গুচ্ছ কবিতা ।। আয়েন উদ্দীন চংদার

বাড়তি বেশি হলে দুর্যোগ

পিঁপড়া এবং ছারপোকার অত্যাচার বেশি হলে গৃহকর্ত্রী
হাত দিয়ে পিষে মারে এবং পোড়ায়।
মশা-মাছির উপদ্রব হলে ঝড়-বৃষ্টি হয়ে বিনাশ হয়।
মানুষের অত্যাচার সমাজের বেড়ে গেলে সেটা দমন হওয়ার
প্রতিষেধক অবতীর্ণ হয় আচমকা।
বন্য পশুর অত্যাচার হলে বন সয়লাব করে মানুষে।
বড় মাছের অত্যাচার হলে জল শুকিয়ে ধরে মানুষে।
কাঁকড়ার অত্যাচার হলে কীটনাশক দিয়ে নিধন করে।
মানুষ যদি বন্য পশুর আচরণ করে নির্ঘাত একটা
পরিবর্তন অনিবার্য।

সম্মানীরা লুকোচুরি খেলায়

মানুষ মহাসম্মানী হলেই, সকলে তাকে সম্মান দেয়।
মহাসম্মানী আজকাল খুব চতুর এবং ক্ষমতাবান।
নিজের সুবিধার জন্যে অন্যের দ্বারা করায় অন্যায় 
অন্যের প্রাণ হারাবার ভয়ে ইঁদুরের মত গর্তে লুকায়।
পরিচিত লোক তাকে সহজে খুঁজে পায় না উপকারে এ যুগে।
বাড়িতে অবস্থান করেই প্রস্থানের কথা শুনায় বন্ধুদেরকে।
পাওনাদারকে ধোঁকা দেয় স্বেচ্ছায়।
কিন্তু যতই লুকোচুরি করুক না কেন আজরাইলের 
হাত হতে রক্ষা পাবে কি কস্মিনকালে?
তাহলে অল্প সম্মানের মানুষই ভালো যেখানে-সেখানে
যাতায়াত করে নির্ভয়ে একাকী।

ভাগ্যহারা কৃষক

কৃষকের হালের বলদ মারা গেলে অসংখ্য শকুনের আগমন
গগন হতে ভুবনে।
আরেকটি বলদ কিনতে গেলেও বেশুমার দালালের ভিড় জমে হাটে।
কৃষকের সন্তানকে লেখাপড়া শিখালেও বিনা অর্থে কোনো কর্মসংস্থান
জোটে না আজকাল।
অর্থ নড়ে বাচ্চা পড়ে পকেটে।
মরিয়া হয়ে যদি অর্থের যোগাড় করে তবুও কালো মেঘের বৃষ্টির মতো
ও ক্ষুধার্ত শকুনের ন্যায় ওই অর্থকে ছিন্ন ভিন্ন করে শকুনের এবং মেঘের দলে।
ফসল গৃহে আসার প্রাক্কালে সর্বগ্রাসী বন্যার ছোবলে নিপাত হয়।
কৃষকের সম্পূর্ণ আশা।
ফসলের যদি ফলন হয় তবে হাটে বাজারে পায় না দাম।
অর্ধাহারি অনাহারি অক্লান্ত পরিশ্রম তো আছেই।

অদৃশ্য ঘাতক

জীব-জন্তু, পশু-পাখি এবং মানুষ জন্মে পৃথিবীর বুকে।
সকল প্রাণেই পীড়ার আক্রমণ হয়। রোগের জীবাণু অনুবীক্ষণে
লক্ষ্য করা যায়।
বাতাস বয় কিন্তু অদৃশ্য, শুধু অনুমান করি।
প্রত্যেক জীব দেহের খাঁচায় বায়ুর প্রাণ বন্দি।
কী যন্ত্রে টানে? আসে যায় আবার আসে কিন্তু যখন বের
হয়ে আর আসে না তখনই তো মৃত দেহ।
কোনো প্রতিষেধকেই কি অদৃশ্য ঘাতককে হত্যা করা সম্ভব?

শরৎ

অমল, ধবল, মেঘের ভেলা ভাসিয়ে এলো আবার শরতে
অজস্র শুভ্র কাশফুলে প্রকৃতি যেন হাসে, দ্বিপ্রহরে নীলাকাশে ধবল
মেঘের মেলা। বিকেলে ফড়িংগুলো নেচে করে খেলা।
স্নিগ্ধ রৌদ্রতাপ, মধ্যাহ্ন বেলায় তীব্রগরম, মাঠে
পরিষ্কার জলে ফোটে শাপলা ফুলের অপূর্ব দৃশ্য।
নিশিতে জ্যোৎস্না স্নিগ্ধ আলো, সারা রাত্রি
মাথার ’পরে তারার শোভা। জল গরম হয় মধ্যাহ্নে বেলায়।
নৌকায় ভ্রমণ রাত্রিকালে আনন্দদায়ক। কী যে শোভা
শারদীয় অনুষ্ঠানে হিন্দু পর্বে আনন্দের ঢেউ বয়, চলে যাত্রাগান।
ছাতিম বৃক্ষে ফুল ফোটে ফুলের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয় নিশিকাল।
প্রকৃতি যেন সৌন্দর্যে মুখরিত, শরৎ রানির আগমনে।


 

menu
menu