গুচ্ছ কবিতা ।। খালেদ উদ-দীন
স্বপ্নভেলা
সময়ের খুব কাছে শুয়ে আছে সভ্যতার সাদা লাশ
আকাশের মেঘ কিংবা রাতের গাঢ় অন্ধকার শেষ হয় তবু
পুরনো রেলগাড়ির মতো ধুকতে থাকা বোধ হোঁচট খাচ্ছে বারবার
সময় এবং সময়ের আগামী বয়ে চলে অবিরাম।
ভেসে আছে চিরায়ত স্বপ্নভেলা; সুন্দর আগামীর।
সংস্কার
বাগানের গাছগুলোর মতো ঝিমিয়ে যাবার আগে
বাগানের ফুলগুলোর মতো ঝরে পড়ার আগে
চাই, তুমি আর আমি মুখোমুখি দাঁড়াই
আমাদের মুখের দাগগুলো চিহ্নিত করি—
একে অপরে।
এভাবে নদীর গভীরে অথবা সহজ সমুদ্রপথে
কাঙালি মায়ের শাড়ি বদলাবার প্রয়োজনে
সাঁতরানো শুরু হয়। সাঁতরানো শুরু হয় উপর্যুপরি।
গৃহবাসী মায়ের আত্মা শান্তিতে থাকুক
সীমান্ত বাহিনীর কাঁচাবাজারে আঁচল উড়ুক পতপত—
আহ! আজীবন সংস্কারহীন থাকুক আমাদের বাঙালিপনা।
ফানুস
ইতিহাসের পাতা থেকে খসে পড়ে
জমিদার রাজা ও তাদের সরাইখানা
অথচ একদিন সেখানে কত সহজেই
বালিকারা গর্ভবতী হতো; মা হতো
সভ্যতার পুরনো পিরামিড টিকে আছে
কবি মিশে আছে শরাব ও নারীর গঙ্গায়
এখন সুনামির ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে দীর্ঘতম স্বপ্ন।
রঙের বড়াই
ইদানীং সবকিছুতেই শুধু রঙের ছড়াছড়ি
রং লেগেছে মাছে দেশিবিদেশি আনাজে
এখনকার ফ্যাশন গাঢ়রঙে ঝলমলে উজ্জ্বল
কালো চুলে লাল বাদামি ঢেউয়ের খেলা চলছে
শুধু রং লাগেনি মনে, পুড়ে যাচ্ছে অন্তঃপুর
ভালো আছ দেশ? রঙে রাঙানো তোমার কেশ।
পালাবদল
এভাবেই চলছে সব, নিয়ম অনিয়মে—সবটাই নিয়ম।
মুখরা শালিক বেঁধেছে বাসা, আপন নির্জনে
আমাদের সেইসব আপনজন, যারা মঙ্গলকামী সুপুরুষ
সাজানো কথা ও পঙক্তির মায়ায় এখন তারা ঊর্ধ্বগামী
বেহুঁশ উন্মাদের মতো এবাড়ি ওবাড়ি ছোটাছুটি।
করুণাময়, আজকের দিন কেবলই আমাদের, আমাদের
এসো, বিশ্বাস রেখো আলো ও অন্ধকারে।
খালেদ উদ-দীন কবি এবং সম্পাদক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : রঙিন মোড়কে সাদা কালো, ভাঙা ঘর নীরব সমুদ্র, জলপাতালে মিঠে রোদ। শিশুতোষ : সুপারম্যান। সম্পাদিত ছোটকাগজ : বুনন। তিনি সিলেটে বসবাস করেন।