হোজ্জার খানাপিনা

নতুন প্রাসাদ উদ্বোধন উপলক্ষে বিশাল ভোজ-সভা। উপস্থিত আছেন আশে-পাশের দেশের গণ্যমান্য রাজন্যবর্গ। চারদিকে খাবারের গন্ধে মৌ মেী করছে। রাজকীয় ভোজের আগে বাদশাহ নতুন প্রাসাদ ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছেন সকলকে। মনে তাঁর সীমাহীন আনন্দ। প্রশংসা শোনার জন্যে তাঁর এক অমাত্যকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘প্রাসাদ কেমন লাগছে?’ অমাত্যটি নিতান্ত নিরবলম্ব, সরল মানুষ। বললেন, ‘সব ঠিক আছে মহাশয়, তবে পেছনের এ দিকটাতে একটা দুর্গন্ধ পাচ্ছি কেমন যেন!’ বিদেশি অতিথিদের সামনে এমন  বেফাঁস মন্তব্য করে সে ফেঁসে গেল। বাদশাহ রেগে গিয়ে প্রহরীদের বললেন গর্দান নিতে। গন্ধটা আরও তীব্র হতে লাগলো। এমন সময় এক চাটুকার মন্ত্রী বাদশাহকে বললো, ‘হুজুর এ লোকটাতো বেকুব। আমিতো পরিষ্কার গোলাপের সুগন্ধ পাচ্ছি।’ এ লোকটার দৃষ্টিকটু চাটুকারিতায় বাইরের অতিথিদের কাছে আরও লজ্জা পেলেন বাদশাহ। রেগে বললেন, ‘এ চাটুকারেরও গর্দান নিয়ে নাও।’ এরপর বাদশাহ হোজ্জার দিকে তাকালেন, ‘মোল্লা নাসিরউদ্দিন তুমি ঠিক করে বলোতো, কোনো খারাপ গন্ধ কি পাও?’ মোল্লা আগের দুজনের পরিণতি দেখে বুঝে নিয়েছেন উত্তরে বেশ-কম হলে আজ আর রাজভোজ খাওয়া হবে না। হোজ্জা বললো, ‘মহাশয় আমার তো সর্দি আজ কদিন ধরে। আমি কোনো গন্ধ পাই না।'

করোনাকালের অতিমারিতে যে রোগের ভয়ে মানুষ অস্থির সে রোগের উসিলায় হোজ্জার জানতো বাঁচলো। ভোজও খাওয়া হলো। তাই হোজ্জার খানাপিনা বিষয়ে আমাদের আয়োজন।

মুকুন্দরাম চক্রবর্তী মধ্যযুগের বাস্তববাদী কবি ছিলেন। তাঁর নায়কের খাবারের বর্ণনায় তিনি কল্পনার আশ্রয় নিয়েছিলেন বেশুমার। একটা উদাহরণ দেওয়া যায়। কালকেতু সকালের নাস্তায় অনেক অনেক খাবারের সঙ্গে পান্তা-ভাত খায় এভাবে : ‘মোচড়িয়া গোঁফ দুইটা বান্দিলেন ঘাড়ে। / এক শ্বাসে সাত হাঁড়ি আমানি উজাড়ে।। ’ গোঁফে পান্তা-ভাতের পানি লেগে যাবে সে জন্যে হয়তো  গোঁফ-জোড়াকে ঘাড়ে বেঁধে এক শ্বাসে সাত হাঁড়ি খাওয়া—এ অসম্ভব ব্যাপারই বটে। কে জানে, কালকেতু স্বর্গ ফেরতা দেবতা, তার কাজ কারবার আমাদের বোঝা অসাধ্য!  তবে খাবার-দাবার বিষয়ে হোজ্জার ভোজনরসিকতার পরিচয় পাওয়া যায় না। তবুও এ পর্ব কেন? এ প্রশ্ন আসতে পারে। নিজে প্রচুর না খেলেও খাবার-দাবারের উল্লেখে তার গল্পগুলো মশহুর। কিন্তু এসব খাবার-দাবারের উল্লেখে হোজ্জার সহজাত ব্যঙ্গবিদ্রূপ প্রকাশ পায়। অর্থাৎ নিজে প্রচুর না খেলেও অন্যকে তিনি প্রচুর খাইয়েছেন সেটা খাবার হতে পারে আবার খাবারের উল্লেখে নাকানিচুবানিও হতে পারে। হোজ্জা একবার এক জমিদারের বাড়িতে দাওয়াত পেয়েছে। পাশে এতো এতো ধনী লোকজন! হঠাৎ হোজ্জা লক্ষ করলো, তার পাশের এক দাওয়াতি জমিদার মূল্যবান খাবার পকেটে পুরছে। প্রথমে আস্ত একটা মুরগির রোস্ট ঢোকালো সে। এরপর শুকনো মাছ ভাজার কয়েক টুকরো। তারপর কয়েকটা সিদ্ধ ডিম। হোজ্জা হঠাৎ লোকটার পকেটে এক গ্লাস শরবত ঢেলে দিলো। হোজ্জার এ ধরনের বেমক্কা আচরণে সবাই বিরক্ত! জমিদার ছুটে এলেন, ‘একজন সম্মানিত অতিথির প্রতি এ কেমন আচরণ মোল্লা?’ হোজ্জা জবাবে আস্তে আস্তে বললেন,‘ উনার মূল্যবান জোব্বা অনেকক্ষণ ধরে শুকনো মুরগি, মাছ, ডিম খাচ্ছিলো । ভাবলাম এতোক্ষণে পিপাসাও পেয়েছে, গলা শুকিয়ে গেছে জোব্বাটার তাই একটু জল খাওয়ানোর চেষ্টা আর কি!’ এ গল্পেরই একটা রুশ ভাষ্য পেয়েছিলাম সোভিতভস্কি কৌতুকভে। গর্বাচেভ গেছেন আমেরিকা। রাতে তার সম্মানে দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভোজ-সভায় রাইসা গর্বাচেভ পররাষ্ট্র মন্ত্রী শেভার্দনাদজেকে খোচাচ্ছেন, দুটো সোনার চামচ আমার জন্যে চুরি করুন না।

