মায়ের কাঁথা

কাঁথা রোগে পেয়েছে নরেনকে। শীত হোক আর গরম হোক বাংলাদেশ থেকে আসার সময় সাথে করে নিয়ে আসা কাঁথাটি সে প্রতিদিন গায়ে দিয়ে ঘুমাবে। কাঁথাটি তাকে সেলাই করে দিয়েছিল তাঁর মা। প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার পর পরম যত্ন করে কাঁথাটি বিছানায় ভাঁজ করে রাখে সে। শীতের দিনে কম্বলের নিচে কাঁথা জড়িয়ে ঘুমায়। এমনকি গরমের দিনেও কাঁথাটি গায়ে না জড়ালে তার ঘুম আসে না। মাঝে মাঝে সে অপলক চোখে কাঁথার দিকে তাকিয়ে থাকে আর বিড়বিড় করে কী যেন বলে।
ডিভি লটারি জিতে লস এঞ্জেলেস এসেছিল নরেন। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় তাকে এক বাংলাদেশির সঙ্গে একটা রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। প্রথম দিকে রাতের শিফটে গ্যাস স্টেশনে ক্যাশিয়ারের চাকরি পায় নরেন। রাতে কাজ দিনে ঘুম। এভাবে কয়েকবছর কাটল। আয় রুজি খারাপ নয়। মায়ের জন্য আলাদা করে টাকা পাঠায় সে। মা বলতে নরেন পাগল। পারলে মাকে ময়ূরপঙ্খীতে করে আমেরিকায় নিজের কাছে নিয়ে আসে। একটা দিনও মায়ের সাথে কথা না বলে থাকে না নরেন। হয় সকালে, নয়ত বিকালে। কোনো কোনোদিন এমন হয় যে নতুন কোনো কথাই থাকে না। তবুও মা বলে কথা। মা তো মা-ই। নতুন কথা থাক বা না থাক। মা-ও তো অপেক্ষা করে ছেলের ফোনের জন্য। 
মাঝে মাঝে মায়ের নামটা স্বরণ করে নরেন। বিষ্ণুপ্রিয়া। কী মধুর নাম! শ্রীচৈতন্যদেবের সহধর্মিনীর নাম। ২৪ বছর বয়সে শ্রীচৈতন্যদেব যখন সংসার ত্যাগ করেন কখন বিষ্ণুপ্রিয়ার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। ১৪ বছর বয়সে বিষ্ণুপ্রিয়া যে ধর্ম পরায়ণতা দেখিয়েছেন-ইতিহাসে তা বিরল। শ্রীচৈতন্যদেবকে নরেন ‘বাংলার ঈশ্বর’ মনে করে। কেননা চৈতন্যদেবের মাতা-পিতা ছিলেন সিলেটের অধিবাসী। তাঁরা যখন বাংলাদেশ ত্যাগ করেন তখন চৈতন্যদেব মাতৃগর্ভে ছিলেন এবং তাঁর বয়স ছিল তিন মাস। চৈতন্যদেবের মাতার নাম ছিল শচী দেবী। এই নামটিও তার খুব প্রিয় এবং শ্রদ্ধাভাজন। কত ভাগ্যবান হলে স্বয়ং ভগবানের মাতা হবার সৌভাগ্য অর্জন করা যায়! নরেন ভাবে, আমার মা সে রকম কেউ না হলেও তিনি নরেনের মা। নরেন কেউ না কিন্তু গ্রাম্য এক বিষ্ণুপ্রিয়ার ছেলে সে, এটাই বা কম কিসে?

