বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা 

তারপর তুমি কবি 

খুব কম সময়ই তারা মায়ের সঙ্গ পেতো 
কেননা অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি কোপে এখানে শ্রমকাল—বিস্তৃত
দীর্ঘ জুলুমের দহে নিষ্পেষিত—ওদের
ভূমির কথা ভাবতেই রক্ত হিম হয়ে যেতো 
কারণ বাণী ও বিদ্যুতে জ্বলতে পারে তেমন বজ্রস্বর তাদের ছিলো না ।
তাহলে তাদের কী ছিল !
আসলে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে শোষণে পিষ্ট এ জাতি 
চিরদিন কেবল মুক্ত পাখি হবার স্বপ্নই বুনেছে ।

তারপর, তারও বহুদিন পর
তারপর তুমি কবি 
ভাঙতে এসে উৎপীড়কের ভিত
পড়েছিলে অমোঘ কবিতা :
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারে সংগাম স্বাধীনতার সংগাম’
সেই থেকে ঋগ্বেদে উচ্চারিত ‘বঙ্গ’  আমাদের 
বাংলাদেশ—আশাতীত স্বপ্নের মতো বাঙালির । 

১৯৭৫ এবং আজকের বাস্তবতা 

সপরিবারে হত্যা শেষে, বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম যারা চিরতরে মুছে দিতে চেয়েছিল
মোস্তাক, রশিদ, ডালিম আরও কিছু সীমারের নাম
একুশ শতকের এই উদ্দীপ্ত সময়ে একদিন অকস্মাৎ তারা ফিরে এলো—ঢাকায় 
৩২ নম্বরে, শহবাগে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অলিন্দে
ওরা কেবল এদিক ওদিক দেখছিল একযোগে 
ফিরে ফিরে মানুষের মুখের দিকে তাকাচ্ছে
কথা শুনছে :
পথে-ঘাটে দৃশ্যে-পরিপার্শ্বে সবখানে আজ গণরবে ধ্বনিত হচ্ছে শেখ মুজিবের নাম
চর্চিত হচ্ছে তার গুণ ও বচন।
ওরা দেখলো, বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন বাঙালির হৃদয়ে 
মুখে মুখে জীবনের জয়-জাগরণে
তাঁর যাপিতদিনের চেয়ে আরও বেশি অর্থময় আবাহনে 
ওরা আরও দেখলো, নিজেদের নামের পাশে জমে আছে ঘৃণার পাহাড়— 
উৎকট আবরণে ঢেকে আছে তাদের তলাট!
ক্ষমাহীন-ছন্দহীন বিরাণ আজ তাদের বসতী!    

আলোর অভিমুখে যাত্রা

এক রুদ্ধশ্বাস পরিযান শেষে 
আপনার পা যখন আপন ভিটিতে
তখন দ্বিগ্বিদিক ছুটোছুটি, হইচই
কান্না ও বেদনার ইতিহাস, সব একাকার
সবকিছু ধ্বস্ত বিহ্বল

মিলনের অসহ-উৎকণ্ঠা নিয়ে আমরা অপেক্ষায়
আপনি ফিরে এলেন প্রাণের ভূমিতে
ফুল ও শিশিরের সাথে পাতার কলগান
সামনে দু’ধারে রোল—চৌদিকে ছড়ালো বিদ্যুৎ 
মাঝখানে ভালোবাসা, বাঙালির প্রিয়জন 

আঁধারের অগণ্য পাক পেরিয়ে, আপনি ফিরে এলেন সোনার স্বদেশে
কৃষকের মুখে হাসি—মাঠে মাঠে ফসলের বান
শিশুদের ওষ্ঠে জাগে আমোদের সুরাসুর
আপনি ফিরে এলেন : মুক্তির আলো নিয়ে সাথে— 
স্বাধীনতা পেয়েছে পূর্ণতা ।


• ঢাকা

menu
menu