: নিজের বৌয়ের জন্য আমি দুটো নিয়েছি। আপনি বরং আপনার স্বামীকে বলুন।

রাইসা এবার গর্বাচভকে বললেন। গর্বাচভ দুই হাতে দুইটা চামচ নিয়ে ঘোষণা করলেন : আমি যাদু দেখাবো। এই দেখুন। চামুচ দুটো আমি আমার পকেটে রাখছি। কিন্তু ও দুটো বের হবে আমার পররাষ্ট্র মন্ত্রী শেভার্দনাদজের পকেট থেকে। হোজ্জার গল্প বলতে গিয়ে ইতিহাসের রুশ নেতাদের নিয়ে বেশি টানাটানি ঠিক নয়। বরং আমরা হোজ্জার বেগুন খাওয়ায় ফিরে যাই।

হোজ্জা লম্বা বেগুন পছন্দ করতো না। তার এক প্রতিবেশি তাকে দাওয়াত দিলো। রোজার দিনের দাওয়াত। হোজ্জা সারাদিন উপবাস থেকে ইফতারের সময় প্রতিবেশীর বাড়ি হাজির হলো্। প্রথমে এলো স্যুপ সঙ্গে লম্বা লম্বা করে কাটা বেগুন ভেজে দেওয়া হলো। এরপর বেগুন-আলু দিয়ে তৈরি মুসাকা এলো। এরপর পরিবেশিত হলো বেগুনের কাবাব তারপর মাংসের কিমার সঙ্গে বেগুন মেশানো একটা অচেনা রেসিপি। সব খাবারে এভাবে ক্রমাগত বেগুন দেখে হোজ্জার খাবারের আগ্রহ উবে গেল। কোনো রকমে এক আধটু খেয়ে হোজ্জা বললো, আমার জন্যে `এ গ্লাস' পানি এনে দাও। সঙ্গে ভৃত্যকে জোর গলায় মনে করিয়ে দিলো, জলের সঙ্গে আবার বেগুন মিশিয়ে দিও না যেন!

এ গল্পটা সৈয়দ মুজতবা আলীর আবদুর রহমানের গল্পের বিপরীত। সেটাতে লেখক খাবারের বিপুলত্ব আর বৈচিত্র্যে হতাশ হয়ে পড়লে আবদুর রহমান লেখককে আশ্বস্ত করেন রান্না ঘরে আরও আছে। বেগুনের গল্প যেহেতু শুরু করেছি বেগুনই চলুক আগের গল্পের মতোই।  নাসিরউদ্দিন হোজ্জার অপছন্দের বেগুন বাদশাহর আবার খুব পছন্দ।

বাদশাহের দরবারে সেদিন বেগুন ভাজা হয়েছে। ভাজাটা বাদশাহর খুব মনেও ধরেছে। বাদশাহ হোজ্জাকে বললেন, বেগুনের মতো সুস্বাদু খাবার তোমার জানা আছে হোজ্জা?

