে। শায়লা বলল, গরম পানি আমার জানের দুশমন। তানিভাবি বলল, আমারও। তারপরও তানিভাবি সুফিয়াকে বলল, দুই বাথরুমেরই গিজার ছেড়ে দে। শায়লাকেও বলল, তোর ভাইয়া কিন্তু সাবধান করে দিয়েছে যাতে গরম পানিতে গোসল করি। করোনা কমেছে ঠিক আছে কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি একদম।
সন্ধ্যায় ঘুম থেকে ওঠে তানি ভাবি কপালে হালকা গরম অনুভব করল। সুফিয়াকে ডেকে বলল, শুভ সূচনাকে এদিকে আসতে বারণ করিস, শরীরটা যেন কেমন লাগছে। শায়লাকেও একই কথা বলল সে। শায়লা বলল, শেষ বেলায় গোসল করার কারণে হতে পারে, আল্লাহ ভরসা। রাতে তার হালকা খুসখুসে কাশিও দেখা দিল। আবিদ বাসায় এসে দেরিতে ফেরার জন্য শায়লা আর বউকে কিছুটা রাগারাগি করল। সিম্পটম বলে পরিচিত ডাক্তারকে ফোন দিল। ডাক্তার কিছু ওষুধ দিল আর আইসোলেশনে থাকতে বলল।
সকালে শায়লার শরীরেও জ্বর এলো। সঙ্গে ভীষণ ক্লান্তি আর কাশি।
আবিদের তখন বুঝতে বাকি রইল না। দুজনেরই টেস্ট করতে দিল। রিপোর্ট আসার আগেই তানি ভাবির অবস্থা খারাপের দিকে গেল। তার অক্সিজেন লেবেল কমে গেল আশঙ্কাজনকভাবে। তখন তাকে ভর্তি করা হলো একটা করোনা হাসপাতালে। তিন দিনের মাথায় দুজনেরই টেস্টে পজিটিভ এলো। শায়লা সাধারণ সিম্পটম নিয়ে বাসায় চিকিৎসা নিতে থাকল। কিন্তু তানি ভাবির অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হতে লাগল
হাসপাতালে ভর্তি হবার পর শায়লা তানিভাবির সঙ্গে দুবার ভিডিও কলে কথা বলেছিল। শেষবার শুধু বলেছিল, মনে হয় বাঁচবো না রে শায়লা। মাপ করে দিস।
শায়লা বলেছিল, অলক্ষ্মীর মতো কথা বলো না ভাবি।
পরে আবিদের মুখে শুনেছিল, ভীষণ শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গিয়েছিল তানি ভাবি।
তো তানিভাবি মারা যাবার মাস দুয়েক পর একদিন জানু ফুফু শায়লার আব্বাকে ডেকে আনল শহরে। আলতাফের তখন বুঝতে বাকি রইল না আবিদের মা তাকে কেন ডেকে পাঠাল। সে বাড়ি থেকে আসার সময় শায়লার মায়ের সম্মতি নিয়েই এসেছিল। করোনার কারণে আয় রোজগার কমে যাওয়ায় এ বাসার ওপর তাদের নির্ভরশীলতাও ক্রমেই বাড়ছিল। জানু ফুফু বলল, এবার আমি আর ভুল করি নাই। আবিদের সঙ্গে কথা বলে রেখেছি। সে এক কথাতেই রাজি হয়ে গেছে। বলেছে, আমার পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নাই। শুনে আলতাফ যেন নির্ভার হলো। বলল, আলহামদুলিল্লাহ তাহলে আমাদেরও কোনো আপত্তি নাই। তখন ভাই বোন দুজনে মিলে আরও কিছুক্ষণ বিভিন্ন প্রসঙ্গে আলাপ করল। এক পর্যায়ে জানু ফুফু বলল, আশা করি শায়লা অমত হবে না। তুই না হয় একবার জিজ্ঞেস করে নে। আলতাফ বলল, মেয়ের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলতে আমার বাঁধে, তুমিই জিজ্ঞেস করে নিও।
আগের মতো এবারও আঁড়াল থেকে সব শুনছিল শায়লা। জানু ফুফু আর বাপের কথোপকথনের মাঝখানেই সে ভাবছিল—কী করে তার অপরাগতার কথাটা জানাবে তাদের।
• সানাউল্লাহ নূর, কথাসাহিত্যিক, কুমিল্লা