প্লেটোর রাষ্ট্রতত্ত্ব ও গণতন্ত্র      

প্লেটোর জন্মলগ্নে তাঁর মাতৃভূমি এথেন্স ছিল এক জাতীয় সংকটের সম্মুখীন। প্রতিবেশি রাষ্ট্র স্পার্টার সাথে দীর্ঘদিন যুদ্ধের পর এথেন্স যখন সম্পূর্ণরূপে পরাভূত, তখন প্লেটোর বয়স মাত্র তেইশ বছর। মাতৃভূমির এ শোচনীয় পরাজয়ে প্লেটো বিচলিত ও ব্যথিত বোধ করেন। তিনি বোঝাতে পারলেন যে, এথেন্সের পরাজয়ের মূল কারণ তথাকথিত গণতন্ত্র। তাই তিনি ভাবলেন : এই গণতান্ত্রিক সরকারের অবসান ঘটিয়ে এক নতুন সু-সরকার আবিষ্কার করা যায় কী করে? প্লেটোর গুরু সক্রেটিসের মতবাদ সে মনেপ্রাণে ধারণ করতেন। তাই সে গুরুর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েই বলেছিলেন ‘গণতন্ত্র হচ্ছে মূর্খের চর্চা, এখানে মত এবং মাথার (সংখ্যার) বিবেচনা করা হয়, জ্ঞান-বুদ্ধি, ন্যায়-কল্যাণের বিবেচনা করা হয় না।’

শিগগিরই দেখা গেল প্লেটোরই চাচা ক্রিটিয়াসের নেতৃত্বে বিশ নেতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হলো এক নতুন সরকার। দুঃখের বিষয় এ নতুন সরকারের শাসনও দেশের সামগ্রিক কল্যাণের অনুকূল হলো না। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন গণবিরোধী কার্যকলাপ ছাড়াও এ উচ্ছৃঙ্খল সরকার প্লেটোর গুরু সক্রেটিসকে বিভিন্নভাবে অপমানিত করে। যাই হোক, অচিরেই এ সরকারের পতন ঘটলো। প্রাচীন গণতন্ত্রের হলো পুনরুত্থান। বলা বাহুল্য, এ নতুন গণতান্ত্রিক সরকারও এমনসব অবাঞ্ছিত কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়লো, যার ফলে শুরু হলো দেশের সামগ্রিক অবস্থার অবনতি। বিশেষ করে এ তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকার সক্রেটিসের উদারনৈতিক দার্শনিক শিক্ষা সমর্থন করতে না পেরে নির্দয় ও নিষ্ঠুরভাবে ব্যবস্থা করে তাঁর প্রাণদণ্ডের। পরম শ্রদ্ধেয় গুরুর এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুতে মর্মাহত হলেন প্লেটো। গণতন্ত্রের প্রতি আদর্শ সরকারের যার পরিচালনার ভার ন্যস্ত থাকবে কতিপয় উত্তম ও বিজ্ঞ ব্যক্তির ওপর। তাই তাঁর পরবর্তী চেষ্টা হলো এমন এক পদ্ধতির আবিষ্কার যার সাহায্যে উত্তম ও বিজ্ঞ প্রশাসকদের মনোনয়ন সম্ভব।

এদিকে সক্রেটিসের মৃত্যুর পর ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক নেতারা সক্রেটিসের সমর্থকদের সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করলেন। প্লেটোর শুভাকাঙ্ক্ষীরা এথেন্সকে তাঁর জন্য নিরাপদ না ভেবে তাঁকে অবিলম্বে এথেন্স ত্যাগ করার পরামর্শ দেন। প্লেটো প্রতিবেশি রাষ্ট্র মেগারাতে চলে যান। তারপর তিনি দীর্ঘ বারো বছর দেশের বাইরের অবস্থান করেন এবং প্রবাস জীবনে তিনি মিসর, ইটালি, সিসিলি প্রভৃতি দেশ সফর করেন। দীর্ঘদিন বিভিন্ন দেশ সফরের পর বিপুল অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের অধিকারী হয়ে চল্লিশ বছর বয়সে প্লেটো স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে প্রথমেই তিনি একটি স্কুল স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে এই শিক্ষাপীঠই প্লেটোর একাডেমি নামে পরিচিত হয়। আজকাল আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বলতে যা বুঝি, প্লেটোর একাডেমিই ছিল অনেকটা তা-ই। বৈজ্ঞানিক গবেষণা, জ্ঞান ও সত্যের অনুশীলন এবং সর্বোপরি দক্ষতার সাথে রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করার জন্য নাগরিকদের শিক্ষাদানই ছিল এই একাডেমির মূল কাজ। অল্পদিনের মধ্যেই একাডেমির নাম যশ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশ-বিদেশের বহু শিক্ষার্থী তাতে ভর্তি হতে থাকে।

