গুচ্ছ কবিতা ।। সুজন আরিফ

সম্মানিত ভোর

কাঙ্ক্ষিত প্রণয়ের আগমনে
কিছু মানুষের বিছানায় স্বেচ্ছায় ঢুকে পড়ে
উত্তাল সমুদ্রের পল্লবিত ঢেউ
বিস্মিত নয়নে হারিয়ে যায় দূর থেকে দূরে
অবারিত প্রাণের সঙ্গমে।
অথচ আমার রাতগুলো কেবলই আতঙ্কের
দস্যুর মতো বারবার লুটে নেয় শ্রমে কেনা ঘুম
পুরো ঠিকানাই যেনো দুরারোগ্য ব্যাধির আবাস
নিদ্রার বিপরীতে দুঃসহ স্মৃতির কোলাজ।
ক্ষরণের পাতাগুলো একে একে খুলে যায়
নিভে যায় অতিপ্রিয় ভরসার আলো
বিক্ষত পাহাড়, শীর্ণ নদী আর ফেলে আসা রুগ্ন জনপদ।
ক্ষুব্ধ চোখে ধীরে ধীরে নেমে আসে ক্লান্তির আবেশ
অথচ দরোজায় কড়া নাড়ে সম্মানিত ভোর।


প্রজন্ম

ক্ষুব্ধ সময়ের মাতাল স্রোতে ভেসে যায় সবুজ প্রাণ
চারদিকে কালো মুখের অবাধ বিস্তার
খুনী কেলেন্ডার তেড়ে আসে ভয়াবহ মহামারীর বেশে
অথচ টিকটক, লাইকি আর পাপজিতে
দস্যু প্রজন্মের অবুঝ আত্মাহুতি।
অসমাপ্ত আবিষ্কারে কোনঠাসা যুক্তি
চারাচর জুড়ে অর্থহীন ভক্তির অনন্ত টহল
মুখে মুখে আজরাইলের উলুধ্বনি
রাতের চিৎকারে মিশে যায় বিপ্লবী কবিতার আর্তি
মুক্তি কোথায়?জানেনা কোনো অচল বিবেক।


ঘৃণা

ভস্ম হওয়ার আগে
আরও একবার এঁকেছিলাম
দুর্বিনীত মুখের ছবি।
পায়ের ছাপে খুঁজে নিও
একরোখা প্রাণের বিস্তার।
ঘৃণাই আমার প্রিয়াসম
কোমল রাতের শেফালী।
নির্দ্বিধায় মেতে উঠি দারুণ অভিসারে।।


প্রাণের পাঠ
         
মাঝে মাঝে প্রিয় সন্ধ্যেটাও ফুঁসে ওঠে
সংসারের যাবতীয়  নিপুণ জাল
মাড়িয়ে দেয় তুমুল ক্ষোভে
সভ্যতার জয় নিয়ে এলোমেলো বাজি ধরে
বাজি ধরে আকাশের অমরত্বে।
আমিও কম নই
মুহূর্তেই বুঝে যাই মাতালের ভাষা
নিয়ে যাই শিল্পের মাংসল রঙিন গলিতে
আপাতত চোখের প্রাসাদেই হোক
ঝলমল প্রাণের পাঠ।  

 

যুদ্ধজয়ের গল্প

যুদ্ধজয়ের পর দূ্র্ধর্ষ বলে আর কিছু থাকে না
দিনের চেয়ে অধিক আলো নিয়ে
দরোজায় মহিয়ান রাত্রিদের মেলা
খোঁপায় উৎসবের ফুল,চোখে-মুখে তৃপ্তির ঝলক 
হতাশারা পালিয়ে যায় একরোখা আঁচলের উড়ানে।
তলপেটের তৃপ্তি নিয়ে আনন্দে ঘুমোতে যায়
বহুদিনের অভুক্ত চাঁদ
আকাশের মালিকানায় আজ আর কেউ নেই
নতুন ভোরের স্বপ্নে টগবগে প্রেম
ক্লান্তিতে নুয়ে পড়ে সুখ নিদ্রার কোলে।
যুদ্ধজয়ের গল্পগুলো অক্ষয়, অমর।


সুজন আরিফ, কবি ও সহকারী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম

menu
menu