মুক্তবাণিজ্যের মুক্তকচ্ছ

The negotiations to create a free-trade area between the US and Europe or Pacific (except for China) are not about establishing a true free-trade system. Instead, the goal is a managed trade regime to serve the special interests that have long dominated trade policy in the West.
            —নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ

বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির ময়দান সরগরম। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ যেকোনো মুহূর্তে শুরু হয়ে যেতে পারে—এই আশঙ্কায় বুক দুরুদুরু সংশ্লিষ্ট সবার। চীনের সঙ্গে মার্কিনিদের বার্ষিক বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ২৮০ বিলিয়ন ডলার। ঘাটতির পরিমাণ আগামীতে কমার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। ট্রাম্প সাহেব প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তারস্বরে আর্তনাদ জানিয়েছিলেন, China is killing us, absolutely killing the United States on trade. 

অবস্থা বেগতিক দেখে ২০১৮ সালে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাওয়াই হিসেবে অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাত আমদানির ওপর শুল্ক হার বাড়ায়। এর আগে জানুয়ারি মাসে তারা আমদানিকৃত সোলার প্যানেল ও ওয়াশিং মেশিনের ওপর শুল্ক হার বাড়ায়। পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মার্কিন কমলার জুসের ওপর শুল্ক হার বাড়িয়ে দেয়। এভাবে শুল্ক হার বাড়ানোকে পণ্ডিতরা ইকোনমিক প্রোটেকশনিজম বলে থাকেন। 

শিল্পোন্নত পশ্চিমা বিশ্ব একদিন পৃথিবীজুড়ে মুক্তবাণিজ্য ও বাণিজ্য উদারীকরণের (trade liberalization) সবক দিয়েছে; প্রতিষ্ঠা করেছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। তারাই আজ ‘রক্ষণশীল’ (protectionist) এজেন্ডা বাস্তবায়নে উঠে পড়ে লেগেছে। কেননা পাশার দান উল্টে গেছে। এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো শিল্পপণ্য উৎপাদনে ইউরোপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাদের বহু কারখানা। পাশ্চাত্যে বাড়ছে নাগরিক অসন্তোষ। 

বিশ্বায়নের তল্পিবাহকরা আজ তাই চাইছে ব্রেক্সিট, বলছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট‘। মুক্তবাণিজ্য ও বিশ্বায়নের ফজিলত কত প্রকার ও কী কী তা তোতাপাখির মতো আওড়ানোর দিন শেষ। পাল্টা চিন্তাস্রোত বইতে শুরু করেছে। সচেতন মানুষ জানতে চাইছেন অবাধ বাণিজ্য আসলে কতটা অবাধ। 

নোবেল বিজয়ী ও বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ তার বিখ্যাত বই গ্লোবালাইজেশন এন্ড ইটস ডিসকনটেন্ট-এ দেখিয়েছেন, শিল্পোন্নত পশ্চিমা দেশগুলো প্রধানত রপ্তানি করে অটোমোবাইল, ভারী যন্ত্র ইত্যাদি শিল্পপণ্য। তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে চাপ দেয় এসব পণ্যের বাজার পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর জন্যে উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য। অথচ উন্নয়নশীল দেশগুলো যখন তাদের পণ্য (কৃষিপণ্য, বস্ত্র) ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে বিক্রি করতে চায় তখন পশ্চিমা দেশগুলো নানারকম ট্যারিফ ও শর্ত আরোপ করে। এর কারণটা সহজেই অনুমেয়। 

ইউরোপ-আমেরিকা তাদের কৃষিতে বিশাল ভর্তুকি দিয়ে থাকে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে যখন তারা বাণিজ্য চুক্তি করে তখন এই বিষয়টি তারা বেমালুম চেপে যায়। আলোচনার টেবিলেই উঠতে দেয় না। 

তাদের এই দ্বিমুখী আচরণ কেবল এটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ইউরোপ আমেরিকা প্রায়ই উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সবক দেয়ার চেষ্টা করে যে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান, তেল-খনিজ কোম্পানি, ব্যাংক ইত্যাদি বেসরকারিকরণ করলে তোমার বহুত ফায়দা হবে। 

অথচ আজ পর্যন্ত কোনো অর্থনৈতিক পরাশক্তি তার উত্থানের সময় মুক্ত বাজার নীতি অনুসরণ করেনি। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ হা-জুন চ্যাং মুক্তবাজারের সপক্ষের অর্থনীতিবিদদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘Free trade economists have to explain how free trade can be an explanation for the economic success of today’s rich countries When it simply had not been practiced very much before they became rich.’ 

