তালেয়ার ধূমপান

বিড়ি খেলে নাকি করোনায় ধরে না। জিরা বুয়ার কাছ থেকে এ কথা শোনার পর থেকে, বড়লোক বাড়িওয়ালি তালেয়া বেগম তার জানের শত্রু, 'জিরা বুয়ার' কাছ থেকে বিড়ি খাওয়া শিখছে! ছোট থেকে বিড়ি খাওয়া জিরার প্রিয় শখ। কাজ শুরুর আগে ধূমপানকে জিরা বলবর্ধক টনিক মনে করে। বিড়ি না খেলে সে কাজে মন বসাতে পারে না।

তালেয়া বেগমের বুড়ো জামাই—এক কালের দাপটে রিটায়ার্ড আমলা। শেখ আলম, 'কুচ না পরোয়া' টাইপ সুন্দরী বুয়া জিরার রূপে প্রথম থেকেই মুগ্ধ। একদিন জিরার সাথে হাতেনাতে ধরা পড়ার পর থেকে—জিরা তালেয়ার জানের শত্রু। 

অতি অন্তরঙ্গ, রুমান্টিক ঘটনাটি বেডরুমে ঘটে। ধরা পরার পর জিরার কোনো খারাপ লাগেনি! বরং দীর্ঘদিন পর বড়লোকের সাথে একটু ফূর্তি করে, আনন্দ দিয়ে বাড়তি খাতির পাওয়াকে অপরাধ মনে করেনি। বুকে চেপে থাকা কামাবেগের সুস্থ প্রকাশ তার অধিকার।

ভালোবাসার সংসারে দুঃখের ঘূর্ণিঝড়ে, মানসিক নিম্নচাপের সময়ও বিত্তশালী স্বামীকে তালেয়া কিছু বলেনি! তালেয়া জানে, সে শেখ আলমের সঙ্গে পারবে না। অতি চালাক, মাস্তান প্রকৃতির মানুষ! দুর্নীতি করে, অনেক বড়লোক হয়েছে, জীবনযাত্রায় অনেক ঝামেলা সহজে সামলাতে মিস্টার আলম বেশ ওস্তাদ! কৌশলে শত্রুকে কীভাবে ভাতে মারতে হয়, গায়েল করতে হয়, সেটা সে জানে! প্রেমরাজ স্বামীর হাতে রাখার জন্য, চোখে বড় হৃদয়ের প্রভাব দেখার ভান করেছিল, বিষয়ে পুরো চেপে গিয়েছিল। এমন অভিনয় করেছিল, যেন কিছুই হয়নি, যা ঘটেছে তা স্বাভাবিক, এতো বড়লোকের রাজরোগ, খারাপ কাজ না।

ওপরে ওপরে শান্ত থাকলেও, পৌঢ়া তালেয়া স্বামী হারানোর ভয়ে ভিতরে ভিতরে তটস্থ থাকে। জিরাকে চোখে চোখে রাখে! ঘটনাটি ঘটার পর থেকে, সুডৌল স্মার্ট জিরাকে সুযোগ পেলেই বকাঝকা করে। সহ্য করতে পারে না। জিরাও ছাড়ার মানুষ না। ধনী-গরিব মানে না। সব মানুষকে সমান মনে করে। মেয়েবেলা থেকে সম্পর্কে সরল অঙ্ক কষতে ভালোবাসে। মেডামের বকায় সহ্যর মাত্রা ছেড়ে গেলে—খিস্তি ঘেঁটে কোনো প্রকার সেন্সর ছাড়া সাহসের সাথে বলে,

—এত তেজ দেখান ক্যান মেডাম। নিজের জামাইরে ভালাবাসাতে পারেন না বইলেই তো আমার কাছে আইছে! ক্লাব-ট্লাবের হাঙ্কিপাঙ্ক রাইখা, জামাইরে ভালোভাবে ভালাবাসেন, যেমনে চায় হেমনে করেন, কারো কাছে যাবো না। আমরা দুইজনে রাজি হইয়া করছি, এটা খারাপ না, ফষ্টিনষ্টি ধর্ষণ না। ভালোবাসা। মানুষ হয়ে মানুষকে ভালোবাসা খারাপ কাম না, ভালা কাম!

জিরাকে যাতে বকা না দেয়া হয়, সেটা মিস্টার আলম নজরে ছিল, খাতির করে নরম স্বরে কথা বলতো, হয়তো এ কারণে জামাইয়ের সামনে জিরাকে তালেয়া কিছু বলে না। জিরাকে বাড়ি থেকে বিদায় করার প্রসঙ্গই তুলতে পারেনি। পরিস্কার অপরিস্কার, সুন্দর-অসুন্দর নিয়ে একদিন অযথা বকাবকির সময়, জিরা খিস্তি শুনে তালেয়া চালু কেঁদে দিয়েছিল—জিরা বলেছিল,

—আমি কি আপনের চাইতে কম সুন্দরী, কম পরিস্কার? ভালা কাপড়-চোপড় পড়লে, সাজুগুজু করলে আপনের চাইতে কম সুন্দরী লাগবো না। গরিবের ঘরে জন্ম হইছে, স্কুলে যাইতে পারি নাই, এটাই তো আমার পাপ! নইলে, আপনের জামাই তো আমার জামাই হইতো। আপনের জামাই রে জিগান গিয়া, কারে বেশি পছন্দ করে, আপনেরে নাকি আমারে।

গরিব বুয়া জিরা মুখে খইফোঁটা ভালোবাসার কথা শুনে তালেয়া সেদিন অবাক হয়েছিল। রাগে দুঃখে তার জগতের আকাশ-পাতাল কেঁপেছিল। সংসার ভাঙার ভয়ে জিরার লগে মীমাংসার ফন্দি করতো, শান্তিচুক্তির পথ খুঁজতো!

করোনার এই মহামারিতে তালেয়ার মনে মৃত্যু ভয় ভর করেছে। জিরার সাথে পাথর-কঠিন শত্রুতাকে বরফের মতো গলিয়ে দিয়েছে। দুই শত্রু এখন বন্ধু, করোনা করোনামুক্ত থাকার আশায় একলগে বিড়ি টানে, ধোঁয়া ছাড়ে।

(সংবিধিদ্ধ সতর্কীকরণ : ধূমপানই বিষপান।)


• নিগাত , জাপান

menu
menu