মরিচের গুঁড়ো

"মতি, তুমি কি খাও?"

"তালের লেফা!"

"আমাকে একটু দাও!"

"ওরে! আমনে না শহর থাইক্যা আইছেন। আমনে বুঝি এডি খাইবেন!"

"খাবোনা মানে! তুমি জানো আমি কত তালের লেফা খাই!"

"নেন, এই লন অল্প কদ্দুর। আর নাই। খাশ বাইড়াগো মাঝারকিয়া তাল গাছ থাইক্যা চুরি করছি।"

"মতি! এই মতি! আবার কোথায় যাও? "

"জিন চালা দেখমু!"

"ওরে ব্বাস! কি কয় জিন চালা! শোনো মতি, আমিও যাবো!"

"আমনে শহরের মানুষ! আমনে ডরাইবেন!"

"আরে নাহ! পাজি ছেলে! আমাকে নিয়ে চল!"

মতির পেছন পেছন আমিও রওনা দিলাম! 

"মতি! এই মতি! আর কত দূর..?"

"ওই যে ওই বাড়িত!"

উঠোনে কেবল মানুষ আর মানুষ। আমি আর মতি দাঁড়িয়ে আছি। ঘরের ভিতরে মধ্যবয়সী পুরুষের কর্কশ কণ্ঠের ধমক কানে এলো,

"তুই রোগীর লগ ছাড়বিনি?"

"আঁরে ছাড়েন, আঁরে ছাড়েন! আঁই বাইরে যামু!"

"তোর জায়গা এই বোতলের মইধ্যে!"

"আন্নের আল্লার দোয়াই! আঁরে ছাড়েন! আঁই বোতলে ডুকতামনা!"

কবিরাজের সাথে রোগীর ওপর আছর করা জিনের কথার লড়াই এভাবে চলছে।

" মতি, মেয়েটি কে রে?"

"মেয়ে না! হেতাই এই ঘরের রইস কাকার বউ। রইস কাকা বিদেশ থাহে। হেতাইরে জিনে ধরছে। অনে কবিরাজ আনছে জিন ছাড়াই তো।"

"নতুন বউ?"

"হ..!"

হঠাৎ মেয়েটির আর্ত চিৎকারে চারদিক প্রকম্পিত হয়ে উঠলো। ভিড়ের মধ্যে কেউ বলে উঠলো, "এইবার জ্বীন যাইবো কই? দিছে চোখের মইধ্যে মইচ্চের গুঁড়ি লাগায়া।"

ভিতরে বউটির সাথে কবিরাজের তুমুল ধস্তাধস্তি চলছে। আসবাবপত্র ছোঁড়াছু্ঁড়ির আওয়াজ ভেসে এলো। বাইরে থেকে আমরা বুঝতে পারছি মেয়েটির গায়ে যেন অশুরের শক্তি। সে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে শিকলরূপী হস্তগুলোর বন্ধনকে এক ঝটকায় কুপোকাত করে দরজায় এসে দাঁড়ালো।

"আমার চোখে পানি দে! আমারে মাইরা ফালাইলো।"

মতি আমার গায়ের সাথে লেগে বলে উঠলো, "আপা, এইডা কিন্তু হেতাইর কতা না! এইডা জিনের কতা!"

"চুপ কর মতি!"

এতোক্ষণে দরজায় দাঁড়ানো চিৎকার আর আহাজারিরত মেয়েটিকে দেখতে পেলাম। 

হায়! এ আমি কি দেখছি! এ যে আমি! আমি কেন ওখানে দাঁড়িয়ে আছি! "ম.....তি..! আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ওরা আমার চোখে মরিচের গুঁড়ো লাগিয়ে দিয়েছে। তুই আমাকে বাঁচা।"

ধড়মড় করে উঠলাম। কোথায় মতি! কোথায় কবিরাজ! কেউ নেই আমার পাশে। আমি যে কথা বলতে পারছি না। কিছুক্ষণ পর ঠাওর করতে পারলাম আমি আমার বিছানায়।

কটা বাজে! 

এমন সময় ভোরের নিস্তব্ধতাকে খান খান করে দূরের কোনো মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। আর সাথে সাথে কুকুরের ঘেউ ঘেউ রাতের নৈঃশব্দ্যকে আরো দূরে সরিয়ে দিলো বটে তবে রহস্যের জটাজালে ডুবন্ত আমি মন খারাপের সমুদ্রে তখনো সাঁতরে চলেছি।


• কুমিল্লা

menu
menu