সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ ও অলীক মানুষ

বাংলা সাহিত্যে সৈয়দদের অবস্থান সব সময় প্রথম সারিতে। মুসলমানদের মধ্যে বাংলা সাহিত্যে যা করার সব সৈয়দরাই করল। সৈয়দ মুজতবা আলী, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, এ দু’জন সৈয়দ তো মাস্টার। তবে আজকে আলোচনার বিষয় সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের সত্তায় জড়িয়ে ছিল রাঢ়ের রুক্ষ মাটি। এ মাটিতে তারাশঙ্করেরও জন্ম। তাই তারাশঙ্কর প্রায়ই বলতেন, আমার পরেই সিরাজ, সিরাজই আমার পরে অধিষ্ঠান করবে।

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ একবার বলেন, ‘আমি ইবলিস ছদ্মনামের আড়ালে লেখালেখি শুরু করি। ইবলিস যে শয়তানের আরেক নাম কে না জানে। উপরন্তু সে যে সবচেয়ে জ্ঞানী সে কথা মাটিতে চলাফেরা করা মানুষকে সালাম না করার মধ্যেই লুকিয়ে আছে। মাটির তৈরি মানুষের কাছে সে কখনো নত হবে না। নিজের মনের এরকম একটা ভাব আনার চেষ্টা থেকেই ওই ধরনের প্রচেষ্টা।’ মুস্তাফা সিরাজ আরও বলেন, ‘আমার কোনো লেখাই নিজস্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া লেখা নয়। আমার বিশ্বাস প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ব্যতিরেখে কোনো লেখা দাঁড় করানো প্রায় অসম্ভবের শামিল।’

প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ মুর্শিদাবাদের খোশবাসপুর গ্রামে ১৯৩০ সালের অক্টোবরে জন্ম গ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে বাড়ি থেকে পলাতক জীবন অতিবাহিত করেছেন। রাঢ় বাংলার লোকনাট্য ‘আলকাপের’ সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাচ-গান-অভিনয়ে নিমজ্জিত হয়ে জেলায় জেলায় ঘুরেছেন। তিনি ‘আলকাপ’ দলের ওস্তাদ ছিলেন। ‘আলকাপ’  হুমায়ূন আহমেদের শেষ চলচ্চিত্র ঘেঁটুপুত্র কমলার অন্যতম সংস্করণ বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। ‘আলকাপ’ দলের ছেলেরাই মেয়ের অভিনয় করত। তাদেরকে ছোকরা বলা হয়। আগে-পরে অনেক দিন ধরেই বাউল, ফকির, বৈরাগী, সাধু, বাউণ্ডুলে, খুনি, ডাকাত আর ছিঁচকে চোর’রা ছিল মুস্তাফা সিরাজের পরম বান্ধব। সিরাজ প্রথম জীবনে কবি হওয়ার জন্য কলকাতায় এসেছিল। তাঁর একটি কবিতা—

শব্দহীন ঝাউবন অন্ধকারে
শুকনো ঘাস কয়েক টুকরো পাথর কবর ফলক ক্রশ
কিছু হাড় ভাঙা সিঁড়ি ঘাট কালো নৌকার খোলস
পাখির পালক নদী জল
অন্ধকারে...

কলকাতায় এসে কবিতার পান্ডুলিপি নিয়ে প্রকাশকদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন। পাত্তা পাননি। ’৬৪ সালের দিকে সন্তোষকুমার ঘোষের বদান্যতায় আনন্দবাজার-এ চাকরি পান। এরপর সংসারটা ঠিকঠাক চলতে শুরু করে। সিরাজের প্রথম উপন্যাস নীলঘরের নটী ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হয়। সেই থেকে শুরু। একে একে প্রকাশিত হয় পিঞ্জর সোহাগিনী, কিংবদন্তীর নায়ক, হিজল কন্যা, আসমানতারা, উত্তর জাহ্নবী, নিশিমৃগয়া, নিশিলতা, এক বোন পারুল,  কৃষ্ণা বাড়ি ফেরেনি, রোড সাহেব, জানগুরু, অলীক মানুষসহ আরও অসংখ্য গল্প উপন্যাস। জানা মতে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সর্বমোট প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা ১৫০টি এবং ছোটগল্প ৩০৬টি।