আসলে অর্থনীতির পাঠ্যবই ও আইএমএফ-এর প্রতিবেদন ছাড়া পুঁজিবাদের মুক্তবাজার মডেলটির বাস্তব অস্তিত্ব কখনোই ছিল না। 

ব্রিটেনের কথা ধরা যাক। বিদেশি প্রতিদ্বন্দ্বীকে রুখতে সক্ষম এমন ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার পরই কেবল ব্রিটেন মুক্তবাজার নীতিকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। চতুর্দশ শতাব্দীতে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড বস্ত্রশিল্পে মার্কেট লিডার বেলজিয়াম ও হল্যান্ড থেকে উলেন কাপড় আমদানি নিষিদ্ধ করেন। এরপর অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে ব্রিটেনের উত্থান ঘটতে থাকে। পরবর্তী কয়েক শতাব্দী ধরে ব্রিটেনের বাণিজ্য নীতির মূল লক্ষ্য ছিল উল ও কটন ইন্ডাস্ট্রিকে শক্তিশালী করা। এজন্যে raw wool রপ্তানির ওপর শুল্ক বসায় সরকার যাতে ব্রিটিশ বণিকরা বেশি মুনাফার আকর্ষণে finished cloth তৈরিতে আগ্রহী হয়। 

অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিও এরকম বিশেষ সুবিধা পেয়েছিল। ১৭২১ সালে ব্রিটিশ সরকার সব ধরনের ম্যানুফ্যাকচার্ড আমদানির ওপর শুল্ক বসায়। আরও বলীয়ান হলো ব্রিটেনের শিল্পখাত। সূচিত হলো শিল্পবিপ্লব। এর একশো বছর পর অ্যাডাম স্মিথের উত্তরসূরিরা যখন গলা ফাটিয়ে মুক্ত বাজারের গুণকীর্তন করছিলেন, তখনো পৃথিবীর সর্বোচ্চ আমদানি শুল্ক ধার্যকারী দেশ ছিল ব্রিটেন। বহু পণ্যের ওপর শুল্ক ছিল পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি। ১৮৬০ সাল পর্যন্ত উচ্চ শুল্কহার বিদ্যমান ছিল। ইতোমধ্যে ব্রিটেন নিশ্চিত করে ফেলেছে বস্ত্রশিল্প, ইস্পাত ও অন্যান্য শিল্পখাতে অন্য কোনো দেশ ব্রিটিশ অভ্যন্তরীণ বাজারে সহজে পেরে উঠবে না। প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদ পল বাইরোক তাই বলেছেন, মুক্ত বাজার অবলম্বন করে ব্রিটেন অর্থনৈতিক আধিপত্য স্থাপন করেছিল এটা একদম ফালতু কথা।

বিশ্ববাণিজ্যের ময়দানে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চীনা কোম্পানিগুলো স্টেট ক্যাপিটালিজমের সাহায্য নেয় এমন অভিযোগ প্রায়ই করে পশ্চিমারা। অথচ বাণিজ্য স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো কয়েকশো বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার (অপ) ব্যবহার করে আসছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে চীনে ব্রিটিশ বণিকদের আফিমের কারবার রক্ষা করার জন্যে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড পামারস্টোনের ‘গানবোট ডিপ্লোম্যাসি’-তে ক্যাপিটালিজমের নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ। 

সেকালে ইংরেজরা এত বেশি পরিমাণে চীন থেকে আমদানি করা চা খেত যে দু-দেশের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিল। চীন দাবি জানাল রৌপ্যমুদ্রায় পাওনা পরিশোধ করতে হবে। হুট করে এত রৌপ্যমুদ্রা ব্রিটিশরা পাবে কোথায়? আর দুনিয়াজোড়া রাহাজানির অর্থে তখন অব্দি ব্রিটিশদের কোষাগার ভরে ওঠেনি। ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ও ব্রিটিশ পাউন্ড দুটোরই হাঁসফাঁস অবস্থা শুরু হয়ে গেল। 

