গুচ্ছ কবিতা ।। আফতাব আহমদ

বেদবাক্য

মঞ্চের মধ্যে থাকা ভালো। এমনকি শূন্য নাটঘরে।
কান পেতে শোনো। কথা বলবার জন্যে পড়ে আছে সাতটি প্রহর।
ভূমিকম্প, লাভাস্রোত, লোনা ঝড় ছাড়া, বাকিটা সময় কথা রেখো।
ক্ষমা চাইবার দিন কোনোকালে তামাদি হবে না।

সমবেদনার ক্রাচে ভর দিয়ে নদী পার হওয়া সোজা নয়।
যাকে সাজে, অহংকার একমাত্র তাকেই মানায়।
সব পিতা-পিতামহ পরাজিত হতে চান সন্তানের কাছে।
তেত্রিশ স্তাবক মিলে বাহবা দিলেই সেটি কবিতা হবে না।

অন্তত একটি কৌতুক জানা নিরাপদ। সামান্য সংস্কৃত ল্যাটিন।
জন্মঋণ শুধতে যেও না। কিছু ঋণ সামনে চলে যায়।

ক্ষত্রিয় সংবাদ
 

তোমার বর্ম যেন ঢেকে রাখে নারী ও শিশুকে, কূল নির্বিশেষে।
দুর্বলের ধর্ম নেই, স্বপ্ন নেই, বাঁচবার আর্তিটুকু ছাড়া। রণক্ষেত্রে
মন্ত্রগুলি ফেঁপে ওঠে, মধ্যাহ্নে লক্ষ্যগুলি ছোট হয়ে যায়।
জেনো বীর আগুনেই পুড়ে যাবে সব অস্থি সব পরিণাম।
 
ঋষিকে সম্মান করো, অর্ঘ্য যদি নাও দিতে পারো।
রথের ধূলোয় তুমি ইতিহাস খুঁজো না সন্ধ্যায়।
যে দেবতা বাঁচতে শেখালো, তার কথা শেষ বিন্দুতেও মনে রেখো।
মিত্রকে সাথে রেখো। শত্রুকে তারও চেয়ে কাছে।
 
আশা ও আখ্যানে তুমি অন্ত্যমিল পাবে না কখনো।
জেনো সখা, সব বাণ লক্ষ্যভেদী, এই কথা চিরায়ত নয়।

শ্রীমতীকে খোলা চিঠি, এবং আবার
(কবি কাশীনাথ রায়, শ্রীচরণেষু)

‘কাব্যে আসক্তি থাকলেই কবি হওয়া যায় না শ্রীমতী’,
সে কথা শুনেছো তুমি পদ্মা পাড়ে বহুযুগ আগে,
কিছু পংক্তি হামাগুড়ি দিয়ে ফেরে, খুঁজে ফেরে যতি:
তবু তোমাকেই বুকে ধরে বেঁচে থাকি রাগে অনুরাগে।

শহরে নিভৃতে চলি, শুনি গান ভণ্ড কোকিলের,
কে কার চুরুট খেয়ে ফুলে ওঠে মেকি প্রশংসায়,
গলায় দুলিয়ে মালা রাজা হয় ভাঙা অমিলের,
রবি-গান শুনে শুনে সকলেই হয়ে ওঠে লাবণ্য রায়।

বিপ্লব আসেনি জানি। তুমিও তো ভাঙা ঘরে হওনি অতিথি।
অচিন নগরে এসে ঠিকানা হারিয়ে ফেলে হয়েছি প্রবাসী,
দুদিকে মোমের চিতা জ্বালিয়েছি, শিখি নাই বেনিয়ার রীতি;
দুঃখ তাড়ানিয়া হাসি ঝুলিয়ে পকেটে আমি লুকিয়েছি বাঁশি ।

আসক্তি ছাপিয়ে উঠে অভ্যাস হয়ে গেছ কখন শ্রীমতী?
তোমার দিকেই যাবো; ভুলে গিয়ে অসমাপ্ত সব লাভ ক্ষতি।

পাথুরে ভাবনাগুলি

এক পাথরের নিচে ভিন্ন মানুষেরা শুয়ে আছে
অথবা পাথর ভিন্ন মানুষেরা এক, কে তা জানে।
যদি ভাবো পৃথিবীটা তোমাদের, বেশ তাই ভাবো।
জলাধার, আলো আঁধারির খেলা, নগরীর পথ,
ওড়া শালিকের ভাঙা ডানা, সেও তোমাদের ছিলো
ভাবো, ভেবে মগ্ন সুখী হয়ে ওঠো, আয়েশী তন্দ্রায়।

সময়কে বিন্দু ভাবো, কেতাবী রেখার কেচ্ছা থাক
সরল রেখার কথা অনেকেই বলে তাও জানি
নৃতাত্ত্বিক তুক তাক, পাথরের ইতিহাস খোঁজা
কেন আর অকারণে স্মৃতি ঘাঁটাঘাটি অসময়।
শোক? সেতো পুঁথিতেই পাবে, বৈঠক খানায়
তাকে যদি অতিথি বানাও, ভালো ঠেকবে না
কারো কাছে। পাথরের নীচে যত অনিবার শোক
মহাকাশে ভেসে থাক, সর্বভুক পাথুরে অন্যায়।


• কবি, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক, বাংলাদেশ। 

menu
menu