অলীক মানুষ উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় আখতারুজ্জামানের খোয়াবনামা প্রকাশের প্রায় আট বছর আগে, ১৯৮৮ সালে। ধারাবাহিকভাবে চতুরঙ্গ লিটল ম্যাগাজিনে। অলীক মানুষ ১১টি ভাষায় অনুবাদ হয়। সময় ও পটভূমিতে, চরিত্রসৃষ্টি ও কাহিনিনির্মাণে, ভাষা ও প্রতীকের ব্যবহারে, ইতিহাসচেতনার প্রতিফলনে, এমন স্বতন্ত্র আঙ্গিকে এবং এমন অনন্যসাধারণ, সব অর্থে ট্রাডিশন বহির্ভূত উপন্যাস। একটি উপন্যাস পড়ে সাধারণত লিখিত বা মৌখিক পাঠের অনুভূতি ব্যক্ত করা যায়। অলীক মানুষ এমনই এক শিল্পোত্তীর্ণ উপন্যাস যা পড়ে নির্বাক বসে থাকতে হয়।

...একটি গাড়ি বহন চলেছে। স্ত্রী সাইদা, অশক্ত মা, তিন ছেলে,মেজটি প্রতিবন্ধি মনি আর ছোটটি শফি। আরও আছে বাজা গরু মুন্নী, ধাড়ি বাচ্চাসহ কুলসুম। খেদমত করার জন্য অবৈতনিক বান্দা কজন ও মুরিদ। বড় ছেলে নুরুজ্জামান ফাজিল পাশ করে পুরো দস্তুর উর্দু ভাষী, বুঝেছে তারা বিখ্যাত পির বংশের লোক। একটা তফাৎ রাখা দরকার গ্রামের গরিব-গুরবোদের কাছ থেকে। তা হলো ভাষার তফাৎ আশরাফের ভাষা। তিনি সৈয়দ আবুল কাশেম মুহম্মদ বদি-উজ-জামান আল হুসায়নি আল খুরাসানি। তিনি চলছেন প্রচলিত পথ ছেড়ে মাঠ পেরিয়ে। নদী পেরিয়ে। সামনে পথ দেখিয়ে চলেছে কালো জিন বা সাদা জিন। মৌলাহাট গ্রামটি দেখে থেমে পড়েছে এই সাত বহর। গ্রামের মানুষ সংবাদ পেয়ে নদী পাড়ে এসেছে। তারা সহজ সরল মানুষ। সারাদিন ভূতের খাটনি করে। তাদের বউ ঝি-রা ক্ষেতে ভাত পৌঁছে দেয়। আর মুশকিল আসানের জন্য পিরের থানে যায়। কলাটা মূলাটা দেয়। তারা অপেক্ষা করছিল তাদের নিজস্ব এক পিরের জন্য। তাদের মনে হয়েছিল পিতৃপুরুষ এরকম মাজেজাপূর্ণ পিরের আগমণ সংবাদ বলে গিয়েছিলেন। তারা মৌলানাকে পেয়ে বর্তে যায়। তারা পিরের নাম ছোট করে বলে বদু পির।

