প্রভাতের জন্য এঁকে রাখা রোদ

প্রভাতের জন্য এঁকে রাখা রোদ
ফকির ইলিয়াস

যে জানালা দিয়ে আমি প্রতিদিন দেখতাম
জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে শত উড়োজাহাজ
উঠা-নামার দৃশ্য, সেই জানালাটি অবরুদ্ধ এখন!
বাইরে হলুদ টিউলিপ ফোটে আছে, ব্যাকইয়ার্ডে—
গোলাপবৃক্ষের ডালে ডালে সবুজ পাতা। দু'একটা
কলি'ও উঁকি দিচ্ছে রোদের বিনম্র পাঁজরে।

আমি নির্বাক তাকিয়ে আছি, তাকিয়ে আছি
আকাশের দিকে। যে মহান আকাশটি আমাকে
প্রতিরাতে জোনাক-ভ্রমণের গল্প শোনাবে বলে
কাছে ডাকতো, সে বড় অভিমানী আজ!
মুখ ফিরিয়ে নেয়া প্রেমিকার মতো বা'হাত দিয়ে
ঠেলে দিতে চাইছে দূরে! অথচ আমি সবসময়
মাটি ও মনীষার কাছে ধার চেয়েছি বিত্ত;
ঋণ চেয়েছি কিছু শান্তি ওই সমুদ্রের কাছে—
যে সমুদ্রে এখন রণতরীর বদলে ভাসছে
রেডক্রস মার্কা শাদা 'হাসপাতাল জাহাজ'!

সেই জাহাজে অস্ত্রের বদলে এখন না না রঙের
স্টেথোস্কোপ হাতে ডাক্তারদের দেখে আমার
মনে হচ্ছে, এরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা—
শাদা-নীল এ্যপ্রোন পরা সেবিকাদের ছুটোছুটি
দেখে, মনে হচ্ছে তারাই জগতের রক্ষাকন্যা!
যারা বিধাতার হাতের স্পর্শ বুলিয়ে দিচ্ছেন
আক্রান্ত মানুষের মাথায়, হাতে হাত রেখে বলছেন,
এই বিশ্ব একদিন আরোগ্য পাবেই,এই মাটি একদিন
হরণ করে নেবে সবগুলো বিষাক্ত ভাইরাস!
গভীর পাতালের বালিস্তরে শোধিত হবে মানুষের
সকল বিষাদ; অথবা পাখিদের দুঃখ- কাটাতারে
            ঘেরা বোধের সংসার।

আমি বোধে আর সংবেদে এই চরাচরে বাগান
সাজাতে সাজাতেই হতে চেয়েছি মালী—
              অথবা এটুকুই বলি;
সকল কল্যাণের মহাসড়কে নক্ষত্রগুলোকে
সাজিয়ে রেখে যেতে যেতে বলেছি—
মানুষ জয়ী হোক, মানুষ জয়ী হোক
গভীর রাতের বুকে পেরেক ঠুকে উঠুক সূর্য
আরেকটি প্রভাতের আলোয় স্নাত হোক
বিশ্বের সকল প্রাণ,বিশ্বের সকল সৃষ্টির আখ্যান।

 ০৭ এপ্রিল ২০২০, নিউইয়র্ক

menu
menu