হোজ্জা চটপট বললো, ‘না হুজুর, বেগুনের মতো খাবার হতেই পারে না জগৎ সংসারে।’ এদিকে তোষামোদকারীর দল প্রতিদিন মেনুতে বেগুনভাজা দিতে শুরু করলো। এভাবে ক্রমাগত দুসপ্তা বেগুনভাজা খেয়ে বাদশাহ বিরক্ত হয়ে রেগে আগুন! খানসামাকে ডেকে বললেন, চোখের সামনে থেকে বেগুন নিয়ে যাও। আর কোনোদিন যেন এমন অখাদ্য বেগুন খাবার টেবিলে যেন না দেখি।

বাদশাহর সঙ্গে সঙ্গে হোজ্জাও বলতে শুরু করলো, বেগুন আসলে একেবারে অখাদ্য। এমন বিস্বাদ সবজি আর হতে পারে না।

হোজ্জার কথা শুনে বাদশাহ অবাক! বললেন, সে কি পনের দিন আগে তুমি বললে বেগুনের মতো খাবার হয় না। আজ এমন বলছো কেন?

হোজ্জা বললো, হুজুর আমিতো আপনার চাকর, বেগুনের না।

এরকম আরেকটা গল্প পড়েছিলাম হোজ্জার। প্রধান বাবুর্চির রান্না করা খিচুড়ি খেয়ে বাদশাহ খুশি। হোজ্জা বললো, ‘বাবুরচি খুব ভালো রাঁধে, হুজুর। এর মতো ভালো বাবুর্চি এ তল্লাটে আর পাবেন না হুজুর।’  আরেকদিন বাবুর্চি তরকারিতে লবণ বেশি দিয়ে ফেলেছে। খাবার মুখে দিয়ে বাদশাহর বেজায় রাগ। এটা দেখে হোজ্জা বললে, ‘এ বাবুর্চি আসলে কোনো কাজেরও না জনাব’। বেহুদা ওকে প্রধান বাবুর্চি করা হয়েছে।’ বাদশাহ যখন বললেন, ‘তুমি না কদিন আগে বললে সে দেশের সেরা‘। হোজ্জা তখন বাদশাহকে বলেছিলো, ‘হুজুর আমি চাকরিটা আপনার করি বাবুর্চির না’।  মোসাহেবির এমনতরো ধরন দেখে মনে হয়, পরে নজরুল লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত ‘মোসাহেব’ কবিতাটা : সাহেব কহেন, চমৎকার! সে চমৎকার!” / মোসাহেব বলে, “চমৎকার যে হতেই হবে যে! / হুজুরের মতে অমত কার?”

এবারে যে গল্পটা করবো সেটা পড়তে গিয়ে আমার জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের কথা মনে পড়লো। জুলিয়ান একবার দাবি তুলেছিলেন, দুনিয়ার তাবৎ অপকর্মের্ জন্য দায়ী গোপনীয়তা। সুতরাং গোপনীয়তার দেয়াল ভেঙে দাও। আমেরিকার কয়েক লক্ষ গোপন বার্তা ফাঁস করে নিজেই ফেঁসে গিয়ে এখন জেল পচতে শুরু করেছেন। এ প্রশ্ন হোজ্জা তুলেছিলেন অনেক আগে।

নাসিরউদ্দিন হোজ্জা একবার প্রকাশ্যে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে রুটি খেয়ে চলছিলেন। রাস্তায় যে-ই এ দৃশ্য দেখতে পেলো। সে-ই হোজ্জাকে বলতে লাগলো, ‘এটা কি কোনো ঠিক কাজ হলো, দেখতে কেমন লাগে বলোতো? এমন করে প্রকাশ্যে রাস্তায় রুটি খাওয়া ভুল, খুবই ভুল।’ হোজ্জার খাওয়ার আনন্দ মাটি হয়ে যাচ্ছিলো। লজ্জাও লাগছিলো তার। এক পর্যায়ে সে জুতসই জবাব দিতে শুরু করলো, ‘ আচ্ছা, তোমরা বলোতো, যে কাজ গোপনে করলে সঠিক হতে পারে সে কাজ প্রকাশ্য করলে ভুল হবে কেন?’

খানাপিনার সঙ্গে দাওয়াতের সম্পর্ক নিবিড়। হোজ্জার গল্পে দাওয়াত আর এ নিয়ে নানান ধরনের সংকট নৈমিত্তিক ঘটনা। এ কারণে আমরা দেখি হোজ্জার গল্পে নানান ভাবে দাওয়াত আর খাবারদাবারের প্রসঙ্গ  এসেছে।

বাড়ির মালিকের দুষ্ট ছেলে হোজ্জা ও তার বন্ধুদের দাওয়াত দিলো। এক থালি শুকনো কিসমিস সামনে দিয়ে বললো, ‘ তোমাদের মধ্যে সেই এসব খেতে পাবে যে কি না জ দিয়ে একটি ফলের নাম বলতে পারবে। একজন সঙ্গে সঙ্গে জাম বলে কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। আর হোজ্জা বললো, এবং কালো ‘জাম’। বলেই সে থালায় হাতটা ডুবিয়ে দিলো কিসমিস নিতে।

