আজ্জুবাজ্জু

অঙ্গপতনে, শুনেছে, প্রথমে অসারতা আসে হাতে, ক্রমশ পায়ে অতঃপর মাথায়। পালঙ্কের বাজুটা ভেঙে গেল ওপর থেকে খসে-পড়া শিলিংয়ের চাঙড়ায়, বেঁকে গেলেও ঠোকাঠুকি করে দরজাটা বন্ধ হয় আলমারির, কিন্তু ফ্রিজটা গেল!
ফ্রিজের খোলটাকে কাব্বাড়ওলাদেরও দিয়ে দিতে পারছে না; সাফসুতরো সাজানো আছে, যেন চালু, ভীষণ বিলাসিতায় যাপন করছে জীবন; কেউ দরজা ঠকঠকালে ভীষণ অলসতায় হাই তুলতে তুলতে দরজা খোলে। সমীহ করে কলোনির সকলেই, গাঙ্গুলিকে।
নাচা না, গানা না; সিনেমা সিরিয়াল কিচ্ছু না, টিভিতে তখন তৃতীয় অর্থনৈতিক পাওয়ার হতে চাওয়া ইন্ডিয়া, ব্রিকস সম্মেলন, চাঁদের দক্ষিণ দুয়ারে চন্দ্রায়ন-থ্রি, হেনোতেনো...  প্রতিবেশী ঢুকেই দেখলো ঘরময় গ্লোবাল ভিলেজ, গাঙ্গুলিবাবু কেবল খবর দেখেন।
এহেন গাঙ্গুলি, হপ্তাটেক আগে, রং হারিয়ে লাল হয়ে গেল টিভি, সেটি চালু রেখে, দরজা ঠকঠকালে, প্রতিবেশীকে দরজা খুলে এন্ট্রি দেওয়া যায়? প্রেস্টিজ পাংচার হবে না! 
বউ বলল, টিভিটা অন্তত সারাও,
—সবাই তো খারাপ হলে রিপেয়ার করায়। 
—লাল রং কি খারাপ লাগছে? সাউন্ড পিকচার তো ঠিকই আছে।
মাসে হাজার টাকার গরমে উষ্ণ, বউ, শ্রাগ করে, টাকা আমি দেবো। যাও...
—টাকাটা ফ্যাক্টর নয়...
—যাবে না, সেটাই বলো। আমিই নিয়ে যাবো বিকেলে।
—আচ্ছা যাবো।
—আগে তো রং ছাড়াই দেখতে, মানে ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট?
—টেকনোলজির সুবিধা এনজয় করবে না?
—তা অবশ্য ঠিক।
—আসমানে চাঁদ তারা না থাকলে রাতটাই কি ভালো লাগতো?
গাঙ্গুলি বলে, চাঁদ তারার রং তো একই কালারের।
কী বোকা বোকা কথা। বড় করুণায় তাকায় শ্রীমতী, অত অত নকচারনাল পোয়োট্রি এমনিই কম্পোজ হলো!
উচ্চ মাধ্যমিক ফেল গৃহিণী কত জানে! নিরক্ষর ১২১ জন সাংসদ যদি আইন প্রণেতা হতে পারে, গৃহিণী তো যথেষ্ট শিক্ষিতা। কত কি জানেন গৃহিণী, এতকিছু জানার জন্য মোবাইল একাই একশো, টিভি এখন ব্যাকডেটেড। তাহলে লাল টিভিকে রঙিন করতে গৃহিণীর উৎসাহ কেন?
—টিভিটা লালই থাক।
গাঙ্গুলি ডিসমিস করে দিতে চায় ব্যাপারটা।
—তুমি তো বলবেই সব লাল হয়ে যাক!
মার্ক্সকে বহিষ্কার করবে কে স্বয়ং মার্ক্স যদি পরিচারিকাকেই গর্ভবতী করে দেন? বউ পিটপিট করে তাকায়, তোমার পার্টির বহিষ্কৃত মার্ক্সিস্ট এক তাত্ত্বিক নেতা বলেছেন।
—কী বলেছেন?
—ধন্য তোমার পার্টি!
—আত্মপক্ষ সমর্থন করার স্কোপ পর্যন্ত দিলো না!
—কচি সাংবাদিকার কোলে বসার দরুণ বহিষ্কৃত কমরেড তিনি।
—ও-ও…
গাঙ্গুলি ভাবছে, পি সুন্দরাইয়া নাম্বুদিরিপাদ প্রমোদ দাশগুপ্ত কত কত কমরেড! পার্টিটা কি এখন বিস্মৃতির আর্কাইভ? টিভিতে এত সব ডিটেইলস বলে না। এ যুগ মোবাইলেরই। তুমি জানতে না-চাইলেও বারবার তোমার চোখে আঙুল ঠেকাবে মোবাইল। গৃহিণীর মুখে জ্ঞানের হাসি, ইদানীং ফেসবুক করে, নারীবাদী গ্রুপের মেম্বার, বিশ্বাস করতে শুরু করেছে পুরুষ মাত্রই নারীর শত্রু এবং সবকিছুর পশ্চাতে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র। ওই এক-আধবার ফোন করা ছাড়া গাঙ্গুলি মোবাইল ছুঁতে পায় না। একটি মাত্র ফোন, আসানসোলের পাশটিতে থেকেও বিএসএনএল টাওয়ার জিরো, বাধ্যত জিও। ১৮ দিনে ২০০ টাকা।
—আমি কোনো দলটলে নাই।
—একদা ছিলে কিন্তু।
—তখন তরল ছিলাম।
—চিন্তাই সবচেয়ে বড় ভূদৃশ্য ও বিপ্লব। বুঝলে?
—কিন্তু কোনো শালা চিন্তাটাই করে না।
—করতেও অ্যালাও করে না।
—কেন, দিদি, নবান্নর চৌদ্দ তলায় সারা রাত, কী বিষণ্ন কী তৎপর, কী চিন্তাতুর। জেগে।
—কে বলবে কদিন আগেই তাঁরই পোষ্যরা আরজি কর কাণ্ড ঘটিয়েছে?
—এটা চিন্তা নয়?
—অবশ্যই।
—দিদি তাঁর আদর্শে অবিচল।
সারাবো বললে কি সারানোর জন্য কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া যায়, বিশেষত সবার ঘরেই যখন বড় পর্দার এলইডি টিভি? সম্মান বলে তো কথা আছে।
আসানসোলের মতো গ্রোয়িং আর্বানে, হোক না শহরতলী এবং অথবা কোলিয়ারি, একটি দু’রুমের ঘর বাথরুম কিচেন ড্রয়িংরুম-সহ জল, বিদ্যুৎ,  চিকিৎসা, যা যা পরিষেবা কোল ইন্ডিয়া তার কর্মীদের দেয়, গাঙ্গুলি অভাবিত ফ্রিতে সব পেয়ে গিয়েছিল। অতিথিবৎসল ইসিএল গাঙ্গুলিকেও সমাদরে চিকিৎসা দিয়েছে, তাও ফ্রি, ভাবা যায়?
