ডি. ডি. কোসাম্বী’র চোখে : ঐতিহাসিক কৃষ্ণ

(দামোদর ধর্মানন্দ কোসাম্বী (ডি. ডি. কোসাম্বী) (৩১ জানুয়ারি ১৯০৭-২৯ জুন ১৯৬৬)  একজন বহুমুখী ও অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তি ছিলেন। গণিত, পরিসংখ্যান, ভাষাতত্ত্ব, জেনেটিক্স ও ইতিহাস ছিল তাঁর আগ্রহের এলাকা। তিনিই প্রথম মার্কসবাদের আলোকে ভারতের প্রাচীন ইতিহাস ব্যাখ্যা করে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ভারতীয় ইতিহাস চর্চায় মার্কসবাদী ঘরানার তিনি গুরুস্থানীয়। বিখ্যাত ভারতীয় ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার তাঁর ওপর কোসাম্বী র প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন যে, কোসাম্বী’র রচনা প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস বিশ্লেষণের সময় তাঁকে অবধারিতরূপে গৃহীত ব্যাখ্যার বাইরে (beyond the obvious) চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। কোসাম্বী  ভারতের ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতির ওপর অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। তাঁর দুটি প্রধান গ্রন্থ An Introduction to the Study of Indian History এবং The Culture and Civilization of India in Historical Outline ভারতে ইতিহাস চর্চায় একটি নতুন ধারা সুচনা করার জন্য উল্লেখযোগ্য। 
শ্রীকৃষ্ণ একজন পৌরাণিক চরিত্র। হিন্দুদের আরাধ্য দেবতা। বিষ্ণুর অবতার। কিন্তু বর্তমান প্রবন্ধে ডি. ডি. কোসাম্বী শ্রীকৃষ্ণ ও কৃষ্ণ উপাসনার ধারা একজন ইতিহাসবিদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন বৈদিক পশুচারী সমাজের উপাসনার ধারা কিভাবে একটি কৃষিভিত্তিক সমাজে পরিবর্তিত হলো এবং এর ইন্দ্র-উপাসনার স্থলে একটি কৃষ্ণ উপাসনার ধারার জন্ম হলো। তাছাড়া কৃষ্ণের উপাখ্যানে তিনি মাতৃতান্ত্রিক সমাজের বিশ্বাস ও আচারের সঙ্গে পিতৃতান্ত্রিক উপাসনার ধারার দ্বন্দ্ব ও আপোষের মাধ্যমে দুই ধারার লোকজনের অভিন্ন উপাসনার ধারা সৃষ্টির কথা বলেছেন। 
কোসাম্বী’র বর্তমান রচনাটি The Historical Krishna নামে ১৯৬৫ সালে The Times of India Annual-এ প্রকাশিত হয়। 
বর্তমান সময়ের পাঠকদের সুবিধার জন্য প্রবন্ধটির অনুবাদে কিছু টীকা সংযোজন করা হলো।)
—চৌ.মু.আ

১. কিংবদন্তি : প্রথম পর্ব 
পুরাণ থেকে আমরা জানতে পারি যে কৃষ্ণের পিতা ছিলেন বসুদেব এবং মা ছিলেন দেবকী। দেবকী ছিলেন মথুরার অত্যাচারী শাসক কংসের ভগিনী। এঁরা যদুবংশের অন্ধক-বৃঞ্চি শাখার লোক ছিলেন। দেবকীর বিবাহের সময় কংস নিজে রথ চালিয়ে তাঁর ভগিনীকে যখন বিবাহের শোভাযাত্রায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন আকাশ থেকে এক দৈববাণী কংসকে সতর্ক করে দেয় যে এই বিবাহের ফলে জন্ম নেয়া সন্তান তাঁর মৃত্যুর কারণ হবে। একথা শুনে কংস নব-বিবাহিত দম্পতিকে কঠোর নিরাপত্তায় বন্দি করে রাখেন। এরপর থেকে দেবকীর জন্ম নেয়া প্রতিটি সন্তান দুরাত্মা মাতুল কংসের হাতে নিহত হয়। বসুদেব তার অষ্টম নবজাত সন্তানকে নিয়ে গোপনে রাত্রে নদী পার হয়ে গোকুলের গো-পালক সম্প্রদায়ের কাছে লালনপালনের জন্য দিয়ে এলে সন্তানটি মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায়। কৃষ্ণ এই গো-পালক সম্প্রদায়ে নন্দ ও তাঁর স্ত্রী যশোধার সন্তান হিসেবে বড় হন। 

