গুচ্ছ কবিতা ♦ তৈমুর খান
উন্মাদ বিকেলের সান্ধ্যধারণা
উন্মাদ বিকেলের একটি সান্ধ্যধারণা
তোমাকে দিই
স্বচ্ছ বিবেক মুহূর্তগুলি কোথায় হারাল?
আজ আদিম তরবারি নিয়ে যুদ্ধ
যুদ্ধ সমস্ত রাত
রক্তাক্ত চৈতন্য ঘিরে নামে অন্ধঘোর
এপ্রান্ত ওপ্রান্ত জুড়ে ক্লান্ত বিশেষণ
জীবনের সরু হাঁটা পথ
স্বপ্নের মোড়ক খুলে দ্যাখে
শুকনো কিংশুক
তবু ফিরে ফিরে আসে পরাভব
শূন্য খাঁচায় পোষা জ্বর
সব আলো নিভে গেলে
বিকেলও নূপুর হারায়
দাঁড়াবার জায়গা হয়নি
দাঁড়াবার জায়গা হয়নি
কী করে ফুল ফুটবে শস্যক্ষেতে ?
কৃষকের বাড়ি বাড়ি হাওয়া ফিরছে
ভিখিরির মুখে প্রত্যয়ভিশান
জলদাগ এঁকেবেঁকে নদী বয়ে গেছে
আকাশ ছাপিয়ে গেছে সান্ধ্যমোহে
সব পথ আছে পথ পানে চেয়ে
একটু নিরভিমান আলো
দুর্গার মতন নিরুক্ত প্রতিমা
অসমাপ্ত খণ্ড ৎ নিয়ে
শহর ছুটছে
শহরের কয়েকটি শৃগাল
নিয়ত সাধুভাষা জানে
দেহাতি নদীর চরে
অঙ্ক ভুল করে
রোদনবিলাসী একা দাঁড়িয়ে আছি
হৃদয়ে বড়ো দরদ ছিল
সমস্ত দরদ আজ মুথাঘাস হয়ে ঝরে
ফিরছি আবার
পাখির খুশিতে হাসছে নতুন দিন
বিষাদকে আজ কোথায় পাঠাব, বকুল ?
দিগন্ত জুড়ে তারার নষ্ট ফুল
উড়ছে হাওয়ায়
হাসপাতাল আজ ছুটি দিয়েছে
রক্তবমির পর আজই প্রথম
আলো বাতাসে খুঁজেছি আমার ঘর
মাদুর পেতে বলেছে মাটিতে
একটু বসে যাও !
এত দহনের পর
গ্লাসে গ্লাসে ঠান্ডা জল
আহা জলও রাধা
নাচে রাধাজল !
আমার লুকোনো বীণাটি বেজে ওঠে তবে !
বকুল, তুমি ফুটে ওঠো দেখি
আমার হৃদয় আজ নতুন কিশোরী...
ব্যঞ্জনায় ফিরে যাই
সঙ্গমের খোলা রাস্তায় বাজনা বেজে ওঠে
বিবাহ উৎসবে নেচে ওঠে রাত
টেবিলে টেবিলে উষ্ণ জল
কামুক কুয়াশার চাউনি
উঁকি দিচ্ছে সালঙ্কারা মেঘ
অসম্ভব লাল নীল ঠোঁটে
আমন্ত্রণলিপির উদ্বেগ
চেয়ে থাকি, উদাসীন হই
শরীরকে শরীর ডাকে শুনি
থালায় থালায় ক্লান্ত ভাত
মাংসের কাবাব নড়ে ওঠে
প্রাণে প্রাণে ঢেউ আরব্য-রজনীর
পাশাপাশি বসেছি তোমার
আজ ঘ্রাণ ভাসিয়ে দিক
দিকশূন্য বাসরের দিকে।
হাতে রাখি হাত, চলো প্রেম
ব্যঞ্জনায় ফিরে যাই
বিশেষণে কাটাব না রাত।
খোলা রাস্তায় আলতা পরা পা
রঙিন আঙুলগুলি স্পর্শ চায়
নতুন জ্যোৎস্নার...
বিনীত আশ্রয়
হাতি ডেকে উঠছে
ব্যাঘ্র ডেকে উঠছে
মাৎসর্যের গোলাপ বাগানে
নতুন পাখির আনাগোনা
ভয় ও ক্লোডিয়াস ঘুম
আর্ত স্বপ্নের বারান্দায়
জেগে আছি।
নিত্য হরিণীর দৌড়
লক্ষ্যভ্রষ্ট তির
হিমানীর প্রাচীর ভেদ করা চাঁদের ছায়া
আর জ্বরের কপাল ছোঁয়া হাওয়া
প্রত্যহ বিষাদ আঁকা খুর
অরণ্যের পর অরণ্যে চলে যাওয়া
হারাতে হারাতে শিরোজ মুখ
দ্রাবিড় আলোয় খুঁজে আনা
দু একটি অন্তর্হিত সুখ
এইসব রাতের প্রহরে
বিনীত আশ্রয়...