বহু সন্ধানের পর ব্রিটিশরা খুঁজে পেল সেই মহা আরাধ্য পণ্য যা চীনের বাজারে তারা জাহাজবোঝাই করে বেচতে পারবে। কী সেই মহার্ঘ্য বস্তু? আফিম! আফিম! উৎপাদনের স্থান : ভারতে ব্রিটিশদের দখলে থাকা এলাকা। ১৭৭৩ সালে বাংলার গভর্নর জেনারেল স্থানীয় আফিম উৎপাদনকারীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিলেন। উৎপাদনের একচেটিয়া অধিকার দিয়ে দিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে। পঞ্চাশ বছরের মাথায় চীনে ব্রিটিশদের বার্ষিক আফিম রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়াল ৯০০ টনে। 

কোটি কোটি প্রজা নেশায় বুঁদ হয়ে অকর্মণ্য হয়ে পড়ল, নেশার অর্থ জোগাড় করার জন্যে স্ত্রী-সন্তানকে বিক্রি করা শুরু করল। এসব দেখে প্রমাদ গুনলেন চীনের রাজন্যরা।  আফিম আমদানি নিষিদ্ধ করার ব্যর্থ চেষ্টা চালালেন তারা। শেষমেষ ১৮৩৯ সালে ক্যান্টনের কমিশনার ন্যাক্কারজনক এই ব্যবসার ওপর চড়াও হলেন। ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাজার হাজার কন্টেইনার ভর্তি আফিম জব্দ করলেন। আর রানি ভিক্টোরিয়াকে চিঠি পাঠালেন—আমরা চিরদিনের জন্যে এই ধ্বংসাত্মক মাদককে দমন করতে চাই। 

ফুঁসে উঠল লন্ডন। চীনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করার বদলে লর্ড পামারস্টোন পাঠিয়ে দিলেন নৌবহর। ব্রিটিশদের লৌহ নির্মিত বাষ্পচালিত জাহাজ আর শক্তিশালী কামানের মোকাবিলায় চীনের সৈন্যবাহিনী একেবারে তালপাতার সেপাই। অগত্যা যা হবার তা-ই হলো। 

হাজার হাজার মানুষ হত্যার পর ব্রিটিশরা ক্যান্টন ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ কব্জা করল। পামারস্টোন এবং তার মিত্ররা বুক ফুলিয়ে দাবি করল যে বৃহত্তর ব্রিটিশ স্বার্থরক্ষার খাতিরে এবং ‘মুক্ত বাণিজ্য’-কে (শব্দটা খেয়াল করুন ও মনে রাখুন) সমুন্নত রাখার জন্যেই এ হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। যদিও টাইমস অব লন্ডন ঠিকই ব্রিটিশ এই আগ্রাসনের যুৎসই নাম দিল—আফিম যুদ্ধ। আর তরুণ উইলিয়াম গ্ল্যাডস্টোন সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘জঘন্য একটা কারবারকে রক্ষা করতে গিয়ে ব্রিটিশ পতাকা পরিণত হয়েছে জলদস্যুর পতাকায়’। 

চীন সরকার বাধ্য হলো নানকিং চুক্তি স্বাক্ষর করতে। যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২০ মিলিয়ন ডলার (এখনকার মূল্যমানে ৫০০ কোটি ডলার), ব্রিটিশ পণ্যের ওপর সর্বনিম্ন ট্যারিফ, পাঁচটি বন্দরে নোঙর করার অধিকার এবং হংকংয়ের সার্বভৌমত্ব ব্রিটেনের হাতে তুলে দেয়ার অঙ্গীকার করল পর্যুদস্ত চীন। এর ১৫ বছর পর ১৮৫৬ সালে বাণিজ্য বাধার অজুহাতে ফ্রান্স রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র (ওই ঘটনার ১৫০ বছর পরও এরা কিন্তু একই দলে ব্যাট করছে। বোঝাপড়া চমৎকার বটে!) ব্রিটেনের সঙ্গে ঘোঁট পাকিয়ে দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাল। 

পরাজিত চীন নিরুপায় হয়ে তার আরও কয়েকটি বন্দর বিদেশি রপ্তানিকারকদের জন্যে খুলে দিতে। তাকে ক্ষতিপূরণ এবং ব্রিটিশ জাহাজে করে আমেরিকায় চীনা কুলিদের পাঠানোর অনুমতি দিতে হলো। সেইসাথে আফিম ব্যবসাকে বৈধ হিসেবে ঘোষণা করতে হলো। এভাবেই ব্রিটেন তার বাণিজ্য ঘাটতি সমস্যার সমাধান করল। মুক্তবাণিজ্যের বলিহারি নমুনা বটে! 