সম্পত্তি বলতে একটি মাত্র ব্যাগ, যখন কোয়ার্টারে ঢোকে; একটা মাস্টারিও পায়নি এমএ পাশ এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের যুগে, ফলে টিউশন; একটি ব্যাগও বেশি চাকরিবাকরি না-পাওয়া গাঙ্গুলির বিশ্বভুবনে, চটে মোড়া কাঁথা বালিশ; ক্রমে, কোলিয়ারির কাঠে-কপাটে  তক্তাপোষ, বসবাসের কতদিন পর তার একটি সাদাকালো টিভি, কালক্রমে ধার লোন ইন্সটলমেন্ট ইত্যাদি প্রভৃতির  সহায়তায় খেপে খেপে খাট আলমারি শোকেস ফ্রিজ বিয়ে...
খাট আলমারি নয়, একমাত্র ফ্রিজ, স্টেটাস সিম্বল; তারও বছরটেক পর পোর্টেবল কালার টিভি গাঙ্গুলির এচিভমেন্ট। তারপর ২০১১। উড়তে থাকা টাকায়-কয়লায় কত হাভাতে মিলিয়ন ট্রিলিয়নপতি; অনেকেই অনেককিছু, ফাস্ট টার্মেই যথাসাধ্য হয়ে গেছে, যথা টু-হুইলার ফোর-হুইলার, ওয়াশিং মেশিন, এসি, ইনভার্টার, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, কেউ কেউ ত দুবাই সুইস ব্যাঙ্ক...
৫৬ ইঞ্চির মোদি, তাঁহারও অমৃতকাল; গাঙ্গুলির কিন্তু অমরত্ব হয় নাই।
গাঙ্গুলির কিছুই নাই।
প্রোডাকশন ঘাটতি নয়, কোম্পানিকে ওপেন কাস্ট কয়লাখনি খোলার জন্য কোলিয়ারিগুলো বন্ধ হয়ে গেলে অফিসটাও উঠে গেল; পরিচর্যার অভাবে ভেঙে পড়েছে কোয়ার্টারের শিলিং, দেয়াল, পিলার; ছাদে দেয়ালে জেগে উঠছে অরণ্যানী। বটবৃক্ষ। অশ্বত্থ।
মাঝে মাঝে বলে, কোয়ার্টার ছেড়ে দেবো; তবুও গাঙ্গুলি কোয়ার্টারেই আছে।
বউ পুনরায় খোঁচা মারে, যাও!
ডিক্লাসড্ তাহলে হতে হবেই?
তাড়াতাড়ি চান করে, খেয়ে, রিক্সা ডেকে, ২২ বছরের রঙিলা প্রাচীন,  সম্প্রতি বর্ণচ্যুত ধাড়ি শিশুটিকে ঠিকঠাক কোলে তুলে দিতে হাত লাগিয়ে শ্রেণিচ্যুত করলোই যদিদং হৃদয়ং বউ। অসুস্থকে যদ্রূপ অ্যাম্বুলেন্সে তোলে পরমাত্মীয় এমন উদ্বেগ।
—দাঁড়িয়ে থেকে ইলাজ করাবে।
—মিস্তিরিদের তো চেনো...
—টুকটাক সারাসারিতেই অনেক টাকা চেয়ে বসবে...
—মাহিন্দর ভালো লোক।
—অসততা একটা ভাইরাস।
—বেঙ্গলে কেউ অনেস্ট থাকতে পারে না।
—অন্তত এখন, এই রেজিমে।
মাহিন্দর কিন্তু এনাক্রনিজম; একমেবাদ্বিতীয়ম। কালিপাহাড়িতে।  কোনো ফিক্স রেটও নেই, ফিক্স টাইমও নেই, আস্থাও নেই, ভরসাও নেই, কিন্তু সমর্থন আছে; পাশেই একটা নতুন টিভি সারাইয়ের ‘ইলেকট্রন’ নামে পরিপাটি দোকান, মাসকয়েক হয় ওপেন হয়েছে, তবুও পাবলিক ওই মাহিন্দর, ইলেকট্রন মাছি তাড়ায়। টিভিসাউন্ডবক্সফ্যানহেরিফেরি কাচড়াকিচ্চড়ের মাঝখানে জেগে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামের মানুষটি, বড় মমতায় বিগড়ে যাওয়াকে সচল করে, দুশো বললে দেড়শোতেই উপহার দেয় প্রবল প্রাণের সন্তোষজনক হাসি অর্থাৎ এনাফ্। এ মানুষকে পাবলিক ছাড়ে? এহেন মাহিন্দরের কাছে, যখন পৌঁছায়,  মধ্যগগনে সূর্য ও খিদে, কিন্তু ওই হাসিটি, অর্থাৎ কি প্রবলেম।
গাঙ্গুলি তো খেয়ে এসেছে। বলল, রং চলে গেছে।
—বিকালে নিয়ে যাবেন।
—রিক্সা দাঁড় করিয়ে রেখেছি, এখুনি করে দাও।
হাতের কাজ সরিয়ে টিভিটার পেছনে স্ক্রু ড্রাইভার ঘোরায়।
—এই বয়সেও রং ঘুচলো না!!
তাকিয়ে দেখলো, বক্তাটি, একজন যুবক; তারস্বরে ভোজপুরি গান বাজাচ্ছে মেবাইলে নিশ্চয়ই তারই বিগড়ে যাওয়া সাউন্ড সিস্টেম সরিয়ে রেখে গাঙ্গুলির টিভি সারছে মাহিন্দর। বিরক্ত হওয়া স্বাভাবিক। গাঙ্গুলিও হতো। কিন্তু মাহিন্দর। গাঙ্গুলিকে নমস্তে জানায়, আধাঘণ্টায় হো যায়েগা।
মিটার মাপতে মাপতে, আইসি গেছে, নইলে গ্রিড...
তারপরই গভীর নিরীক্ষণে।
—রং ফিরবে, মাহিন্দর?
—ফিরবে স্যার। মনে হয় আইসিই খারাপ।
গাঙ্গুলির চোখ স্ক্রিনে, হুস্ করে ছাড়তে আটকে রেখেছে সমূহ শ্বাস।
কতদূর হলো, যুবকটিও সাগ্রহে দেখছে টিভি সারাই, মোবাইলে সময় দেখছে বারংবার, আধ ঘণ্টার কতটা পেরোল। এটা ছিঁড়ে ওটা জুড়ে একসময় নিয়ে এলো রং এবং চলে গেল তৎক্ষণাৎ। স্থির ও স্থায়ী সত্যের মতো জাজ্বল্যমান আকাশ, টিভিতে কবল শূন্যতা, নীল, ক্রমে গৈরিক।
—টিভিয়ে কুছু দেখবার নাই সার।
—আজকাল টিভি কেউ দ্যাখে না।
মিটার গুটিয়ে রাখে, আপনার গ্রিডটা গেছে।
—আজ আর হবে না।
—কাল নিয়ে যাবেন।
টিভিটা সরিয়ে সাউন্ড সিস্টেম টেনে আনে।
যুবকটি, একটিমাত্র টুল, ছেড়ে দিতে হয়েছে গাঙ্গুলিকে, ফলত দণ্ডায়মান ফলত অধৈর্য; উদ্দাম আওয়াজের জন্য উদগ্রীব অপেক্ষা, ছেড়ে দেওয়া টুলে বসতে বসতে যুবকটি, স্বস্তিতে; কী দেখেন দাদু, টিভিতে?