কংসের বোন অথবা দুধ-মা পুতানা তাঁর বুকের বিষাক্ত দুধ পান করিয়ে শিশু কৃষ্ণকে হত্যা করার চেষ্টা করলে কৃষ্ণ তাঁর স্তন কামড়ে ধরে এই দানবীকে হত্যা করেন। এরপর কৃষ্ণ একটি প্রচণ্ড দুষ্টু বালক হিসেবে গোকুলে বেড়ে ওঠার পাশাপাশি অল্প বয়সেই নানা পরাক্রমও প্রদর্শন করেন। পাঁচমাথাবিশিষ্ট নাগ কালীয় যমুনা নদীর একটি হ্রদের পানি এতই বিষাক্ত করে তুলেছিল যে সেই পানি মানুষ ও পশুর ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। কৃষ্ণ সেই হ্রদে ডুব দিয়ে সেই কেউটে-দানবকে দমন করেন, কিন্তু তাকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকেন। 

মথুরার বিপরীত দিকে নদীরতীর থেকে গোকুল প্রতি বছর বর্ষাকালে গোবর্ধন পর্বতের উচ্চভূমিতে স্থানান্তরিত হতো। এজন্য গো-পালকদের এই বাৎসরিক উৎসবে ইন্দ্রের প্রতি বলি দেয়ার রীতি ছিল। কৃষ্ণ এই প্রথা পরিবর্তন করে গোবর্ধন পর্বত ও গো-পূজা প্রচলন করেন। এতে ক্রোধান্বিত হয়ে বৃষ্টির দেবতা ইন্দ্র দলত্যাগী গো-পালকদের ওপর মুষল বর্ষণ করতে শুরু করলে দৈবক্ষমতাসম্পন্ন তরুণ কৃষ্ণ অবলীলাক্রমে হাতের এক আঙুল দিয়ে গোবর্ধন পাহাড় উত্তোলন করে তা দিয়ে গোকুল শিবিরকে আড়াল করেন ও ইন্দ্রের ক্রোধ থেকে গোকুলের মানুষ ও পশুকূলকে রক্ষা করেন। 

আরও কিছু দানব সংহার করার পর এই পরাক্রমশালী যুবক ও তাঁর অধিকতর শক্তিশালী বৈমাত্রেয় ভ্রাতা বলরামের* সুনাম মথুরা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এই যুবককে দেবকীর সন্তান বলে সন্দেহ হওয়ায় কংস একটি প্রকাশ্য মল্লযুদ্ধ আয়োজন করেন যেখানে প্রশিক্ষিত মল্লযোদ্ধাদের দিয়ে কৃষ্ণ ও বলরামকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। মল্লযুদ্ধে যোগ দিতে দুই ভাই সদম্ভে মথুরায় প্রবেশ করেন। মল্লভূমিতে রাজার মল্লদের ধ্বংস করার পর কৃষ্ণ কংসকে সিংহাসন থেকে টেনে এনে প্রকাশ্যে হত্যা করে দৈববাণীর সত্যতা প্রমাণ করেন। এই সংবাদ পেয়ে কংসের শ্বশুর মগধের জরাসন্ধ প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মথুরার দিকে অগ্রসর হন। জরাসন্ধের মথুরার দিকে অগ্রসর হওয়ার সংবাদ পেয়ে পুরো যদু গোত্র নিরাপদ দূরত্বে পালিয়ে যায় এবং দ্বারকায় নতুন বসতি গড়ে তোলে। এরপর থেকে দ্বারকা যদুবংশের আবাসস্থলে পরিণত হয়। 

২. কিংবদন্তি : দ্বিতীয় পর্ব 
এই যদুনায়ক অন্যদিকেও তাঁর পুরুষত্ব প্রদর্শন করেছিলেন। গো-রাখাল হিসেবে গোপি গোয়ালিনীদের সঙ্গে তিনি বিহার করতেন। তিনি অবিশ্বাস্য সংখ্যক সুন্দরী ও আধা-ঐশ্বরিক নারীকে বিবাহ করেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন বিদর্ভের রাজকুমারি রুক্মিনী, ‘ভলুক’ রাজার কন্যা জাম্ববতী, নরকাসুরের কবল থকে মুক্তিপ্রাপ্ত ১৬,০০০ মানব-রূপিনী অপ্সরা। তাঁর মোট ১৬১০৮টি বৈধ বিবাহ থেকে ৮০,০০০ পুত্র জন্ম নেয়। কৃষ্ণ আসলে তাঁর পুরো দেশেরই জনক ছিলেন।