চীনের ওপর ব্রিটিশ-মার্কিন-ফরাসি শক্তিগুলোর সম্মিলিত শোষণের বর্ণনা পাওয়া যায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চীনে মরণের ব্যবসায়’ প্রবন্ধে—

একটি সমগ্র জাতিকে অর্থের লোভে বলপূর্বক বিষপান করানো হইল; এমনতরো নিদারুণ ঠগীবৃত্তি কখনো শুনা যায় নাই। চীন কাঁদিয়া কহিল, 'আমি আহিফেন খাইব না।' ইংরাজ বণিক কহিল, 'সে কি হয়?' চীনের হাত দুটি বাঁধিয়া তাহার মুখের মধ্যে কামান দিয়া অহিফেন ঠাসিয়া দেওয়া হইল; দিয়া কহিল, 'যে অহিফেন খাইলে তাহার দাম দাও।' বহুদিন হইল ইংরাজেরা চীনে এইরূপ অপূর্ব বাণিজ্য চালাইতেছেন। যে জিনিস সে কোনো মতেই চাহে না, সেই জিনিস তাহার এক পকেটে জোর করিয়া গুঁজিয়া দেওয়া হইতেছে ও আর-এক পকেট হইতে তাহার উপযুক্ত মূল্য তুলিয়া লওয়া হইতেছে। অর্থ-সঞ্চয়ের এরূপ উপায়কে ডাকাইতি না বলিয়া যদি বাণিজ্য বলা যায়, তবে সে নিতান্তই ভদ্রতার খাতিরে! যে জাতি আফ্রিকার দাসত্ব-শৃঙ্খল মোচন করিয়া শত শত অসহায়ের আশীর্বাদভাজন হইয়াছেন, সেই জাতি আজ চীনকে কামানের সম্মুখে দাঁড় করাইয়া বলিতেছেন, 'আমার পয়সার আবশ্যক হইয়াছে তুই বিষ খা!' আসিয়ার একটি বৃহত্তম, প্রাচীন সভ্যদেশের বক্ষঃস্থলে বসিয়া বিষ কীটের ন্যায় তাহার শরীরের ও মনের মধ্যে প্রতি মুহূর্তে তিল তিল করিয়া মরণের রস সঞ্চারিত করিতেছেন। ইহা আর কিছু নয়, একটি সবল জাতি দুর্বলতর জাতির নিকটে মরণ বিক্রয় করিয়া ধ্বংস বিক্রয় করিয়া কিছু কিছু করিয়া লাভ করিতেছেন। 
... চীনের অহিফেন বাণিজ্যের মধ্যে এমন একটা নীচ হীন প্রবৃত্তির ভাব আছে, দস্যুবৃত্তির অপেক্ষা চৌর্যবৃত্তির ভাব এত অধিক আছে যে, তাহার ইতিহাস পড়িলে আমাদের ঘৃণা হয়। ... এক বিদেশীয় জাতির হীন স্বার্থপরতা ও সীমাশূন্য অর্থলিপ্সার জন্য সমস্ত চীন তাহার কোটি কোটি অধিবাসী লইয়া শারীরিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অধঃপতনের পথে দ্রুতবেগে ধাবিত হইতেছে। যেন, ইংরাজদিগের নিকট ধর্মের অনুরোধ নাই, কর্তব্যঞ্চানের অনুরোধ নাই, সহৃদয়তার অনুরোধ নাই, কেবল একমাত্র পয়সার অনুরোধ বলবান। এই তো তাঁহাদের ঊনবিংশ শতাব্দীর খিষ্টীয় সভ্যতা!

সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে চীনে ব্রিটিশরা যেভাবে আফিম বাণিজ্য বিস্তার করেছিল, ঠিক একইরকম ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে তারা জাহাজনির্মাণ শিল্পে সাফল্য লাভ করেছিল। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর নাম অবিভক্ত বাংলা ও মুম্বাই। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় তার অপূর্ব জীবনকথা আত্মচরিত-এ এর বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। 

স্মরণাতীতকাল থেকে বাংলার সুখ্যাতি ছিল জলপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের উপযুক্ত ভালো মানের জাহাজ নির্মাণের জন্যে। ১৭৫৭ সালে বাংলা দখলের পর ব্রিটিশরা সুপরিকল্পিতভাবে এদেশের জাহাজশিল্পকে ধ্বংস করে দেয়। কারণ বাংলার কারিগরদের সাথে প্রতিযোগিতা করার মতো দক্ষতা ব্রিটিশ জাহাজনির্মাতাদের একেবারেই ছিল না। যেসব ইংরেজভক্ত এ বক্তব্যে সন্দেহ পোষণ করবেন তাদের সুবিধার্থে ব্রিটিশ আমলা ফিলিপ মিডোসের লেখা A student’s manual of the history of India (১৮৭০) বই থেকে উদ্ধৃত করছি :

‘লন্ডন বন্দরে যখন ভারতের নির্মিত জাহাজ ভারতীয় পণ্য বহন করে উপস্থিত হলো, সেখানকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে তখন একটা হুলস্থুল পড়ে গেল। টেমস নদীতে কোনো শত্রুপক্ষের জাহাজ উপস্থিত হলেও বোধহয় এত চাঞ্চল্য সৃষ্টি হতো না। লন্ডন বন্দরের জাহাজনির্মাতারা আতঙ্কসূচক চিৎকারশু রু করে দিল। তারা প্রচার করতে লাগল যে, তাদের ব্যবসা ধ্বংস হবার উপক্রম এবং লন্ডনের জাহাজ ব্যবসায়ীরা ছেলেপুলে নিয়ে না খেয়ে মরবে।’

ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের আর্তচিৎকারে বড়লাট এদেশের জাহাজ শিল্পকে গলা টিপে মারার সকল আয়োজন সম্পন্ন করলেন। ১৭৮৯ সালের ২৯ জানুয়ারি কলিকাতা গেজেট-এ প্রকাশিত একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি বিষয়টি পরিষ্কার করবে।

ফোর্ট উইলিয়াম,                
রাজস্ব বিভাগ, ১৪ জানুয়ারি, ১৭৮৯

এতদ্বারা বিজ্ঞপ্তি করা যাইতেছে যে কোনো ব্যক্তি (জেলা ম্যাজিস্ট্রেটগণ ব্যতীত) নিম্নলিখিত রূপ আকার ও আয়তনের বোটগুলি আগামী ১ মার্চের পর তৈরি করিতে বা ব্যবহার করিতে পারিবে না। 
‘লুখা’ (Luckha)-৪০-৫০-হাত লম্বা ও ২.৫-৪ হাত চওড়া,
‘জেলকিয়া’ (Zelkia)-৩০-৭০ হাত লম্বা ও ৩.৫-৫ হাত চওড়া।
চাঁদপুরের ‘পঞ্চওয়েস‘ যাহাতে দশ দাঁড়ের বেশি আছে।
যশোহর, ঢাকা, জালালপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, ২৪ পরগনা, হিজলী, তমলুক, বর্ধমান ও নদীয়ার ম্যাজিস্ট্রেটগণকে আদেশ দেওয়া হইতেছে যে, ১ মার্চেল পর তাঁহাদের এলাকার মধ্যে পূর্ববর্ণিত রূপ যে সমস্ত বোট তাঁহারা দেখিতে পাইবেন, সেগুলি দখল ও বাজেয়াপ্ত করিবেন। যদি কোনো জমিদার তাঁহার এলাকার মধ্যে পূর্ববর্ণিত রূপ কোনো বোট তৈরি করিতে বা মেরামত করিতে দেন (জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত আদেশ ব্যতীত), তবে তাহা গভর্নমেন্ট বাজেয়াপ্ত করিতে পারিবেন।
যদি কোনো সূত্রধর, কর্মকার বা অন্য কোনো প্রকার শিল্পী এইরূপ বোট নির্মাণ বা মেরামত কার্যে নিযুক্ত থাকে (জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত আদেশ ব্যতীত), তবে তাহাকে একমাস পর্যন্ত ফৌজদারি জেলে অবরুদ্ধ করা হইবে অথবা ২০ ঘা পর্যন্ত বেত্রদণ্ড দেওয়া যাইতে পারিবে।
সপরিষৎ গভর্নর জেনারেলের আদেশ অনুসারে।