নরেনের গ্যাস স্টেশনের দিনের শিফটে কাজ করা লোকটি কাজ ছেড়ে দিয়ে নিজের দেশ মরক্কো চলে গেছে। এরপর সে লোকের জায়গায় নরেনকে দিনের শীফটে কাজ দেয় ম্যানেজার। আগে রুমমেট রুবেল কাজ থেকে আসতো, নরেন যেতো। নরেন যেতো রুবেল আসতো। তাদের মধ্যে সকাল-সন্ধ্যা সামান্য সময়ের জন্য দেখা হতো। এখন নরেন দিনের বেলা কাজ করাতে প্রায় একই সময় তারা কাজে বের হয় এবং একই সময় কাজ থেকে ফেরে। সপ্তাহের ছয় দিন দিনের বেলা বাসা খালি থাকে।
একদিন নরেন বলল, ‘রুবেল ভাই আমরা তো দিনের বেলা বাসায় থাকি না, রাতের শিফটে কাজ করে এমন কাউকে রুমমেট হিসাবে নিলে কেমন হয়? এতে ভাড়াটা যেমন কমে আসবে তেমনি দিনের বেলা বাসা পাহারারও একটা ব্যবস্থা হয়। আপনি কী বলেন?’
নরেনের দিকে তাকাল রুবেল। বলল, ‘খুব ভালো কথা বলেছেন তো? আমি তো কোনোদিন এমন করে ভাবিনি। সামনের রুমটা দিনরাত তো খালিই থাকে। বছর গেলেই ভাড়া বাড়ে। একজন লোক নিলে ভাড়াটা মাথাপিছু কমে আসবে। লোক দেখুন।’
‘দেখব আবার কোথায়? ‘রুমমেট চাই’ একটা বিজ্ঞপ্তি লিখে বাংলাদেশি দোকানের সামনে লাগালে কয়েক দিনের মধ্যে লোক পাওয়া যাবে।’
প্রায় লাফ দিয়ে উঠল রুবেল। ‘আরে ভাই, আপনার দেখি মাথাভর্তি বুদ্ধি। যে কোনো ব্যাপারে যখন তখন সমাধান। একজন বিখ্যাত ব্যক্তির ছোটবেলাকার নাম ছিল নরেন। আপনি কি জানেন তিনি কে ছিলেন?’
‘জানবো না কেন? স্বামী বিবেকানন্দ। কিন্তু আপনি জানলেন কী করে?’
‘ওমা এটা না জানার কী আছে? স্বামী বিবেকানন্দের নাম কোন বাঙালি না জানে?’
একটা বিজ্ঞপ্তি লিখে বাংলাদেশি গ্রোসারি দোকানের সামনে লাগিয়ে দিল নরেন। আর তিন দিনের মাথায় একজন রুমমেট পেয়ে গেল। নাম মানিক। রাতের শিফটে কাজ করে।

এক সকালে মাকে ফোন করতে দেরি হয়ে যায় নরেনের। সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছে, বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে দেরি হবার ফলে কাজে যেতেও দেরি হয়েছে। এরপর ছিল কাস্টমারের ভিড়। তবু মায়ের কথা তার ঠিক ঠিক মনে থাকে। নরেনের ফোন না পেলে মা যে ঘুমাবে না সেটা সে ভালো করেই জানে। এমনকি নরেনের ফোনের অপেক্ষায় সারারাত অপেক্ষা করতেও তাঁর কষ্ট হয় না। অধৈর্যও হন না। কারণ এর আগে অনেকবার এমনটি ঘটেছে।
বাংলাদেশে এখন রাত দশটা বাজে। এখানে সকাল নয়টা। সারা বিকাল ফোনের অপেক্ষা করে মা শুয়েছেন একটু আগেই। সন্ধ্যার পর থেকেই বিদ্যুৎ নেই। হারিকেন জ্বালিয়ে সবাই খাওয়া-দাওয়া করছিল। তখনই ফোন বেজে উঠল। বিষ্ণুপ্রিয়ার বুকটা ধুকধুক করে উঠল আচমকা। ধুকধুকের কারণ হলো বিকালে খবরে তিনি দেখেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার কোথায় যেন—নামটা তাঁর মনে নেই—আগুন লেগেছে। এলাকা জুড়ে আগুনের লেলিহান শিখা। সেই বেহায়া আগুন নেভাতে  পারছে না কেউ। তার উপর ঠিক সন্ধ্যা বেলা, সূর্যটা ডুবল কি ডুবল না, এমন সময় একটা কাক ঘরের একেবারে কাছে একটা গাছে বসে ক্বা ক্বা রবে কয়েকটি কর্কশ ডাক দিয়ে উড়ে গেল। তখন থেকেই মনটা তাঁর ভীষণ খারাপ। যদিও ঘরের কেউ তা টের পায়নি। 
ফোনের কী বোর্ডের আলো দেখে টিপ দিলেন বিষ্ণুপ্রিয়া। ছেলের কণ্ঠস্বরে তাঁর মনটা শান্ত হলো।