প্লেটো তাঁর গ্রন্থাবলীতে দর্শনের জয়গান করেন তাতে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। বিশেষ করে তাঁর অমর গ্রন্থ ‘রিপাবলিক’ এ তিনি দার্শনিক  শাসিত এক আদর্শ রাষ্ট্রের যে পরিকল্পনা করেন, তা বিভিন্ন মহলে বিপুল প্রেরণা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। কথিত আছে যে, সিরাকুসের রাজা ডায়োনিসাসের মৃত্যুর পর তাঁর তরুণ পুত্র সিংহাসনে আরোহন করেই  ‘রিপাবলিক’ গ্রন্থে পরিকল্পিত আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্লেটোকে তাঁর দরবারে আমন্ত্রণ জানান। অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্লেটো এ আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক তাঁর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ছ’বছর পর একই কারণে তিনি আবার আমন্ত্রিত হন। কিন্তু আবার তিনি বিফল হয়ে এথেন্সে ফিরে আসেন। এথেন্সে ফিরে এসে তিনি তাঁর একাডেমিতে পুনরায় শিক্ষকতা শুরু করেন এবং দার্শনিক চর্চায় মনোনিবেশ করেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত প্লেটো দর্শনকর্মে নিয়োজিত ছিলেন।

দীর্ঘদিন যুদ্ধের পর প্রতিবেশি স্পার্টার হাতে এথেন্স যখন পরাস্ত হয়, তখন প্লেটোর বয়স ছিল মাত্র তেইশ বছর। মাতৃভূমির এই শোচনীয় পরাজয় প্লেটোর কোমল মনে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তা-ই যুগিয়েছে তাঁর সামাজিক ও নৈতিক দর্শনের মূল প্রেরণা, নির্ধারিত করেছে সেই দর্শনের রূপরেখা। প্লেটো প্রথমেই হাত দিলেন তদানীন্তন সামাজিক, নৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পর্যালোচনা ও সমীক্ষার কাজ। তিনি অচিরেই বুঝতে পারলেন যে, নৈতিক জ্ঞানের অভাবই এথেনীয়দের দুঃখ-দুর্দশা ও অধঃপতনের মূল কারণ। তাদের এ দুঃখ দুর্দশা লাঘব এবং একটি সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে প্রথমেই তিনি প্রয়োজন বোধ করলেন এমন এক শিক্ষাব্যবস্থার যার মূল লক্ষ্য হবে দেশের মানুষকে সুবিচার ও ন্যায়পরতার ধারণার সাথে পরিচিত করে তোলা।

তবে তিনি এ-ও উপলব্ধি করলেন যে, সাধারণ অর্থে জাস্টিস বা ন্যায়পরতা কথাটিকে যদিও সহজ বলে মনে হয়, এর স্বরূপ ও তাৎপর্য উপলব্ধি এবং ব্যবহারিক জীবনে এর সুষ্ঠু প্রয়োগ মোটেও সহজ নয়। তাই ন্যায়পরতার বিমূর্ত ধারণাকে কী করে মূর্ত ও স্পষ্ট করে তোলা যায় এবং কী করেই বা একে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়, তা-ই হয়ে দাঁড়ালো প্লেটোর সমাজ ও রাষ্ট্রদর্শনের প্রধান সমস্যা।

মানুষের স্বাভাবিক প্রয়োজনবোধ থেকে পারস্পারিক সহযোগিতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে যে সমাজ গড়ে ওঠে এর আদিম রূপ ও ক্রমবিবর্তনের বিশদ ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্লেটো তাঁর আদর্শ রাষ্ট্রের নাগরিকদের অভিভাবক, সৈনিক ও কারিগর-এ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করেন এবং তাদের শ্রেণিগত কার্যক্রম নির্দিষ্ট করে দেন। নিজ নিজ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা হবে নাগরিকদের কর্তব্য। কারিগর ও সৈনিক শ্রেণির কাজ হবে যথাক্রমে খাদ্য উৎপাদন ও দেশরক্ষা। রাজনৈতিক দায়িত্ব ন্যস্ত থাকবে একমাত্র অভিভাবক বা শাসক শ্রেণির ওপর। অভিভাবকদের সংখ্যা থাকবে সৈনিক ও শ্রমিকদের সংখ্যার তুলনায় কম।

রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ প্রথমেই যোগ্যতার ভিত্তিতে অভিভাবকদের মনোনীত করবেন। এরপর তা বংশানুক্রমিকভাবে চলবে। রাষ্ট্রের বৃহত্তর কল্যাণে মাঝেমধ্যে নাগরিকদের শ্রেণি পরিবর্তন করা হবে। এ নীতি অনুসারে শ্রমিক শ্রেণির মেধাবী শিশুকে অভিভাবক শ্রেণির, আর অভিভাবক শ্রেণির অনুপযুক্ত শিশুকে শ্রমিক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

জন্ম থেকে শুরু করে সারা জীবন মানুষ বোধ করে নানারকম অভাব। কিন্তু কোনো মানুষের একলার পক্ষে তার সব অভাব মেটানো সম্ভব নয়। তাই প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ গ্রহণ করে নেয় নিজ কর্মপন্থা। এ চিরন্তন সামাজিক নীতির দিকে লক্ষ্য রেখেই প্লেটো তাঁর আদর্শ রাষ্ট্রের নাগরিকদের শ্রেণি-বিভাগ করলেন এবং তাদের শ্রেণিগত কর্তব্য নির্দিষ্ট করে দিলেন। তবে এ শ্রমবিভাগের অর্থ এ নয় যে তারা পারস্পারিক কলহ-কোন্দলে লিপ্ত হয়ে সামাজিক ঐক্য ও শান্তি ব্যাহত করবে। প্লেটো তাই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন : নিজ নিজ কাজ নিষ্ঠার সাথে সম্পাদন করতে হবে আদর্শ রাষ্ট্রের তিন শ্রেণির নাগরিকদের। একের কাজ অন্য কেউ হস্তক্ষেপ না করে পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতে বলিষ্ঠ সামাজিক ঐক্য গড়ে তোলাই হবে তাদের লক্ষ্য। প্লেটোর মতে তিন শ্রেণির নাগরিকদের একতা ও সমঝোতার মধ্যেই নিহিত রাষ্ট্রের ন্যায়পরতা।

রাষ্ট্র বলতে ব্যক্তিমানুষের সমষ্টিকেই বেঝায়। তার ধ্যান-ধারণা, আবেগ-অনুভূতি ও আশা-আকাঙ্ক্ষার ব্যাপক প্রতিফলন ঘটে। রাষ্ট্রে যেমন রয়েছে দার্শনিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক, এ তিনটি দিক, মানবাত্মারও রয়েছে বুদ্ধিজাত (rational), বীর্যজাত (spirited) ও কামনাজাত (appetitive), এ তিনটি দিক। রাষ্ট্রীয়  ন্যায়পরতা যেমন রাষ্ট্রের তিন শ্রেণির নাগরিকদের সহযোগিতা ও সমঝোতার ওপর প্রতিষ্ঠিত, ব্যক্তিগত ন্যায়পরতাও নিহিত মানবাত্মার তিন অংশের সমঝোতার মধ্যে। নির্ভেজাল দর্শনানুরাগ ও রাষ্ট্রীয় কল্যাণ কামনা, এ দুই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হতে হবে অভিভাবকদের। আর এ লক্ষ্য অর্জনের উপায় হিসেবেই প্লেটো প্রণয়ন করলেন কতকগুলো শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক ও জৈবিক পরিকল্পনা। প্রথমেই তিনি ব্যাখ্যা করেন আদর্শ রাষ্ট্রের শিক্ষাপদ্ধতির স্বরূপ। আদর্শ রাষ্ট্রের শিক্ষার স্তর থাকবে দুটো- প্রাথমিক ও উচ্চতর। ভূমিষ্ঠ হওয়ার থেকে বিশ বছর বয়স পর্যন্ত নাগরিকদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। তবে উচ্চশিক্ষায় ব্যাপ্তি থাকবে সীমিত। বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যে মুষ্টিমেয় ব্যক্তি উপযুক্ত বিবেচিত হবেন কেবল তারাই উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নানা পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবেন তাদের ওপরই ন্যস্ত থাকবে দেশের শাসনভার।

প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়বস্তু হবে সংগীত ও ব্যায়াম। দুটিকেই প্লেটো ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। আজকাল সংস্কৃতি বলতে আমরা যা বুঝি, সংগীত কথাটিকে প্লেটো অনেকটা সে অর্থেই ব্যবহার করেছেন। ব্যায়াম কথাটিকে ও তিনি মাংসপেশির নিছক সঞ্চালনের সঙ্কুচিত অর্থে ব্যবহার না করে করেছেন ক্রীড়ানুষ্ঠান (athletics)- এর অর্থে। 