এ গল্পের চেয়ে মজার আরেকটা গল্প পড়েছিলাম হোজ্জার বোকামির।

ইয়ার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় হোজ্জা ঘোষণা করে বসলো, ‘ আমি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে অতিথি আপ্যায়ন-প্রবণ। ‘ বন্ধুরা বললো, ‘প্রমাণ কী?’ হোজ্জা বললো, ‘আজই তোমাদের সবাইয়ের দাওয়াত। ’ বলেই সে বন্ধুদের নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো। দরজার সামনে এসে বন্ধুদের বললো, ‘তোমরা এখানে অপেক্ষা কর। আমি স্ত্রীকে রান্না-বান্নার আয়োজন করতে বলি।” স্ত্রীতো শুনে রেগে টং, ‘তোমার কি কোনো আক্কেল জ্ঞান হবে না কোনোদিন বলা নেই কওয়া নেই দুপুর বেলা কতগুলো মানুষ নিয়ে এসেছো খাওয়াবে বলে! ঘরে তো রান্নার কিছু নেই। চাল নেই তেল নেই। আমি কী রাঁধবো?’ স্ত্রীর ভাষণ শুনে সে অসহায় হোজ্জা বললো, ‘তাহলে কী করি?’

: তোমার কিছু করতে হবে না। ওপরে উঠে বসে থাকো। যা করার আমিই করবো।

এদিকে অনেকক্ষণ কোনো সাড়া না পেয়ে অতিথিরা দরজার কড়া নাড়তে শুরু করলো। হোজ্জা গিন্নি দরজা খুলে বললো, ‘উনিতো বাসায় নেই।

: না, হতেই পারে না। আমরা একসাথে এসেছি। আমাদের সামনে উনি ঘরে ঢুকেছেন। তাঁকে বেরুতে দেখি নি। উনি ভেতরে আছেন । ডেকে দিন।

: বললামতো উনি নেই। আপনার আজ চলে যান।

এভাবে তর্ক এগিয়ে যাওয়ার আগেই হোজ্জা দোতলার জানালা থেকে মুখটা বাড়িয়ে বললো, ‘ আমি সামনের দরজা দিয়ে ঢুকেছি ঠিক, কিন্তু পেছনের খিড়কির দরজা দিয়েতো বেরিয়ে যেতে পারি না কি?’   

তপন রায়চৌধুরী আমাদের জানাচ্ছেন, মোগল বাদশাহরা খানাপিনার ব্যাপারে সৌখিন ছিলেন। দেখা যায়, মোগল দরবারে টাকশালের চেয়ে বাবুর্চিখানার গুরুত্ব কম ছিলো না। মোগলদের অর্থমন্ত্রণালয়ের চেয়ে রন্ধন-মন্ত্রণালয়ের আকার কোনো কারণে ছোট ছিলো না। এ মন্ত্রণালয়ের প্রধানের একটা বাহারি নামও ছিলো ‘মীর বকাওয়াল’। মোগলদের আদি পুরুষ তৈমুরলঙ টাকশালকে গুরুত্ব দিতেন। দেখতে পাচ্ছি এতটা গল্পে হোজ্জা টাকশালের অসুবিধাকে খাবারের মধ্য দিয়ে সুবিধায় রূপান্তর করে নিচ্ছে।  

এ গল্পটা বাদশাহ তৈমুরলঙ আর হোজ্জার। তবে এর মাঝে দেশে খাজাঞ্চিরও কিঞ্চিত ভূমিকা আছে। দেশের খাজাঞ্চির ওপর তৈমুরলঙের খুব রাগ। যেসব হিসেবপত্র খাজাঞ্চি তুলে ধরে তা এতো গোলমেলে যে তৈমুরলঙ অধৈর্য হয়ে পড়েন। সাম্রাজ্য  তার এতো বড় যে এর বিশালত্ব এর হিসাবকেও বড় করে ফেলেছে। শুকনো কাগজে চামড়ার বাঁধাই খাতায় হাজার হাজার পৃষ্ঠায় হিসেব-পত্তর লেখা-জোকা আছে। এ সব কাগজে শত শত কোটি টাকা-পয়সার হিসেব এতো এলোমেলো যে তৈমুরলঙ খাজনা আদায়কারীর ওপর মহাবিরক্ত। তার মনে হয়, লোকটা হয় ধাপ্পাবাজ না হয় ঠগ। এতো এলোমেলো করে কেউ হিসেব লেখে! রেগে-মেগে তৈমুরলঙ খাজঞ্চিকে বললো, ‘তোমার হিসেব তুমি খাও’। শাহেনশাহের আদেশ বলে কথা। চামড়ার বাঁধাই কাগজগুলো খেয়ে শেষ করতে হবে। রাজদরবারে লোকটার দুর্দশা দেখে হোজ্জার খুব মায়া হলো। বললো, মহারাজ, লোকটাকে ক্ষমা করা যায় না? তৈমুরলঙ বললো, ‘ক্ষমাতো করেছি। ও এবারের সব হিসেব আমার সামনে খেয়ে শেষ করে বিদেয় হোক। ওকে আর দেখতে চাইনে! আগামীদিন থেকে তুমি হবে খাজনাআদায়কারী।  সব হিসেব রাখবে তুমি হোজ্জা।’