‘এত দেরি করে ফোন করলি যে বাবা, কোনো সমস্যা?’ অন্যদিনের তুলনায় ক্ষীণ শোনাচ্ছে মায়ের কণ্ঠস্বর।
‘না মা, কোনো সমস্যা না। সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেছে। তারপর কাজে আসতেও দেরি হয়েছে। কাজে এসে দেখি কাস্টমারের প্রচণ্ড ভিড়। এখন একটু ভিড় কমেছে। তাই তোমাকে ফোন করার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু তোমাকে এত নার্ভাস লাগছে কেন মা, কোনো সমস্যা হয়েছে?’
‘আমার তো সমস্যার কোনো অন্ত নাইরে বাবা। বিকালে খবরে দেখাল তোর দেশে আগুন লেগে সব পুড়ে যাচ্ছে, এরপর থেকেই তোর বাবা ছটফট করছে।’
‘আর তুমি? তুমি ছটফট করোনি? তোমাদের নিয়ে আর পারা গেল না মা। আগুন লেগেছে সেটা ঠিক, কিন্তু সেটা আমার এখান থেকে অনেক দূরে।’
‘আমরা কী করে জানব যে তোর থেকে কাছে না দূরে? তারপর আরো একটা অলুক্ষণে কারবার।’
‘সেটা আবার কী?’ এবার কিছুটা উৎকণ্ঠিত নরেন।
‘ঠিক সন্ধ্যাবেলা একটা কাক ঘরের পাশে একটা গাছে বসে এমন করে ডাকতে লাগল যে...।’
‘মা...। কাকের কাজ কাকে করেছে, এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’
‘বাবারে, মা হলে বুঝতি মায়ের মন।’
‘আজ কেঁদেছো কতক্ষণ? সত্যি করে বলবে।’
অন্ধকারে চোখ মুছে বিষ্ণুপ্রিয়া বললেন— ‘আমি কি কচি খুকি নাকি যে যখন তখন কাঁদব?’ 
‘খেয়েছ রাতে?’
‘না, এখনো খাইনি।’
‘রাত বাজে দশটা, এখনো খাওনি?’
‘তুই খেয়েছিস? তুই খেলেই আমার পেট ভরে বাবা।’
‘পাগলের মতো কথা বলবে না মা। আমি খেলে তোমার পেট ভরে কী করে? তোমরা সারাক্ষণ আমাকে এমন দুর্বল করে রাখলে আমি আমেরিকা ছেড়ে গ্রামে গিয়ে মাছের চাষ করব।’
মনে মনে বিষ্ণুপ্রিয়া বললেন—সেটাই বরং ভালো হয়। তাহলে, ছেলেকে সারাক্ষণ দেখতে পাবেন।
‘ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলো কেন সেটা তো বললি না বাবা। তোর তো কখনো দেরি হয় না। কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস? খারাপ স্বপ্ন দেখলে কী মন্ত্রটা পড়তে হয় মনে আছে? ওঁ শ্রী গোবিন্দায় নম :।’
স্বপ্নটার কথা মাকে বলবে কিনা ভাবছে নরেন। বললে মা যদি কিছু মনে করেন? মনে করবেন না যে বেহায়া ছেলে? আবার ভাবে, মাকে তো বলা যায়-ই। মা জানবে না তো কে জানবে? একদিন তো জগৎবাসী সবাই জানবে।
‘গতরাতে স্বপ্ন দেখলাম মা, আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি।’ বলেই হাসল নরেন। অন্ধকারে ফোনের ওপারে, পৃথিবীর অপরপ্রান্তে মাও হাসলেন। মনে মনে বললেন সে দিন তো আর বেশি দেরি নেই বাবা। এবার তোর দেশে আসা বাকি মাত্র। এবার আর তোকে বিয়ে না দিয়ে ছাড়ব না।
‘আবার কাস্টমারের ভীড় লেগেছে মা। কাল আবার তোমাকে টেলিফোন করব।’ বলেই নরেন লাইন কেটে দিল।
মানিকের ডান হাতে বড় একটি কবজ নরেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে প্রথম থেকেই। কিন্তু তাকে তা নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করা যায় না। তাহলে সে কি মনে করে কে জানে। চোখে পড়ার মতো বড়সড় একটা কবজ। এই একবিংশ শতাব্দিতেও কেউ কবজ পরে? তা-ও আবার খোদ আমেরিকায়?
