গুচ্ছ কবিতা ♦ গিরীশ গৈরিক

অন্ধকারপৈঙ্গল-১

একটা মোমবাতি আত্মনিমগ্ন হয়ে জলের ভেতর জ্বলে যাচ্ছে
সে যতটুকু পারে ততটুকু অন্ধকার শুষে নিচ্ছে।

অন্ধকার শুষে নিলে আলোর জন্ম হয়।
যেভাবে মাতৃগর্ভের শিশু মায়ের নিঃশ্বাস শুষে নিয়ে—
                বড় হয়ে ওঠে।

আমার একটা অন্ধকার মোমবাতি আছে
মোমবাতিটি আলোর মাঝে জ্বেলে দিলে—
            অন্ধকার ঘনিয়ে আসে।
অনেকেই আমার মোমবাতির নাম দিয়েছে ধর্ম
কেউ দিয়েছে কবিতা
আবার কেউ বলেছে, ‘দূর হ হতছাড়া”।

অন্ধকারপৈঙ্গল-২

ঘুড়ি উড়ে যাচ্ছে এক অন্ধকার থেকে অন্য অন্ধকারে—
এক দেশ থেকে অন্য দেশে।
আকাশহীন তুমি দেশহীন আমি
আমাদের ঘোরাঘুরি এক সভ্যতা থেকে আরেক সভ্যতায়—
এক আলো থেকে অন্য আলোয়।

আমরা এক দিগন্তে উদিত হই
অথচ সব দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ি।
আমরা ঘুড়ি হয়ে ঘুরি তোমাদের চিন্তার অন্ধকারে,
যে ঘুড়ির লাটাই সকলেই তার সন্তানের হাতে দিয়ে যেতে চায়
অথচ কেউ দিয়ে যেতে পারে না!

অন্ধকারপৈঙ্গল-৩

বরের খবর নেই
ঘর তাই জানালাবিহীন।
বাতাস এসে লাশ হয়ে শুয়ে আছে;
তাই ভালোবাসার শরীরে মৃতদেহের গন্ধ।

এক অন্ধবলিকা সেই ঘরে কনে হয়ে এলো
তখন কনকনে শীত।
সেই শীতে হিমালয়কে সঙ্গী করে—
বর ঘরে ফিরে দেখে, কনে অমাবস্যার রাত হয়ে শুয়ে আছে।

গর্ভধান

হলুদ ধানের বুনো গন্ধে কৃষকেরা ঘুমায় 
ঘুম থেকে জেগে ওঠে তাঁরা—শিলাবৃষ্টির শব্দে 
চোখ মুছে তাঁরা দ্যাখে—এ যে শিলাবৃষ্টি নয় 
                               বুলেটবৃষ্টি।
তারপর রক্তাক্ত ধানের শবদেহ ঘুমিয়ে থাকে ফসলের মাঠে 
এরপর আসে শবচোর—সব শব চুরি হয়ে যায়। 
আর সেই সকল শববাহক সবুজ শিশির হত্যা করে 
হেঁটে যায় সীমান্ত পেরিয়ে—অন্ধকার ব্যারাকে  
অবশেষে শূন্য হয়ে পড়ে থাকে প্রসূতি মাঠ।


গিরীশ গৈরিক, কবি, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক, বাংলাদেশ

menu
menu