এরকম সময় পাণ্ডু রাজার পাঁচ পুত্রের সঙ্গে কৃষ্ণের বন্ধুত্ব হয় এবং কৃষ্ণ আগুন দিয়ে আদিম বন পরিষ্কার করতে তাঁদের সাহায্য করেন। অর্জুন কৃষ্ণের বৈমাত্রেয় ভগিনী সুভদ্রার** প্রেমে পড়ে গেলে ভ্রাতা তাঁর ভগিনীকে অপহরণ করার জন্য অর্জুনকে উপদেশ দেন। অর্জুন সুভদ্রাকে অপরণের সংবাদ জানতে পেরে যদুগণ তাঁদের দীর্ঘপথ ধাওয়া করে এবং দু’জনের যথাযথভাবে বিবাহের পর বন্ধুত্বের মধ্য দিয়ে বিষয়টি শেষ হয়। তারপর অর্জুন এবং সবচেয়ে শক্তিশালী পাণ্ডব ভীমকে সঙ্গে নিয়ে কৃষ্ণ মগধের রাজধানী রাজগীরে পৌঁছান। তাঁরা ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে নগরে প্রবেশ করেন। সেখানে খালি হাতে এক দীর্ঘ ও প্রচণ্ড যুদ্ধে ভীম জরাসন্ধকে হত্যা করেন। কিছুকাল পরে, জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞানুষ্ঠানে কৃষ্ণ তাঁর নিন্দাকারী চেদীরাজ শিশুপালের শিরশ্ছেদ করেন । 

শিগগিরই পাণ্ডুর পুত্রদের সঙ্গে তাঁদের কুরু জ্ঞাতিভ্রাতাদের মহাভারতের যুদ্ধ শুরু হয়। যদুবাহিনী যুদ্ধে কুরুদের পক্ষে যুদ্ধ করে, বলরাম যুদ্ধে কোন পক্ষ অবলম্বন করতে অস্বীকার করেন এবং কৃষ্ণ অর্জুনের রথের নিতান্ত সাদাসিদে সারথি হিসেবে পাণ্ডুদের পক্ষে যোগ দেন। যুদ্ধের পূর্ব মুহূর্তে অর্জুন অস্ত্র ত্যাগ করেন এবং আত্মীয়দের হত্যা করার এই যুদ্ধ করতে অস্বীকার করেন। কৃষ্ণ তখন এক দীর্ঘ ও বিখ্যাত কথোপকথনের (‘ভগবত-গীতা’), মাধ্যমে ক্ষত্রিয় হিসেবে যুদ্ধ ধর্ম পালনে অর্জুনকে সম্মত করান। গীতার এক পর্যায়ে এই কৃষ্ণবর্ণ সারথি নিজেকে স্রষ্টা ও সংহারকারী সর্ব-দেবতা হিসেবে প্রকাশ করেন। তবে যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে কৃষ্ণ যেসকল উপদেশ প্রদান করেন তা গীতার উচ্চ নৈতিকতার সঙ্গে অদ্ভুত রকম অসঙ্গতিপূর্ণ ছিল। কুরুপক্ষের প্রত্যেক অপরাজেয় বীরকে কাপুরুষোচিত এমনকি দুরভিসন্ধিমূলক পদ্ধতিতে হত্যা করা হয়। কৃষ্ণ তাঁর দেয়া এসব উপদেশের সমর্থনে কেবল একথাই বলেন যে—এছাড়া যুদ্ধ জয় করা সম্ভব হতো না।  

এসবের একটি দুঃখজনক ও অপমানজনক পরিণতি হয়েছিল। কুরুক্ষেত্রের মহাসমরের ৩৬ বছর পর দ্বারকায় মাতাল হয়ে মারামারি করে যদুবংশীয় শেষ পুরুষটি পর্যন্ত একে অন্যকে হত্যা করে, যা কৃষ্ণ ও বলরামের 

ঠেকানোর ক্ষমতা ছিল না। বলরাম সমুদ্র তীরে গিয়ে তাঁর ভেতরের নাগ-দানবকে প্রকাশ করেন। তখন সমুদ্র থেকে নাগের দল তাঁর নাগ-আত্মাকে অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে আসে। কারণ এটি খুবই আশ্চর্যজনক হলেও কৃষ্ণের এই শক্তিশালী, সরল, ন্যায়পরায়ণ ভ্রাতা ছিলেন মহান আদি নাগের মূর্তিমান রূপ, যে নাগ তার মাথায় পৃথিবী ধারণ করে সমুদ্র থেকে উত্তোলন করেছেন। 

এর পরপরই কৃষ্ণ অরণ্যে এক বন্য শিকারী জারাস কর্তৃক নিহত হন, যার নিক্ষিপ্ত শর কৃষ্ণের পায়ের গোঁড়ালি বিদ্ধ করে। এই জারাস আসলে কৃষ্ণের সৎ ভাই, বাসুদেবের অন্য স্ত্রীর পুত্র। দ্বারকা থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে বিধবা যদুবংশীয় নারীগণ আভীর গোত্রের লোকজন কর্তৃক অপহৃত হন। অর্জুন এই নারীদের পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু আভীরদের আক্রমণের মুখে তাঁর বিখ্যাত ধনুকে জ্যা সংযোগ করার ক্ষমতাটুকুও তিনি হারিয়ে ফেলেন! 
  