জুলাই মাস। বেশ গরম পড়েছে কয়েকদিন ধরে। গরম আর ঠান্ডা যা-ই হোক নরেন তার মায়ের দেওয়া কাঁথা গায়ে দিয়েই ঘুমায়। ঘরের অন্যসব জিনিসের চেয়ে নরেন যে কাঁথাটির যত্ন বেশি করে সেটা প্রথম দিক থেকেই মানিকের নজরে পড়েছে। এমন গরমের মধ্যেও নরেন কেন কাঁথাটি গায়ে দিয়ে ঘুমায় সেটা জানতে তার বেশ ইচ্ছা করে। নরেন কিছু মনে করে কি না, সেটা ভেবে আর জিজ্ঞাসা করা হয় না।
গতরাতের গরমটি ছিল অসহ্য। কারোরই ভালো ঘুম হয়নি গরমের জন্য। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে নরেন যখন পরম যত্নে তার কাঁথাটি ভাঁজ করছিল, সেটা মানিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। এমন করে সে কাঁথাটি ভাঁজ করছে যেন কোনো পরম বস্তু।
মানিকের মুখ থেকে কথাটি বের হয়েই যাবে যাবে করছিল।
‘একটা কথা বলব নরেন দা?’
‘বলুন, বলুন।’ মানিকের দিকে তাকাল নরেন। কাঁথাটি তার দুহাতে ভাঁজের অপেক্ষায়। অনেকটা শাড়ি ভাঁজ করার মতো। ওই কাঁথার দিকে মানিকের নজর। নরেন সেটা খেয়াল করল।  
মৃদু হেসে নরেন বলল— ‘বুঝেছি। আসলে এখানে আসার আগে আমার মা আমাকে কাঁথাটি সেলাই করে দেন। প্রথমে আমি আনতে চাইনি। আমেরিকা নিয়ে যাব কাঁথা! মা যখন বারে বারে বললেন—নিয়ে যা নরেন, কাঁথাটি গায়ে জড়ালে মায়ের কথা মনে পড়বে। কী মনে করে নিয়ে  আসি। এখন দিনে-রাতে, গরমে-শীতে কাঁথাটি গায়ে না জড়ালে আমার ঘুম আসে না। কাঁথাটি গায়ে দিলে মায়ের পরশ অনুভব করি। কাঁথাটির ফোঁড়ে রয়েছে আমার মায়ের হাতের পরশ। এটি গায়ে জড়ালে একটা পরম শান্তি অনুভব করি। চোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসে। মনে হয় মা যেন আমার গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।’
‘ও’ ছোট করে জবাব দেয় মানিক।
এবার নরেন বলল, ‘আপনাকে একটা কথা বলব বলব করে আর বলা হয়নি। বলব এখন?’
‘বলুন, বলুন। একটা কেন যতটা খুশি বলুন।’ আগ্রহ প্রকাশ করল মানিক।
‘আপনার হাতে মস্ত বড় এই কবজটি কিসের জন্য পরেছেন?’