—টিভিতে বাল দেখায় বাল...
সর্প, রাজা, সিংহ, বোলতা, শিশু, অপরের পালিত সারমেয় এবং মূর্খকে জাগ্রত করিতে নাই—চাণক্য বলেছিলেন; অপমান যদি তুমি গ্রহণ না করো, যে অপমান করল, তার কাছেই অপমান ফিরে যায়।  সম্ভবত বুদ্ধদেবের বাণী। এ সব প্রাচীন সান্ত্বনা, মহাভারত সে তুলনায় তাহার প্রাচীনতা সত্ত্বেও অনেক সমকালীন। অতিক্রান্তসুখাঃ কালাঃ পর্য্যুপস্থিতদারুণাঃ। শ্বঃ শ্বঃ পাপিষ্ঠাদিবসাঃ পৃথিবী গতযৌবনা \
সুখ অতিক্রান্ত হইয়াছে, এবং দারুণ কাল সমুপস্থিত। পাপকলঙ্কিত দিন  একটির পর একটি অতিবাহিত হইবে; পৃথিবী এখন গতযৌবনা।
তাই? ২০৩০-এ স্বর্গ নেমে আসবে মোদি যে পঞ্চামৃত বটিকা নামিয়ে এসেছেন গ্লাসগোয় ওয়ার্ল্ড ক্লাইমেট কনফারেন্সে? আদানিকে হাসদেও অরণ্য উচ্ছেদের নির্বিঘ্ন অধিকার দিতেই তো স্বর্গরচনা, নাকি?
জীবন থেকে সৌন্দর্য যত দূরে তাহার অসীমে প্রাণ মন লয়ে ধায়, গাঙ্গুলি পথ ভাঙে, কে আর বেমতলব রিক্সা ভাড়া দেয়?
সাউন্ড সিস্টেম মেরামত করতে করতে মাহিন্দর যুবকটিকে বলে, চিনিস স্যারকে?
—চিনে বাল হবে কী! সব মাদারচোদই সমান!
—সম্মান দিতে না পারিস, অসম্মান মৎ করো।
—আভি, আজকাল কেউ বাঁড়া সম্মানের লোক না।
আচমকা ভয়াবহ রেগে গেল মাহিন্দর, গরম সোল্ডারিংটা বাড়িয়ে বলল, দেখেছিস ইটা! মুখটাই সোল্ডারিং করে দুব!
মাহিন্দরের হাতে উষ্ণ সোল্ডারিং-রড তিরতির করে কাঁপে; আর এগোতে পারে না তার হাত, এগনো সম্ভব নয়। গোটা যুবসমাজ ঘাসে-পদ্মে বিভক্ত, কে যে কতটা পাওয়ার ধরে তার জানবার কথা নয়, জানতেও চায় না। শামুকের খোলাটাও তো ভঙ্গুর, তবু, তবুও তো শামুক শম্বুক। গাঙ্গুলিও পিটপিট তাকায় এবং গুটিয়ে নেয়। গোটা দেশটাকে এইসব উচ্ছৃঙ্খলদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে দিদি-মোদি। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হোক, গাঙ্গুলি চিন্তাশক্তিসম্পন্ন হয়ে যদি না এগোয়, প্রতিদিন ধর্ষিত মাহিন্দর কেন এগোবে?
গাঙ্গুলিই বা কেন যাবে ইনসাফ সভামঞ্চে? মিছিলে? রাত দখলে? পিছু হটার জন্য অগ্রগমণের জয়ধ্বনি করতে করতে? মাহিন্দরের প্রতিবাদে সাথ দিতে?
সিস্টেমের আক্রমণে আক্রান্ত সকলেই, চাকরিপ্রার্থী, ডিএ আন্দোলনকারী সকলেই পথে। কেমন বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত এই আন্দোলনগুলো। সকলেই পথে বসে আছে। সংগঠিত আন্দোলন গড়ে না তুলতে পারলে ৫ দিন কেন, ৫০০ দিন অনশন কর্মসূচি চালালেও শাসক টলবে না।
তবুও, টিভিতে দেখলো,
মাহাতো সারনেমের, নামটা মনে নেই, জুনিয়র ডাক্তার, সাহস করে, বলা ভালো দুঃসাহসে, আঙুল তুলে ম্যাডাম সম্বোধনে তো বলেছিলেন, যাদের দশ পাবার যোগ্যতা নেই, তারা গোল্ড মেডেলিস্ট। ডা. মাহাতো পশ্চিমবঙ্গের জনতার ভাষা বলেছিলেন, নিজের নয়। শাসনকালের দগদগে অক্ষমতাগুলোকে, মুছে দিতে, কেননা আর তিনি পিছোতে চান না, বাংলার গর্ব থেকে বাংলা আমাদের না, মোদের গর্বতে, নেমে আসার পর তো থাকে একটি পতন। তারপর অভিযুক্ত শব্দের ব্যাকরণ।
জ্ঞান ক্ষমতার আঙুল ধরে হাঁটে। কৈশোর যখন যৌবন ছোঁবে-ছোঁবে, গাঙ্গুলিও বিপ্লব স্পন্দিত বুকে কংগ্রেস জমানা, দুদস্যি ইমারজেন্সি কাল, আঙুল তুলে বলেছিল, ঠিক মনে নেই এখন, এমনি কিছু কথা।
ওই বলাটা বড় ক্রনিক, নিরাময়বিহীন সংক্রমণ, মারদায়ী কীট, শিকড়বাকড় কতদূর যে ছড়িয়ে পড়ে অন্য মতকে খেতে শুরু করে তার বিচারে যা অনৈতিক।  সেদিনের সদ্য যৌবনে পা দেওয়া গাঙ্গুলি বুঝেছিল, তার থেকে জুনিয়ররা  পটাপট ঈগ চগ হয়ে গেল, তখনো অএ-তেই পড়ে গাঙ্গুলি। প্রতিবাদ সব ব্যবস্থায় অসহনশীল, স্টালিনও বরদাস্ত করেননি, কমরেড বসুও না। এইজন্যই তো গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা। কেউ বিরোধী থাকে না কমিউনিস্ট পার্টিতে।
যুবকটির সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে মিথ্যে বিনোদনে সময় কাটিয়ে দেওয়ার পরিণতি ভাবতে ভাবতে গাঙ্গুলি কেবলই কারণে চলে যেতে চায়। বামপন্থার এই এক নিরাময়বিহীন রোগ, আরোগ্য জানে না, কেবল কারণ খুঁজে যায়। কেবল প্লেনাম, কেবল পার্টি-কংগ্রেস।
মার্কসবাদ বিজ্ঞান, শুধুই বলেছে?
