গুচ্ছ কবিতা ।। মাসুদার রহমান 

বাঘসমগ্র

ডোরাকাটা সন্ধ্যেরা হামাগুড়ি দিয়ে নেমে এসে
হিংস্র থাবায় আঁচড় কেটেছে অন্ধকারের পিঠে
জ্বলে ক্ষতের জোনাকি

অনুদিদি, ভর সন্ধ্যেবেলা
একাকিত্ব
তোমার ভরাট বুকে স্তন্যপান করে

দুলাভাই যাক দূর গঞ্জের হাটে

এমন সন্ধ্যেরাতে লোকালয়ে বাঘ আসে
বাঘ আসে
কেউ তো দেখেনি খুলে চাঁদের উল্টোপিঠে
দগদগে ডোরাকাটা রহস্যের দাগ


ধানখেত আল বেয়ে যেই সে নেমেছে একা ঢালের গভীরে
তখনি তাকেও এক জাপটেছে ডোরাকাটা পতন গভীর

দেখেনি তা কাকপক্ষী...
ধানখেত?
সে দেখেনি। সে তো বড় মৌন উদাস

দূরের বিন্দুগ্রাম সে জানেনি নির্জন মাঠপ্রান্তে একটি দুপুর
কিভাবে বাঘ্র হলো; কাকে খেলো, কে এলো 
প্রেতনি হয়ে গ্রামে।

মেয়েটিকে বাঘে ধরেছিল
তবু হাওয়া বয়ে গেছে বটের তলায়
হুকো লুপ্ত হলেও তা বিড়ির ধোঁয়ায়; পিঁপড়ে কথায়...

বাঘ সে নমস্য জাতি; ডোরাকাটা
মেয়েলোক ফেল্ গে ভাগাড়ে


কাগজের বাঘ বাতাসে নড়ছে

দেয়ালে টাঙানো বাঘের পোস্টার
সূর্য ডোবার মুখে করে তো 
পোড়বাড়িটির কাছে সত্যিকারের বাঘ লে

দাদা আমলের গাদা বন্দুক দেরাজে রয়েছে রাখা
তার সাথে জড়িয়ে রয়েছে
নিকট অতীত ঘেঁষা
গ্রামময় বাঘের কাহিনি

এই বাঘ দেয়ালে টাঙানো তবু লাফ দিয়ে ঘাড় মটকাবে!

নির্জন বাড়িটার পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে
ভয়
ভয় করে


‘বাঘের পায়ের ছাপ!’ শুনে ময়েটি বললো—

এখানে আবার বাঘ, হয়তো বিড়াল এসেছিল 

একটি বাংলোবাড়ি। আর কোন বাড়ি নেই
তাকে ঘিরে আদিগন্ত 
দুপুর ও ধানখেত

বাতাস দুলিয়ে যাচ্ছে হলুদ শরীরে কালো ডেরকাটাগুলো


হাটের ভিড়ে আমাদের পিতামহ হারিয়ে ফেলেছিলেন 
তার বাঘরাঙা ছাতা 
আর সেই হাট থেকে এমন বিষাদ নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন 
যেন, তার মাথা হারিয়েছে
তারপর দীর্ঘ সময় ভিজে পুড়ে গেছে তার ছাতাহীন সংসার

কোন এক তুমুল শ্রাবণ দিনে পিতামহ বাড়ি ফিরে দেখেন
হারিয়ে যাওয়া সেই ছাতাটি দাওয়ায় 

কাছে যেতে ছাতাটি হালুম হুলুম; গর্জে উঠছে


মাসুদার রহমান, কবি, বাংলাদেশ

menu
menu