গুচ্ছ কবিতা ।। অহ নওরোজ
প্রেমের
প্রেমের ভাবি যাকে—নিজের চারপাশে, সুগন্ধি সে,
যেন হিমের স্বাদে মগজে হাত রাখে প্রতি মুহূর্তে—
সকল অবসরে, মুষলধারা হয়ে—সহজে ঝরে—
প্রেমের দেহ যাকে আকারহীন ভাঁজে ভালোবেসেছে
জানালার বাতাসে পাওয়া যায় তাকে ঘন সুবাসে—
রক্তের গভীরে কেবলি একা হয়ে, সে যেন আসে।
প্রেম যেন আঠালো
জমে থাকে কোথাও
গাঢ় আঘাতে।
ফুলদের যাতায়াত
গোলাপ কীভাবে ফোটে কিংবা ঝরে যায়
সেসব জেনেছে যারা অথবা জানেনি
সরু-গোল দুটি চোখে কখনো দ্যাখেনি
অথবা অনেকবার গহিন সকালে
যখন ডুবেছে চাঁদ গাছের আড়ালে—
ফোটা ফুলগুলো দেখে সুবাসিত চোখে
অনায়াসে গাঢ় হেসে নিজের নিকটে
বারবার ভেঙে গিয়ে খুশি হয়ে গেছে—
তারা কিংবা মানুষেরা, পৃথিবীর সব
দলছুট মানুষেরা, হলুদ ঈর্ষায়
বেমালুম ভুলে যায়—নিবিড় সন্ধ্যায়
ফুলের যাতায়াতের ঘন এক শব্দ
সহজে পাওয়া যায়—ফেলে আসা সব
ফর্সা লোকদের গতকালের মতন।
নির্জনতা আনে যারা
শেষকৃত্য হয়ে গেলে সব গাছপালা
পাতাঝরা শহরেরা, কিংবা মানুষেরা—
চারপাশে দূরে, যতগুলো পাখি থাকে,
ওড়ে যত সারসেরা—বা আরও পরে
রোদেরা যখন সাদা আর ঝকঝকে
অথবা রাতের নরম বাতাসে ডুবে
ক্রমাগত যারা ইশারায় হাত নাড়ে
আর নির্জনতা আনে বিভোর বাতাসে—
তারা অথবা কুয়াশা—নিচু গাছে ঢাকা
থমথমে সব ছায়া যেনবা ঘটনা—
সাধারণ কোনো দেহে আঁচিলের মতো
কোনো এক গতিপথে হিম বেঁচে থাকা—
ধারালো হাওয়া বা বৃষ্টির দিন এলে
পাতাদের মতো কেঁপে যাওয়া কখনো।
শরীরে পিছলে যায়
তারাদের রাত্রি
কখনো তারার নিচে শীত চলে এলে
জানালার শার্সিগুলো হিম হয়ে যায়।
জাহাজডুবির মতো টুপ করে যেন
হিম মখমল গায়ে সন্ধ্যা নেমে আসে।
আলো আর উড়ালের মাঝখানে জমে
উদ্ভিদের মাংস কিংবা অলস হাওয়া।
ছায়ার মোচড় খুলে তারাদের নিচে
যখন পিছলে যাই : রাত্রি ধরে আসে।
নীল আঙুরের মতো নক্ষত্র তখন
অন্য কোনো রোদ হয়ে আলো বদলায়।
সাদা সাদা পাখিদের বাসনাসমূহে
সমুদ্রের মতো শান্তি ফিরে আসে ফের—
বাসনারা যেন কিছু উড়ে আসা পাতা—
রাত্রির ভেতর হিম, সযত্ন চমক।
তুমি শুধু কুসুমিত
রাত্রির শরীরে
তোমাকে ভাবছি শুধু গাছ থেকে ঝরে পড়া এই হিম-দিনে
নীরব মাকড়সার মতো বুনে গেছো—যেন শীত পরিপূর্ণ।
যখন তোমার ঘুম বাকলের গন্ধ নিয়ে শব্দহীন নড়ে
সন্ধ্যাকালে সকল তারকা হটাৎ ফেটে পড়ে আগুনসমেত।
রাত দেখি জানালায়—বিড়ালের গায়ে হলুদাভ কণ্ঠস্বর
কুসুমিত রাত্রির শরীরে রহস্য রেখেছে অন্তহীন যেন।
রাস্তার গরম দেহ, গভীর কুয়াশা খুলে স্পষ্ট হয়ে গেলে—
নির্ভার মগজে তোমার শ্বাসের শব্দ ঢুকে পড়ে ধীরে।
অহ নওরোজ, কবি, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক, জার্মানি