দুটি কবিতা ।। মাইনুল ইসলাম মানিক

কুরুক্ষেত্রের ঘুড়ি
ক্রমাগত উড়তে উড়তে আকাশের বুক চিরে ঢুকে যাচ্ছি কৃষ্ণবিবরে, লিকলিকে চঞ্চু বাড়িয়ে আমাকে ত্রস্ত করে শ্যাম, বুঝে গেছি আমি নীলকণ্ঠী পাখি নই ঘুড়ি, ভুলে গেছি তোমার পাললিক হাতে ফিরবার পথ। নাটাই ধরো, মারো টান, প্রভু, আমাকে ফেরাও তোমার মায়াময় হাতে।
আকাশে উন্মত্ত ঝড় যেন কুরুক্ষেত্রে পড়ে গেছি আমি এক ইরাবান ঘুড়ি, ধ্বস্তপ্রায় বুকের জমিন, সুতো কেটে গেলে নিরুদ্দেশ নিয়তি; নীড় নেই, নাড়ি নেই, অপেক্ষার হেমলক হাতে দাঁড়াবে না কেউ তবু ফিরবার তাড়া। আমাকে ফেরাও, আমাকে নামাও, মাবুদ, তুলে নাও হাতে।
তোমার সুতোয় বাঁধা পড়ে আছি। আমাকে ফেরাও তুমি, ওড়ায়ো না আর। আকাশ তো গৃহ নয়, পাখিরা স্বজন নয়; তবু ভুল ভেবে বসি, অবোধ মায়ায় বাঁধা পড়ে যাই, বিধি, এবার নাটাই ধরো, সুতোয় মারো টান, আমাকে ফেরাও তুমি, উড়ায়ো না আর।
ক্রুশকাঠে ঝুলে যেতে যেতে
পানশালায় বসে আছি নিটোল সন্ধ্যায়
অকস্মাৎ সম্মুখ চেয়ারে বসে পড়লেন একজন
খুব যেন চেনা চেনা মুখ
ক্ষুদ্র একপ্রস্থ গোঁফ তার নাসারন্ধ্রমুখে
যেন কোথায় দেখেছি তাকে
ক্রমাগত স্মৃতি হাতড়ে পাওয়া গেল ইতিহাসের পাতায়
সহাস্যে জিজ্ঞেস করি—কেমন আছেন, এডলফ? কী খাবেন, বলুন।
এই মৌন সন্ধ্যায় এক কাপ ধোঁয়া ওড়া চা?
তারপর বলুন—কেমন চলছে দিনকাল?
কিছুক্ষণ নিরুত্তর বিষণ্ন এডলফ
তারপর অতিধীরে ফুটতে থাকে কথার খই
—শুনুন, যাদের হাতে প্রবল বিক্রমে তুলে দিয়েছি মহাকালের ছাড়পত্র
এখন নক্ষত্রখচিত প্রতিটি সন্ধ্যায় তাদের সাথে গোল হয়ে বসি
ওদের চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসে ঘৃণার বারুদ
আমি খুন হয়ে যাই।
আমি তাকে থামিয়ে দিই, বলি—
পৃথিবীর ক্রুশকাঠে ঝুলে যেতে যেতে
বেঁচে যায় যীশু
খুনি মরে চিরকাল।
মাইনুল ইসলাম মানিক কবি ও অনুবাদক। মোট গ্রন্থসংখ্যা আটটি। হেরেমের আধেক চাঁদ (প্রকাশিতব্য উপন্যাস)। তিনি একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তিনি চাঁদপুরে বসবাস করেন।