আইএলও আর ইনস্টিটিউট অব হিউম্যানের ‘দি ইন্ডিয়া এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট ২০২৪’ যৌথ সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, দেশের কর্মহীন মানুষের ৮৩ শতাংশ যুবক। যুবকেরা সব চাকরিতে ব্যস্ত হয়ে গেলে পার্টি চালাবে কে? পোস্টার লিখবে সাঁটবে কে? বুথ দখল করবে কে? সন্ত্রাস আতঙ্ক খুনজখম মিছিল মিটিং লড়াই প্রতিরোধ করবে কে? সরকার হস্তক্ষেপ করলেই সব সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমনটা নয়। বেকারত্ব দূরীকরণ সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়, বলছেন কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অনন্ত নাগেশ্বরণ। জলবায়ুর কোনো পরিবর্তন হয়নি, পরিবর্তন হয়েছে মানুষের ঠান্ডা সয়ে নেবার ক্ষমতার; প্রধানমন্ত্রী বলে এসেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তর্জাতিক মঞ্চে। সহনশীল মানুষকে নিয়ে অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব? জয় পরাজয় দূরে থাক, মিনিমাম লড়াইটা করা যাবে? লড়াই আন্দোলন নিয়ে ফক্কড়ি কবে লুপ্ত হবে হিন্দুস্তানে?
টিউশনি পড়িয়েই তো টিভি ফ্রিজ খাট পালঙ্ক কিনেছিল গাঙ্গুলি, সেটা কি লড়াই নয়? কতটা ঘামের বিনিময়ে প্রতিদিন দুমুঠো ভাত সংগ্রহ করছে ভুখা, লড়াই নয়? এইসব লড়াই লড়তে লড়তে নতুন কেনা দূরে থাক, বিকলগুলোকে মেরামত করার পয়সা নেই আজ, একি গাঙ্গুলির অক্ষমতা? সাদা খাতা জমা দিলেও পাস করে গেলে, কে পড়বে টিউশন? কেন পড়বে? পড়া আর না-পড়ার সীমারেখা সচেতনে ভেঙে দিয়ে তো আমাদের রোজগারের জায়গাগুলোকেই নষ্ট করে দিয়ে বড় হিতৈষী হয়ে উঠছো তুমি!
হাজার হাজার ছেলেমেয়ে ঘুষ বিহনে যোগ্যতা সত্ত্বেও চাকরি পায়নি, তাদের অক্ষমতা?
হাজার হাজার ছেলেমেয়ে চাকরি বিহনে অবিবাহিত থেকে গেল, সেটা কি তাদের অক্ষমতা? মেরিটোরিয়াস হয়েও হাজার হাজার ছেলেমেয়ে ভুখাপেটে ডেলিভারি বয়, তাদের অক্ষমতা?
দারিদ্র্যসীমার নিচে ২৫% আর জনগণের মাত্র ১% দেশের অর্ধেক সম্পদের মালিক। তাদের অর্থনৈতিক রমরমায়  জিডিপি গ্রোথ দেখিয়ে বিশ্বের তৃতীয় অর্থনৈতিক দেশের দাবিদার ইন্ডিয়া। ২০১৭-র ৩.৫৬ ২০২৪-এর অক্টোবরেই হয়ে গেল ৬.২১, সেপ্টেম্বরেও ছিল ৫.৪৯! আবার কখন খেতে পাবে, নাকি আদৌও পাবে না, ৭০ কোটি বিশ্বজনগণ জানে না; ব্রিকসবাবুরা, কার অক্ষমতা?
যুবকটির ক্রোধ তাহলে বঞ্চনার। তার কাজটা সরিয়ে পরে এসে আগেই টিভিটা সারিয়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে তার ক্রোধ। প্রভাব প্রতিপত্তির বিরুদ্ধে তার ক্ষোভ। যোগ্যকে হটিয়ে দিয়ে টাকার ক্ষমতায় অযোগ্যের নিযুক্তির বিরুদ্ধে তার ক্ষোভ। অবিচারের বিরুদ্ধে তার ক্ষোভ।
এ-প্রজন্ম দুর্নীতিকেই ভালোবেসে যেনতেনভাবে জিন্দা থাকাটাকেই জানে মহান জীবনী।
যুবকটিকে কিছুই বলল না গাঙ্গুলি, কেন বলবে? বলবে কেন? গাঙ্গুলি, তুমিও তো একদা যুবকালে বিক্ষুব্ধ, সে অনেক শতাব্দীর মনীষীর কাজ বলে কেন পার্টি সদস্যপদ ছেড়ে দিলে? নাকি তুমিও একটি সুবিধাবাদী, বদলের স্রোতে বদলটাকেই ভালোবেসে আত্মপ্রবঞ্চনায় বুঝে নিয়েছো, রঙকে প্রতীকে পরিণত করাই আধুনিক মিশন, রং-ই তোমার আইডেন্টিটি।
পরের দিন দোকানে, মাহিন্দর তখন গাঙ্গুলির
টিভিটায়, সর্ব-প্রচেষ্টা ছাতু করে পূর্ববৎ লাল রয়ে গেল। লালকে রঙিন করতে পুনরায় সোল্ডার-দণ্ডটি, গর্ভবতী করতে যেমন উত্থিত লিঙ্গ, আগায় মৃদু রজন পোড়ার ধোঁয়া, যেন দেবতাকে জাগাতে জ্বলন্ত ধূপ, যেন সঙ্গমপূর্ব লিঙ্গমুণ্ডে যৌনরস; এখুনি কনসিভ করে জেগে উঠবে আচ্ছে ইন্ডিয়া। রঙিন ইন্ডিয়াকে, উন্নয়নের বিশ্ববেঙ্গলকে পাঠযোগ্য হতে হলে রাঙারঙিন টিভির পিকচার টিউব চাইই মহিন্দর। অমৃতকালকে জাগ্রত করো। কুলকুণ্ডলিনী জাগ্রত করো তোমার লিঙ্গে।
চলছেই টিভিটা, টিভির পেছনে মাহিন্দর, যেন সেই, তার হাতের স্ক্রু-ড্রাইভারে নিয়ন্ত্রণ করছে বক্তৃতামত্ত মোদিকে; নিজ ইচ্ছাকে জনতার ইচ্ছায় রূপান্তরিত করতে গেরুয়া রং ভেদ করে সমস্ত ভারতবাসীর কাঁধে হাত রেখেছেন স্বয়ং মোদী, মিতরৌ...
ভাই মোদি, লালগেরুয়ানীল যেকোনো রাঙা হাতই কাঁধে বড়ো ভারি মহেসুস হয়, ইয়েতির হাত মনে হয়, মনে হয় যমদূতের; কবে বুঝবে, একমাত্র নির্ভান প্রেমের হাতই নির্ভার?
কাঁধ তো শ্রাগ করে অনুচিত-হাত ফেলে দিতে পারা যায় না ইচ্ছে হলে, ইতিহাস-শিক্ষা; নির্বিঘ্ন যাপনের জন্য হাত-ভার অসহনীয় হলেও রাখতে দিতে হয় কাঁধে। কে হায় বিরোধী হয়ে বিপন্ন হতে চায়, চিহ্নিত হতে চায় রাষ্ট্রবিরোধী?
