গুচ্ছ কবিতা ।। গিরীশ গৈরিক

জীবন

তোমার চোখে অশ্রু জমতে জমতে সরোবর হয়ে গেলো
সেই সরোবরে আমি ব্যাঙ হয়ে ডুব দিলাম
তারপর ডাকতে শুরু করলাম—ম্যাও ম্যাও ম্যাও।
আমার ডাক শুনে তোমার বাড়ির বিড়ালগুলো বাঘ হয়ে গেলো
আর টিকটিকিগুলো হয়ে গেলো কুমির।

অবশেষে কুমিরগুলো তোমার চোখের সরোবরে নেমে আমাকে খেয়ে নিলো
ওই বাঘগুলো তোমাকেও খেয়ে ফেললো।

এভাবে প্রকৃতিতে একজন অন্যজনকে খেয়ে বেঁচে থাকে
বেঁচে থাকার এই ধ্যানী শিল্পই রহস্যময়—আনন্দময় প্রাণ।

বেদনা

সম্মুখে ক্যানভাস রেখে নত হয়ে বসে আছি
বসে আছি এই ভেবে—
ক্যানভাসে কীভাবে আঁকতে পারি আগরবাতির গন্ধ
কিংবা মোমবাতির কান্নার শব্দ।

নিজের স্মৃতি দিয়ে নিজেকে লিখতে গিয়ে মনে হয়
এই শব্দ এই গন্ধ জীবনের শিল্প আলোড়নকে নিষ্প্রভ করেছে।

হয়তো-বা এই ব্যর্থতা শিল্পকে মহৎ করে।

সত্তা

একদিন নিজেকে ঘুম পাড়িয়ে দেখলাম
তারপর বুঝলাম ঘুমন্ত গৈরিক কতটা নিঃস্ব কতটা অসহায়!
সেই থেকে আমার শরীরে মৃত মানুষের ঘ্রাণ
সেই থেকে আমাকে যে স্পর্শ করে সে মৃত হয়ে যায়
কিংবা আমি কোনো মৃতকে স্পর্শ করলে সে জীবিত হয়ে যায়।

আমি এখন জন্ম ও মৃত্যুর অতীত।

বাংলা কবিতা

ডালিম দানার মতো রক্তাভ হৃদয় নিয়ে দেখলাম
কৃষ্ণচূড়া পড়ে আছে পথে প্রান্তরে।
এই পথে সহস্র বছর ধরে হেঁটে যাচ্ছি
তবুও বুঝিনি রক্ত কেন লাল হয়!
কিংবা কালো চুল কীভাবে সাদা হয়ে যায়!

আমি একজন সবুজ চুলের কবিকে চিনি
আমি একজন সাদা রক্তের কবিকে চিনি
যার নিঃশ্বাস নেবার জন্য কোনো নাক নেই
খাদ্য গ্রহণের জন্য কোনো মুখ নেই
তবুও সে দিব্যি বেঁচে আছে সহস্র বছর।

ফসল

লাঙ্গল ও লিঙ্গের কোনো বিভেদ করতে নেই
তারা চাষাবাদ করতে ভালোবাসে
কোনোটাতে জমি—কোনোটাতে যোনি। 

দুটিতেই ফলে ফসল।
হে অন্ধ প্রকৃতি—আমার তো লাঙ্গল নেই
        আমার তো লিঙ্গ নেই
আমার আছে কলম—আমার আছে কবিতার খাতা। 

হে ভালোবাসার প্রকৃতি—তুমি আমার কলমকে 
            লাঙ্গল করে দাও
            লিঙ্গ করে দাও।

হে বিদগ্ধ সময়—তুমি আমার কবিতার খাতাকে 
            জমি বানিয়ে দাও
            যোনি বানিয়ে দাও।

আমার এই প্রার্থনা তোমার চরণতলে সাব্যস্ত হোক।

ঢাকা

menu
menu