৩. সময় ও স্থান
সুনির্দিষ্ট একটি সময়ে কৃষ্ণ ও কৃষ্ণ উপাসনার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় একটি বিদেশি সূত্র থেকে। তক্ষশিলার ইন্দো-গ্রিক রাজা আন্তিয়ালকিদাস (Antialkidas)-এর দূত হেলিওদরাস শুঙ্গ রাজা ভগভদ্র-এর শাসনামলে ভিলসায় (বিদিশা) একটি স্তম্ভ নির্মাণ করেছিলেন। এর তারিখ আনুমানিক ১৪০ খ্রিস্টপূর্ব। গ্রিক হেলিওদরাস নিজেকে ‘ভগবত’ বলে উল্লেখ করেন, যা দ্বারা সেসময় বুদ্ধের অনুসারী বুঝাত। হেলিওদরাস এটি পরিষ্কার করেন যে, তিনি স্তম্ভটি উৎসর্গ করেছেন ‘দেবতাদের দেবতা’, বাসুদেবের পুত্রের প্রতি। এ থেকে বোঝা যায়, খ্রিস্টপুর্ব দ্বিতীয় শতকে এখনকার মতো ভক্তিরূপে না হলেও, একটি শক্তিশালী কৃষ্ণ উপাসনার ধারা বহমান ছিল এবং বিদেশিরাও এতে যোগ দিতে পারতেন।  

এর আগে আলেকজান্ডারের সঙ্গীরা জানিয়েছিলেন যে পাঞ্জাবের সমভূমি অঞ্চলে খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে প্রধানত ভারতীয় হেরাক্লিস (Heraklis)-এর উপাসনা হয় এবং পূর্ববর্তী দেবতা ডিয়োনিসসকে (Dionysus) ঠেলে পাহাড়ি এলাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এই হেরাক্লিস উপাসনার কেন্দ্র ছিল ‘সুরসেনদের এর মথুরায়’। এই ভারতীয় হেরাক্লিস যে কৃষ্ণ এতে কোন সন্দেহ নেই। ‘কৃষ্ণ’ অর্থ কালো আর হারকিউলিসও সূর্যের আলোতে পুড়ে কালো হয়েছিলেন। যাদের নিকট তিনি তাঁর কৃতিত্ব প্রদর্শন করতেন এমন সকল মরণশীলের চেয়ে হেরাক্লিস শক্তিশালী ছিলেন। তিনিও অনেক জলদেবীর (nymph) সঙ্গে সঙ্গম করেছেন বা তাদের বিয়ে করেছেন এবং কৃষ্ণের মতো তাঁর মর্যাদাও নর-দেবতার। 

এই কিংবদন্তির আরেকটি বিষয় ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। অর্জুন কর্তৃক কৃষ্ণের বৈমাত্রেয় ভগিনী সুভদ্রা-হরণের ঘটনা এবং সবশেষে যদু রমণী অপহরণের লজ্জাজনক অভীর-পর্ব আসলে বধূ-লুন্ঠন প্রথাই নির্দেশ করে যা পৃথিবীর অনেক স্থানেই প্রচলিত ছিল—যেমন রোমান পুরাকথার স্যাবাইন নারীদের অপহরণের কাহিনি। আভীর একটি ঐতিহাসিক গোত্র, আদিতে পশুচারী এই গোত্র থেকেই বর্তমান আহীর জাতির উৎপত্তি। বধূ-লুন্ঠনের প্রথা হয়তো তাদের মধ্যে, যদুদের মধ্যে ও গোকুলের অন্যান্য লোকদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। কৃষ্ণের পালক-পিতা নন্দের একজন পূর্ব-পুরুষের নাম ছিল আভীর-ভানু। 