বুজুর্গ ভাই, এভাবে কাঁধে হাত রাখা আপনার অনুচিত, অনুমতি বিনা! বিশেষত না-বন্ধুর। তোমাকে ভারতবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে মোদি ভাই।
আশপাশ তাকিয়ে নিলো গাঙ্গুলি, আড়চোখে; শালা ঢ্যামনা, লেস-চরিত্র; ওই হাতকে আজ্জুবাজ্জুতে চালিয়ে দিতে অ্যালাও করছো গোপনে; রিস্ক নিচ্ছো না শালা মিডল ক্লাস, শালা রিয়েকশনারি, শালা প্রিভিলেজ ক্লাশ, শালা লুম্পেন...
আর কী কী মার্কসীয় গালাগালি আছে মনে করতে পারছে না গাঙ্গুলি। মেমরি রিকল করাও একরকম তপস্যা। গাঙ্গুলি তো বিস্মৃতির আর্কাইভ। ভুলতে চায় তিন-তিনটা দশক। এক পা এগিয়ে দিয়ে দুপা পিছিয়ে যাওয়ার এরা (বৎধ)। মমতা-মোদির কাছে চাওয়ারই বা কী আছে? হতাশাই বা কীসের?
কনফিউশনের শতক পেরিয়ে এখন গাঙ্গুলি কনফিডেন্ট। সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে লড়ে যাবার মতো কিংবা অথবা সয়ে নেবার মতো মানসিকতা ও মেরুদণ্ড তার থাকুক না-থাকুক সমস্যার ভেতর যেতে যেতে অ্যান্টিবডি সৃষ্টিতে সে দক্ষ। নব নব সমস্যাকে ডিফেন্ড করছে নবতর সমস্যা দিয়ে। সে রাত জাগাতেই হোক, হাসদেও অরণ্য উচ্ছেদের বিরুদ্ধেই হোক, শুধুমাত্র অন্তর্বাস পরে হিজাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে হোক, সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠাই হোক, স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধেই হোক, লড়াই জারি আছে নতুন অন্য একটি সমস্যার মধ্যে ঢুকে যাবার জন্য। সফলতার চেয়ে লড়াইয়ের স্টেজটাই বেশি উপভোগ্য। মহৎ।
শির মুখ হৃদি গুহ্য পদ সর্বাঙ্গে অব্যক্ত কীলক; সহস্রদল কমলের কর্ণিকা, বহ্নি প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত দৈহিক পৃথিবী জলবায়ু আকাশ রূপরসগন্ধ স্বজ্ঞাচক্র রোগ শোক দুঃখ ত্যাগ তিতিক্ষা অত্যাচার।
—সব সাধনা, বুদতাল্লে?
বুজুর্গ-আঁধারে পৌঁছে গেলে, প্রত্যহ জন্ম হয়, হয়তো জন্মই হয়নি। অকালমৃত্যু হয়, যোগ চিরতরে ছিন্ন হয়, ভিন্ন হয়ে ওঠে জীবন ও যাপন। মৃত্যুর পর-পরই যে জীবনী খতম হয়ে যায়, তা অঝোর-ঝরা ঝরাপাতা। উড়ে যায় লাটপাট হাওয়ায়। এতো ঠুনকো কারণসমূহ নিয়ে বেঁচে থাকা অনুচিত।
—একটা পার্টস বদলে দিলেই রং এসে যাবে স্যার।
উড়ন্ত গাঙ্গুলিকে টেনে নামায় মাহিন্দর, লেকিন, ও পার্টস পাওয়া যাবে না।
সেতো জানিই মাহিন্দর। একটা মাত্র পার্টসবিহনে এ জীবন পর্ণমোচী। বর্ণহীন।
—স্যার, ইলেকট্রন গান খারাপ।
—আটটি গ্রিডের অরিজিনাল পার্টস পাওয়া যাবে না। 
—আরজিবি (জএই) মানে রেড গ্রিন ব্লু, ব্লু গ্রিনকে খেয়ে ফেলেছে, ইসলিয়ে টিভির কালার গেরুয়া।
—কোনো একটা রং তো তোমাকে স্বীকার করে নিতেই হবে। 
পুঁজি নিত্যনতুন ইনোভেশনে কনজিউমারকে লোভাতুর করে প্রতি বছর নতুন রিপ্লেসমেন্ট উন্নত বিশ্বের ডাইনামিক ক্যাপিটালিজম। তার ছলনা। চীন সেই শূন্যতায় ঢুকে এত এত অচলকে সচল করে দিতে, সাময়িক হলেও, এখনো, একমাত্র চীন ও চাইনিজ, অথবা তাহার, স্পেয়ার পার্টসই পারে?  আমেরিকার পাশটিতেই নির্ভীক কিউবা নয়? তা কি করে হয়? চীনও লালকে ট্রেডমার্ক করে ভেতরে রেখেছে তো দুদস্যি রঙকেই!
উদ্বিগ্ন গাঙ্গুলি, জিজ্ঞেস করে, এক মাস, ছ মাস বছরটেক লাস্টিং করবে না?
—কোই গ্যারান্টি নাই স্যার। 
—চাইনিজ মাল বড় ঘাটিয়া। 
মাহিন্দর, দোকান ভরা বাতিল টিভি, সাউন্ড বক্স, টেপরেকর্ডার, হেনোতোনোর দিকে আঙুল তুলে দেখায়, কোই না কোই টিভি জরুর আট গ্রিডের। ঢুঁড়না পড়েগা। মিলে যাবেই।
মার্ক্স বলেছিলেন, হিস্ট্রি রিপিট করবেই, তবে তা ট্রাজেডি হিসেবে। ইন্ডিয়া কতোও বছর বাদ রাম জন্মভূমি পেল! 
—কাচড়াগুলোকে তো কাবাড়ওলাকে দিয়ে দিতে পারো?
বড় করুণ হাসে মাহিন্দর। তাহালে তো আপনার টিভিটাকে ফেলে দিতে হবে। বাতিলের ভেতর থেকে জরুরতের সামান ঢুঁড়তে হবে স্যার।
তা বটে! হেগেলের তত্ত্ববিশ্বেই মার্কসবাদ রচিত।
অহেতুক ভাবতে ভাবতে গাঙ্গুলি পথে নামে। মাসটি উৎসবের, দুর্গা লক্ষ্মী কালী তদুপরি
আর কটা দিন পরেই ছট। আকাশ মেঘলা। ডোনা না ডানার পর আর কি-একটা ঘূর্ণিঝড়জনিত বৃষ্টির সম্ভাবনায় দ্রুত কাজ হচ্ছে ছটঘাটে, নির্মীয়মাণ সুরজ টেম্পলে। তদারকি করছে নওলকিশোর; একদা গাঙ্গুলির ছাত্র ছিল, প্রায় প্রথমাবধি টিএমসির যুবনেতা, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনুপ্রেরণার প্রস্তরফলক সেট করাচ্ছে, তার মধ্যেই গাঙ্গুলিকে থামায়,
—আপনাকে গালাগাল দিয়েছে টেনিয়া?
যুবকটির নাম তাহলে টেনিয়া, এত দ্রুত ছটঘাটে পৌঁছে গেল টেনিয়া-সংবাদ!
—প্রারব্ধ ক্ষয় করতে হয় বাবা। 
—আপনি মুখ বুজে সহ্য করবেন? 
—যে সহে সে রহে। 
—আমরা তবে কি করতে আছি স্যার!
