`কাকদুপুর’ : হামিদুল ইসলাম

প্রথমেই বলে নেয়া ভালো, পুস্তক সমালোচনা বলতে যা বুঝায় লেখাটা সে অর্থে তা নয়। এটি নিতান্তই বইটি ও লেখকের প্রতি ব্যক্তিগত অনুভূতিরই প্রকাশ। প্রথমে লেখকের সঙ্গে যোগসূত্রের বিষয়টা বলি। আমার কাক ও অন্যান্য গল্প বইটা প্রকাশের কিছু আগে হঠাৎ একটা কল এলো, ভরাট গলা, কিছুটা কাঁপা কাঁপা স্বর। নিরিখ অথবা অন্য কোনো সাহিত্য পত্রিকায় আমার একটা গল্প পড়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য কল করেছেন। গলার স্বর শোনে বুঝা যাচ্ছে অনেক বয়স, বললেন ‘বাবা তুমি কি খোকন দাস?’ আমি বললাম হ্যাঁ বলার পর বললেন, ‘বাবা আমি হামিদুল ইসলাম, কুষ্টিয়ায় থাকি। তোমার একটা গল্প পড়ে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে, এজন্য সম্পাদককে বলে বহু কষ্টে তোমার নাম্বারটা জোগাড় করেছি।

তোমার কি গল্পের বই টই আছে?’ আমি বলি, ‘একটা বই বের হচ্ছে।’ তার পর ওনাকে কাক ও অন্যান্য গল্পের বইটা পাঠিয়ে দিই। উনি পড়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং গল্পের খুঁটিনাটি নানা বিষেয়ে আলোচনা করেন। মাঝেমাঝেই কল করে আমার, আমার পরিবারের, লেখালেখির খোঁজখবর নেন। এর পর আমার দ্বিতীয় গল্পের বই খড়ের মানুষ ওনাকে পাঠিয়ে দিই। এই বই পড়ে তিনি বলেন, ‘বাবা আমি তোমার গল্পের বড় ভক্ত।’ প্রতিটা গল্প ধরে ধরে আলোচনা করেন, গল্পের বিভিন্ন চরিত্র, বিষয়, ভাষা সবকিছু নিয়ে নিখুঁত বিশ্লেষণ করেন। এই বয়সে একটা মানুষ আমার মতো একটা অখ্যাত গল্পকারের গল্পের এই রকম পোস্টমটেম কি করে সম্ভব যদি ছোট গল্পের প্রতি, সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা না থাকে। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও আগ্রহ বেড়ে যায়।

আরও পরে কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি একসময় ছোট গল্প লিখতেন, বিভিন্ন কাগজে কিছু কিছু ছাপাও হয়েছে। তার বেশিরভাগই তার সংগ্রহে নেই। একদিন ছোবল নামে একটা সাহিত্য পত্রিকা পাঠালেন, সেখানে তাঁর একটা গল্প ছাপা হয়েছিল। তিনি বললেন, ‘গল্পটা পড়ে দেখ বাবা, কেমন হয়েছে।’ আমি বলি, ‘আমি ছোট গল্পের কি বুঝি, আপনি পাঠিয়েছেন পড়ে দেখব।’ এভাবে, ছোটগল্প নিয়ে কথা বলতে বলতে তিনি আমার আপন মানুষ হয়ে উঠলেন। মাঝেমাঝে মনে হয় আমার গল্পগুলোর যদি দ্বিতীয় কোন পাঠক নাও থাকে তাতে আমার কোন আপসোস নেই। এই একজন পাঠকই যথেষ্ঠ। অনেক দিন পর একবার কল করে বললেন, তোমার লেখা পড়ে আমি দারুণ উদ্দিপ্ত, আমার পক্ষে এখন তো আর লেখা সম্ভব নয়, তবে আমার গল্পগুলো যদি বই আকারে প্রকাশ করতে পারতাম! আমি বলি, ‘করেন না, যে কয়টা খুঁজে পাওয়া যায় সেগুলো দিয়ে।’ এর পর অনেক দিন কোন যোগাযোগ নেই, কিছু দিন আগে হঠাৎ কল করে বলেন, ‘তোমার মেইলিং এড্রেসটা একটু দাও তোমার জন্য একটা বই পাঠাব।’ আমি ভেবেছি হয়তো ওনার কোন পছন্দের বই আমার জন্য পাঠাবেন। 