আর এই বদু পির পিরবাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে। তার কাছে গান বাজনা হারাম। পরণে তার সফেদ পোষাক মসজিদে পরে থাকেন। আর মৃদু স্বরে বলেন, কেতাবের কথা। তার মাঝে যখন মানুষ লোকটি জেগে ওঠে সে মানুষটি ঘরে গিয়ে সাইদার সঙ্গ লাভ করে। সাইদা তো তার বিবি। বিবি হল শস্যক্ষেতের মতো। সাইদার কতটুকু ক্ষমতা। একদিন শুধু তাকে ফিরিয়ে দেয়। কারণ জানা হয়েছে শুদ্ধস্বামী পরনারীতে আসক্ত। ফলে ফুঁসে ওঠা মৌলানা এতেকাফে পড়ে থাকেন। এ খবর কেউ জানে না। শুধু জানা যায় প্রতিবেশী বিধবা দরিয়াবানুর দুই কিশোরী মেয়ে রোজা আর রুকুর বিয়ে দেন বড় ছেলে নূরুজ্জামানের সঙ্গে আর মেজ ছেলে অর্ধমানব মনির সঙ্গে। ছোটো ছেলে শফি রুকুর বেদনা বুকে পুষে বিবাগী হয়ে পড়ে। দূরের গ্রামে একটি দজলিজ ঘরের দেয়ালে টানানো বোররাখকে দেখে তার মনে হয় এই ঘোড়াটির মুখ রুকুর। অন্য কারো হতে পারে না। যে জন্য প্রাকৃত নারী আসমার শরীরী সঙ্গ তাকে রুকুর কষ্ট বাড়িয়ে তুলে। রুকু শফির মেজ ভাইয়ের বিবি। আর রুকু ভাবে, সে যদি জন্তু মানুষটার বউ না হত, তাহলে সংসারে কর্তৃত্বের ন্যায্য শরিকানাটা দখল করত। সে হয়তো কোমরে আঁচল জড়াত। কিন্তু কী দরকার এসব ঝামেলায় নাক গলিয়ে! বেশ তো আছি। না, সত্যই সে ভালো নেই। যখন তখন একটা জন্তু মানুষের কামার্ত আক্রমণ সহ্য করে কি ভালো থাকা যায়! চোখ বুজে দাঁতে দাঁত চেপে রুকু তার অবশ শরীর রেখে পালিয়ে যায়। পালাতেই থাকে, দূরে... বহুদূরে। কিন্তু কোথায় যাবে? রুকুর মা দরিয়াবানু তার মেয়ের এই যন্ত্রণার অপরাধে কাতর হয়ে ডুমুর গাছে ঝুলে পড়েছে। শফি ইংরেজি শিখতে গিয়ে বংশচ্যুত। মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রামে নেমেছে। বিদ্যাচর্চা, প্রকৃতি, নারী সাহচর্য, ব্রহ্মবাদ ও মননচর্চা কিছুই তাকে ধরে রাখতে পারে না। হয়ে উঠেছে নৃশংস ঘাতক। উন্মুল। এই ঘাতক মানুষটিই এক সময় লোক মুখে হয়ে ওঠে একজন অলীক মানুষ, ছবিলাল। তার পিতা আল খোরাসানি তার জাগতিক বুদ্ধি, শাস্ত্রীয় জ্ঞান, এবং শরীরী বাসনা-কামনা নিয়ে হয়ে ওঠেন নিঃসঙ্গ মানুষ। স্ত্রী সাইদার প্রত্যাখান আর শফির আত্মগোপন তাকে ধ্যানের জগৎ থেকে দূরের যাত্রায়। ফিরে এলে এক কুহকী নারীর শরীর হয়ে ওঠে অনিবার্য গন্তব্য। তিনিই সফেদ পোশাকে হয়ে ওঠেন দুশ্চরিত্রা ইকরাতুনের সন্তানের জনক। আর গ্রামের গরিব লোকজন এই পিরবিরোধী আল খোরাসানিকে লোকোত্তর প্রতিষ্ঠা দেয়। হয়ে ওঠে বদু। আর কবরটি মানতের মাজার। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের অলীক মানুষ উনিশ-বিশ শতকের মুসলিম অন্দর মহলের এক গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টশন। তিনি নির্মোহভাবে তার সহজাত ভাষায় বুনেছেন অসংখ্য কাহিনি-উপকাহিনির মধ্যে দিয়ে একটি মহাকাব্যিক উপন্যাস। একশো বছরের এই লৌকিক-অলৌকিক আখ্যানটি রচিত হয়েছে কোলাজ রীতেতে। কখনো সহজ বয়ানে, কখনো মিথ ও কিংবদন্তী আবার কখনো ব্যক্তিগত ডায়েরি, সংবাদপত্রের কাটিং জুড়ে দিয়ে দূর সময় ও বিস্ময়কর মানুষের বৃত্তান্ত। বাঙালি হিন্দু মুসলমান জীবনে এক অনাবিষ্কৃত সত্যের উদ্ভাসন। এরকম উপন্যাস দুই বাংলায় বিরল। পাঠ অমৃতসমান। উপন্যাসের পাঠ থেকে জানতে পারি :

