মাহফুজ রিপন

মাধাব মালঞ্চ কাব্য

বর্ষার খবর মাছেরা আগে থেকে টের পেয়ে যায়
কলমি শালুক মালঞ্চ শাপলা সতেজ হয়ে ওঠে।
শান্ত পুকুরের জলে খুশিতে খয়রা খায়―সরপুঁটি
মাছেরা বেরিয়ে আসে কচুরির দীঘলকেশ থেকে।

মোল্যাবাড়ির বালিহাঁস পাক্ পাক্ শব্দে ঘরে ফেরে
মেঘের গুড়ুম গুড়ুমে ঘাটে আসে মধাব মালঞ্চ কন্যা।

পিরিতের চিন্তা ছড়িয়ে পড়ছে―বিলপার সবুজ দিগন্তে
চারধার কালা হইয়া আসে চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যায়
ভেতরের তিনি তিড়িং বিড়িং ফাল পাড়ে, কী সে জ্বালা?

আষাঢ়ে দেওয়া ঝির ঝির শব্দে মাছেরে বোলায়
কন্যার মুখ, ঠোঁট, চিবুক, ডৌল সব ভিজে যায়।

কাঁপাস তুলোর মতো মাধব মালঞ্চ কন্যা নরম হয়ে ওঠে―
মানুষটা তার বিয়ান বেলা বেরিয়েছে এখনও ঘরে ফিরল না!

মইশাল বাতাসের তুফান বেগ
         পিরিতের মানুষের কষ্ট
                   মনের মানুষের জন্য প্রতিক্ষা।       

মধাব মালঞ্চ কন্যার কান্না ধুয়ে দেয় আষাঢ়ে মেঘ
মায়ার শরীর ভিজে আঙ্গুল ডেবে যায়―জলকাদায়
শাপলা ফুলের মালাগেঁথে সে আপন দুঃখ ভোলায়।

মাধব মনটা তার―পিরিতের দোলনায়
       কন্যা মনে মনে ভাবে―
             মানুষটা কি তার ভেতরের খবর জানে?

নমিনির স্বরকল্প  

সানাই বাজছে। বিয়ের সানাই। বিদেশি বর। কনে প্রাচ্যের মিতা। দু’জনের হেডফোন পিরিত। লোভ আর লাভে তারা মোহিত। কোটি টাকার কাবিন হলো মোবাইল থেকে মোবাইলে। বৌ হলো বাসর হলো না। সরা-কাবিন জীবনের গ্রিনকার্ড। বেওয়ারিশ আলতা স্নো লিপস্টিক। পোস্ট অফিসে যৌবন জোয়ার। লক্ষ টাকায়―নয়শো রোজগার। কোটি টাকার স্বরকল্প খেলা। নমিনির চোখে মুখে মাইমের হাসি। লোভে তাহার চোখের পাতা নড়ে, করোটিতে মৃত্যু চিন্তার ঘোর, সময়ের দ্বি-স্বত্তার নাচন। ভ্যানিটি ব্যাগ গড়ের ফাঁকা মাঠ, নমিনির হায়-হুতাশের পালা। হিসাবধারী বঙ্গদেশে ফেরে―প্রেম কখনো মরে না তার। শরীরটা আরো সিক্স প্যাক হয়।
 
বেদুইন লীলা 

কুমার-কে বুকে নিয়ে মধুমতীর কাছে মানু
তাহার তলপেটে জন্মেছে রুই-পুঁটি পিরিত

চোখবন্ধ করলেই স্মৃতির নৌকা পালতোলে
নদীবুকে পার হয় দুঃখি জনম বড় বেদুইন।

হিজল ফলের শব্দ কচুরিফুল ফোটা নন্দাই
বিয়ের চিন্তায় পাগল মানু যাযাবর জলাশয়।
 
পাখিজনম 

পৃথিবীর যেখানে উড়ে যাই না কেন
শরীরটা আড়াল থাকে হৃদয়টা নয়।

কাকের মতো তাপ দিতে থাকি
চিলের কাছে ছিনতাই হয়ে যাই।

টর্চের আলোর মতো সে ঘুরে তাকায়
চোখ বুজে―শুধু বাসা খুঁজতে থাকি।

অধরা মাধুরী 

বাদামি চোখ তেড়ে আসছে
তীব্র আলোর সে ছায়াকায়া।

টর্চের মতো মিট-মিটিয়ে
বাড়ালো তার মায়ারখেলা।

মেঘের কান্না রুপসী ঝর্ণা
চিৎ সাঁতারের―মাধুকরী।

প্রেম আকাশ রাজাধিরাজ
হারিয়ে ফেরে―জমিদারি।


মাহফুজ রিপন কবি, কথাসাহিত্যিক এবং সম্পাদক। জন্ম : দক্ষিণ চণ্ডিবরদী, উপজেলা : মুকসুদপুর, জেলা : গোপালগঞ্জ।  প্রকাশিত কাব্য : বিসর্জনের নিশিকাব্য, জলকাদার ঘ্রাণ, করমজলের নাইয়া, মাইদ্যানের দুঃখ, সাঁইকাব্য (সংকলন), গল্প গ্রন্থ : মাড়ভাতের গল্প, সম্পাদক : ব্যাটিংজোন (ছোটকাগজ)। পেশা : অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। 

menu
menu