গুচ্ছ কবিতা ।। জুবায়ের দুখু 

অবসাদ 

পাতার প্রাচীন পথে—তরুদলের বিরহী বাসনা
বসেছে রসুন বনে শালিখ উড়ে যাওয়া গণনা
তোমাদের ঘরখানা খড়ে বোনা পাখিদের নীড়
লুকিয়ে সন্ধে বকুল সুগন্ধ ছড়ায় অবোধির।

রাতের পাখায় ঘুমিয়ে থাকে দেবদারু গাছ— 
প্রান্তরে কৃষকের মুখ, আমন বোরো আটাশ
ছায়ার আতুর ভেঙে সূর্যফুল ফোটে খাঁ-খাঁ দুপুর
তোমার হারিয়ে গেছে নিমাই জুয়েলার্সের নূপুর। 

গোলাপে কাঁটা তবু ভাঙে সহস্র অভিমান— 
ইটপাথরের ভূমিতে পাখি গায় রবিনাথের গান 
সজিনাডাঁটা ঘ্রাণে মুখর গত জীবনের শীত
এলো কত মেহমান হলো কত প্রেমিকা অতীত।

জোয়ারে ভাসে নীলাসমান ভাঙা রুপালি চাঁদ
জীবন একটা চৌচির নদীর মতো লাগে অবসাদ। 

ঝরাপাতা কোন পথ

রুপালি রুটির চাঁদ ভাসে ইছামতির জলে— 
তোমাদের কোথায় ঘর সবুজপাতার মহলে? 
মেহগনি বনে নিমন্ত্রিত পাখিরা গান গায়
রাতের সালুন রান্ধে দুপুরবেলা আমার মা'য়।

যাত্রাপালার রমণীরা দূর সাদা রাজহংসী 
পাগল'তো রাধিকা শুনে সুর কৃষ্ণের বংশী,
লাঙল প্রচলন উত্তোলনে মাঠের গোমরা মুখ 
কাঁদিছে বগুড়ায় আজো বেহুলার পোড়া বুক।

বেমালুম বাতাসে সাইবেরিয়া শীত চঞ্চল— 
ঝরাপাতা কোন পথ? ধীর'পা ফিরি পিতৃ অঞ্চল।

কোকিলা-কণ্ঠক

বেহাগ বাজে, ডাকে চৈতালি দূর মাঠ—  
মিলনবেলায় প্রাণ উত্তাল আমিই তো সম্রাট, 
পৌষের করাঘাতে—খোলে গেন্দাফুল নেকাব 
সোয়ামির আদর পেয়ে মাঠ বীজ ফলানো স্বভাব।

নদীর রেখাখাতা, কুয়াশাবন, বিধবার শাড়ি  
পোড়ো ভিটে চাষ করে শোকের তরকারি,
মৌমাছির হুলে বেদনাবিদ্ধ ফিলিস্তিনি শিশু
আমার'তো ভাই একটাই—ক্রুশবিদ্ধ যিশু। 

আগাড়ে-পাগাড়ে বাজে ডাহুকের শ্লোক
শিমুলবনে আতুরঘর কোকিলা-কণ্ঠক— 

ভাঙা কপাট

খেজুর পাতার মাদুর—ডোরাকাটা সাপ
মরুর বাতাসে ওড়ে জলের অভিশাপ
রাতবিরেত সজাগ বিরহী কাঙালির মুখ
এই পথে পরিচয়—অন্ধকার অসুখ। 

তোমাদের রাজহাঁস নিকটে সন্ধ্যা আনে
পোয়াতি চাচি সহসা গায় খোদার শানে 
বিরান মাঠ—চৈত্রে ফোটে পিঁয়াজকলি, 
আলোতে কখনো অসুর ভাঙে অলিগলি।

লখিন্দরের লাশ আইল বরাবর চার্ট—
বাতাসে মিলন আমাদের ভাঙা কপাট।

পাখিদের কীর্তন

ট্রিগারে ফিগারে সরল বনে বনে পাখিরা
নদীর সিঁথিতে শোক টান অন্ধ মৎস্য সাকিরা— 
মা'য়ের নোলক যিশুর দুহাতে ক্রুশের পেরেক
বারে বসে বাংলা মদ অসুখী ললাটী আশেক।

তোমরা’ তো জানো ঘাসবনে ঝিঁঝিদের রাত
সহিষ্ণু হাসে প্রজাপতি, কুয়াশা মণ্ডিত তাপ
আলোকলতা ছাউনি পথ বুলবুলের বাগান,
খোঁয়াড় খোলো সন্ধের আগমন ও বুবুজান।

ধানের তুষে, গরু পোষে দীর্ঘ ম্লান জীবন 
এই পথ দূরে গেছে—পাখিদের কীর্তন। 

বিবাহলগ্ন পালাতক

তেলে ভাজা দুপুর, বুদবুদ তেলাপিয়া মাছ
উঠোনের ডানে দাঁড়িয়ে কামরাঙার গাছ,
মা'য়ের বালা হারানো শোক জানে মৌমাছি
উড়ে উড়ে পাতা ঝরে আমরা পাতাবাহারি।

আমরা লক্ষ্মণ ও প্রভু আমরা যিশুর ভাই
পৃথিবীর পথে পথে বেলকাঁটায় পা ফুটাই,
ঘাসের নরম দেহে অনাবিল রোদের সমুদ্দুর 
সবাই'তো ভালো নয় কেউ আড়ালে অসুর।

সরল প্রজাপতি—সজিনাডাঁটায় আতুরঘর 
লক্ষ্মী আসে নবান্নে, গেন্দার ফোটে গতর— 
আমাদের না-হয় জন্মাবধির অন্ধ দু'চোখ 
পরান জুড়ে ভাঁটফুল, বিবাহলগ্ন পালাতক।


জুবায়ের দুখু  কবি এবং শিক্ষার্থী। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিকতা বিভাগ। জন্ম পাবনা জেলা সাঁথিয়া উপজেলা।

menu
menu