স্বভাবো নোপোদেশেন শাক্যতে কর্তুমন্যথা। 
সুতপ্তমপি পানীয়াং পুনর্গচ্ছতি সীতাতাম \ জানতো গাঙ্গুলি, তবুও, গাঙ্গুলি উৎসাহিত, প্রসঙ্গ বদলাতে বলল, বেশ মজবুত করে করছিস তো? অর্থাৎ ছট মন্দির।
দুর্গা পূজার সঙ্গে পাঙ্গা নিয়ে কতক্ষণ যে চলে উন্মত্ত ছট কার্নিভাল, কত প্রতিভা, কত রাত অব্দি ঘটমান মত্ততা, চিরাচরিত একটি কমিউনিটির বাৎসরিক আনন্দ ও উৎসব অপর কমিউনিটিও যোগদান করে কিনা কে জানে, রাজনীতি করে। দুর্গা পূজার মতো ছটও পেয়েছে শুনছে ৮৫ হাজার টাকা। দু দিনের ছুটি। উন্মত্ততা রাজপথে নেমে না এলে তাকে প্রকটিত বলা যায় না। মদের মত্ততা প্রদর্শনের যে কোনো মৌকা মাতাল কভিও ছাড়ে না।
গাঙ্গুলি ভাবছে, নওলকিশোর, জাতে দোসাদ, পাশোয়ান, রঙিন চশমা চোখে রয়েল এনফিল্ডে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে, একটু আগে সিগারেট টেনে চুসকিটাকে তর্জনীর আঘাতে ছুঁড়ে ফেলেছে একটু মারাত্মক দূরে, এখনো ধূমায়মান, বিহারে হলে এইসব অপকর্মগুলির জন্য রাজপুত ব্রাহ্মণের হাতে দশ জুতো খেতো!
প্রথম দিকে তো স্বয়ং মেয়র জিতেন তেওয়ারি দাঁড়িয়ে থেকে পুকুর কাটিয়ে দিলেন ইসিএলের জেসিপি দিয়ে। তারপরও কর্পোরেশন ফান্ড দিলো কিন্তু তা দিয়ে তো সূর্যমন্দির বানানো যায় না কোনারকতুল্য। নিশ্চয়ই বিজেপি ফান্ড দিচ্ছে।
বিজেপি আর টিএমসিতে বিভক্ত নওলকিশোর, জিতেন ভাইয়ার চেলা, তেওয়ারিও সম্প্রতি বিজেপিতে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঢালাইয়ের পাটা সেটিং দেখছে। পেরেক পেটার ঢাঁইঢুঁইয়ের ভেতর দুজন মাতাল পা ফেলবে কী ফেলবে না করে পাওয়ারকে সেলাম জানিয়ে প্রতিদিনের নবজন্ম ও মৃত্যুর ছক্কায়ফক্কায় টলোমলো পেরিয়ে গেল।
গাঙ্গুলি বলল, আসি।
—আপকো খিস্তি দিয়েছে ভোসড়িবালা, আমরা ছাড়বো না!
—কভি নেহি ছোড়ুঙ্গা!
এত গুরুভক্তি! মাধ্যমিকে টেনেটুনে পাস করেছিল নওলকিশোর।
—বিজেপির নয়া লিডার হয়ে শালার খুব রোয়াব! 
গাঙ্গুলি তাহলে উপলক্ষ্য! শিক্ষকের অধিকারে উপদেশ দেয়, মারপিট করে কিছু লাভ আছে নওল?
আত্মপ্রতিষ্ঠার গৌরবে নওল চিৎকার করে ওঠে, আপনি আমাদের স্যার!
—আপনার অপমান আমাদের অপমান! 
দল ও বলকে বলে, আভি চল্! ভোসড়িবালার গাঁড়টি মেরে আসি।
ভুলেই গেছে গাঙ্গুলি তার একদার টিচার, কি অনায়াস অভিব্যক্তিবাচক অশ্লীল শব্দ। টিচার কোনো সম্মানীয় পদ নয় এ বঙ্গে। খিস্তিপাতও অতি ব্যবহারে ব্যবহারে তীক্ষ্মতা হারিয়েছে।
—আপভি চলিয়ে স্যার। এনফিল্ডের সিটটা ঝাড়ে নওলকিশোর।
তনিমনি গাঙ্গুলি। না তোরাই যা বাপ।
—ঝুটঝামেলা পাটিপলিটিক্সে আমাকে আর টানিস না।
সারা‌ মহল্লায় আওয়াজ ওঠায় সে-রণবাহিনী। 
কা ভৈল?
কা ভৈল?
ঘটনার এপিসেন্টার মাহিন্দরের দোকান, ফলে, নানাবিধ অহেতুক আশঙ্কায় সাটার উঠলো না সাতদিন, গাঙ্গুলিও আর যায়নি, আটদিনের দিন যেতেই মাহিন্দর বলল, পুরোনো টিভি ঢুঁড়েঢাঁড়েও আট গ্রিডের পাওয়ার-গান পাওয়া গেল না, ফির ঢুঁড়তে হবে। ধুপসিরোদ মাথায় নিয়ে পয়দলে এসেছিল পয়দলেই ঘরে ফেরে গাঙ্গুলি ।
রাস্তায় লুলার সঙ্গে মোলাকাত, সার কুথায়? পয়দলে?
—মহিন্দরের দোকান। টিভিটা খারাপ হয়ে গেছে। 
—হয় নাই?  
—কবে বলল? 
—কবে দিয়েছিলে? 
—বলল কাল। 
—রোজই তো বলছে কাল। 
—দিন পনেরোর বেশি হয়ে গেল। 
—উ শালার নামই তো ‘কাল জরুর’। 
—চল তো শালার কাল নিকালে দিছি! 
—থাক থাক। পার্টস অমিলতা। পেলেই করে দেবে।
—শালা এমনিই। গালমন্দ না দিলে করবেকোই নাই।
—ছুটুলোক, ভদ্রলোককে সম্মান দিতেই শিখে নাই!
—দেখি কটাদিন।
—তবে দেখ। 
লুলা বিড়িটা পায়ে মাড়িয়ে চলে গেল।
ছটের পরের দিন সন্ধ্যার দিকে গেল গাঙ্গুলি, কী খবর মাহিন্দর?
মুশকুরায় মাহিন্দর, খবর ভালই।
পুচ করে খৈনিজনিত থুথু ফেলে গাঙ্গুলির পাশেই। হাতে সোল্ডারিং-রডে অদৃশ্য-দৃশ্যমান ধোঁয়া।
এ-তার সে-তার, এ-বোর্ডে সে-বোর্ডে সোল্ডারিং করে বিড়ি ধরায় মাহিন্দর, রং আসবেক নাই স্যার।
—এখন তো এলসিডি টিভি শস্তা, লিয়ে লেন...
—ছবি এমন লাইভ স্যার, ছুঁয়ে দেখতে পারবে...
—কিস্তিতে পাওয়াই দিছি, জিরো পেমেন্ট... 
—চলছে যখন, নতুন কেন কিনব?
—এই আপনাদের দোষ স্যার, পুরনো হেবিট ছাড়তে লারলে।
—ওল্ডের ওপর বড মহব্বত!
