জিগনিভ হার্বাট-এর কবিতা

[জিগনিভ হার্বাট ১৯২৪ সালের ২৯ অক্টোবর ইউক্রেনের লিবিব শহরে জন্মগ্রহণ করেন। জিগনিভ হার্বাটের কবিতা আধুনিক পোলিশ কবিতা সংকলন-১ এ প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে প্রকাশিত হয়েছিলো। এর কয়েক বছর পরে ১৯৬৮ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয় “হার্বাটের নির্বাচিত কবিতা”। ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত এই বইটি ইংল্যান্ড এবং আমেরিকা থেকে একই সময়ে প্রকাশিত হয়। এর পরপরই হার্বাট ধীরে ধীরে পরিচিত হতে থাকেন।  কবিতা অনূদিত হতে থাকে বিভিন্ন ভাষায়। বলা বাহুল্য ১৯৮১ সালের ডিসেম্বর মাসে কমিউনিস্ট বিরোধীদের সামরিক আইন লঙ্ঘনের পর হার্বাটের কবিতার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। এই সময় গোপনে অনুষ্ঠিত সলিডারিটি আন্দোলনের মিটিং-এ তাঁর কবিতা আবৃত্তি করে শক্তি-সাহস সঞ্চয় করতেন আন্দোলনকারীরা।

হার্বাট-এর কবিতাগুলোর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কাল্পনিক এবং প্রাণবন্ত, যা স্বতন্ত্র এক আধুনিকতাবাদী চেতনায় রচিত। কবিতাগুলো সম্পর্ক তৈরি করেছে অতীতের কিছু চরিত্রের সঙ্গে বর্তমান সময়ের। জিগনিভ হার্বাটের কবিতা ৩৮টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি ১৯৯৮ সালের ২৮ জুলাই পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশোতে মৃত্যুবরণ করেন।]

 

ঘড়ি

প্রথম দৃষ্টিতেই চোখে পড়ে মিলারের প্রসন্ন চেহারা, দেখতে একটি আপেলের মতো তাজা এবং ঝকঝকে। একমাত্র এবং একজন অন্ধ উত্তরাধিকারী তাকে নিঃশব্দে পার হয়ে যায়, এবং তুমি যদি তার ভেতরের দিকে তাকাও: দেখবে একটি কীটপতঙ্গের বাসা, উঁইঢিবির জরায়ু। এটা দিয়ে কি অনুমান করা যায় পথপ্রদর্শক আমাদের অনন্তকালের দিকে নিয়ে যাবে?

 

বিলাপ

আমার মায়ের স্মৃতির প্রতি

এখন তার মাথার উপর বাদামি রঙের মেঘ

এবং হালকা লবণের প্রলেপ তার মন্দিরের উপর--

একটি বালির জপমালা হাতে

সে যখন নিচের দিকে নৌকা বেয়ে যায় ফেনাময় কুয়াশার মধ্য দিয়ে।

 

ঠিক আমাদের মাইলখানেক পিছনেই রয়েছে নদীর একটি বাঁক

দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান আলোর মতো

ঢেউ-এর উপর

সত্যিই সে অন্যরকম না--পরিত্যক্ত আমাদের সবার মতো।

 

স্বপ্নের ভাষা

যখন আমি ঘুমাই

অন্য সবার মতো

সূর্য উঠার আগে

আমি ঘড়ির কাঁটায় ঘোরি

 

আমি বসে আছি একটা সাদা জাহাজের উপর

ঢেউ আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে

সাদা জাহাজ থেকে

আমি একটি চাবি খুঁজছি

আমি একটি ড্রাগন হত্যা করেছি

অথচ সে হাসছে

আমি একটি বাতি জ্বালিয়েছি

কিন্তু সব কিছুর ওপরে

আমি অনর্থক কথা বলছি

আমি সন্দেহ করছি

আমার সব স্বপ্ন একটা ছবির মধ্যে

কিন্তু আমি ঘুরছি

মাতাল সব সুতার ঘূর্ণিপাকে

যেন ঘুমাচ্ছি

একটা ছোট পাহাড়ী

বর্ণনার মধ্যে

কিন্তু এটা কি

স্বপ্নের ভাষা

যেমন হওয়া উচিত

একটি সুন্দর ভাষা

দীর্ঘ একটি হাতের মতো

খোলামেলা

যদি অবজ্ঞা করো ব্যাকরণ

শব্দতত্ত্বের নীতি

তা হবে ব্যঙ্গবিদ্রূপের ভাষা

সে ভাষা আমি জানি না

 

যখন আমি ঘুমাই

বিড়ালের ঘরে

ব্রোঞ্জের শরীর

কাঁপতে কাঁপতে এক ফালি হয়

আমার চাপা আর্তনাদ

সুমিষ্ট সুরের মতো

 

যখন আমি ঘুমাই

বিড়ালের ঘরে

কোনো কোনো সময় আমার শরীর

কাঁপতে কাঁপতে এক ফালি হয়ে

সুমিষ্ট সুর চাপা আর্তনাদ হয়ে যায়

 

এমন সময়

স্বপ্নের ভাষা

নিজেই নিজেকে লুকিয়ে রাখে

স্বাধীনতার

ক্লান্তিতে

বিশুদ্ধ

মিষ্টি মধুর স্বপ্নের একটি ভাষা

 

সে চুল আঁচড়াচ্ছিলো

সে চুল আঁচড়াচ্ছিলো বিছানায় যাওয়ার আগে

এবং তার আগে আয়না নিয়েছিলো অসীম দীর্ঘ সময়

এক বাহুর মধ্যে ঢুকে আছে অন্য হাতের কনুই

যুগের পর যুগ তার চুল নীরবে ছিটকে পড়া সৈন্য

তাদের মধ্যে দ্বিতীয় জনের নাম আগাস্টাস আন্টোনিনিয়ান

ভেরদুন থেকে সুসজ্জিত বন্দুকধারী সৈন্য কমরেড রোল্যান্ড

তার নীরব সহনশীল আঙুল

তার মাথার উপরে শঙ্কাহীন মুকুট

নিয়েছে দীর্ঘ সময়

যখন সে

আমার দিকে

চূড়ান্তভাবে শুরু করেছে তার শাসন

আমার হৃদয় তখন বাধ্য অনুগত

এখনো দাঁড়িয়ে

এবং আমার চামড়ার ওপরে আমার অনুভূতি

লবণের অমসৃণ দানার মতো।

 

মিউশের প্রতি

সানফ্রান্সিসকো সাগরের উপরে--নক্ষত্রপুঞ্জের আলো

নিচে ফিকে কুয়াশা--যা এই পৃথিবীকে বিভক্ত করেছে বিভিন্ন ভাগে

কে জানে কোনটি সব থেকে ভালো কোনটি খারাপ

অবশ্যই একটিকে চিন্তা করা যায় না

এমনকি গোপনে তারা উভয়ই এক।

 

২.

পরী এসেছে স্বর্গ হতে

ঈশ্বরের গান

যখন সে নিচে নামে

তার ঢালুপথে

উজ্জ্বল নীল স্থানে

রাখে রুচির স্বাক্ষর

menu
menu