“...এখন ভাবি, পুরুষের জীবনে ওই যেন কঠিন নির্বাসনের কষ্টের কাল! নারীর জরায়ু থেকে বেরিয়ে এসে নিরন্তর নারীর সঙ্গে স্পর্শে সাহচর্যে বেড়ে উঠতে উঠতে তারপর সে ধীরে ধীরে দূরে যেতে থাকে অথবা তাকে সরিয়ে দেওয়া হয় দূরে। নারীর শরীর, নারীর স্তন, নারীর ঠোঁট তাকে অচ্ছুৎ করে ফেলে। নিষিদ্ধ হয়ে ওঠে প্রিয় এক জগৎ, এবং নির্বাসিতের মতো, অচ্ছুতের মতো, তারপর দূরে সরে থাকা। আবার প্রতীক্ষায় থাকা, কবে ফিরবে প্রিয়তম ঘরে? কবে ফিরে পাবে সে নারীর শরীর, নারীর স্তন, নারীর ঠোঁট এবং নারীর জরায়ু শরীরের পুরুষ্যের যৌবনের রক্তমূল্য দিয়ে সবল পেশীর শক্তি দিয়ে হবে তার প্রত্যাবর্তনজনিত পুনরাভিষেক? কবে সে ফিরবে পুরোনো কোমল ঘরে? কৈশোরের সেই প্রতীক্ষা আর নির্বাসনের কাল।”

এই উপন্যানের প্রধান বক্তব্য হিন্দু মুসলিম প্রীতি; যাকে ধর্মবিশ্বাস দমাতে পারেনি। দিলরুবা বেগম বলেন, “তোর আব্বার হিন্দু বন্ধুরা খুব ভালো ছিলেন, লুকিয়ে-চুরিয়ে রেতের বেলা এসে আমার হাতে খানা খেতেন। তোর আম্মা ওঁদের দেখা দিত, কথা  বলত। দিলরুবা বেগম কচিকে কপট ক্রোধে বললেন, হিঁদুগিরি ছাড় দিকি। হিঁদু মেয়েগুলানের সঙ্গে মিশে তোর এই স্বভাব হয়েছে। না হিন্দুস্থান পাকিস্থান হবে, না মৌলাহাটে হিঁদুদের বসতি হবে।” কচি বলে,“আমার কাছে যে মেয়েটি (শ্রাবণী) আসে, ওরা ইস্টবেঙ্গল থেকে তোমার মোছলেম বেরাদারদের জুলুমে পালিয়ে এসেছে। তুমি জান কি ও খড়ের গাদায় লুকিয়ে না থাকলে ওকে জবাই করা হত। তখনও এতটুকু ফ্রক পরা মেয়ে। তবু দেখো, ওরা আমাদের ঘৃণা করছে না।”

সিরাজ ধর্মের ব্যাপারে সজাগ ছিলেন। সিরাজের মানসকাঠামোতে আরো একটি দিক ধরা পড়ে সালমান রুশদীর ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর সমালোচনায়। সিরাজের মতে, ধর্মের নামে যা চলে তার তার কাছে ব্যাধির মতো, কিন্তু কোনোভাবেই তিনি ধর্মকে আঘাত দিতে চান না। তিনি ব্যক্তিগতভাবে সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ওপর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।

