গুচ্ছ কবিতা ।। শামস আল মমীন

তুমি কি কখনো

গলা ছেড়ে ডাকি কেউতো শোনে না।
ঘুরে ফিরে দেখি কাউকে দেখি না। 
তবু জানি, 
তুমি আছো আমার হাতের মতো
কাছাকাছি।

বছর বছর নববর্ষ
নবান্ন, নন্দনতত্ত্ব
গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল থেকে কী পাগল গন্ধ!
আমরা যখন মুখোমুখি...

তুমি কি কখনো তাকাও আমার দিকে,
                          অ-বিশ্বাসে?
 
আমি না এসে পারি না

দিনেও ঘরটা অন্ধকার।
একটা ময়লা থালা আর অ্যালুমিনিয়াম গ্লাস
তার জীবনের মতো উবু হয়ে আছে,
মনটা ভালো তার, মেজাজটাই যা 
একটু গরম। মাঝে মাঝে
খামোখাই যাকে তাকে গাল-মন্দ করে, তাই
এ পথে কেউ পা বাড়ায় না আর।
আমি না এসে পারি না..

বাহির থেকেই শুনতে পাই তার উঁচা গলা। 
আমাকে দেখেই চেঁচিয়ে ওঠে , ‘আমাকে খেতে দে..
ওরা আমাকে না খাইয়ে রেখেছে
ডাক্তার টাক্তার লাগবে না।’
আমি বলি, ‘হাসপাতাল চলো একটু আরাম 
পাবে’, বুড়ি ভাঙা চোয়ালে একটু হাসে। বলে, ‘তোর
যা খুশি..।’ অ্যাম্বুলেন্সের লোকেরা ধরে বেঁধে 
স্ট্রেচারে তোলার সময় সে উহ্ আহ্ করে...
আমার দিকে তাকিয়ে বলে,‘এটাকে বুঝি আরাম বলে।’
আমি জানি এটা তার মনের কথা না; যেতে যেতে
 
অ্যাম্বুলেন্সের জানালা দিয়ে দেখে রাস্তার দু’ধারে মেঘ ভেজা
অট্টালিকা। ‘ঝাপসা ঝাপসা ওগুলো কী রে?
বড়লোকদের বাড়ি? 
ওসব দেখতে দেখতে ঘেন্না ধরে গেছে...’
আস্তে আস্তে তার ঘাড়        
               হেলে পড়ে বাঁ দিকে।
 

যদি কিছু করতেই চাও

যদি কিছু করতেই চাও
গোড়া থেকে শুরু করো
যদি কিছু ভাঙার ইচ্ছায়
হাত নিশপিশ করে তার আগে নিজেকে ভাঙো, আর 
আগাছাগুলো উপড়ে ফেলো।
 
আর যদি 
সংগ্রাম চাও, তবে বৃত্তের ভেতরে
আটকে থেকো না।
তুমি বেঁচে আছো
এটা তুমি জানো, আর একদিন
মরে যাবে তাও তুমি জানো

রাস্তা দিয়ে হাঁটো আর মাথার উপরে
ফ্লাস লাইট তাক করে রাখো 
কারো পিছলা কথার ফাঁদে আটকে যেও না;
 
যে যাই বলুক ওদের মাথায় ছেলেমেয়েদের 
ভাবনা আছেই, যদি কিছু করতেই চাও 
আগাছাগুলো উপড়ে ফেলো আগে,
 
একই কথা বলতে বলতে যদি
ঘেন্না লাগে..কোন সুন্দরীর গালে চুমু দাও, 
ছেলেমেয়েদের সাথে মাঠে গিয়ে একবেলা
খেলা করো আর অকারণে শিশুদের মতো
 
খিলখিল করে হাসো, তারপর 
বেড়া পার হয়ে রাস্তা হাঁটো আর ফ্লাশ
লাইটটা তাক করে রাখো নিজের উপর।
 

নিজেকে জানো

মরে যাবার আগেই
কখন যে মরে যায় কেউ কেউ বুঝতে পারে না;
আমার যা আছে তাতেও অসুখী নই আমি। তবু
ভয়ে ভয়ে থাকি, চলতে চলতে বাঁশের কঞ্চিকে
অভয়ারণ্য ভেবে না বসি। কিন্তু 
একা আমি, এবং ক্ষুধার্ত। 
যেতে যেতে দেখি কী মায়াবী একটি হরিণ! 
আমি তাকে সাথী করে নেব, নাকি 
আগুনে ঝলসে খাবো...
 
ভাবতে ভাবতে ভাবি
শেষমেশ কার কাছে পরাজিত হবো আমি...

menu
menu