“গুচ্ছ কবিতা”

প্রলাপ গাঁথা সিরিজের কয়েকটি কবিতা

প্রলাপ গাঁথা-১

আমাকে বোঝেনি কেউ জামরুল পাতা
করোটি ছুঁয়েছে তোর স্মৃতির সুবাস
বরফের পাটাতনে উবু হয়ে আছি
চোখের কুসুমে উড়ে তরল আকাশ!

আমি তো আমাতে নেই দেহের বাকল
আবাল্য সখিরা এসে নিয়ে গেছে ঘরে
সেখানে ডাকিনী রাত বাদুড়ের ডানা
এদেহ মথিত করে ত্রিভুজ-আদরে

আমাকে বোঝেনি কেউ জামরুল পাতা
বরফের পাটাতনে উবু হয়ে আছি...।

প্রলাপ গাঁথা-২

অতিকায় চাকু হাতে বেহায়া বণিক
আপন রীতিতে তুমি কেটেছো আপেল

ভেতর বাসনা কাঁদে অতল জলের
ক্রীড়ারত আঁধারের অচেনা অসুখ

জোছনার জাদুলতা গিয়েছিল কবে?
পাথরের চোখ ছুঁয়ে শ্মশানখানায়—

শকুনের করোটিতে শবের সুবাস
ধেই ধেই নৃত্য করে রাহুর পিরিচ

আকাশে আকাশ নেই পোয়াতী পাতাল 
তবে কি আঁধার আজ অধুনা আলোক?

পোড়া ছাই পোড়া ছাই আগুনের স্মৃতি—
নিয়ত নিজেকে খুঁড়ে জ্বালাবো উনুন...।

প্রলাপ গাঁথা-৩

অশোক কাননে কাঁদে সতী বিবি সীতা।
মোহের বারুদে খাক আমাদের পিতা \

কালের কুকুর ডাকে নিরংশু নগরে।
বেহায়া বালক ভাঙে শ্রীমতীর ঘরে \

ঝিনুকের নাভীমূলে নেচে ওঠে ঝড়।
দেহের বাকল খুলি শিকড়-বাকড় \

মুখস্থ মলনে খুন দ্রাবিড় কুমারী।
ঘাসহীন দেহ ভাসে স্নানরতা নারী \

কাচমুখী বালুকণা পাঠায় শমন।
নদীকূলে জল নেই বোধের বমন \

কামুক ও মাতালেরা ডুবুডুবু পাপে।
সতত আলোক তলে প্রেতছায়া কাঁপে \

প্রলাপ গাঁথা-৪

আগুনে পুড়েছে রোদ সভাসদসহ
ক্রন্দনে চড়িয়া সুখ দুঃখপুরে যায়

অতনু আগুন বটে শিলালিপি বোঝে
নৈশবিদ্যালয়ে মেয়ে নিজেকে হারায়

মগজ শুকিয়ে কাঠ, অগ্নিদগ্ধ-ঘাস
আমার বোনের বুক ক্রমশ সাহারা...

তবু আমি দেখি নাই সুফলা হলুদ
স্মৃতির ত্রিশূল কেন তাহারেই খোঁজে? 

উন্মাদ ঈশ্বরী তুমি... গাড়োল বাতাস
গণিকা স্বভাবে খাও চোখের বারুদ

এই ভাষা বোঝ তুমি, রোদের আবহ
প্রেতযোনি অন্ধকারে অস্থি চেটে খায়...

কতকাল ঝুলে আছো ফিনিশীয় তারা?
একেলা রোদন করে আহত আকাশ!

আগুনে পুড়েছে রোদ সভাসদসহ
ক্রন্দনে চড়িয়া সুখ দুঃখপুরে যায়...

প্রলাপ গাঁথা-৫

আজ এই বিষণ্ন বয়স। অগ্নিদগ্ধ ঘোর। মগজে মদের পিপে— 
হা-মুখে একাকী হাসে ধুলোবর্ণ অবিনাশী দাঁত। মুগ্ধ চোখে ইদানীং 
লিখে রাখি গাধার প্রতিভা! ... লোনা জলে জমে থাকা তীব্র শাদা 
তুলোরবিনাশ—প্রাচীন কয়েদী মেঘ ঘোলা জলে বিদ্ধ করে মাছ।
নদীকূলে তবু আমি মৃতবৎ শুয়ে আছি একা। পাথরের অভিমানে 
দলছুট মেধাবী মানব—শীতল আঁধার খুঁড়ে মেলে ধরে সহসা কপাট।
সময়ের সিঁড়ি ভেঙে দাউ দাউ নেমে আসে ক্রোধের আগুন। নগ্ন এই 
বিষণ্ণ বয়স। অগ্নিদগ্ধ ঘোর...


মারুফুল আলম কবি প্রাবন্ধিক। ২৮ বছর তিনি প্রতিশিল্প, দ্রষ্টব্য, অমৃতলোক, অনিন্দ্য, অর্কেস্ট্রা, জঙশন, সূর্যঘড়ি, শিরদাঁড়া, কবিতীর্থ, কৌরব, রক্তমাংস, সাহিত্য, গ্রাফিত্তি, হারিকিরি... প্রভৃতি লিটলম্যাগাজিনের মাধ্যমে সাহিত্যের চর্চা করে চলেছেন। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা : ৩টি। ১. স্তব্ধতার ধারাবিবরণী (কাব্যগ্রন্থ, ২০০৫, প্রতিশিল্প)  ২. ঝরাপাতা শূন্যতার ঘ্রাণ (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৭, উলুখড়) ৩. লিটলম্যাগাজিন, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা এবং সুবিমল মিশ্র প্রবন্ধগ্রন্থ, ২০১৭, করাতকল) পেশা : সহকারী অধ্যাপক। 

menu
menu