দুই দিন পর বইটা হাতে পেয়ে বিস্মিত, ওনার লেখা গল্পের বই কাকাদুপুর। একদিনেই গল্পগুলো পড়ে শেষ করি। বলতে দ্বিধা নেই, আমার নিজের প্রথম বই প্রকাশের পর যে অনুভূতি হয়েছিল, বইটা হাতে পেয়ে সেরকম অনুভূতিই হলো, এবং কাকদুপুরের সঙ্গে সামান্য সূতায় আমি জড়িয়ে আছি এটা ভাবতেই অন্যরকম লাগে। 
 

গল্পগুলোর প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে লেখক সম্পর্কে কয়েকটা কথা বলা দরকার। গল্পকার হামিদুল ইসলামের জন্ম ১৯৪৭ সালের এক এপ্রিল, পাবনা জেলার সদর উপজেলার মাধপুর গ্রামে। পড়ালেখা করেন এডওয়ার্ড কলেজে। শিক্ষকতা দিয়ে পেশা জীবন শুরু করে কয়েক বছর সাংবাদিকতা করেন, এর পর সরকারি চাকুরি শেষে অবসরে যান। ঢাকা থেকে প্রকাশিত এহতেশাম হায়দার চৌধুরীর সম্পাদিত দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার পাবনার প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা জীবনে প্রবেশ করেন। এখানে কাজ করে আটষট্টি থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত। বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত সাব এডিটর হিসেবে চাকরি করেন যথাক্রমে কবি আল মাহমুদ সম্পাদিত দৈনিক গণকণ্ঠ ও আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী সম্পাদিত দৈনিক জনপদেগণকণ্ঠে ঢুকেই দেশের প্রথম সারির ছোটগল্পকার কায়েস আহমদকে পান সহকর্মী হিসেবে। অল্প দিনেই দুই জনের মধ্যে গড়ে ওঠে সখ্যতা।

এই প্রসঙ্গে লেখক বলেন, ‘বাহাত্তরের ফেব্রুয়ারিতে গণকণ্ঠে ঢুকেই সহকর্মী হিসেবে দেশের প্রথম সারির ছোটগল্পলেখক কায়েস আহমেদের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। এবং গভীর অন্তরঙ্গতায় উভয়ের বোধে সম্পর্কটি ভিন্ন মাত্রা পায়—যা পরবর্তীকালে সংশ্লিষ্ট পত্রিকা থেকে— তথা ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও বিরানব্বই সাল অর্থাৎ ওর মৃত্যু পর্যন্ত অটুট ছিল। বাহাত্তর থেকে পাঁচাত্তর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কায়েস আহমেদের সান্নিধ্য ও সাহচর্যে গড়ে ওঠা নিবিড় বন্ধুত্বের পরামর্শে ‘আধুনিক ছোটগল্প’ সম্পর্কে একটা মোটাদাগের ধারণা জন্মে। আর ওই ধারণার প্রেক্ষিতে অনেকগুলো ছোটগল্প লিখে ফেলি—যা তৎকালীন  বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায়, বিশেষ করে দৈনিক বাংলা, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক গণকণ্ঠ, দৈনিক জনপদ প্রভৃতির সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশ পায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রকাশিত গল্পগুলোর একটিও আজ আর আমার সংরক্ষণে নেই।’ 