লেখকের কথায়,“আসলে অলীক মানুষ বলতে আমি বুঝিয়েছি মিথিক্যাল ম্যান। রক্তমাংসের মানুষকে কেন্দ্র করে যে মিথ গড়ে ওঠে, সেই মিথই এক সময় মানুষের প্রকৃত বাস্তব সত্ত্বাকে নিজের কাছেই অস্পষ্ট এবং অর্থহীন করে তোলে। ব্যক্তিজীবনের এই ট্র্যাজেডি অলীক মানুষ-এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। উপন্যাসটিতে ইচ্ছাকৃতভাবেই কোনো কালের ধারাবাহিকতা রাখিনি। অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। এই আখ্যানে প্রকৃতপক্ষে দুটিই চরিত্র, ধর্মগুরু বদিউজ্জামান এবং তার নাস্তিক পুত্র শফিউজ্জামান। এই দুটি মানুষ নিয়ে আমি এক ধরনের খেলা করতে চেয়েছি। একজন মনে করেন, মানুষের নিয়ন্তা ঈশ্বর, অন্যজন ধারণা পোষণ করেন যে মানুষ নিজেই তার নিয়ন্তা (সৈ.মু.সি: অলীক মানুষ-এ আমি স্বেচ্ছাচারী আনন্দ পেয়েছি, কোরক, শারদীয় ১৪০০ বঙ্গাব্দ)

মুস্তাফা সিরাজ পরিশ্রমসাধ্য অলীক মানুষ নামের যে উপন্যাসটি লিখেছেন, সেই উপন্যাস তাকে শুধু খ্যাতির শীর্ষেই নিয়ে গেল না, সমগ্র বাংলা সাহিত্যকেই সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর করেছে। সে সম্পর্কে সিরাজের সহজ-সরল-স্বীকারোক্তি, অলীক মানুষ উপন্যাসটি লেখার পেছনে ছিল অগ্রজ গৌরকিশোর ঘোষের প্রণোদনা। মুসলিম জীবন নিয়ে এতকাল যা কিছু লিখেছি তার নির্যাস বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। নিরন্তর সংবাদ লিখতে লিখতে যখন আমার হাত বসে যাওয়ার দশা ঠিক সে অবস্থায় আর কিছু না ভেবে মাওলানা দাদা সম্পর্কে লিখতে শুরু করলাম। ফরায়েজি আন্দোলনের প্রবক্তা এই মানুষটি গ্রাম-গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়ানোটাই ছিল যার কাজ ‘আংরেজ হঠাও’ স্লোগান দেওয়া কট্টর মৌলবাদী এই পিতামহটি যে রসকষহীন ছিলেন তা নয়, নানা বৈপরীত্যে গড়া আশ্চর্য এক আকর্ষণীয় চরিত্র।

মুস্তাফা সিরাজ আরো বলেন, উপন্যাসটিতে আমি আমার সমসাময়িক কালটাকে বদলে কয়েক শতক পিছিয়ে হিন্দু-মুসলমান চরিত্রকে পাশাপাশি রেখে গোটা সমাজটাকে তুলে ধরতে চেয়েছি। একটা সময় টের পেলাম, এই কাহিনি লেখা আমার পক্ষে দুরূহ তাই ফর্মটা ওলটপালট করে অনেক খাটাখাটুনি আর অনিশ্চয়তা কাটিয়ে একটানা সময় নিয়ে উপন্যাসটা শেষ করলাম। অবশ্য এর জন্য নানা ঘাত-প্রতিঘাত ডিঙাতে হয়েছিল।

অলীক মানুষ সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজকে দিয়েছে বাংলা উপন্যাসে একটি স্থায়ী আসন। সেই সঙ্গে খ্যাতি আর প্রভূত অর্থ। এই উপন্যাসের জন্য তিনি চারটি পুরস্কার পেয়েছেন : ভূয়ালকা পুরস্কার (১৯৯০), বঙ্কিম পুরস্কার (১৯৯৪), সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৯৪), সুরমা চৌধুরী মেমোরিয়াল আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার (২০০৮)। ২০০৯ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানিক ডি.লিট উপাধি দেন। তাছাড়া আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা আমন্ত্রিত হয়ে আমেরিকা ঘুরে এসেছেন।


ওয়ালী আহমেদ, প্রাবন্ধিক, কুমিল্লা

menu
menu