কবজের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হাসল মানিক।
‘এই কবজের মধ্যে কী আছে আমি জানি না ভাই। আমেরিকা আসার কথা শুনেই আমার মা গ্রামের বড় হুজুরের কাছ থেকে এই কবজ  এনে আমাকে দেন। হুজুর সম্পর্কে মায়ের চাচা হয়, মানে আমার নানা। মা নিজের হাতে আমার ডান হাতে বেঁধে দিয়ে বললেন— ‘যত্ন করে রাখবি বাবা, ফেলবি না যেন। এরপর কী একটা দোয়া পড়ে আমার বুকে তিনবার ফুঁ দিলেন। সেদিন ছিল শনিবার সন্ধ্যা। আমি কিছু বলতে চেয়েও পারলাম না। মনে করলাম একটা কবজই তো। মা যা করবেন, তা ছেলের মঙ্গলের জন্যই করেন। বারবার কবজটির দিকে তাকালে মায়ের মুখখানা ভেসে উঠে। গত বছর মা...।’ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল মানিক।
কাঁথা ভাঁজ করা রেখে নরেন এসে মানিকের হাত ধরল, ‘সরি মানিক ভাই, না জেনে আপনাকে কষ্ট দিলাম।’
‘না না, নরেন দা আপনার দোষ কী? আপনি তো আর জানতেন না যে আমার মা মারা গেছেন? মানুষের কৌতূহল তো থাকতেই পারে। যেমন আমার কৌতূহল ছিল আপনার কাঁথাটির সম্পর্কে।’
ওদিকে লিভিং রুমের সাথে বাথরুমে বসে বসে নরেন ও মানিকের কথাবার্তা শুনছিল রুবেল। তবে তাদের মধ্যে কী বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল সেটা বুঝতে পারছিল না।
‘আমাকে বাদ দিয়ে কী কথা হচ্ছিল নরেন দা? আমার বদনাম নয় তো?’ রুবেল বলল মস্করা করে।
‘না না রুবেল ভাই, সে কি আপনার বদনাম করব কেন?’ নরেন জবাব দিল।
‘মস্করা করলাম নরেন দা। আমরা সে রকম লোকই নই।’ রুবেল বলল।
‘মানিক ভাই আমার কাঁথাটি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। আর আমি তার কবজটি সম্পর্কে। এই কাঁথাটি আমার মা আমাকে দিয়েছিল আর মানিক ভাইর কবজটি তার মা।’
‘আপনার মা...?’ প্রশ্ন করল নরেন। 
‘আর বলবেন না। তারা ছাড়াছাড়ি করেছিল আমার ছোটবেলাতেই। সংসারে সৎ মায়ের কাছেই মানুষ আমি। জানেন তো সৎ মায়েরা কেমন হয়। তবে আমি আমার মায়ের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। ছাড়াছাড়ি হয়েছে মা বাবার সাথে, আমার সাথে তো নয়। মা তো মা-ই, তাই না। নিয়মিত মাকে টাকা পাঠাই, খোঁজখবর রাখি।
চোখ বড় করে নরেন ও মানিক রুবেলের দিকে তাকাল।
নরেন বলল ‘গুড।’ মানিক বলল ‘বাপের বেটার মতো কাজ।’
দু’জনের সমর্থন পেয়ে রুবেল পুলকিত বোধ করছে।
জগতে মা-বাবার চেয়ে আপনজন কে আছে? মা-বাবা সন্তানের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করে তার কি কোনো তুলনা আছে? তারা আর ক’দিন? বলল নরেন।
নরেন কাঁথাটি ভাজ করে বিছানায় রাখল। মানিক তার কবজটির দিকে তাকাল। আর রুবেল শূন্য দৃষ্টিতে উদাস হয়ে তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল।


• কথাসাহিত্যিক, যুক্তরাষ্ট্র।

menu
menu