কৃষ্ণের কিংবদন্তির সময়কালকে আরেকটু পিছিয়ে দেয়া যেতে পারে। এই কৃষ্ণবর্ণ দেবতার বিশেষ অস্ত্র ছিল ‘চক্র’—একটি গোলাকার ধারালো চাকতি যা ছুঁড়ে শত্রুর মুণ্ডুচ্ছেদ করা যেত—যেমন শিশুপালের করা হয়েছিল। এই অস্ত্রটি বৈদিক যুগের নয় এবং বুদ্ধের বেশ আগে থেকেই এই অস্ত্রটি আর ব্যবহার হতো না। মির্যাপুর জেলার একটি গুহাচিত্রে দুই ঘোড়ায় টানা একটি রথ থেকে একজন যোদ্ধাকে এই চক্র ছুঁড়তে দেখা যায়। এই চিত্রের সময় অনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ অব্দ হতে পারে এবং কোনভাবেই  খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দের পূর্বের হবে না। যেহেতু এই গুহাটি মগধ অঞ্চলের মধ্যে পড়ে, হয়তো এখানে কোন আক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল যা থেকে অনেক পরবর্তীকালের জরাসন্ধ হত্যার পুরাকথা সৃষ্টি হয়েছিল। 

আবার আদি কিংবদন্তির দ্বারকা সমুদ্র-তীরবর্তী ছিল না সৌরাষ্ট্রেও (গুজরাটের সুরাট) ছিল না। জরাসন্ধের তাড়া খেয়ে মথুরা থেকে সৌরাষ্ট্রের বর্তমান দ্বারকায় যেতে হলে যদুগণকে রাজস্থানের মরুভূমি পার হতে হতো। এতে পশুপালের এবং সম্ভবত মানুষেরও ব্যাপক প্রাণহানি ঘটত। মহাভারতে কয়েকবার জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে দ্বারকা ছিল মথুরার পশ্চিম দিকে। আফগানিস্তানে দ্বারভাজ এর মতো স্থান আছে যার নামের অর্থ দ্বারকার অনুরূপ—‘বহুদ্বারবিশিষ্ট’। সুরাটের সমুদ্রতীরবর্তী দ্বারকা একটি পরবর্তী উদ্ভাবন, যেরূপ পরবর্তী উদ্ভাবন মধ্যযুগের যাদবদের প্রাচীন বংশধারা বিলুপ্ত যদুবংশে সনাক্ত করা।   

৪. ঐতিহাসিক অর্জন 
এখন ৮০০ খ্রিস্টপুর্বে দিল্লি-মথুরা-মিরাট এই ত্রিভুজাকৃতি অঞ্চলের পরিস্থিতি কেমন ছিল বিবেচনা করা যাক। পশ্চিমে পাঞ্জাবের বিস্তৃত সমতলভূমিতে তখন পিতৃতান্ত্রিক গোত্র বাস করত। তারা মূলত পশুচারী হলেও সামান্য কৃষিও করত। এই আর্যরা নিজেদের মধ্যে অবিরাম যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত থাকত বলে এসব এলাকায় ইন্দ্র বা অন্য কোন বৈদিক দেবতার উদ্দেশ্যে প্রচুর গরু ও অন্যান্য পশু উৎসর্গ করে বিরাট অগ্নি-যজ্ঞ করা কঠিন হয়ে পড়ে। পূর্বদিকে বিস্তৃত ছিল অন্তহীন গাঙ্গেয় বনভূমি। অতি সামান্য সংখ্যক অগ্রণী দল এই গভীর জঙ্গলে কোনোক্রমে প্রথমবারের মতো প্রবেশ করে এবং নদীর তীর ধরে নেপালে পর্বতের পাদদেশে কয়েকটি ক্ষুদ্র জনপদ গড়ে তোলে। কৃষ্ণের এই অঞ্চলে বহু ও বিভিন্ন দ্বন্দ্বমুখর গোত্র সম্মিলিত হয়েছিল : পশুপালনকারী বৈদিক আর্য, সাধারণত নাগ নামে পরিচিত খাদ্য-সংগ্রহকারী আদিবাসী এবং প্রান্তিক বনভূমি আগুনের সাহায্যে পরিষ্কার করে কৃষিকাজ শুরু করা প্রথম মিশ্র দলসমূহ। তখনো লৌহ ছিল দুর্লভ এবং ব্রোঞ্জ কৃষিকাজের সরঞ্জাম তৈরির জন্য ব্যয়বহুল। তবুও সেই সমাজ একটি প্রকৃত খাদ্য-উৎপাদক সমাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারত কেবল যদি নানা গোত্র নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ থামিয়ে প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতার—যেমন বিশাল আদিম বনভূমির—বিরুদ্ধে একত্র হতে পারত।  