শুনে শিউরে ওঠে হোজ্জা। এতো মর্মান্তিক সংবাদ! ওর হিসেব পছন্দ না হলে ওকে এমন করে পার্চমেন্ট কাগজের পৃষ্ঠা গিলতে হবে দরবারে বসে! রাতে ঘুম হয় না তার। সকালে দেখে স্ত্রী ময়দার এক তাল কাই মেখে সেগুলো দিয়ে পাতলা করে রুটি বানাচ্ছে। সাদা রুটি তার খুবই পছন্দ হলো। স্ত্রীকে বললো, প্রতিদিন ৫টা রুটি বেশি বানাতে।

প্রতিদিন পাঁচটা সাদা রুটি নিয়ে সে খাজনা-আদায়ের কার্যালয়ে যায়। সেগুলোতে আগের দিনের সব হিসেব লিখে রোদে শুকিয়ে ফিরে আসে। এভাবে বছর শেষ হয়। তৈমুরলঙ হিসেবের দিনে তাকে দরবারে ডাক দেয়। দেখে, এক ঠেলা গাড়িতে আদায়কৃত খাজনার বস্তাগুলো সাজানো আছে। আরেক ঠেলাগাড়িতে আঠারোটা সারিতে আঠারো পঁচিশটা রুটি সাজানো আছে। তৈমুরলঙ অবাক! এগুলো কি হোজ্জা?

: আগে এগুলো দেখতে হবে হুজুর। এ রুটিতে প্রতিদিনের হিসেব লেখা আছে।

হোজ্জার পরিষ্কার হিসেব দেখে টাকা গুনে নিয়ে তৈমুরলঙ সন্তুষ্ট। জানতে চাইলো, ‘আচ্ছা, তুমি রুটিতে হিসেব লিখতে গেলে কেন হোজ্জা? ওরা কি তোমাকে এবার কাগজের খাতা দেয় নি?’

: সেসব কিছু নয় হুজুর। আমার মনে ভয় ছিলো, হিসেব যদি আপনার পছন্দ না হয়, তাহলে খেতে বললে আমার কষ্ট লাঘব করতে এ ব্যবস্থা!

এ জবাবে তৈমুরলঙ খুশি হয়েছিলেন নিশ্চয়ই। রুটির প্রসঙ্গে আরেকটি গল্প চালিয়ে দেওয়া যায়। এটাও হোজ্জার। প্রখর বুদ্ধি ও চাতুর্যর পরিচয় বহন করছে।

বাদশাহের কাছে হোজ্জার কদর বেশ। কারণ হোজ্জার বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা। কাড়ি কাড়ি ডিগ্রিধারীদের খুব হিংসে। তারা মনে করে এতা পড়ালেখা করেছে তারা। তবু তাদের কদর কত কম রাজার কাছে। হোজ্জা কোনো পড়ালেখা ছাড়া রাজাতে বেকুব বানিয়ে দখল করে রেখেছে। দেশের পণ্ডিতরা এক যোগে রাজার কাছে গিয়ে প্রতিকার চাইলো। রাজদরবারে এসে বললো, এই যে আপনার পাশে বসে আছে এ লোকটা আমাদের মতো পড়ালেখা করেনি। অথচ সবসময় আমাদের জ্ঞানের গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। আমরা এর বিচার চাই।
সুলতান হোজ্জার কাছে জানতে চাইলেন,  তোমার বক্তব্য কী? 

হোজ্জা বললেন, আগে এঁদের রুটি কী এর উত্তর লিখতে দিন। উত্তর পাওয়ার পর আমার বলারটাআমি বলবো। 
 পণ্ডিতরাতো মহাখুশি। এ জবাব দিয়ে যদি হোজ্জাকে জব্দ করা যায়। তাঁরা জবাব লিখে সুলতানকে দিলেন। প্রথম পণ্ডিত লিখলেন, রুটি এক ধরনের খাদ্য বিশেষ।

এভাবে অন্যরাও একে একে লিখে জমা দিলেন। 

: আটা, লবণ আর পানি মিশিয়ে যে খাবার তৈরি হয় তা-ই রুটি।

: বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অন্য সকল নেয়ামতের মতোই আল্লাহর একটা নেয়ামতের নাম রুটি।

: পুষ্টিকর আহার্য বস্তুই রুটি।

: প্রশ্নটি দ্ব্যর্থবোধক। কোন প্রজাতির রুটির কথা বোঝানো হলো? এটা আগে জানা দরকার।

: গণ্ডমূর্খ ছাড়া সকলে রুটির সংজ্ঞা জানে!