লেখকের বয়ানে আমরা জানতে পারি যে, পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দেয়ার পরও তিনি গল্প লেখা চালিয়ে যান। আলোচ্য সংকলনে প্রকাশিত দশটি গল্পের মধ্যে সাতটিই গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সাহিত্যপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম সম্পাদিত কালস্রোতে প্রকাশিত হয় গল্পগ্রন্থের প্রথম গল্প ‘কাকদুপুর’। এছাড়া কামাল বিন মাহাতাব সম্পাদিত ছোটগল্প পত্রিকায় ‘রুটি ও রাত্রির গল্প’, কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত দ্বিধায় ‘মাটির বেহালা’, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থেকে ফজলুর রহমান খান সম্পাদিত বসুন্ধরায় ‘নারী’, ঢাকা থেকে ওবায়েদ আকাশ সম্পাদিত শালুকে ‘কালো নৌকা’, তাজউদ্দিন সম্পাদিত কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত ছোবলে ঘুঘুর ফাঁদ এবং অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সম্পাদিত নতুন দিগন্তে ‘রাজসাক্ষী’ গল্প প্রকাশিত হয়। বাকি তিনটি গল্প ‘কেশবিভ্রাট’, ‘বিচ্ছিন্নতার সাতকাহন’ এবং ‘বিবমিষা’—কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি।  

উল্লিখিত তথ্য থেকে এটা কারো বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, হামিদুল ইসলাম ছোটগল্প চর্চায় অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ছিলেন; এবং ছোটগল্পে ক্রমাগত শাণিত প্রকাশ সাহিত্য সম্পাদকদের দৃষ্টি এড়িয়ে যাননি। যতদিন তিনি ছোটগল্পের সঙ্গে ঘর-গেরস্তি করেছেন অত্যন্ত নিষ্ঠা ও দরদের সঙ্গেই করেছেন। বিষয়টা এমন নয় যে, খেয়ালের বশে লেখক কিছু গল্প লিখে রেখেছেন, জীবন সায়াহ্নে এসে সেগুলো বই আকারে ছাপিয়ে দিলেন। বরং ‘কাকদুপুর’ ছোটগল্পে তাঁর পরিণত প্রকাশই ইঙ্গিত করে। লেখক আমাদেরকে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের তলানীতে নিয়ে যায়। 

গল্পকার হামিদুল ইসলামের বয়স এখন পঁচাত্তর; লেখালেখি ছেড়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। কাকদুপুর-এর গল্পগুলো তাঁর যৌবনের লেখা সে তথ্য আগেই জানিয়েছি। এই অর্থে এটা লেখকের প্রথম এবং এটাই শেষ, বলাবাহুল্য একমাত্র বই। মাত্র একটা বই লিখেও বাংলা সাহিত্যে পাকাপাকি আসন করে নেয়ার নজির একেবারে বিরল নয়, তবে জীবন সায়াহ্নে এসে প্রকাশিত এই একটা গল্পের বই সাহিত্য জগতে কী প্রভাব ফেলবে এই আলোচনা দূরে সরিয়ে রেখে এই কথা জোর দিয়ে বলা যায় যে, বইটা কোন ছোটগল্পের সিরিয়াস পাঠকের হাতে পড়লে তিনি চমকে না উঠে পারবেন না। গল্পগুলো পাঠে পাঠকের প্রাথমিক অনুভূতি হবে হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে চমকে ওঠার মতো, তার পর তার ভাবনাকে নিয়ে যাবে গল্পের শৈলী ও তিনি যে সময়টাকে ধরতে চেয়েছেন সেই সময়ের রূঢ় বাস্তবতার দিকে। গল্পগুলো পড়তে পড়তে মনে হবে বাংলা সাহিত্যের এক শক্তিমান লেখক কায়েস আহমদের কথাই মনে পড়বে।

