।। দুটি কবিতা ।। ফারহানা ইলিয়াস তুলি ।।

পৃথিবী প্রাচীন হলে
পাতাটি বুড়ো হলে, মুছে কি যায় তার শিরা!
উপশিরায় মিশে থাকে যে কম্পন—
তা ও কি মিইয়ে যায় বাতাসে, অথবা যে পথে
পড়ে থাকে পত্রের অক্ষর;
তা কি খুঁজে পায় পাতা ও পত্রের সম্পর্ক!
হয়তো পায়। হয়তো পায় না।
কিন্তু যে জন্মদাগে মিশে থাকে মানুষের সত্তা,
যে মানচিত্রে লেগে থাকে দ্রোহের রক্তধারা,
সেই দাগ যায় না মুছে ফেলা,
যারা ঘৃণার গ্রাফিতি দিয়ে সারারাত
দেয়ালে দেয়ালে,
লিখে পাপের প্রশস্তি, তারা কী জানে না
এই বদ্বীপে বারবার ভেঙেছে, কালো ব্যারিকেড—
বারবার মানুষ এগিয়েছে শেকড়ের শতমূলে।
পৃথিবী প্রাচীন হলেই শেষ হয় না তার কক্ষপথ।
যে সন্তান তার পিতাকে অস্বীকার করে,
মহাকালের ইতিহাস তার নাম খারিজ করে দেয়।
অনেক পাঠের নয়াপর্ব,
তখন অধ্যয়নের অযোগ্য হয়ে উঠে ।
ভস্মের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে
তোমরা কাগজ পুড়িয়ে বানাচ্ছ ছাই,
আর আমরা আগুন পুড়িয়ে বানাচ্ছি ভস্ম!
আগুনকে পুড়তে দেখে,
হাসছে মন্দিরের পূজারি, মসজিদের মোয়াজ্জিন—
হাসছে শিশুরা,
কিংবা সদ্যবিধবা নারী, হেসে হেসে দেখছেন
তার নবজাত কন্যার মুখ!
মূলত দখল হয়ে যাচ্ছে মুখমণ্ডল, মন্ত্র ও মনুষ্যত্ব!
পালটে দেয়ার নামে,
কেউ নিজেই বপণ করছে বৈষম্যের বীজ!
এখানে কোনো পাহাড় ছিল না—
এখানে কোনো পাখি ছিল না—
এখানে কারো পরিচয় ছিল না—
বলতে বলতে,
সকল প্রকার ভস্মের বিপরীতে দাঁড়িয়ে
সড়কে পোড়া পাথর খুঁজছেন
একজন আদিম সাধু!
ফারহানা ইলিয়াস তুলি কবি। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা পাঁচটি। তিনি আমেরিকার নিউইয়র্কে বসবাস।