: প্রকৃত অর্থে রুটি একটি দার্শনিক প্রত্যয়। এর সাধারণ অর্থ করা সহজ কাজ নয়। 

এসব উত্তর পাঠের পর হোজ্জা বললেন,  জাঁহাপনা দেখুন। এঁরা রুটি প্রতিদিন খান। তবুও এঁরা এতো পরিচিত একটা বিষয়ে কত অমিলের পরিচয় দিলেন। আর আমাকে ভালো করে দেখেন নি কোনোদিন; তবুও আমার ব্যাপারে সবার কত মিল! এঁদের জ্ঞান নিয়ে আমি যা বলেছি তাতো দেখছি ঠিকই বলেছি। জানা জিনিসই ওরা নানাভাবে বলে, অজানা জিনিসের এঁরা বিচার করে! এটা কি ঠিক?

আমরা এ ফাঁকে রুটি বানানোর জন্য হোজ্জার বউকেও ধন্যবাদ দিয়ে রাখি। তবে তারাপদ রায়ের গল্পের স্ত্রী কিন্তু এমন নন। হোজ্জার স্ত্রী পাতলা রুটি বানিয়ে হোজ্জার উপকার করেছিলেন আর এ মহিলা স্বামীর দফারফা করে ছেড়েছিলেন বলে শুনেছি। সে-ও রুটি খাওয়া নিয়ে বরং চা খাওয়ার মতো নিরাপদ কাজের জন্য। এক কমার্শিয়াল আর্টিস্ট সুন্দরী মডেলকে নিয়ে ছবি আঁকতে বসেছেন। মহিলা আয়নায় দাঁড়িয়ে লিপিস্টিক লাগাচ্ছেন আর শিল্পী সে ছবি এঁকে প্রচার করবেন সুন্দরীর ঠোঁটে লিপিস্টিকের মাহাত্ম্য । সেদিন শিল্পীর মুড ভালো নেই। তিনি ভদ্রমহিলাকে বললেন‘, আজ কাজ করতে ইচ্ছে করতে না। আপনি বরং একটু বসুন। দুজনে চা খাই আর গল্প করি’। শিল্পী বলে কথা ! মুড জরুরি একটা বিষয়। পাশাপাশি সোফায় বসে চা খেতে শুরু করবেন এমন সময় হাই হিলের টকটকাটক শব্দ। শিল্পী আলাভোলা মানুষ হলেও স্ত্রীর পায়ের আওয়াজ চেনেন। আরও জানেন, যে কোনো সময়ে এ আওয়াজ তাকে অনুসরণ করতে এখানে পৌঁছে যাবে। তিনি তাড়াতাড়ি বললেন, “সর্বনাশ চা খাওয়া ছাড়েন। আমার স্ত্রী আসছেন। আপনি তাড়াতাড়ি কাপড়চোপড় এলোমেলো করে সোফার ওপর শুয়ে পড়ুন। আমার স্ত্রী যদি আমার সঙ্গে আপনাকে চা খেতে দেখেন তাহলে ঘোর বিপদ হবে। ”

সে ঘোর বিপদ যে কী সেটা আর জানা হয় নি। তবে আরেকটা সংলাপ শুনেছিলাম তারাপদের নায়কের মুখে। মদ খাওয়া নিয়ে। আমার কাছে দুর্দান্ত মনে হয়েছে। প্রতিদিন পানশালায় না গিয়ে নিস্তার নেই এমন এক অর্ধ-মাতাল প্রেমিকাকে নিয়ে দুঃখ করে বলছে : “দ্যাখো, যাকে ভুলবার জন্যে এ চালচুলোহীন ছন্নছাড়া জীবন যাপন করি, গেলাসের পর গেলাস মদ খেয়ে কেটে যায় সন্ধ্যার পর সন্ধ্যা; আসল কথা কি জানো, কবে তার নাম ভুলে গেছি, হাজার চেষ্টা করলেও এখন আর তার মুখটা মনে করতে পারি না।” আমাদের কপাল ভালো হোজ্জার গল্পে এমন মদ খাওয়ার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। এর কারণ আমাদের সংস্কৃতিতে মদ নিষিদ্ধ বস্তু। যদিও এটা বলা যায়, মদ খাওয়া নিয়ে মাতালের গল্পগুলো বেশি খোলে বলে মনে হয় আমার।
 