হামিদুল ইসলাম তাঁর বন্ধু লেখক কায়েস আহমদের গল্পগুলো নিবিড়ভাবে পাঠ করেছেন, দারুণভাবে প্রভাবিত হয়েছেন, তাঁর মধ্যে বিস্ময়ের ঘোর তৈরি করেছে এর কিছুটা ছাপ তার লেখায় থাকবে এটাই স্বাভাবিক, যা হামিদুল ইসলাম অবলীলায় স্বীকারও করে নিয়েছেন। তবু গল্পগুলো স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিকশিত হয়েছে, গদ্যের গঠন, গল্প বলার ভঙ্গি সবকিছুতে লেখক নিজস্বতার ছাপ রাখতে পেরেছেন। গল্পের পরিসরও তেমন বড় নয়। পাঠককে টেনে নিয়ে যাওয়ার অদ্ভূত ক্ষমতা লেখার মধ্যে তা অনুভূতি হবে পাঠকের। 

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বের উত্তাল দিনগুলো কিংবা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ কমবেশি সাহিত্যে প্রতিফলিত হলেও স্বাধীনতা উত্তর সময় সেভাবে উঠে এসেছে এ কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না। ‘কাকদুপুর’ গল্পটা সদ্য স্বাধীন দেশের সমাজ বাস্তবতার রূঢ় চিত্রের এক ঝলক বলা যেতে পারে। স্কুল পড়ুয়া খোকনের বড় ভাই শহীদ হন মুক্তিযুদ্ধে, বড়বোন পাকমিলিটারির হাতে ধর্ষণের শিকার হন, পরিবারের এই বিপর্যয়ে পরিবারের প্রধান খোকনের আব্বা শয্যাসায়ী। পরিবারের হাল ধরতে নিষ্ফল চেষ্টা করে বড় বোন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের আগে যে উঠতি মাস্তান কামালের দাঁত ভেঙে দিয়েছিল খোকনের বড় ভাই বোনকে অপমান করার দায়ে সেই কামালের সঙ্গে বড়বোনকে আপোস করতে হয়; এই যেন রক্তের দাগ মুছতে না মুছতেই প্রতিপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ।

শহীদ বড় ভাইয়ের বীরত্বের প্রশংসায় খোকনকে গৌরবান্বিত করে, ভাইয়ের মতো শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয় নিজের মধ্যে, পরক্ষণে বোনের রেপ হয়ে বাচ্চা হওয়ার ঘটনা জানতে পেরে গ্লানিতে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে, ভেতর থেকে মুষড়ে যায়। বড়ভাই বড়বোন দুজনেই যুদ্ধের ভয়াবহতার শিকার, একটা তাকে মহিমান্বিত করে অন্যটা তাকে মাথা হেট করে দেয়, বড় বোনও যে পরিস্থিতির শিকার সে কথা ভুলে যায় খোকন। পাক মিলিটারির পরিবর্তে পুরো ক্রোধ ঘৃণা গিয়ে পড়ে বড় বোনের ওপর। খোকনকে সবচেয়ে পীড়িত করে উঠতি মাস্তান কামালের সঙ্গে বোনের আপোসের ঘটনা, তাদের অনৈতিক সম্পর্ক। মিলিটারির হাতে সম্ভ্রম হারানো বোনকে হয়তো ক্ষমা করা যায়, কিন্তু বখাটের কামালের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ কিছুতেই ক্ষমা করা যায় না।

এখানেই খোকনের অন্তর্গত বিদ্রোহ। কিন্তু অসহায় খোকন, তার কিছু করার নেই—এই দুই বিপরীত বাস্তবতার মাঝখানে  খোকনকে দাঁড় করিয়ে দেন গল্পকার—এই যেন পাঠককে দাঁড় করিয়ে  দেন রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি। অসহায় খোকন, কেবল অভিমানে বুকটা ছেয়ে যাওয়া ছাড়া কিছু করার নেই তার। পাঠকেরও অভিমানে বুকটা ছেয়ে যায়, গল্পপাঠের পর হয়তো একটা একটা ভারি নিশ্বাস ছাড়তে হয় পাঠককে।  