নাগরিকদের মধ্যে গাম্ভীর্য, শালীনতা ও সৎসাহসের প্রেরণা সৃষ্টি করাই হবে শিক্ষাদর্শনের মূল লক্ষ্য। আর এ লক্ষ্য অর্জনের প্রসূতি থেকে শুরু করে সব শিক্ষক-শিক্ষিকার রয়েছে এক গুরু দায়িত্ব। তাই শিশুদের শিক্ষার ব্যাপারে তাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সাহিত্য ও সংগীতের ক্ষেত্রে আরোপ করা হবে কঠোর বাধানিষেধ। শিশুদের শুধু এমন গল্প ও সংগীত শিক্ষা দেয়া হবে যা তাদের মনে সৎসাহস ও সংযম সৃষ্টি করবে। কালেভদ্রে যদিওবা আদর্শ রাষ্ট্রে নাটক মঞ্চস্থ করা হবে তাতে থাকবে শুধু সদ্বংশজাত ও নিষ্কলঙ্কচরিত্র পুরুষ অভিনেতা। মহিলা ও ভিলেনদের অনুকরণের ফলে দর্শকদের নৈতিক চরিত্র কলুষিত হতে পারে। সুতরাং আদর্শ রাষ্ট্রে যেসব নাটক মঞ্চস্থ করা হবে সেগুলোতে মহিলা ও ভিলেনদের কোনো ভূমিকা থাকবে না।

জেনোফ্যানিসের ন্যায় প্লেটোর কবিদের নিন্দা করেন। বস্তুত, তাঁর আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের কোনো স্থান নেই। হোমার ও হেসিয়েড সম্পর্কে প্লেটোর ধারণা ছিল বিরূপ। কেননা তাঁরা উভয়েই তাঁদের রচনায় দেবতাদের অনৈতিক ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত বলে দেখিয়েছেন এবং দেবতারা ভাবাবেগ দ্বারা চালিত বলে তারা প্রচার করেছেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা দেবতাদের উচ্চ মর্যাদার কথা উপেক্ষা করেছেন এবং মানুষের পক্ষে অনুকরণীয় কোনো ভালো গুণ দেবতাদের আছে একথাও অস্বীকার করেছেন। হোমার এ-ও দেখাবার চেষ্টা করেছেন যে, পৃথিবীতে দুষ্টু লোকেরা সুখী এবং পুণ্যবানেরা অসুখী জীবন যাপন করে থাকে। এসব কাহিনি কোনোমতেই শিশুদের শোনানো চলবে না। প্লেটোর দৃষ্টিতে এ ধরনের মন্তব্য দেবতাদের প্রতি অশ্রদ্ধা ও অসম্মানের পরিচায়ক এবং নিতান্তই অবাঞ্ছিত। তাঁর মতে, ঈশ্বরকে কল্যাণ ও অকল্যাণ এ দুয়েরই  স্রষ্টা না বলে দেখাতে হবে শুধু কল্যাণের  স্রষ্টা বলে। আদর্শ রাষ্ট্রের ছাত্রদের এ শিক্ষা দিতে হবে যে পুণ্যবানেরা পুরস্কৃত ও পাপীরা তিরস্কৃত হবে।

প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়। তিনি তাঁর দর্শন চিন্তায় এরকম এক রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রত্যাশা করতেই পারেন। কল্পনার রঙিন তুলির আঁচড়ে তাঁর কল্পিত আদর্শ রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয়। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে : এ কাল্পনিক রাষ্ট্রের বাস্তবায়ন কী সম্ভব? আর তা-ই যদি না হলো, তা হলে রাষ্ট্র প্রণয়নের স্বার্থকতা কোথায়? উত্তরে প্লেটো বলেন : আদর্শ রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্যই ছিল তো ন্যায়পরতা আবিষ্কার। সুতরাং আক্ষরিক অর্থে বাস্তবায়িত না হলেও আদর্শের প্রতীক হিসেবে এর মূল্য অপরিমেয়। নিষ্কলুষ আদর্শ রাষ্ট্রের অনুকরণ করে পৃথিবীর রাষ্ট্রনায়কগণ তাঁদের নিজ নিজ রাষ্ট্রের দোষত্রুটি সংশোধন করার সুযোগ পাবেন। এভাবে অনুকরণ করতে গিয়ে সত্যিকারের রাষ্ট্রগুলো যদি আদর্শ রাষ্ট্রের পর্যায়ে না-ও পৌঁছাতে পারে, অন্তত তার কাছাকাছি যেতে পারবে। বাস্তব রাষ্ট্রের শুভ প্রেরণার উৎস হিসেবে আদর্শ রাষ্ট্রের বিশেষ সতর্কতা এখানেই।

menu
menu