তিনটি কবিতা ।। হাসান হাবিব

নির্জন পথের মোরগটি 

জানালায় ঝুলিয়ে রাখা নির্জন পথের
মোরগটি
দুরন্ত পিপাসায়
রঙিন তাবুর কাহিনি শোনাত রোজ

তার দীর্ঘ নির্বাসনে
বারবার পেয়েছি শুভেচ্ছার সুতীব্র আলো
পটচিত্রে উষ্ণতায় লাল হয়ে ভাবি
২৩ অগ্রাহায়ণ ছিল মোরগটির তেত্রিশতম
মৃত্যুবার্ষিকী

করতলে ক’বছর গহিন ঘরে
পাখিরা গান শোনায়
তার স্মৃতিসুখে সুর তোলে কত যে চন্দ্রদিবস

আজ আংটি বদলের কাহিনি নিয়ে
যে শিশুটি আসে
তার বাড়ি যাওয়া হলো না
পাখি আর মোরগের শোকার্ত সম্ভাষণে

স্পর্শের মুখমণ্ডল

যদি নক্ষত্র ধরি 
তাহলে দুঃখ পাবে
একটি আঙুলের শব্দ বরং 
                   তোমার কাছে থাক।
কাশবনের সেই অবিকল উন্মূল 
আঙুলটি
তোমাকে দিলাম
শাদা শালিকের পালক ছুঁয়ে দীর্ঘ বছর
বুকের মধ্যে রেখেছি
                       আঙুলের শব্দ
এই আঙুলের শব্দটিই
তোমাকে দিলাম।
সেই অবিকল ভক্তবিলের
বটের ছায়াটিও তোমাকে দিলাম।

আমি তোমার চোখ থেকে নেমে যাচ্ছি
                                আয়নায়—
যে কামনাটি রাখা আছে 
তার কিছুদূর ভক্তবিল
আমি এখানে থাকি :
সেই স্কুলব্যাগ, জুতা—এক ফিতা ছেঁড়া 
তোমরা তিনটি মেয়ে দেখে হাসছিলে
ঠিক তার মাঝ দিয়ে আমার নৌকাটি তুমুল যায়
তুমি ঝুঁকে দেখছিলে
           সেই ছেঁড়া ফিতাটি
অবশ্য তারচেয়ে বেশি হাসছিলে।
আর সেদিন
জামার পকেটগলেপড়া গোলাপের
পাপড়ি দেখে, তুমি ঠিক আঁতকে উঠেছিলে
মনে পড়ে?
ধীরেন স্যার সেটি মেপেছিল বাটখারায়
সেদিন সেকি বেত্রাঘাত দেখে, নাক সিটকে
পালিয়েছিল রুবি নামের মেয়েটি
তাকে আর দেখিনি কোনোদিন 

দীর্ঘ বছর গল্পটি আমি ছিঁড়ে রেখেছি
বামপকেটে, হীরকময়
সেই গল্পটিও আঙুলের সাথে
           তোমাকে দিলাম।

যদি নক্ষত্র ধরি তাহলে দুঃখ পাবে
একটি আঙুলের শব্দ বরং 
                   তোমার কাছে থাক।

ঘড়ির টেবিল

ধরো, তোমার চোখে আতর ছড়িয়ে নৃত্য করা যায়
ঘষে ঘষে
নদীপুরাণ মনভোলানো
গল্প করা যায়;
জানো তো,
কয়েক ফোঁটা ভালোবাসায় হেসে যায় 
আঙুলের লাঙলনাচ 
খোঁপাটির জ্বলজ্বলে মুখ।

আজ ধরো, আমি মনের গোপনে তান্ত্রিক বদনে
মেপে যাচ্ছি তোমার যোনির সাইকো-বিষাদ
আর কিছু বিষণ্নতা ভেদ করে যাওয়া 
                   জানালার কোলাহল

ইচ্ছেগুলো তোমার চোখে
কেঁপে ওঠে লাঙলসুদ্ধ?

আজ যদি নদী পেতাম
ভেঙে দিতাম ঘড়ির টেবিল থেকে মাছের কষ্টগুলো...


 হাসান হাবিব, কবি ও প্রাবন্ধিক, বাংলাদেশ

menu
menu