খানাপিনার সঙ্গে আলস্যের সম্পর্ক নিবিড়। বাংলায় গোঁফখেজুরে বাগধারাটার জন্মও এভাবে বলে জানা যায়। মুখের সবচেয়ে কাছে গোঁফের অবস্থান। এক কুঁড়ে পাকা খেজুরের মরশুমে গাছের নিচে শুয়ে আছে। হঠাৎ একটা পাকা খেজুর ওর কালকেতুর মতোই ইয়া বড় গোঁফের ওপর পড়লো। ক্ষুধার্ত কুঁড়ে লোকটি গোঁফ থেকে খেজুরটি নিয়ে মুখে দিতে পারলো না। এর জন্য হাত নাড়াতে হয় যে! এ থেকে সৃষ্টি হলো বাংলা ভাষার একটি শব্দ গোঁফে খেজুর থাকলেও খায় না যে মানে গোঁফ-খেজুরে আর কি!  হোজ্জা নিজে অলস এমন গল্প পাওয়া না গেলেও সে অলস লোকজনকে কীভাবে ট্রিট দিতো তার বিবরণ আমরা নানাভাবে পাই। যেমন এ গল্পটা।

মোল্লা নাসিরউদ্দিনের বন্ধুটি খুব অলস। দুই বন্ধু ঠিক করলেন একদিন দুজনে ভালামন্দ রেঁধে খাবেন। মোল্লার স্ত্রী আবার বাড়িতে নেই।  বাজার সওদা করে ফেরার পর মোল্লার অলস বন্ধুটি বললো, “মোল্লা, তুমিতো ভালো করেই জানো আমি রাঁধা-বাড়া কিছু পারি না। আমি চুলায় আগুন দিতে পারি না। আমি হাঁড়িতে মশলা দিতে জানি না। আমি বটি ব্যবহার করতে জানি না। তাই কীভাবে সবজি কাটতে হয় সেটাও আমি জানি না। আমি থাকলে ভুল-ভাল হবে তোমার কাজের ক্ষতি হবে। আমি বরং একটু ঘুমিয়ে নেই। রান্না হলে আমাকে ডেকে নিও। দুবন্ধুতে মিলে মিশে খাবো। ”

মোল্লা নাসিরউদ্দিন মাংস কেটে নিলেন, চাল ধুয়ে নিলেন, প্রয়োজন মতো সবজি কেটে নিলেন। মশলা বেটে নিলেন। পোলাও আর মাংস রেঁধে চেখে দেখলেন। খুব সুস্বাদু হয়েছে। এরপর সব খাবার চেটে-পুটে খেয়ে বাসনকোসন মাজতে বসে গেলেন। বন্ধু ঘুম থেকে উঠে দেখে তার জন্যে কোনো খাবার অবশিষ্ট নেই। মনের দুঃখে বন্ধুটি বলতে লাগলো, “তুমি আমাকে না ডেকে একা সব খাবার খেয়ে  সাবাড় করতে পারলে?এতো নিষ্ঠুর কীভাবে হলে! তোমার কি বিবেক আর বিচারবোধ নেই? তুমি আসলে একটা লোভী মানুষ, তুমি…”

অনেকক্ষণ বন্ধুর কথা শুনে মোল্লা এর মাঝে বলতে শুরু করলো, “তুমি এতো চটছো কেন বুঝতে পারছি না। আমি আরও ভাবলাম তুমি ‍কিছুই পারো না। তুমিইতো বললে, আমি ভালো করেই জানি খেতেও পারো না নিশ্চয়ই। সে জন্যেই আমি সব খেয়ে নিলাম।” 


মোল্লা আর মোল্লার অলস বন্ধুর গল্প শুনে মনে পড়লো শিবরাম চক্রবর্তীর কথা। সেখানেও আলসেমির সঙ্গে ঘুমটা আছে। শিবরামকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো উনার সারাদিন কাটে কিভাবে। উত্তরে তিনি বলেন–সকালে ঘুম থেকে উঠি। ঘুম তো একটা বড় পরিশ্রমসাধ্য কাজ। তাই প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগে। তাই আবার ঘণ্টা-দুই ঘুমাই।

– তারপর? শেষমেশ উঠেন কখন?

– ওই বেলা এগারোটা-বারোটা বেজে যায়।

– তারপর?

– তারপর মুখ ধুই, কাগজ উলটে পালটে দেখি, চা খাই, স্নান সেরে নিই। এই করতে করতে খাওয়ার সময় হয়ে যায়। খাওয়া-দাওয়া করি। আর দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পর একটু ঘুমাতে হয়। ঘুমাই।

– তারপর?

