গুচ্ছ কবিতা,
নখরে রেখ বিষ
পদ্মপ্রিয়া, জ্যোৎস্নায় জলে বসে
পবনের ঢেউ লেগে শিহরে
গহনে মিহি সুরে সুর তোলে শঙ্খিনী
হাস্নাহেনা, তোমার সুগন্ধে কী সাপ আসে?
তবে রেখ নখরে বিষ।
নক্ষত্রের অভিধান
তোমার চিবুকের তিলকশব্দ নক্ষত্র হয়ে জ্বলে
না বুঝি নক্ষত্রের ভাষা, অভিধান খুলে বসি
আর, নক্ষত্রের অভিধান হতে শব্দহরিণ ছুটে যায় বহুদূরে।
জল ও জ্যোৎস্না
কোনো এক জ্যোৎস্নাপ্লাবিত রাত ছিল
ছিল শান বাঁধানো ঘাট
নিস্তরঙ্গ জলের উপর চাঁদের আলো স্থির
জলে জ্যোৎস্নার নৃত্য দেখতে
তরঙ্গ তুলতে তুমি—
জ্যোৎস্নায় জলে নাচতে উল্লাসে, আনন্দউচ্ছ্বাসে কী দুরন্ত।
আজো জলে জ্যোৎস্না জ্বলে, তবে ঢেউ তোলে না কেউ।
ঐতিহ্য
এমনতর পাখিডাকা ভোর ফুটবে সেদিন
কৃষাণীর হাসি ঝলমল
আলো ঝলমল শুভ্র সকাল
ধানক্ষেতে উঠবে দুলে কৃষকের প্রাণ
ফসলের মাঠ ও সবুজে।
শিশুরা উঠনে খেলবে হাসি খলখল
নির্বিঘ্নে ঝরবে নির্ঝর।
বৃষ্টির বাজনা বাজবে পুকুরের জলে
নাচবে হৃদয় কিশোরীর
নিঃশঙ্কে করবে সন্তরণ।
পড়ন্ত বিকেলে চিত্ত তার—
দুলবে দোলনায়, শাখে
আর বেণী থেকে বাতাস ছড়াবে সুবাস।
সেদিন, সত্যবচন ফিরে পাবে মানুষ,
ফিরে পাবে মানুষের প্রতি হারানো আস্থা
ফিরে পাবে হারানো ঐতিহ্য।
লিভিং ডেথ
অচেনা অবয়ব কতক
সামনে এসে দাঁড়াল
অবিকল চেনা মানুষের মতো
চিনতে চাইলাম, জানাল তারা :
তারা মৃত।
বিস্মিত হলাম, গভীর দৃষ্টিতে তাকালাম
তাদের দিকে—দেখলাম :
দেহ থেকে প্রাণ ছেড়ে গেছে
আদতে তারা রক্তমাংসের জীবন্তলাশ।
মুর্তাজা হক কবি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ (অনার্স) ও এমএ ডিগ্রি অর্জন। বর্তমানে পাবনায় শহীদ এম. মনসুর আলী কলেজের বাংলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।