—এখন সোব কুচ ইউস-অ্যান্ড-থ্রো স্যার।
—ওয়াইফ-হেজবেন সুদ্দা ইউজ-অ্যান্ড-থ্রো... 
স্থায়ীত্বই যে ভারতীয় চরিত্র মাহিন্দর। ত্যাগের মহিমায় ভোগ করতে হয়। ত্যেন তক্তেন ভূঞ্জিথাঃ।
নবযুগের কোনো মাহিন্দরকে এসব বলে লাভ নেই। প্রাচীনের প্রতি বড় মমতায় প্রাচীন গৃহিণীর কাছে সবিস্তারে বোঝায়, রং না থাকলে কী লোকশান? লালই থাক।
—তোমার লাল ওনলি পাঁচ, পার্সেন্ট। —ব্যাকডেটেড।
—এলসিডি কিনো, বড় স্ক্রিন।
—টেকনোলজির ডেভেলাপ কি বিপ্লব নয়?
—বিপ্লব কি সবসময় একই ফর্মে হতে হবে?
—এনজয় করতে হবে।
—বুঝলে?
—আর একবার দেখি, তারপর না হয় কিছু একটা ব্যবস্থা করা যাবে।
—তোমার দ্বারা হবে না। 
গৃহিণী নিজে এলো, গাঙ্গুলি জানে না, মাহিন্দর সকাশে; বলল, কেউ যদি নেয়, যা দেবে দেবে, বিক্রি করে দাও।
চোখ মটকে বলল, বিক্রি না হয়, এমন খারাপ করে দাও, যেন জিন্দেগিতে কালার না আসে। সাউন্ডটাকে নীরব করে দাও। বাতিল করে দাও লাল।
উন্নত টেকনোলজিতে মানুষ পর্যন্ত বছর কয়েক ভালো সার্ভিস দিয়ে অকেজো হয়ে যাচ্ছে। লং লাস্টিং সার্ভিসের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সোভিয়েত ফির রাশিয়া হয়ে গেল! চীনও ঠিক লাল নয় আর।
মাহিন্দর মুশকুরায়।
সেদিনই, বিনা ভূমিকায় গাঙ্গুলি, প্রায় চার্জ করে, আমার টিভিটা?
—কাল মিল যায়েগা।
—এক কাজ করো, টিভিটা সারিয়ে আর কাজ নেই।
—দাও, রাস্তায় ফেলে দিই।
—নতুন একটা কিনে নেবো।
—অত অধৈর্য হলে হয় কাকু?
—ইন্তেজারই জীবন।
—আমার জীবন তো শেষদিকে মাহিন্দর ভাই।
বড় মনোরম হাসলো মাহিন্দর।
—কৌসিস করছি স্যার।
ছটঘাটের নতুন সান টেম্পলে তাস না জুয়া কেজানে, জমাটি আসর ছেড়ে নওলকিশোর ছুটে আসে, ভোসড়িকো সবক শিখাই দিয়েছি স্যার,
—লিডারি নিকাল দিয়া ভোসড়িকো!
—কোনো দল চিরস্থায়ী ক্ষমতায় থাকে না নওল। —পাওয়ার থাকতে থাকতেই কিছু একটা জোটা। —একটা কোম্পানিতে চাকরি করে দিয়েছিল স্যার।
—মন লাগে নাই।
—ছোড় দিয়ে।
রোজগার হয়তো ভালোই করে, ঘরোয়া পোশাকেও ফুলস্যু-লেশ ঝুলছে মাটিতে। জ্যাকেটটিও কিমতি।
—বেশ বেশ।
—চলি।
আচমকা জিজ্ঞেস করে, আপকা টিভি হো গিয়া স্যার?
বলল, নারে, পার্টস পায়নি। বলল, কাল জরুর...
—গালিগুফ্তা না দিলে মালটা পড়েই থাকবে স্যার।
নওলকিশোরের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে তার বন্ধু কেউ।
—খাড়া রহেকে করানা হোগা...
—চলিয়ে আপ।
যেন ইয়ার দোস্ত, গাঙ্গুলির হাত ধরে টানে। চলিয়ে, উসকা বাপ, আভি, কর দেগা।
—উসকো ভি সবক শিখানা হোগা।
—মাহিন্দর বিজেপি হো গিয়া।
ভোটের আগে-আগে সব দলই তাদের ঝান্ডা বেঁধে দেয়, পক্ষ বিপক্ষ মানামানি নাই, যেখানে যেখানে ঝান্ডা বেঁধে দেওয়া সম্ভব, সেখানেই। মাহিন্দরের সাইনবোর্ডের রডে সব দলের মতো বিজেপিরও ঝান্ডা, কোনো টিএমসির উৎসাহী জওয়ান ঝান্ডা খুলতে এলে মাহিন্দর বাধা দেয়, সবকা ঝান্ডা রহে গা, নেহিত কিসিকো না।
স্মৃতিতে ঝুঁঝকে ওঠে মাহিন্দরের বাত : কালিপাহাড়িকো টাইট করনাই পড়ে গা।
—বহোত হনুমান বাঢ় গয়া!
ডাক্তার আর মেকানিক্স দুজনের কাজ হলো মেরামত। বাতিল পার্টস বদলে নতুন পার্টস দিয়ে প্রাণসঞ্চার। মৃতজনে দেহ প্রাণ। বেঁচে যাবার সমস্ত সম্ভাবনা সত্ত্বেও মাহিন্দর এখনি একটি ডেডবডি ধরিয়ে দিয়ে বলবে, সরি!
তখন?
—থাক থাক।
—ও করে দেবে ঠিক।
—ঝামেলার কি দরকার?
—আমার কোনো তাড়া নেই।
গাঙ্গুলি পালিয়ে বাঁচে।
পথে লুলা, বিড়িটা টেনে রাস্তায় ফেকে দাঁত বার করে, টিভিটা হয় নাই সার?
—কাল।
শুনে আর ধৈর্য ধরলো না লুলার, আজভি দেয় নাই!
—ঢাঁই মাস হই গেল!
—চল তো সার, ভোসড়িবালার পোঙায় বেম্বু ভরে আসি।
চলন্ত অটোকে থামিয়ে নিজে ও গাঙ্গুলিকে টেনে বসিয়ে, মাহিন্দরের দোকানে নেমে, অটোওলাকে ভাড়া না দিয়ে, প্রবল আক্রোশে ঢুকেই মাহিন্দরের কাজের টেবিলে সারতে থাকা ফ্যানের কয়েলটা হটিয়ে দিলো, গুড়-গুড় করে চক্রবৎ সে কয়েলপিণ্ড কোথায় হামাগুড়ি দিচ্ছে ওই কাচড়ার স্তূপে, কে জানে। মাহিন্দর পিটিপিটি তাকায় নিরুদ্দিষ্ট কয়েলপিণ্ডের সুতো ধরে ধরে।
—আভি সারকা টিভি বেনাও!
কী শান্ত, কোনো কিছুই স্পর্শ করে না এমন চামড়া ঢাকা মুখমণ্ডল, আড়চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, চার বাজে বানা দেগা।
—তিন ঘণ্টা কি ছিঁড়বি?
—খানা...
—ভারি এঁড়ের খানা!
—খাবি তো চখা ডাল ভাত!