গল্পের শেষ কয়েকটা লাইনে দুপুরের বর্ণনায় খোকনের মর্মবেদনাকে মূর্ত করেন গল্পকার এ ভাবে—‘এখন আর কোন শব্দ নেই। বাইরেও কোনো কোলাহল নেই। যেন এ বাড়ির সকলের মৃত্যু হয়েছে। ভাইয়া, আব্বা সবাই মরে আছে। আর খোকন যেন ওদের মৃতদেহগুলো সামনে করে সেই কখন থেকে একলা একলা বসে রয়েছে।’  
সত্যিই তো ওই বাড়ির কেউ আর বেঁচে নেই, বড় ভাই নেই, আব্বা শয্যাশায়ী, অসহায় বড়বোন যে পথে পা বাড়িয়েছেন তাকে বেঁচে থাকা বলে না। সবাই মৃত, কেউ আক্ষরিক অর্থে মৃত আর বাকিরা জীবিত থেকেই মৃত। সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের বহু পরিবারেরই অবস্থা গল্পের এই পরিবারের মতোই ছিল। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে আমাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে একবার যদি দৃষ্টি দিই তা হলে গল্পটাকে একটা প্রতীক হিসেবেও ভাবতে পারি।

এতোবড় ত্যাগ-যুদ্ধ, রক্তপাতের মধ্যদিয়ে যে স্বাধীনতার-বিরোধী পক্ষকে পরাজিত করা হলো স্বাধীনতার অব্যাহতি পর থেকে সেই অপশক্তির সঙ্গে আপোস করে এগিয়েছে দেশের রাজনীতি; কামালের সঙ্গে খোকনের বোনের আপোসের মতোই। কামালের মতো দুর্বৃত্তরাই আজ আমাদের হর্তাকর্তা, বিধাতা—খোকনের মতো বিশাল জনগোষ্ঠীকে বিপুল অস্বস্থির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়, খোকনের মতো বেদনায় বুক ছেয়ে যাওয়া ছাড়া যেন কিছুই করণীয় নেই কারো।

গল্পগ্রন্থটিতে মোট গল্প আছে দশটি; ‘কাকদুপুর’, ‘রুটি ও রাত্রির গল্প’, ‘মাটির বেহালা’, ‘কালো নৌকা’, ‘ঘুঘুর ফাঁদ’, ‘নারী’, ‘রাজসাক্ষী’, ‘কেশ বিভ্রাট’, ‘বিচ্ছিন্নতার সাতকাহন’, ‘বিবমিষা’। 

বইটার সুন্দর প্রচ্ছদ একেছেন দেশের গুণী প্রচ্ছদ শিল্পী মোস্তাফিজ কারিগর। ঢাকার গ্রাফোসম্যান পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত পাঁচ ফর্মার ঝকঝকে ছাপার বইটি ছোটগল্পের পাঠকদের প্রথম দেখাই ভালো লাগবে। 

আমাদের আপসোস হামিদুল ইসলাম গল্প লেখা চালিয়ে যাননি, চালিয়ে গেলে গল্পকার হিসেবে তাঁর দাপুটে উত্থান প্রত্যক্ষ করতে পারতাম, আমরা পেয়ে যেতাম আরো কিছু শক্তিশালী গল্প। ‘জন্মালি যখন একটা দাগ রেখে যা’—সেই বিখ্যাত উক্তির মতোই কাকাদুপুর ছোটগল্পের জগতে তীক্ষ্ম গভীর দাগ হিসেবেই বিবেচিত হবে; এই প্রাপ্তিটাই বা কম কিসের। ছোটগল্পের সিরিয়াস পাঠকের কাছে কাকদুপুর ঠিকই জায়গা করে নেবে, তা নেবে অন্তর্গত শক্তির জোরেই। 


খোকন দাস গল্পকার এবং প্রাবন্ধিক। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন সংগ্রামই তার লেখার বিষয়বস্তু। প্রকাশিত গল্পের বই : কাক ও অন্যান্য গল্প, খড়ের মানুষ। তিনি কর্মসূত্রে খাগড়াছড়িতে থাকেন। 

menu
menu