– ঘুম থেকে উঠতেই তো বিকেল হয়ে যায়। একটু চা-টা খাই। তারপর বাইরে হাঁটতে বের হই। আর হাঁটতে বের হওয়া মানেই তো রাবড়ি! আমার জীবনের প্রথম প্রেম। শেষ প্রেম। শোনো, রাবড়ি হচ্ছে পৃথিবীর পরমাশ্চর্য। দিনে একবার রাবড়ি না খেলে কি চলে! সুতরাং রাবড়ির দোকানে যাই। খাওয়া হলে মুখটা পরিষ্কার করতে জলের বদলে রাবড়ি ব্যবহার করি। আরেকটা পার্থক্য আছে। তোমরা জল দিয়ে মুখ সাফ করে তা ফেলে দাও। আর আমি কুলি করে রাবড়ি গিলে ফেলি। তা… এইভাবে বিকেল শেষ। সন্ধ্যায় একটু বইটই দেখি। সাহিত্যিক মানুষ। বোঝোই! সাধনার ব্যাপার আছে। এই করতে করতে রাত গড়িয়ে যায়। তখন বাসায় ফিরে হালকা কিছুখেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। হা-হা!

– মানে! তবে লিখেন কখন?

– কেন, পরের দিন!
 
আমাদের এ গল্পগুলোতে হোজ্জার প্রিয় খাবার আর ফল-ফ্রুটের প্রসঙ্গ আসেনি। অথচ ফল আর সবজি নিয়ে প্রচুর গল্প পাওয়া যায়। হোজ্জাকে একবার তার বন্ধুরা জিজ্ঞেস করেছিলো ‘তার প্রিয় খাবার কী’ ? হোজ্জা সবাইকে অবাক করে বলেছিলো, ‘’হালুয়া’’। বন্ধুরা যখন তাকে ধরে বসলো হালুয়া খাওয়াতে, তখন সে বলেছিলো, “আজকাল আকাল পড়েছে। ময়দা থাকলে চিনি থাকে না। চিনি থাকলে ঘি থাকে না, ঘি থাকলে কিসমিস থাকে না। তখন বন্ধুরা বললো, কেন আকাল গেলে ময়দা,ঘি, চিনি, কিসমিস সব যদি থাকে তখন। হোজ্জা বলে, তখন বিবি থাকে না। অর্থাৎ এ জীবনে হোজ্জার হালুয়া খাওয়া হয় না।

আসলে হোজ্জা বিবি থাকে না বললেও কথাটা সর্বৈব সত্য নয়। হোজ্জার বিবি খুব ভালো হালুয়া রাঁধে। একবার দুই দিনের জন্য হালুয়া রেঁধেছে বিবি। হোজ্জা খেতে বসে বুঝতে পারলো বিবি আজ অর্ধেক খেতে দেবে। সে খাওয়া শুরু করে বললো, “আমার মাথায় একটা গভীর চিন্তা এসেআছে। তোমাকে বলছি। বাকি হালুয়াটা নিয়ে আসো।” বিবি অবশিষ্ট হালুয়া নিয়ে সামনে রাখলো। হোজ্জা তুপ্তির সঙ্গে সেগুলো খেতে শুরু করলো। স্ত্রীতো গভীর চিন্তা শুনতে আগ্রহী! বললো, “তুমি চুপ করে খেয়ে চলেছো যে! কই তোমার গভীর চিন্তা বলছো না কেন?

“আমি চিন্তা করে দেখলাম হালুয়া বাসি করে খাওয়া ঠিক নয়। স্বাস্থ্যপ্রদও নয়। তাই দিনের হালুয়া দিনেই শেষ করা দরকার”। এ বলে সে হালুয়াটা শেষ করলো।

ফল নিয়ে প্রচুর গল্প প্রচলিত। একটা মজার প্রশ্ন-উত্তর সংলাপের গল্প দিয়ে এ পর্ব শেষ করি।

: হোজ্জা শুনেছি তোমার ঘরে নাকি অনেক পুরনো আঙুরের রস আছে?
: ঠিকই শুনেছো। আমার ঘরে ৪০বছরের পুরনো আঙুরের রস জমা আছে।
: তাহলেতো বেশ। এতো পুরনো আঙুরের রসের স্বাদ কেমন জানি না। একটু চেখে দেখতে দেবে?
: অবশ্যই না। তোমাদের সবাইকে যদি একটু একটু করে চেখে দেখতে দিতাম তাহলে এটা কি চল্লিশ বছর থাকতো? (চলবে)


• কোটবাড়ী, কুমিল্লা

ধারাবাহিক হোজ্জা (চতুর্থ কিস্তি)

menu
menu