এভাবেই বাংলার বস্ত্রশিল্প, জাহাজশিল্প, কুটির শিল্প একে একে ধ্বংস করে ইংরেজরা। কেবল কৃষির ওপর অবলম্বন করতে বাধ্য হয় বাঙালি। আর বিশ্ব বাণিজ্যে নিজের শক্ত অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হবার পর ব্রিটিশরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ‘মুক্তবাজার‘ তত্ত্ব প্রচারে।    

অর্থনীতি ও বাণিজ্য ইতিহাসের মনোযোগী পাঠক মাত্রই জানেন আমেরিকার সম্পদশালী হওয়ার নেপথ্যেও laissaez-faire নয়, বরং সরকারি হস্তক্ষেপের ভূমিকাই বেশি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রণীত যেসব মুক্তবাজার নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে করছে, তার চেয়েও বেশি রক্ষণশীল নীতি অবলম্বন করেই যুক্তরাষ্ট্র ঊনবিংশ শতাব্দীতে ‘দাসশ্রমের ওপর নির্ভরশীল দ্বিতীয় সারির কৃষিভিত্তিক দেশ থেকে বিশ্বের শীর্ষ শিল্পোন্নত পরাশক্তিতে’ পরিণত হয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম অর্থমন্ত্রী আলেক্সান্ডার হ্যামিল্টন আমেরিকাকে শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৭৯১ সালে বেশ কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ছিল রপ্তানিযোগ্য পণ্যসমূহে ভর্তুকি প্রদান, শিল্পক্ষেত্রে উদ্ভাবনের জন্যে পুরস্কার ঘোষণা এবং অবকাঠামো নির্মাণে পাবলিক বিনিয়োগ।

অবশ্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই মার্কিন কংগ্রেস বিশেষ বিশেষ ইন্ডাস্ট্রিকে রক্ষায় ট্যারিফ নামক অস্ত্রটি ব্যবহার করে। ১৮১২ সালে ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধের সময় আমেরিকা ম্যানুফ্যাকচার্ড পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক এক ধাক্কায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করে। কয়েক বছর পর শুল্ক আরও বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়। আব্রাহাম লিংকন ওটাকেও বাড়িয়ে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি নিয়ে যান। অর্থনীতিবিদ হা-জুন চ্যাং এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, লিংকনকে মহান মুক্তিদাতা হিসেবে স্মরণ করা হয়। তাকে একইভাবে আমেরিকান ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের মহান রক্ষাকর্তাও বলা যেতে পারে। 

লিংকনের মৃত্যুর ৪ বছর পর তার প্রধান সেনাপতি ইউলিসিস গ্রান্ট প্রেসিডেন্ট হন। ব্রিটিশরা মুক্তবাজার নীতি গ্রহণের জন্যে তাকে চাপ দিলে গ্রান্ট জবাব দেন, ২০০ বছর পর (শুল্ক) রক্ষাকবচের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে, আমেরিকাও মুক্তবাজার নীতি অনুসরণ করবে।

লিংকন পরবর্তী সময়ে অর্ধ শতাব্দীকাল, যুক্তরাষ্ট্রে ট্যারিফ ছিল চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ শতাংশ যা তৎকালীন বিশ্বে সর্বোচ্চ। protection নীতি অনুসরণের সুফল শিগগিরই পরিলক্ষিত হয়। মার্কিন অর্থনীতি লোহা, ইস্পাত ও কেমিক্যাল শিল্পে ব্রিটেন-জার্মানির সঙ্গে পাল্লা দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করে। 

