দুটি কবিতা ।। তাপস রায়

আমি চারপাঁচ রকম গণতান্ত্রিকতায় থাকি, ভোট মারি
ঘর-বাড়ি হবার আগে, গুহাজীবনের আগে মানুষ কোথায় থেকেছে! প্রকৃতির কোলে
ক্রমশ সভ্যতা বা তুমি যাকে বলো মানুষের ভয় এসে প্রকৃতিকে দূরে সরায়
যেভাবে গৃহপালিত কথাটির ভেতর দাসত্ব ঢুকে থাকে, মানুষ আলোকে ফিরিয়ে দিয়েছে
মুঠো মুঠো কুণ্ঠা নিয়ে তাকে হেঁটে যেতে দেখা যায় অন্ধকারের ভেতর, মানুষ চেয়েছে
তাকে যেন কেউ বিক্রি করে দেয়, কেউ এসে কেনে—ভিখিরির মতো আশ্রয় চেয়েছে
যে পাড়া যে দাদার অধীনে সেই পাড়াতুতো দাদাকে স্বীকার করে কিছুদূর যাওয়া গেলে
দেখা যায় দাদারাও অধীনতামূলক রাজ্যপাট চেয়েছে কেবলই, এবং প্রসন্ন বিকেলে
আমার ও তোমার ভেতর ভৌতিকতা বাড়ে, আসে পৌরাণিক শিরোধার্যতা এই
জমি ও জলাশয়ে ...
যে শীত এসেছে, তাকে চলে যেতে দিলে যারা আমাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে, আমি
তাদের বসন্তের ভেতর ঢুকে গিয়ে রাতারাতি আমের মুকুল হয়ে স্বপ্ন লিখে দিই, যেন
আমাকে ছোটরা শ্রদ্ধা জানায়, বড়োরা ভাঙা গণতন্ত্রের পাশে রেখে স্যাঁকে, আসে বিড়িখোর
দু’একজন বন্ধু-বান্ধব, আত্মহত্যার পর সম্ভাব্য সরকারি অনুদান নিয়ে কথাবার্তা বলে
আমি প্রকৃত ঘটনাপুঞ্জকে জানি, বনগাঁ লোকাল থেকে নেমে ভিড়ের ভেতর নিজেকে লুকোয়
সূর্য চেনাতে আমাদের নিয়ে যায় টাইগার হিলে
প্রেমের কবিতা লিখবার আগে কাগজ ও কলমের দূরত্বটুকু দেখা
সোজাসাপটা কথাবার্তা হবে না এখন। আগে তুমি দান ফেল
দেখি তোমার হাতেগড়া নদী কতদূর যেতে পারে
আগে দেখি পাহাড়ের গায়ে তুমি কতখানি কুয়াশা ছেড়ে রেখে এসে
রিসোর্টের বারান্দায় বসেছ এখন, হাতে যেকোনো পানীয় থাক
আমাকে জানতে হবে সমবেত হাওয়াদের তুমি কীভাবে উসকে রেখে এলে
আমাকে গণিতবিদ ভেবে নিতে পারো। গোলাবারুদের শহরে রয়েছি বহুকাল
কোনো অজুহাতই বাঁচাতে পারবে না, যদি ভুলচুক হয়
তোমার দাঁতনখ পার্সেলভ্যান থেকে নেমে থমথমে রেখেছে এই
জাতীয় সড়ক, তালবন, চৈত্র হাওয়ায় মোড়া ধর্মঠাকুর থান
আমি রেললাইন পেরিয়ে যেতে কাটা পড়তে পারি, আমাকে জানতে হবে
কতদূর থেকে ঝাঁপাতে এসেছে দক্ষ ঘাতক, চূড়ামণি প্ররোচনাটুকু
আজ বৃষ্টি হতে পারে, আমাকে ঠিক করতে হবে এই বৃষ্টিতে ভিজে উঠব কিনা
তাপস রায় কবি ও কথাসাহিত্যিক। সুইনহো স্ট্রিট নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করেন।