[ গুচ্ছ কবিতা ]
ভুলে যাই
তারাদের কথা ওঠে—
ভুলে যাই
একদিন আমারও ছিল বাড়ি
ছোট ছোট পলপলা, কাকরোল ফুলের পাশে
আব্বার নামাজ
মাছের অশ্রুত চোখ
নির্জন খোশকার গাছ
পাতার ফাঁকে ফাঁকে
পাখির হদিস—
ভুলে যাই—
চরের নদীর কাছে হাঁটুপানি
দুইটা ঘোড়া
একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভাবছে দৌড়
অনন্ত পাটখেত
মাছের ডিমের মতো ফুটছে তারা—
ধুলাচূর্ণের কথা ওঠে—
ভুলে যাই
একদিন আমারও ছিল বাড়ি
রেহানা পারভীন
জীবন মানে যেন রেহানা পারভীন
সে গেছে টমেটোর মতন লাল হয়ে
তাকেও জানে মেঘ ভুলবে একদিন
নীরবে দূরে গেলে মানুষও মনোলীন
শূন্য মাঠ ভাসে বাতাসে পরাজয়ে
জীবন মানে যেন রেহানা পারভীন—
তবে কি এ জীবন রেহানা পারভীন?
সময় ফুরে গেলে শাওনও যাবে ক্ষয়ে
তাকেও জানে হাওয়া ভুলবে একদিন—
আমার প্রতিবেশী আনোখা চিরদিন
কোথাও দূরে তার নৌকা যায় বয়ে
জীবন মানে যেন রেহানা পারভীন
ও হাওয়া উড়ে যাও, পাতায় কেঁপে ক্ষীণ
হাওড়ে ধানপাশে চোখের সবিনয়ে
তাকেও জানে মন ভুলবে একদিন
কসম মার্মারি আফরিঁ আফরিন
আঙুর বাগানের নির্জনতা সয়ে
জীবন মানে বলি রেহানা পারভীন
তাকেও জানে মন ভুলবে একদিন
মরে গেলে
মরে গেলে—
সন্ধ্যার মাঠ থেকে ফিরে আসবে
নির্জনতার হাওয়া
দূরে
একলা বাড়ি
বকরিরা চড়ে বেড়াচ্ছে কোলায়
ছোট ফুলটার গন্ধে
মিঠাই হয়ে আসছে বিকাল
আরেক বার
দেখতে আসিও, সোনা
যাচ্ছি বলেই
কখনও শেষ হয় না ফিরে আসার পথ—
মরে গেলে
মরে গেলে—
দুপুরের কোমল গান্ধারে
খালি মনে হবে
তোমার মুখখানা
যদি দেখতে পেতাম
আর একবার—
মুসলমানের ছেলে
তোমাকে যেখানে দেখি সেখানেই ভালো লাগে খুব
তুমি যেন তরুণের মনে রাখা পয়লা খতম
কায়েদা পাঠের শেষে যুবা কোনো হুজুরের কাছে
সহজে বানান করে পড়া তুমি সেপারা প্রথম—
বলেছ স্বামীর কথা তিসির ফুলের মতো রোদে
এখনো হ্যাঙারে ঝোলে পুরানা সে ভাঁজ পড়া শাট
তোমাকে মুড়িয়ে রাখি প্রেম আর চিরমমতায়
যেভাবে নতুন বই শৈশবে করত মলাট—
কী যেন মহিমাগঞ্জ কী যেন ইশটিশনে রেল
সুগার মিলের পাশে ধূসর ঘরের টিনে হাওয়া
যে যায় কোথাও চলে কোনোদিন আসে না ফিরেও
মানুষ প্রেমকে ভাবে যেন তেন ফল আধখাওয়া—
পানির পিপাসা তা-ও পানি খেলে হয়ে যায় শেষ
তোমাকে পিপাসা লাগে তুমি যেন কাছের বিদেশ—
হাসান রোবায়েত কবি। প্রকাশিত কবিতার বই—ঘুমন্তমার্কারি ফুলে, মীনগন্ধের তারা, আনোখা নদী, এমন ঘনঘোর ফ্যাসিবাদে, মাধুডাঙাতীরে, তারাধূলিপথ, মোহাম্মাদ (সা.), রুম্মানা জান্নাত, মুসলমানের ছেলে। তিনি ঢাকায় থাকেন।