মার্কিন গৃহযুদ্ধের সময় (১৮৬১-৬৫) এবং পরবর্তী বছরগুলোতে পশ্চিমাঞ্চলে অবকাঠামো নির্মাণে আমেরিকার কেন্দ্রীয় সরকার উদারহস্তে জমি ও অর্থ দুটোরই জোগান দেয়। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া বিস্তৃত পরিমাণ জমি ও বিশাল অঙ্কের ঋণ কাজে লাগিয়ে সেন্ট্রাল প্যাসিফিক এবং ইউনিয়ন প্যাসিফিক রেলওয়ে কোম্পানির ঝোলা  দ্রুত ফুলে ফেঁপে ওঠে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ও শেষ হবার পর প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ঘোষিত ইউএস পলিসি-র অন্যতম ধারা ছিল হিসেবে মুক্ত বাজার। যদিও উচ্চ শুল্ক হার বহাল তবিয়তে বজায় থাকে। (আমেরিকায় চিনি, ইথানল জাতীয় কিছু কিছু কৃষিপণ্যে আজো শুল্ক হার অনেক বেশি। এর প্রধান সুবিধাভোগী কার্গিল ও আর্চার ড্যানিয়েলস মিডল্যান্ডের মতো বৃহদাকার মার্কিন কোম্পানিগুলো। এর পাশাপাশি এই কোম্পানিগুলোকে মার্কিন সরকার বিলিয়ন ডলার ভর্তুকিও দেয়। এই সুবিধা না পেলে বিদেশি সাপ্লায়ারদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে তাদের ঘাম ছুটে যেত।) 

আমেরিকার ব্যবসা-বাণিজ্যে সরকারি সহযোগিতা আজকাল হয়তো তেমন একটা দৃশ্যমান না। তবে সরকারি সহযোগিতা রয়েছে বলেই মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কম্পিটিটিভ এজ টিকিয়ে রাখতে পারছে।  যেমন আমেরিকার প্রধান তিনটি রপ্তানিপণ্য জন্ম নিয়েছে পেন্টাগনের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণা প্রকল্প থেকে। এগুলো হলো—বাণিজ্যিক বিমান, সামরিক বিমান এবং কম্পিউটার। 

বোয়িং ৭৪৭ ছাড়াও আরও বহু আধুনিক জেটলাইনার সামরিক বিমানের ডিজাইনে অদলবদল করে তৈরি করা হয়েছে। পঞ্চাশের দশকে সিলিকন ট্রানজিস্টর নির্মাতা ফেয়ারচাইল্ড সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি ছিল মিলিটারি কন্ট্র্যাক্টর। ফেয়ারচাইল্ডের মতো কম্পিউটার শিল্পের উত্থানে অবদান রেখেছে এমন বহু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানই ছিল মিলিটারি কন্ট্র্যাক্টর। বহু বড় বড় মার্কিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন লকহিড, হানিওয়েল, বোয়িংয়ের অপরিহার্য খদ্দের হলো সেদেশের ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট। আর এটা তো সর্বজনবিদিত যে ইন্টারনেট তৈরি করেছিল পেন্টাগনের অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (DARPA)। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত পেন্টাগনই ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করত। 

অধ্যাপক হা-জুন চ্যাং তার 23 Things They Don’t Tell You about Capitalism বইতে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভান করে থাকে যে, মার্কিন সরকার শিল্পখাতে হস্তক্ষেপ বা পৃষ্ঠপোষকতা করে না। আসল সত্য হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন সরকারের বিপুল পরিমাণ ভতুর্কি না পেলে কম্পিউটার, সেমিকন্ডাক্টর, এয়ারক্রাফট, ইন্টারনেট ও জৈবপ্রযুক্তি খাত আজকের অবস্থানে আসতে পারত না। 

এবার আসা যাক আর্থিক খাতে। মার্কেট ফোর্সের হাতে ছেড়ে না দিয়ে ধুঁকতে থাকা ব্যাংকগুলোকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করে বলে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রায়ই আইএমএফ ডব্লিউটিও বিশ্বব্যাংকের বকুনি খায়। অথচ ২০০৯ সালে বৈশ্বিক মন্দার সময় যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন-জার্মানি যারা ডব্লিউটিও-র হোমরাচোমড়া তারা ঠিক একই কাজ করে। মার্কিন সরকার ১৭ ট্রিলিয়ন ডলার গচ্চা দিয়ে সিটিগ্রুপ, জেপি মরগ্যান চেজ, গোল্ডম্যান স্যাকস, জেনারেল মোটরস, ক্রাইসলারের মতো রাঘববোয়াল ছাড়াও বহু চুনোপুঁটিকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। আমেরিকার এহেন পদক্ষেপ ডব্লিউটিও আইনের লঙ্ঘন তা বলা যেতে পারে। কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধবে কে? 

