(গুচ্ছ কবিতা)
বোররাক
তিলের মতো একবিন্দু গ্রাম
গ্রামে—স্তবকিত মানুষ
পোস্টকার্ডের ধারায় পাতলা আর খরখরে
চারকোনায় চারটি মিনার—মরচেপড়া, শ্যাওলাবৃত
কেন্দ্রে করি করি করেও গড়ে ওঠেনি ইবাদতখানা!
নদী নেই,
ভাতের সঙ্গে লঙ্কা বা লবণও নেই
পরাবাস্তব সুখের সুগন্ধে মাতোয়ারা গ্রামধর্ম
মাঘ মাসে শীত ফেটে চাঁদ ওঠে একবার-ই
সমবেত সারমেয় পাতাহীন অরণ্যকাণ্ডে—
ভয়ে চিৎকার করে
খড়েঢাকা প্রাঞ্জল শিশুরা
চোখ থেকে সরে যাওয়া আঙুলের ফাঁক দিয়ে দেখে—
এক জোড়া বোররাক ছায়া-প্যানেলের মতো উড়ে যাচ্ছে
নৈঋত থেকে ইশান অভিমুখে।
ফিকির
মৃত্যুমালা পরে বসে আছো কুলীন
সিলেবাস থেকে আগুনের আঁচ কেটে
মরমি সূর্যকে শান্ত হতে বলো।
যতই পাঁজর ভাঙো
হরির লুট কেবল স্বপ্নেই ফিরে আসে
নির্বিকল্প এক ঋতুর কাছে এসে
কেন তবে শোনাচ্ছ ভৈরবী ভাষণ!
ঝিঁঝিঁর পাহারায় বন্দি এই রাত
বড়ই পিচ্ছিল—
দু’মুঠো প্রেমের জন্য কত-না ফিকির পোহানো
তাকে ধরতে তোমার সকল রিপু দলবেঁধে স্বপ্ন দেখেছিল
অতীতে ঠিক যেভাবে লোকে সিনেমা দেখত!
গার্হস্থ্য
খানিকটা রস দিয়ে বশে আনা ভালো
তবু বিচিত্র রং ঘেটে বেদনায় এঁকেছ এই দেহ
ভালোবাসা—সে এক পৌরাণিক পরিহাস, পুরাতন প্রত্নকথা
নগদে কুশল কামনা করো—
যেন আমি শরবিদ্ধ হই;
তিল-তিসির গন্ধে ছুটে বেড়াই মাজার থেকে মাজারে।
সাঁওতাল থেকে শাবরীর ধারায় তোমাকে খুঁজি
ততদিনে বক্রনদী সরল গতিতে দাঁড়ায়
তোমার সকল স্নানে আমার গার্হস্থ্য ভেসে যায়
শরমে ধর্ম হারায়।
কার্তিকে খেত-খামার নিয়ে বেশি কথা না বলাই ভালো
বাকিটা বাঁক অন্ধ বিড়ালের মতো নিঃশব্দে পেরিয়ে যাব
যখন একগুচ্ছ চাঁদ নিয়ে জেগে উঠবে বিতর্কিত রাত!
জ্যোতি
ধুলোপড়া ধর্মগ্রন্থের মতো
অচেনা, অপাঠ্যই রয়ে গেলে।
কোলাহলে নির্জনবন্ধু বলে কিছু নেই,
যেখানে রান্নাঘর সেখানেই খিদের খয়রাতি
মহাশূন্যের মেঝেতে সামান্য শিশিরকণা হয়ে
লটকে আছি হলুদাভ সরিষার পাপড়িতে
উদ্ধার আসন্ন ভেবে,
সূর্যের সারাংশ হয়ে
না-হয় পাঠালে কিছু জ্যোতি!
জানো তো,
ব্রহ্মাণ্ডের সকল ফল-ই আসলে ফুলের কাছে ঋণী!
দ্বন্দ্বক্রীড়া
বর্ণনাত্মক বিলগুলো নক্ষত্র গোনার জন্য উপযুক্ত স্থান
ভেসে আছে, নির্বাচিত নীলের মতো
পাশাপাশি—আপন ভায়রা ভাই!
ভ্রমণে বিরহ জাগে এমন কিছু না-থাকাই ভালো।
বিচিত্র কুয়াশায় ভেঙে যাচ্ছে রেলগাড়ি
বগির বন্ধন ছিঁড়ে পদে পদে দাঁড়িয়ে পড়ছে
দুর্ধর্ষ ধূসর আতাগাছ!
ভাবনাকে পাত্তা দিলেই মাথায় চড়ে বসবে ভয়
বিলে সাঁকো নেই, শোনাতো সন্ত্রাসও নেই
যতটুকু ধ্বনি ততটুকু প্রতিধ্বনি।
নানা রঙের কাগুজে পাখির সঙ্গে
ওভারহেডেড হয়ে এসেছে
গহীন গুহাচিত্র থেকে গুম হওয়া পাখির দল।
প্রকৃত পাখিদের নিয়ে কার্যত এখানেই তৈরি হচ্ছে কনট্রাস্ট
থেকে থেকেই লেগে যাচ্ছে দুর্ভেদ্য দ্বন্দ্বক্রীড়া
শিকারি সংজ্ঞাহীন, প্যানিকে পর্যটক।
শিবলী মোকতাদির কবি, প্রাবন্ধিক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতকোত্তর। তিনি একজন উন্নয়নকর্মী। প্রকাশিত কাব্য : ধানের রচনা দিলে পত্রে, নিষিদ্ধ পুষ্টির কোলাহল, সোনার কার্তুজ, ব্যবহারিক বিস্ময়, দুর্ভিক্ষের রাতে, কায়া ও কৌতুকী, লুপ্ত সভ্যতার দিকে, অন্ধের ওস্তাদি প্রবন্ধগ্রন্থ : ছন্দের নান্দনিক পাঠ, ছন্দকথা। মুক্তগদ্য : রৌদ্রবঞ্চিত লোক। তিনি বগুড়ায় বসবাস করেন।