পুতানা একজন মাতৃ-দেবতা। তার নামে এমনকি ঐতিহাসিক সময়েও মথুরা জেলার একাংশের নাম ছিল। পুতানার ‘হত্যা’ আসলে ছিল কিছু মাতৃতান্ত্রিক উপাসনা ধারা এবং এর অনুসারীদের বিরুদ্ধে পশুচারী জনগোষ্ঠির সহিংসতা। এক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কংসের কাহিনি সহজেই ব্যাখ্যা করা যায়। মাতৃতান্ত্রিক পর্যায় থেকে বিকশিত হওয়া কিছু গোত্রে একজন ব্যক্তির প্রধান উত্তরাধিকারী ছিল তার বোনের ছেলে, তার নিজের ছেলে নয়। তাছাড়া কোন গোত্রের নেতা হতে হলে তাঁকে প্রায়ই তাঁর পূর্বসূরীকে হত্যা করেই তা হতে হতো। এ থেকেই বোঝা যায় কংসকে কেন জনসমক্ষে হত্যা করতে হয়েছিল। 

দ্বন্দ্ব-সংঘাত থেকে ঐক্যের পথে একটি পদক্ষেপ ছিল বিবাহ। বিবাহের কারণে পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক ধারার মধ্যে মিলন হতো এবং দু’দল পরস্পরবিরোধী লোক অভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনার মাধ্যমে একত্রিত হতো। কৃষ্ণের দুটি উপাখ্যানের একটিতেও কৃষ্ণের প্রধান প্রেমিকা রাধার স্থান হয়নি! কারণ রাধা হলো পূর্বদেশীয় মাতৃ-দেবতা। কৃষ্ণ উপাসনার ধারা বাংলা পর্যন্ত প্রসারিত হওয়ার পরই কেবল কৃষ্ণের কাহিনিতে রাধাকে অঙ্গীভূত করার প্রয়োজন হয়েছে। কৃষ্ণ এখন প্রতি বছর মহাধূমধাম করে তুলসী গাছকে বিয়ে করেন। এই পবিত্র গাছের আরেক নাম ‘বৃন্দা’ এবং মধুরার নিকটবর্তী সবচেয়ে পবিত্র স্থান বৃন্দাবন। এই নামের আক্ষরিক অর্থ হলো ‘দেবী-বৃন্দের কুঞ্জবন’। কৃষ্ণের বৃন্দাকে বিয়ে করতে হয়েছিল তার লোকদের জন্য পেশার অধিকার, অর্থাৎ গোকূলে গো-রক্ষকের কাজের অধিকার, অর্জনের জন্য। এই বিবাহ উৎসব প্রতি বছর হওয়ার অর্থ ছিল যে একসময় এই দেবীর (অর্থাৎ দেবীর মানবিক প্রতিনিধির) স্বামীকে বলি দিতে হতো এবং নতুন বিবাহ সম্পন্ন করা হতো। যে বিশেষ বেদীর উপর ভারতে সাধারণত তুলসী গাছ রোপণ করা হয় সেগুলো আসলে শৃঙ্গযুক্ত বলির বেদী, যা পৃথিবীর আরও অনেক দেশেও দেখতে পাওয়া যায়। 

ইতোমধ্যে আমরা প্রাগৌতিহাসিক সময় থেকে ইতিহাসের সময়ে স্থানান্তরিত হয়েছি। ইত্যবসরে বিভিন্ন নায়কের হরেকরকম কীর্তিকাহিনি নানা উপকথার আকারে একীভূত হয়ে কৃষ্ণের পুরাকথা নির্মাণ করেছে। 

৫. কৃষিতে উত্তরণ  
ইন্দ্রের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এর অর্থ হলো বৈদিক পশুচারীদের যজ্ঞাদির স্থলে কৃষিবিদ সমাজের জন্য উপযুক্ত উপাসনার ধারার প্রবর্তন। গ্রিকদের বর্ণিত ডিয়োনিসস (Dionysos) আসলে বৈদিক ইন্দ্র। ডিয়োনিসস হলেন মদ্যের দেবতা। আর সোমরসের প্রতি ইন্দ্রের আসক্তির কথা সারা ঋগ্বেদে ছড়িয়ে আছে। আলেকজান্ডারের সঙ্গীদের বর্ণনা অনুযায়ী কৃষ্ণ যে পাঞ্জাবের সমভূমি থেকে ইন্দ্র-উপাসনা বিদূরিত করেছিলেন তা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এর থেকে বোঝা যায় আর্যদের পুরোনো অনেক প্রথাই আলেকজান্ডারের সময় অচল হয়ে পড়েছিল এবং পশুচারণ এবং ইন্দ্রের প্রতি উৎসর্গ-ভিত্তিক উপাসনা পদ্ধতি প্রতিস্থাপিত হয়েছিল কৃষি এবং কৃষি সম্পর্কিত নতুন উপাসনা পদ্ধতি দ্বারা। পূর্বে বৈদিক আর্যরা পশুচারণ সম্পূরক কাজ হিসেবে সামান্য কৃষি করতো; এখন কৃষিই হলো খাদ্যের প্রধান উৎস এবং পশুচারণ একটি সম্পূরক কার্যকলাপ। এখন বিপুল পরিমাণ গবাদিপশু যজ্ঞে উৎসর্গ করলে  কৃষি অসম্ভব রকম অলাভজনক হয়ে উঠত। 

