দুটি কবিতা ।। ফারহানা ইলিয়াস তুলি

জন্মখাতার মায়াপৃষ্ঠা

ঋণটুকু স্তরে স্তরে সাজানো থাক। পাতার সাথে
বৃক্ষের পাওনাগুলো নিয়ে কথা বলতে বলতে
পঠিত হোক দুনিয়ার সকল হিসেব-নিকেশের খাতা।
অথবা যারা ভালোবাসার কথা বলে মাটি থেকে
পুষ্প ও প্রদীপ কুড়োয়—
      তাদের জন্যে বরাদ্দ থাক সঞ্চিত সকল
      প্রেম। কদিন এই পৃথিবী মায়াময়ী হবে— 
      এমন প্রত্যাশায় আমরা আঁকি রাখিবন্ধন।

আলোর জন্যে সম্মিলিত প্রার্থনা হোক।
কারণ আমরা তো জানি— 
   সন্ধের বাতিগুলো একসাথে জ্বলে উঠলেও
   মানুষের মনের বাতিগুলো একসাথে জ্বলে না!

প্রাচীন পরিচিতিসভা

হাত তুলো, এবং নিজেদের নাম বলে পরিচয় দাও!

বাংলার অধ্যাপক দীপেশ স্যারের প্রথম ক্লাসটি
এভাবেই শুরু হয়েছিল। সেই থেকে আমি দিয়েই
যাচ্ছি আমার পরিচয়। কতবার বাড়ি বদলেছি,
কতবার দেশ, অথবা কতবার পাসপোর্টের রঙ,
        সবই বলতে হচ্ছে আমাকে।

অথচ জলেভরা আমাদের একটি পারিবারিক পুকুর
ছিল। সেখানে ফোটে থাকা কচুরিপানার ফুল দিয়ে
দুল বানাতে বানাতে আঙুলের সাথেই গড়ে তুলতাম
সখ্য। আর ভাবতাম দিন যাক—বয়স বাড়ুক! 
এভাবে আমার আগেই বেড়েছে পৃথিবীর বয়স।
বৃদ্ধ হয়েছে সূর্য। যে পরদেশি চাঁদের পাশে দাঁড়াই
তার বয়সও আজ অজানা মনে হয়।

আসলে দু’হাত তুলেই মানুষ সবসময় তার পরিচয়
দিতে পারে না। যেমন অচেনা থেকে যায়;
ধান রোপণের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া
মানুষের আঙুলে লেগে থাকা ভাদ্রের কাদার দাগ।


ফারহানা ইলিয়াস তুলি, কবি, যুক্তরাষ্ট্র

menu
menu