শুধু ব্রিটেন ও আমেরিকাই নয়। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও অস্ট্রিয়া শিল্পখাতে দারুণ অগ্রগতি অর্জন করে সরকারি প্রোটেকশন, ভর্তুকি ও বিনিয়োগের বদৌলতে। গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে না দিয়ে রাষ্ট্রের মালিকানাধীন রাখা হয়। আশির দশকে তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর মুক্তবাজার নীতি নয়, বরং ইউরোপের দেশগুলোর মতোই সরকারি হস্তক্ষেপ ও পৃষ্ঠপোষকতার ফর্মুলা ব্যবহার করেই অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হয়। মুক্তবাজার নীতি প্রয়োগ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের স্বর্গ হিসেবে পরিচিত সিঙ্গাপুরে এখনো ২০ শতাংশ শিল্পপণ্য উৎপাদন হয় রাষ্ট্র-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে।

তবে মুক্ত বাণিজ্য বা বাজারশক্তির এই বয়ান যে ডাহা মিথ্যে তা ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে অনেকেই। এইচএসবিসি ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ স্টিফেন ডি কিং তার বই—লুজিং কন্ট্রোল : দ্য ইমার্জিং থ্রেটস টু ওয়েস্টার্ন প্রসপ্যারিটি-তে মন্তব্য করেছেন, পশ্চিমা সরকারগুলো তাদের আখের গুছিয়ে নিতে শত শত বছর ধরে স্টেট ক্যাপিটালিজমকে ব্যবহার করেছে। একমাত্র মার্কেট ফোর্স কাজে লাগিয়ে পাশ্চাত্য সাফল্য লাভ করেছে সেটা একদম বাজে কথা।

অধ্যাপক হা-জুন ইতিহাস ঘেঁটে বলছেন, To sum up, the free-trade, free-market policies are policies that have rarely, if ever, worked. … Few countries have become rich through free-trade, free-market policies and few ever will. 

ব্রিটেন আমেরিকা জার্মানি ফ্রান্সের দ্বিমুখী আচরণ অনুসরণের আগাপাশতলা বিশ্লেষণ করে ২০১০ সালে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন নিউইয়র্কার ম্যাগাজিনের সাংবাদিক জন ক্যাসিডি। এই লেখাটি বহুলাংশে সেই নিবন্ধের ভাষান্তর। ক্যাসিডি তার দুর্দান্ত নিবন্ধটির উপসংহার টেনেছেন এভাবে—The greatest danger that western prosperity now faces isn’t posed by any Beijing consensus; it’s posed by the myth of free market.

হাল আমলের অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ক্যাসিডির ভবিষ্যদ্বাণী ফলে গেছে। পশ্চিমের অর্থনৈতিক পতনের ধ্বনি কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। 

তথ্য সহায়িকা:
১. Enter The Dragon, জন ক্যাসিডি, নিউ ইয়র্কার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১০
২. Globalization and Its Discontents, জোসেফ স্টিগলিৎজ, পেঙ্গুইন বুকস, ২০০২
৩. আত্মচরিত, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ২০১৫ পৃ: ৩১৮, ৩২৫
৪. 23 Things They Don’t Tell You about Capitalism, হা জুন চ্যাং, পেঙ্গুইন বুকস, ২০১১

(রেজওয়ানুর রহমান কৌশিক-এর প্রথম মুদ্রিত লেখা।) 


রেজওয়ানুর রহমান কৌশিক প্রাবন্ধিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে গবেষণা কাজে নিযুক্ত আছেন।ঔপনিবেশিকতা ও বিশ্বায়নের প্রভাবে সমাজ, অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতির পালাবদল সম্পর্কে তার আগ্রহ রয়েছে।

menu
menu