বাকি রইল অরণ্যের শান্তিপ্রিয় অসভ্য নাগ জনগোষ্ঠি। তারা  বনে-জঙ্গলে খাদ্য সংগ্রহ করে জীবনযাপন করত। এদের কৃষিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়েছিল  শান্তিপূর্ণভাবে। কারণ আক্রান্ত হলে তারা সহজেই অরণ্যে পশ্চাদপসরণ করতে পারত। কৃষ্ণ কর্তৃক কালীয় নাগ দমন একটি আগ্রাসনের এবং বলপূর্বক দখলের ঘটনা। এখানে আবার আদিম ধারার আত্মীকরণ ঘটল বলরামের দ্বারা, বলরামকে আদিনাগের অবতার বানিয়ে। বলরাম সংকর্ষণ (অর্থ কৃষিকর্ম), হলধর নামেও পরিচিত। বলরামের বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন হলো লাঙল, কোন যুদ্ধাস্ত্র নয়। আজ পর্যন্ত ভারতীয় কৃষকদের প্রিয় জমির অভিভাবক বা ক্ষেত্রপাল হলো পবিত্র গোখরা, যা আবার বিষ্ণুর শয্যা এবং শিবের গলার মালা। 

সুবিশাল যুদ্ধ-মহাকাব্য মহাভারত-এ কৃষ্ণের বংশবৃত্তান্ত পাওয়া যায় কেবল একটি শেষদিকের সংস্করণে, হরিবংশ নামক পরিশিষ্টে। এই বইটি মহাকাব্যের কোন অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়। কিন্তু নাগদের কুলুজি মূল মহাকাব্যের একেবারে প্রথম দিকে পাওয়া যাচ্ছে। মহাভারত-এর যা টিকে আছে সেটুকুর দিকেই তাকিয়ে দেখলে মনে হবে—এটি ঠিক একটি মহা যুদ্ধের কাহিনি নয়। এটি পুরোহিত আস্তিকের আসাধারণ বুদ্ধিমত্তায় জনমেজয়ের সর্পযজ্ঞ থেকে কীভাবে নাগগণ রক্ষা পেল তারই কাহিনি। এই তরুণ ব্রাহ্মণ আস্তিক ছিলেন এক নাগমাতার সন্তান, কিন্তু বর্তমান বর্ণপ্রথার সকল নিয়মের বিপরীতে ব্রাহ্মণ হিসেবে বিবেচিত হন! জনমেজয়ের প্রধান পুরোহিতেরও ব্রাহ্মণ পিতা ও সর্পী মাতা ছিল। অর্থাৎ সেসময় থেকেই নাগদের আত্মীকরণ শুরু হয়েছে। ভগবত গীতা শ্রীকৃষ্ণের মুখে থেকে বের করা হয়েছিল কেবল এই কারণে যে, ততদিনে খাদ্য-উৎপাদনকারীদের মধ্যে তাঁর শক্তিশালী অনুসারী তৈরি হয়েছে কারণ তিনি যজ্ঞে ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে গবাদি-পশু বলি দেয়ার প্রথা রহিত করেছেন, তিনি স্থানীয় মাতৃদেবতার পতি এবং যদুবংশের পিতৃ-দেবতা।  

কাজেই কৃষ্ণ কোন একক ঐতিহাসিক চরিত্র নয়, বিভিন্ন আধা-পৌরাণিক নায়কের সংমিশ্রণ, যারা নতুন খাদ্য-উৎপাদনকারী সমাজ গঠনে সাহায্য করেছে। এই কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৮০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে পরবর্তী সময়ে। যখন হেলিওডোরাস তাঁর স্তম্ভ উৎসর্গ করেন তখনো বলরাম ও অন্যন্য যদু নায়কগণ শুঙ্গ আমলের ভাস্কর্যে কৃষ্ণের সমান সম্মান পাচ্ছেন। কিন্তু চতুর্থ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গীতা রচিত হওয়ার পর কৃষ্ণ ধর্মীয় দর্শনের উৎস হিসেবে এবং শঙ্করাচার্য থেকে মহাত্মা গান্ধী পর্যন্ত বিখ্যাত ভারতীয় চিন্তবিদদের অনুপ্রেরণা হিসেবে এক নতুন উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হন। 

*বলরাম বসুদেবের প্রথম স্ত্রী এবং যশোদার ভগিনী রোহিনীর সন্তান।
**সুভদ্রা বলরামের সহোদরা। বসুদেবের প্রথম স্ত্রী রোহিনীর সন্তান।  