—খানে কেতনা টেইম লাগতা হ্যায়?
—যাও! হাম বৈঠল হ্যায়।
মাহিন্দর হিলে না, লুলার ধৈর্য বাঁধ মানে না;
কিন্তু লুলা, বাউরির বাচ্চা, প্রথমাবধি জাগরুক, স্বয়ং দ্বারকানাথ ভয় করতেন বাউরি মালকাটাদের, বাউরিরা যে পক্ষে, ফ্রেস পোলিং হলে সে-পক্ষের অবধারিত জয়, কলার ধরে টেনে নামায় রাস্তায়।
—হাম শালা লুল্লা, তেরা বাপ!
আজকাল গণজাগরণ দেশপ্রেম ইত্যাদি প্রভৃতি অর্থনৈতিক কারণে হয় না যদ্রূপ এক-পয়সা ভাড়াবৃদ্ধি জনিত ট্রাম-আন্দোলন। গাঙ্গুলি জানে, ঝামেলাটি লুলা-মাহিন্দর দ্বৈরথ থেকে উল্লম্ফনে দোসাদ-বাউরি, বিহারি-বাঙালিতে পৌঁছবে; অহেতুক উৎকট ঝামেলা থেকে গাঙ্গুলি পালিয়ে গেলে বাঁচে, সব সময় পলায়নের রাস্তা কি খোলা থাকে?
তিলোত্তমা, বিলকিস বানু, ভারভারা রাও, সাঁইনাথ... ক্ষমতা বলছে সকলেই এক-একজন ব্যক্তিমাত্র; তুমি তাকে সমষ্টির প্রতীক বলে জনগণকে উত্তপ্ত করবে রাত দখলের নামে, উই ওয়ান্ট জাস্টিসের নামে, স্বৈরাচারী কানুন ওয়াপস লাও-এর নামে, তাই কি হয়? রাষ্ট্র তাকে বারবার ব্যক্তি ও ব্যক্তিগত করে দেবে। জনগণের উচিত রাষ্ট্রের ন্যায়ের প্রতি সম্মান জানানো। মাননীয় আদালত, তদাদেশে তদন্তভারে ভারাক্রান্ত সিবিআইকে সম্মান জানানো‌।
সব দোষ গাঙ্গুলির। গাঙ্গুলির টিভির। টিভির আচমকা লাল হয়ে যাওয়ার জন্যই এই আনরেস্ট।
সব দোষ টিভির।
টিভিই তো দায়ী। টিভি দেখিয়ে রাজীব গান্ধি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলেন কোনো রাজনীতি ছাড়াই। টিভি দেখিয়েই দারিদ্র্য দূরীকরণ না, বেকারত্ব দূরীকরণ কর্মসূচি না, বাবরি মসজিদ ভেঙে রামমন্দির নির্মাণে নিয়ে গেছো হিন্দুস্তানকে, টিভিতেই রচনা করেছো অমৃতকাল। টিভিই তো বলছে, এত ডাক্তার প্রেম কোথা থেকে এলো, নাকি এই প্রথম ধর্ষণ ও খুন পশ্চিমবঙ্গে?  হাসপাতালে শালাদের ব্যবহার, মানুষ বলে মনে করে রোগীদের?  ৫০০ টাকা ভিজিট পেলে সে শালাই অমায়িক। করোনার পর থেকে কোনো শালা পেসেন্টকে ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখে না হাসপাতালে। স্টেথো বলে নলটা পর্যন্ত হাসপাতালে নেই। ডাক্তার পেসেন্টের মাঝখানে এখনো কর্ডনিং। এইজন্যই না দালাল লাগে হাসপাতালে, ঘুষ দিতে হয়? ওদেরকে একজন রেপ হয়ে মার্ডার হলো, কত কত মার্ডার হচ্ছে, রেপ হচ্ছে বেঙ্গলে ইন্ডিয়ায়, জাস্টিস চেয়েছো কখনো? সব শালা ডাক্তারদের জুতিয়ে লাল করে দাও।
উত্তাপের আঁচে, ভরপেট খেয়ে দুপুরে নিদ্রাকাতর গাঙ্গুলি, একদার সমাজবদল সংক্রমণে পীড়িত গাঙ্গুলি, এসব, এইসব, নিজেকেই বলে, মনের ক্ষোভ মেটায়; নিজেকেই সচেতন করে, সব প্রতিবাদে গলা মেলাতে নেই, অন্যায় হচ্ছে জেনেও পক্ষ নিতে নেই কমরেড। খুব বিপ্লবীরাও এক কদম এগোতে গিয়ে দুকদম পেছোয়। দু কদম দু কদম করে পিছিয়ে পিছিয়ে লেনিন-কথিত সূক্তিটি আর কার মনে আছে? হারও কখনো জিৎ হয়ে যায় কমরেড। তাঁর সাদাসফেদ কাপড়ে একটুও কলঙ্ক চিহ্ন না লাগানোর জন্য, বারোভাতারি মার্ক্সিস্টদের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য, এত এত লুম্পেন ছিল পার্টিতে লাল-বই বগলে জানতে পারার জন্য, নাকি সাচ্চা কমিউনিস্ট গড়ে তোলার সম্ভাবনাকে জ্যান্ত রাখতে, নাকি বামপন্থার স্বার্থে, নাকি বামপন্থাকে জলাঞ্জলি দিতে, তিনি, সাদাসফেদ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, স্বেচ্ছায় হেরে গিয়ে মমতাকে জিতিয়ে রাজপাট উপহার দিয়ে গেলেন?
অরাজনৈতিক বেঙ্গলের রাজনৈতিক সেরেন্ডার দেখার জন্য টিভিটাকে রাঙারঙিন হতেই হবে।
বাবা মাহিন্দর যে করেই হোক টিভিটাতে রং ফিরিয়ে দে। রাঙারঙিন মুখ ছাড়া অভিনয় হয় না। অভিনয়কে সত্যির মতো করা যায় না; মেকআপ ছাড়া মিথ্যেগুলোও সত্যির মতো হয়ে উঠবে না। রং ছাড়া লিঙ্গোত্থান ঘটে না, তো, আত্মাহুতি! 
মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও সব মুসলিমকান্ট্রি যেমন ইসরাইলের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে না, সব ধর্ষিত, সব নিহতবঞ্চিতলাঞ্চিতরা কখনোই একত্রিত হবে না। ডাক্তারদের পাশে মাস্টাররা নেই, যদ্রূপ মাস্টারদের পাশে ডাক্তাররা ছিল না। সমাজ জেগে ওঠে শ্লোগানে। কতিপয় সজীব সতেজ শব্দের বিপরীতে থাকে অগণন পচা শব্দ, গ্রাফিতি থেকে গ্রন্থে। রাষ্ট্র অসৎ হবার সংকল্পেই গঠিত।


হিরণ্ময় গঙ্গোপাধ্যায় কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক এবং সম্পাদক। সম্পাদনা : চতুরঙ্গ, প্রতিক্ষণ, কেতকী, কিংবদন্তিরাষ্ট্রদ্রোহীরা ছাড়াও একাধিক গ্রন্থের প্রণেতা। তিনি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বসবাস করেন।
 

menu
menu