তিনটি কবিতা ।। সেলিম রেজা

বিরহগাঁথা
কপাট কলহে ভরা ভাগ্যের বিধিলিপি
কী বিস্ময়! চেনামুখ অচেনায় মুখ ফিরায়
বিরহগাঁথায় অভিযোগের ফিরিস্তি
এই ক্যামন নির্বাক নিয়তি
চোখের জলে ভাসালে পুরোটা রাত
সময়ের আস্তিন ধরে বেসামাল তুমি
ভুল করে ছুঁড়ে মারলে তালাকনামা
একবারও ভেবে দেখলে না সংসারে—
কিছু মানুষের কিচ্ছু যায় আসে না
শূন্যতায় কেউ আছড়ে পড়ে না
কেউ ডুবে না কারও চোখের জলে
সন্ধ্যার আঁচলে কেউ ফিরে না ঘরে
অভিমানের পাথর সরিয়ে কেউ আসে না কাছে
পরকীয়ামেঘ ছুঁয়ে দেয় বেহিসেবি ভালোবাসা
কোলাহল ঠেলে কষ্টের বকুল কুঁড়াতে নাই বা আসলে!
শুধু ভাবি এই ব্যর্থতা আমার
কীসের আস্ফালনে সাঁতার না জেনেই
ঝাঁপিয়ে পড়লে দুঃখ নামক মহাসমুদ্রে!
সভ্যতার কুশপুত্তলিকা
মানুষ হত্যার মহোৎসবে
মাথা কুটে মরছে মানবতা
নেই অনুতাপ
নিষ্পাপ শিশুর চিৎকার
যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি কেবলই লোকদেখানো
বিপ্লবী স্লোগানে ফেটে পড়ে ‘মার্চ ফর গাজা’
দেশ-বিদেশের তাবৎ নগরসভ্যতা
দেদারসে চলছে বারুদে খুন
রক্তের দাগ ইহুদির হাতে
হু হু কান্নায় আমিও সাক্ষী;
বীরদর্পে লালগালিচা সংবর্ধনায়
বিশ্বস্বীকৃত মোড়ল এক একজন খুনী
ফিলিস্তানে রক্তেঝরা শিশুফুল
মুক্তিকামী কফিনের হিসাব কষে
মহাজন ডলারের পাল্লায়
মানবতা আজ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে
ভুখা শিশু ক্ষুধার আহাজারি
ইতিহাস সাক্ষী
দর্ম্ভের গ্রীবা ভূপাতিত হবে
বাণিজ্য টাওয়ারও ধ্বসে যাবে
স্মৃতিচিহ্ন জ্বলবে নরকের আগুনে
ইদানীং যুদ্ধবিরতি বড্ড প্রহসন
মায়াকান্নায় শান্তি-শান্তি কীর্তন!
আজ বড্ড প্রয়োজন
শূন্যতায় আঁটা সদর দরোজা
জীবন ছুটে ফিরে না কভু
সাপমই খেলায় দীর্ঘ একজীবন
চারদেয়ালে বন্দী উচাটন মন
সমুদ্র দেখার ইচ্ছে আশার পথ চেয়ে থাকে;
তানপুরা পোড়ে আগুনে
লজ্জায় লাল লজ্জাবতী, সময়ে কাটে টিপ্পনী
বুক পকেটে রাখা জোনাকি পোকা
আলোয় জ্বলজ্বল রাত্রির বুকে;
বুকের ভেতর এক পৃথিবী সাহস
টেনে হিঁচড়ে বের করে ঘৃণার কলস
ভুলে গেছি বক্ররেখায় ফেলে আসা পদচিহ্ন
আজ বড্ড প্রয়োজন দেখা করার অজুহাত
আজ বড্ড প্রয়োজন মুখস্থ সব জীবনের নামতা
আজ বড্ড প্রয়োজন অভিমানে ছিঁড়ে ফেলা কবিতার পাণ্ডুলিপি
সেলিম রেজা কবি, সম্পাদক। তাঁর উল্লেখযোগ্য করেকটি গ্রন্থ : সপ্তর্ষী নক্ষত্রমালা (কবিতা), উত্তরণ (কবিতা), সূর্যমুখী ফিনিক্স (কবিতা), সম্পাদিত ছোট কাগজ মৃত্তিকা। তিনি সাহিত্যের জন্য বেশ কয়েকটি পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তিনি কুয়েতে বসবাস করেন।