অনুবাদকের নোট :
১. মহাভারতে বর্ণিত খাণ্ডব বন। আগুন দিয়ে এই বন পরিষ্কার করার পর সেখানে পাণ্ডবদের রাজধানী ইন্দ্রপ্রস্থ তৈরি হয়। এলাকাটি বর্তমান  দিল্লির ‘পুরানা কিল্লা’ এলাকা বলে মনে করা হয়। 
২. ডি. ডি. কোসাম্বী তাঁর The Culture and Civilization of India in Historical Outline গ্রন্থে লিখেছেন : ‘যে পদ্ধতিতে কৃষ্ণের মৃত্যু হয়েছিল তা ভারতীয় পুরাকথার চেয়ে গ্রিক পুরাকথায় বেশি পরিচিত। এই যদু নরদেবতার মৃত্যু হয়েছিল পায়ের গোড়ালিতে একটি তীর বিদ্ধ হয়ে। সেই তীরটি নিক্ষেপ করেছিল এক বন্য শিকারী জারাস, যে আবার ছিল তাঁর বৈমাত্রেয় ভ্রাতা।  ভারতীয়রা এখনো বুঝতে পারে না এমন একটি জখম কিভাবে মৃত্যু ঘটাতে পারে। একিলিসের এবং আরও অনেক প্রাচীন গ্রিক পৌরাণিক বীরের কাহিনিতে আছে যে এরকম অদ্ভুত মৃত্যু একটি আচারমূলক হত্যা (ritual killing) এবং বিষাক্ত অস্ত্র দিয়ে কোন ভ্রাতা (বা উত্তরাধিকারী) কর্তৃক তা সাধিত হয়।’ 
৪. রোমান পুরাকথায় রোমানদের দ্বারা স্যাবাইন নারীদের অপহরণের কাহিনি আছে। রোমান ঐতিহাসিক লিভির মতে এই ঘটনা ঘটেছিল অষ্টম খ্রিস্টপুর্বে। রোম নগরী তৈরি হওয়ার পর সেই নগরী প্রধানত বিভিন্ন ইতালীয় জনগোষ্ঠির পুরুষ অধ্যুষিত ছিল। পার্শ্ববর্তী জনগোষ্ঠির লোকজন তাদের নারীদের রোমানদের নিকট বিবাহ দিতে অসম্মত ছিল। রোমের জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য রাজা রমুলাস উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং তাঁর ইঙ্গিতে রোমে আয়োজিত একটি উৎসব থেকে রোমানরা স্যাবাইন জনগোষ্ঠীর নারীদের বলপূর্বক অপহরণ করে এনে বিবাহ করেছিল। 
৫. ডি. ডি. কোসাম্বী তাঁর পূর্বোক্ত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে মধ্যযুগের যাদবগণ (Yadavs or Jadhabs) আসলে ভূঁইফোড়। অর্থের বিনিময়ে ব্রাহ্মণরা এদের প্রাচীন যদু বংশের সঙ্গে সম্পর্কিত করে তাদের জন্য অস্বাভাবিক বংশবৃত্তান্ত তৈরি করেছিলেন। 
৬. ডি. ডি. কোসাম্বী তাঁর পুর্বোক্ত গ্রন্থে বলেছেন যে, ‘নাগ’ বলতে জঙ্গলে বসবাসকারী আদিবাসীদের বোঝাতো। গোখরা সাপ এসব আদিবাসীদের টোটেম ছিল বলেই তাদের এমন নাম হয়। গাঙ্গেয় এলাকার ঘন জঙ্গলের জন্য আর্যদের পক্ষে এসব অরণ্যচারীদের পরাজিত করে দাসে বা শূদ্রে পরিণত করা সম্ভব হয়নি। যতদিন তারা মুক্ত ছিল এবং জঙ্গলে খাদ্য সংগ্রহ করে জীবনযাপন করতো ততদিন আর্যরা তাদের কোন বর্ণপ্রথায় অন্তর্ভুক্ত করে নিম্নবর্ণে অবনমিত করেনি।


চৌধুরী মুফাদ আহমদ প্রাবন্ধিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে ও যুক্তরাজ্যের মাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রশাসনে লেখাপড়া করেছেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন ২০১৮ সালে। সাহিত্য-সংস্কৃতি-ইতিহাস বিষয়ে প্রবন্ধ লেখেন। প্রাচীন ভারতের সামাজিক ইতিহাস ও পৌরাণিক সাহিত্য তাঁর বিশেষ আগ্রহের ক্ষেত্র । বিদ্যাসাগরকথা  তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ।

menu
menu