৬টি কবিতা

মানুষ বড় কম মানুষ

মেহেরজান, পাহাড়ের মেমব্রেম খুলে দেখো
শিয়রে নিয়ে ঘুমাচ্ছে বিরল ধারাপাত
দেহের বাহনে পৌঁছেছো বলে ওরা তোমাকে দেখতে পায় না কভু।
তাই, সমুদ্রের ঝাঁপটানো আর বুকে না রেখো।
অচেনা এক ঘাসফুল ফোটে চেনা নদীর ধারে,
কিছু পথিক নাম ভুলে যায় তার।
প্রোপার নাউনের মোহে কারও কমন নাম থাকে না মনে
মানুষ এখন বড় কম মানুষ।
কিছু প্রেমিক আরও বেশি প্রেমিক হতে চায়
যেন সূর্য আরও বেশি তীব্র আলো—
মেহের, চেনা ফুলের গন্ধের পাশে
আমাদের ঘুমিয়েই থাকাই ভালো।
কেননা, মানুষ এতো অসহায়,
দরজা, জানলা বন্ধ করে ঘুমায়।
সাহসের ওপর ভয়ের আব্রু ঝুলে থাকে চির
মেহেরজান, ফিরিয়ে দেয়ার আগে ভাবো,
উন্মূল সূর্যটার দিকে আমরা যেভাবে যেভাবে তাকাবো—

সাদামাটা গল্প

অতীতের গল্পটা সাদামাটা
এখানে হাঁসেরা ডিম পেরে যায় খড়ের গাদায়
অস্ফুট কাতরতার পাশে নীল আলিঙ্গন
তবু সাদা শাপলার দিকে মুখ তুলে চাইনি কখনো
ছুঁয়ে দেখিনি নরোম সুখ, পরম পারাবত।
কেননা, আমরা নিয়ত দুঃখী আম্মার পাশে দাঁড়াই 
চিটা ধানের মতো দুঃখ উড়াই, দেখি সঞ্চিত সুখের স্বপ্ন। 
অতীতের ছবিটা এমন সাদা-মাটা
সেখানে তুমি দুঃখ দুঃখ সুখের অনুভব,
সব পেয়েও একটা দুঃখী শৈশব।

আনন্দধারা বহিছে ভুবনে

আশ্বিন চুপিসারে হাসিছে
যতটুকু পেয়েছি আনন্দম
দ্বিধা থেকে সরে চলে এসে হৃদয়ের কাছে
চলো তবে শুই শিরীষগাছের নিচে
বাতাস হায় হায় কার্তিক চলে যায়
চোখ ভর্তি চুমু নিয়ে কে পালায়।
তোমাকে ভালোবাসি ফুল
পৃষ্ঠা ওড়ে ওড়ে সাঁওতালি মেঘের দেশে
ওগো ঝুম ঝুম নদীর দুকূল—
মিলনের বাতাসে চোখ বুজে যায় আবেশে
যতটুকু তারে পাব ততটুকু বেঁচে রবো জীবনে
আহা! আনন্দধারা বহিছে ভুবনে…

সবুজ ওড়না

রাত হয়ে যায় গল্প বলার ছলে
আমাদের রাত পছন্দ ছিল,
গায়ে মানুষের গন্ধ হুল ফোটায়
পারাবত এক্সপ্রেস বেহুঁশের মতো তড়পায়। 
আমাদের কোথাও যাওয়ার কথা ছিল?
একদিন—
মেঘ নেমে এসেছিল মরিচ ক্ষেতে
আঙিনায় দড়িতে শুকোনোর কথা ছিল
সবুজ ওড়না।
তুমি হাসছো, কুসুম হাসছে…
আমি ভালোবাসছি রাত আকাশ
আমি কেঁদে বেড়াচ্ছি সবুজ ওড়না।

চোখ

এ জীবন বদনালোর জন্য কি কি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সেটা জানার জন্য খোদার দরবারে আপনি নক করলেন। খোদা বললো, একটা নতুন জীবন পেতে হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আপনার দু’টি চোখ থাকবে না। 
আপনি তাতেই রাজি হয়ে গেলেন। নাইবা থাকলো দুটো চোখ তবুও তো ত্রিশ বছর পিছিয়ে একটা নতুন জীবন।
আপনার চক্ষুবিহীন নতুন জীবনে রাজি হওয়া দেখে আপনার ওপর খোদার দয়া হলো। যেহেতু নতুন জীবন দেয়ার কোনো বিধান নেই সেহেতু সে আপনাকে আরও দুটো চোখ উপহার দিয়ে ফেরত পাঠালো।
নতুন দুটি চোখ রাখার জায়গা না পেয়ে আপনি তা হৃদয়ে রেখে দিলেন।
চারটা চোখ নিয়ে এসে দেখলেন—পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব কেউ আপনাকে আর দেখতে পাচ্ছে না। আর আপনি তাদের এমনভাবে দেখতে পাচ্ছেন যে—যদি তারা জানতো এতোটা নির্লজ্জ হতো না।

কে?

ছোট ছোট সে হাড়িতে 
আনাড়ি হাতে—
রাঁধা হতো বিথানে বাহারে শৈশবের ফুল।
সে হাড়ি কেড়ে নিলো কে?

আলোর ইশকুল থেকে ফিরে 
রঙিন ফিতেয় বাঁধা চুল উড়িয়ে
পথে কত হোলির ধূলির আবির
পায়ে মেখ, গায়ে মেখে
এত দূর এলে—

এ হাতে অত শত বড়ো বড়ো
হাড়ি তুলে দিলো কে?


• অভ্র আরিফ, কবি, ঢাকা

menu
menu